২১. শয়তানের কারখানা:
মিয়াংয়ে এসে যখন লঞ্চ পৌছাল রাত্রি তখন প্রায় এগারোটা। কৃষ্ণাপঞ্চমীর চাঁদ আকাশের কোণে উঁকি দিচ্ছে।
ইরাবতীর উচ্ছসিত জলধারা অক্লান্ত কল্লোলে বয়ে যাচ্ছে।
স্বল্প চন্দ্রালোক নদীর বুকে ঢেউয়ের চড়ায় চড়ায় যেন কি এক মায়াস্বপ্নের সৃষ্টি করেছে। অদূরে অস্পষ্ট চাঁদের আলোয় ইরাবতীর স্রোত-বিধৌত বিশাল গৌতম পর্বত প্যাগোডা মাথায় করে দাঁড়িয়ে আছে চন্দ্রকিরণ-স্নাত হয়ে।
সকলে লঞ্চ হতে নামল একে একে তীরে।
কিরীটী পকেট থেকে একটা ছোট কাগজ বের করল। তাতে আলো ফেলতে দেখা গেল তার ওপর সাঙ্কেতিক ভাবে কি কতকগুলো লেখা আছে।
কিরীটী সেই কাগজ দেখতে দেখতে বললে, ঐ দেখা যাচ্ছে গৌতম পর্বত। বোধ হয় প্যাগোডার দক্ষিণ কোণ দিয়ে এগিয়ে যেতে একটা চন্দনগাছ পাওয়া যাবে। চলুন, আর দেরি নয়, তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে চলুন।
সকলে দ্রুতপদে এগিয়ে চলল।
কারও মুখে একটি কথা নেই; উৎকণ্ঠিত আগ্রহে রুদ্ধনিঃশ্বাসে এক রহস্যময় বিভীষিকার দ্বারোদঘাটন করতে সব এগিয়ে চলেছে যেন নিঃশব্দে।
এই সেই প্যাগোডা…চল দক্ষিণ কোণ ধরে। চলতে চলতে একসময় থেমে কিরীটী বললে।
সকলে আবার কিছুদূর এগিয়ে চলল। কিন্তু কোথায় ভাঙা বুদ্ধদেবের মতি!
সুব্রত ও রাজু বললে, মিঃ রায়, আমরা বোধ হয় ভুলপথে এসেছি।
কিরীটী জোরগলায় বললে, না, ঠিকই চলেছি। ঐ দেখন ভাঙা বুদ্ধদেবের মূর্তি দেখা যাচ্ছে সামনেই আমাদের।
সত্যই অদূরে ভাঙা একটা বুদ্ধদেবের মূর্তি দেখা গেল, একখণ্ড বড় পাথরের ওপর বসানো।
বুদ্ধমূর্তির ডানদিকে এগোতেই দেখা গেল সেই চন্দনগাছও। কিরীটী উল্লসিত কণ্ঠে বললে, সব ঠিক ঠিক মিলছে।
তারপর কাগজটা মেলে ধরে বলতে লাগল, এই লেখাগুলোর তলায় যেসব চিহ্ন আছে সেগুলো বাদ দিতে হবে, কেননা বলেছে—চিহ্ন যত বাদ গেছে। তাহলে দাঁড়াচ্ছে—দশ পা পরে দুই DK..অর্থাৎ দুই দিকে তিন শূন্য বা ৩০ হাত রাস্তা আছে। হ্যাঁ। এই তো দুদিকে দুটো রাস্তা গেছে দেখছি, একটা ডাইনে, একটা বাঁয়ে। এখন…এই দু রাস্তার BAMT অর্থাৎ বাঁয়ের রাস্তাটি ধরে, হাতী ০০০০ যাও। হাতী মানে গজ। চার শূন্য হল চল্লিশ, সব মিলে হল চল্লিশ গজ অথাৎ বাঁয়ের রাস্তাটি ধরে চল্লিশ গজ যেতে হবে। চল এগিয়ে। মন্ত্রমুগ্ধের মতই অন্য সকলে কিরীটীর পিছু পিছু এগিয়ে চলে। ত্রিশ হাত যাওয়ার পর দেখা গেল সত্যিই দুই দিকে দুটো রাস্তা চলে গেছে। বাঁয়ের রাস্তাটি ধরে চল্লিশ গজ এগোবার পর দেখা গেল একটা প্রকাণ্ড পাথরের ওপর এক ছোট লোহার ড্রাগন বসানো। তার মুখে একটা লোহার বালা পরানো। কিরীটী আবার কাগজ দেখে পড়তে লাগল–
ড্রাগন দেখ বসে আছে
ধনাগারের চাবি কাছে।
মুখে তার লোহার বালা
দুলছে তাতে চিকন শলা।
হ্যাঁ, এই তো ড্রাগনের মুখে লোহার বালা। দেখ দেখ, একটা লোহার শলাও আছে!
