এই শোনো আমি কিন্তু কাল থেকে ৭ দিন আউট অফ নেটওয়ার্ক থাকবো। ৭ দিন কোন কথা হবে না।
কথাটা শুনেই প্রিয়ন্তি ক্ষেপে গেলো।৭ দিন মানে!কয়েকদিন আগেই না আসলেন সমুদ্র থেকে? আবার কেনো!! আপনার সমস্যাটা কি? মানুষ কি আর চাকুরী করে না!!খালি দুই দিন পর পর আমাকে একা রেখে এইভাবে আউট অফ নেটওয়ার্ক এ চলে যান।নাহ আপনাকে বিয়ে করা যাবে নাহ।ডিসিশন ফাইনাল। একটা মানুষ এত বোরিং এবং বেরসিক কিভাবে হয়। আপনাকে বিয়ে করলে আমার জীবনটাই শেষ!!!
–আরে বাপ এইটা তো আমার চাকুরী তাই না!! অর্ডার আসলে তো যেতেই হবে। বেতন কি এমনি এমনি দিবে নাকি!!!
–এই বাপ বাপ করেন কেনো!!! বউ বলেন বউ।
–একটু আগেই না বললা যে বিয়ে করবা না এখন আবার বউ বলতে বলো কেনো!!??
–উফফ আপনার এতকিছু বুঝতে হবে না। খালি বেশি কথা বলেন।গাঁধা একটা। আজকে কিন্তু অনেকক্ষন কথা বলতে হবে আমার সাথে প্রতিদিন তো দশ মিনিট কথা না বলতেই ঘুমিয়ে যান। আজকে ঘুমিয়ে গেলে কিন্তু ব্রেক আপ বলে দিলাম।
–এই শোনো কোন এক মনীষী বলেছেন যাকে ভালোবাসো তাকে ঘুমাতে দাও।সো তোমার উচিৎ আমাকে ঘুমাতে দেওয়া।
–আহা তাই নাকি!! তো কোন মনীষী বলেছে আমাকে নাম বলেন তো শুনি। একবার শুধু আপনার সাথে আমার বিয়েটা হতে দেন তারপর রাতে আপনি কিভাবে ঘুমান আমি দেখবো।!! প্রতিদিন এর মত কথা বলতে বলতে আমি আবারও ঘুমিয়ে গেলাম।আমি জানি প্রিয়ন্তি বেশীক্ষন রাগ করে থাকতে পারবে না।
জাহাজ cast off এর পর আউট অফ নেটওয়ার্ক এ যাওয়ার আগে মা এর সাথে কথা বলে প্রিয়ন্তিকে কল দিলাম।শুধু বললাম যে ভালোভাবে থেকো, সাতদিন পরে এসে কথা হবে। প্রিয়ন্তি বললো সাবধানে থাকবেন,সমুদ্রে অনেক ঠান্ডা, সব সময় গরম কাপড় পড়ে থাকবেন,ঠিকমতো খাবার খাবেন,ঠিকমত ঘুমাবেন আর সময় পেলে আমার কথা একটু মনে করবেন।
— আমি বললাম আচ্ছা সব সময় যে তুমি সমুদ্রে যাওয়ার আগে এই যে একগাদা ইন্সট্রাকশন দাও তোমার কি বিরক্ত লাগে নাহ !!??
— আপনি বুঝবেন না।আপনি এমন একটা মানুষ যার প্রতি আমার কখনো বিরক্তি আসবে না!!!
ফোন রাখার পর কিছুক্ষণ ভাবলাম যে একটা মেয়ের ধৈর্য্য আর ভালোবাসা কতটা বেশি হলে আমার মত এই রকম বোরিং আর বেরসিক মানুষকে এত সুন্দরভাবে সহ্য করতে পারে।মে বি আমার ভাগ্য হয়ত একটু বেশিই ভালো যে প্রিয়ন্তির মতো এমন লক্ষী একটা মেয়ে আমার লাইফে এসেছে।
গত কয়েকদিন ধরেই সমুদ্র অনেক উত