আনন্দে উত্তেজনায় কিরীটীর সর্বশরীর থরথর করে কাঁপছে তখন। সে পুনরায় চাপা স্বরে বলতে লাগল—
দুইয়ের পিঠে শূন্য নাও
ত্রিশ দিয়ে গুণ দাও,
অর্থাৎ তাহলে হল ২০x৩০=৬০০
শূন্য যদি যায় বাদ
সেই কবারে পুরবে সাধ।
উত্তেজনায় ও অধীর আবেগে কিরীটীর সমগ্র দেহখানি কেঁপে কেঁপে ওঠে; বুকের মধ্যে ঢিপ ঢিপ করে।
ছবার ড্রাগনের মুখে দোলানো লোহার বালাটা ঘোরাতেই ড্রাগনটি যে পাথরের ওপর বসানো ছিল, সেই পাথরখানি ড্রাগন সমেত সর সর করে বাঁয়ে সরে গিয়ে দু হাত পরিমাণ একটা গর্ত প্রকাশ পেল।
পেয়েছি, পেয়েছি! ইউরেকা, ইউরেকা! কিরীটী চাপা কণ্ঠে বলে উঠল, সত্যি এ কি ভোজবাজি-না স্বপ্ন!
সকলেই যেন বিস্ময়ে একেবারে অভিভূত হয়ে পড়েছে।
সেই গর্তমুখে আলো ফেলতে দেখা গেল, ধাপে ধাপে সুন্দর সিঁড়ি নীচে নেমে গেছে। প্রথমে কিরীটী, তারপর মিঃ সেন, সুব্রত ও রাজু পর পর সিঁড়ির পথে পা বাড়াল। পুলিস দুজন বাইরে দাঁড়িয়ে রইল কিরীটীর নির্দেশের অপেক্ষায়।
গোটা পনেরো সিঁড়ি ডিঙিয়ে যাবার পরই সমতল ভূমি পায়ে ঠেকল। অন্ধকারাচ্ছন্ন একটা সরু পথ। সেই অপরিসর পথে অতি কষ্টে দুজন লোক পাশাপাশি যেতে পারে।
কিরীটীকে মাথা নীচু করেই এগোতে হল। কিছুদূর এগোতেই অদূরে একটা আলোর ক্ষীণ রশ্মি অন্ধকারে মিটমিট করছে দেখা গেল।
এমন সময় মাটির নীচে অন্ধকার গুহার ভিতর থেকে একটা বাক-ভাঙা করুণ আর্তনাদ জেগে উঠল। সকলেই থমকে দাঁড়াল।
মনে হল এ বুঝি কোন অশরীরীর করুণ হাহাকার যুগ যুগ ধরে এই মাটির নীচে কেদে কেদে ফিরছে আজও!
অল্পক্ষণ বাদে আবার তারা এগিয়ে চলল। সকলে এসে একটা বিস্তৃত উঠোনের মত জায়গায় দাঁড়ায়। মাথার ওপরে ছাদের খিলান খুব বেশী উচু নয়।
সহসা অন্ধকারের মধ্যে ঝনঝন শব্দ শুনে সকলে ফিরে দাঁড়িয়ে দেখল, একটা ছোট্ট গোলাকার ছিদ্রপথ দিয়ে সর; একটা আলোর রশ্মি অন্ধকারে ছিটকে এসে পড়েছে।
কিরীটী এগিয়ে গিয়ে সেই ছিদ্রপথে চোখ রেখে চমকে ওঠে, এ কি স্বপ্ন না সত্যি! এ যে সেই গল্পের আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপকেও হার মানিয়ে দেয়! সহসা সহস্র আরব্য রজনীর বিস্ময়কর একখানা পাতা যেন এই পাতালপুরীর আঁধারকক্ষে সত্য হয়ে এসে ধরা দিয়েছে।
আলোতে দেখা গেল ছোট একখানি ঘর। সেই ঘরের ছাদের ওপর হতে শিকলের মাথায় একটা কাঁচের প্রদীপদান ঝুলছে। সেই প্রদীপের স্বল্পলোকে দেখা যায় ঘরের চারপাশে ছোট ছোট বেতের ঝাঁপিতে ভর্তি অসংখ্য চকচকে গিনি। কে একজন আগাগোড়া কালো পোশাক-পরা লোক নীচু হয়ে এক-একটা ঝাঁপির কাছে আসছে, আর দু হাত দিয়ে সেই ঝাঁপি হতে মুঠো করে গিনি তুলে নিয়ে পরক্ষণেই মুঠো আলগা করে ধরছে—অমনি সমধুর ঝনঝন শব্দ করে সেই সব গিনি কক্ষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ছে।
কিরীটী ছিদ্রপথ দিয়ে সকলকেই তা দেখাল। তারা সবিস্ময়ে দেখল এ যে সত্যই অতুল ঐশ্বর্য!
কিছুক্ষণ বাদে লোকটা পাশের একটা দরজা দিয়ে ঐ ঘর থেকে চলে গেল। অল্পক্ষণ পরেই আবার জেগে উঠল সেই বুকভাঙা চিৎকার।
কোথা হতে চিৎকার আসছে তা জানবার জন্য সকলে ফিরে দাঁড়াল। চিৎকারের শব্দটা ডানদিক হতে আসছে বলে মনে হচ্ছে না? হ্যাঁ, তাই।
সহসা সেই বেদনার্ত চিৎকারকে ড়ুবিয়ে দিয়ে বাজের মতই একটা তীক্ষ্ণ হাসির খলখল শব্দ যেন সেই গুহাগিরিতলে শব্দায়মান হয়ে উঠল– হাঃ হাঃ হাঃ!
দয়া কর! দয়া কর! কার করুণ আবেদন শোনা যায়।
দয়া! হাঃ হাঃ, মনে পড়ে অমর বসু, দিব্যেন্দু সান্যালের সেদিনকার সে হতমানের কথা? মানুষের বুকে ছুরি মেরে তাকে তোমরা শয়তান সাজিয়েছ! দয়া, মায়া, ভালবাসা কিছু সেখানে নেই, সেখানে পড়ে আছে শুধু জিঘাংসা আর প্রতিশোধ।…এবারে সনৎবাবু? এবার তোমাকে কে রক্ষা করবে বন্ধু? কালো ভ্রমরের প্রতিহিংসা—সে বড় ভীষণ জিনিস! চৌধুরীর ভাগ্নে তোমরা। চৌধুরী ফাঁকি দিলেও তোমরা যাবে কোথায়? লক্ষপতি নিরীহ সরল-বিশ্বাসী বাবাকে আমার একদিন তোমার মামাই রাজসিংহাসন থেকে পথের ধুলোয় নামিয়ে এনেছিল, এমনি ছিল তার অর্থপিপাসা! তুমিও অর্থপিশাচ! এমন কি একদিন তুমি তোমার ভাইয়ের বুকেও ছুরি বসাতে পশ্চাৎপদ হওনি। তারপর সকলে মিলে আমাকে সেদিন যে অপমান করেছ, সে অপমানের জ্বালায় এখনও আমার সর্বাঙ্গ জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। আমি সেই দুঃসহ পরাজয়ের গ্লানি কিছুতেই ভুলতে পারছি না।
আমি আমার এই সুদীর্ঘ এগারো বছরের পাপ-দস্যুজীবনে পাপানুষ্ঠানের দ্বারা প্রভূত অর্থ উপার্জন করেছি। ভেবেছিলাম আমার দলে সবচাইতে বিশ্বাসী দেখব যাকে তাকেই সব দিয়ে যাব, কিন্তু দেখলাম সত্যিকারের বিশ্বাসী মেলা এ দুনিয়ায় একান্তই দূরহ ব্যাপার। আমার কাজ শেষ হয়েছে। গত পিতার আমার প্রতিশোধ নেওয়া হয়তো হয়েছে।…এখন আমার এই পাপঐশ্বর্যের মধ্যে তোমাকে বন্দী করে রেখে যাব। তুমি তোমার বাকী জীবনের দিনগুলোর প্রতি মুহূর্তটিতে অর্থগৃধ্মুতার তীব্র অনুশোচনায় তিলে তিলে মৃত্যুর কবলে এগিয়ে যাবে। মত্যুর সেই করাল ভয়াবহ বিভীষিকার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তুমি দেখবে বন্ধু, যে অর্থের জন্য একদিন তুমি তোমার ভাইয়ের বুকে ছুরি বসাতে চেয়েছিলে, সে অর্থ তোমার কেউ নয়! এই পর্যন্ত বলেই লোকটা থামল।
তারপর আবার সে বলতে শুরু করলে, এই দেখছ তপ্ত শলা! এটা দিয়ে তোমার চক্ষু দুটি চিরজীবনের মত নষ্ট করে দিয়ে যাব। অন্ধ হয়ে তুমি তোমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত কর অমর বসু এই গিরিগুহায়।
দয়া কর। দয়া কর। তোমার পায়ে পড়ি।
দয়া! চুপ শয়তান!
অন্য কোন কথা শোনা গেল না। কেবল একটা হৃদয়দ্রাবী করুণ গোঙানি আঁধার-মধ্যে করুণ বিভীষিকায় জেগে উঠল যেন। এমন সময় কিরীটী সবলে সামনের দরজাটির ওপরে একটা লাথি মারল এবং সঙ্গে সঙ্গে রাজু আর সুব্রতও তার ইঙ্গিতে সজোরে ধাক্কা দিতে লাগল। তিনজনের মিলিত শক্তি প্রতিরোধ করবার মত ক্ষমতা সামান্য কাঠের দরজাটির ছিল না—দরজা ভেঙে গেল। হুড়মুড় করে সকলে ঘরের মধ্যে গিয়ে ছিটকে পড়ল।
শয়তান! কিরীটী গর্জন করে উঠল।
ছোট্ট ঘরখানির একপাশে হাতে-পায়ে শিকল দিয়ে বাঁধা অমর বসু। তাঁর চোখ দিয়ে দরদর ধারে তাজা রক্ত গড়িয়ে পড়ছে তখন। বেচারী যন্ত্রণায় অজ্ঞান হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে একটা শিকলে বাঁধা সনৎ।
আর একজন মাত্র লোক ঘরে ছিল, একটু আগেকার সেই বক্তা। সে তখন ওদের দিকে ফিরে তাকিয়েছে। উঃ, কী কুৎসিত তার মুখ! এ বুঝি কোন মাটির নীচেকার কবরখানা থেকে এইমাত্র উঠে এসেছে। যুগযুগান্তরের বিভীষিকা যেন মূর্তিমান হয়ে সচল হয়েছে।
এখানেও এসেছ? তবে মর! বলে মুহূর্তে সেই ভীষণদর্শন লোকটা কোমর থেকে ছোরা বের করে কিরীটীর দিকে ছুড়ে মারল।
কিরীটী চকিতে সরে গেল, ছোরাটা এসে সলিল সেনের পাঁজরায় বিধে গেল।
শয়তান! সুব্রত গর্জে উঠল।
হাঃ হাঃ হাঃ করে হেসে ওঠে কালো ভ্রমর। জামার পকেট থেকে ছোট একটা অ্যাম্পলের মত জিনিস বের করে সেটা পট করে শরীরের চামড়ার মধ্যে বিধিয়ে দিল।
সুব্রত লাফিয়ে গিয়ে কালো ভ্রমরের একখানি হাত ততক্ষণে চেপে ধরেছে।
মূর্খ! পিপীলিকার ওড়বার সাধ! বলে অক্লেশে এক হেচকা টান দিয়ে সুব্রতর দৃঢ়মুষ্টির কবল থেকে আপনাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললে, কাজ আমার শেষ! তারপর হঠাৎ যেন তীব্র যন্ত্রণায় সে আর্তনাদ করে উঠল, উঃ, জ্বলে গেল! তীব্র বিষ! বিষধর কালনাগিনীর উগ্র বিষ!…হ্যাঁ, প্রায়শ্চিত্ত—সারাজীবন যে সহস্র পাপ করেছি তার প্রায়শ্চিত্ত আমি নিজহাতে স্বেচ্ছায় করে গেলাম। তা নাহলে আমার অনুতপ্ত বায়ভূত আত্মা এই মাটির পৃথিবীর শত সহস্র পাপানুষ্ঠানের স্মৃতির দংশনে হাহাকার করে ফিরত।
কালো ভ্রমর আর কিছু বলতে পারল না—টলতে টলতে বসে পড়ল।
কণ্ঠস্বর তার ক্ষীণ হয়ে আসছে।
কম্পিত হস্তে সে নিজের মুখের মুখোসটা টেনে খোলবার চেষ্টা করতে লাগল।
কিরীটী তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে ক্ষিপ্রহস্তে কালো ভ্রমরের গায়ের জামাগুলো খুলে দেবার চেষ্টা করতে লাগল, কিন্তু সফল হল না, পাতলা রবারের মত জামাটা যেন গায়ে এটে বসে আছে এবং তার ভিতর থেকেও দেহসৌষ্ঠব যেন ফুটে বের হচ্ছে লোকটার। সত্যি, কি অদ্ভুত তার দেহের প্রতিটি মাংসপেশী! নিয়মিত ব্যায়ামে সুগোল ও সুষ্ঠু। কিন্তু কি আশ্চর্য, ভীষণ-দর্শন কুৎসিত অন্তরের সঙ্গে দেহের তো কোন সাদৃশ্যই নেই! সকলে বিস্মিত হয়ে তার দেহসৌষ্ঠব দেখতে লাগল।
অতি কষ্টে হাঁপাতে হাঁপাতে কালো ভ্রমর বলতে লাগল, এই বদ্ধ ঘরের বন্ধ হাওয়া ছেড়ে আমি বাইরে যাব।
তখন সকলে ধরাধরি করে তাকে বাইরে নিয়ে এল।
অমর বসু, সনৎ ও আহত সলিল সেনকেও একে একে বাইরের মুক্ত আকাশের তলায় নিয়ে আসা হল।
রাত্রি শেষ হয়ে আসছে। প্রভাতী পাখীর কল-কাকলীতে স্থানটি মুখরিত হয়ে উঠেছে। সকলে এসে কালো ভ্রমরের চারিপাশে ঘিরে দাঁড়াল।
অমরবাবুর জ্ঞান তখনও ফেরেনি।
আঃ, আলো-বাতাস! কিন্তু আমার মৃত্যুর পর আমার এ দেহটা নিয়ে আর টানাটানি করো না। ঐ ইরাবতীর শান্ত শীতল জলে ভাসিয়ে দিয়ে যেও। বলতে বলতে কালো ভ্রমর শ্লথ কম্পিত হস্তে নিজ মুখের মুখোশটা টেনে নিল।
তার মুখ দেখে সকলে বিস্ময়ে স্তম্ভিত হতবাক হয়ে পড়ল। তারা সকলে। ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে না তো!
সলিল সেন যন্ত্রণা ভুলে গিয়ে চিৎকার করে উঠল, ডাক্তার সান্যাল? এ কি!
হ্যাঁ, আমিই ডাক্তার সান্যাল! কালো ভ্রমর কোনমতে অস্পষ্ট ভাবে জড়িয়ে জড়িয়ে কথা কটা বললে।
তখন প্রভাতের রাঙা সূর্য মেঘের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিয়ে উঠছে।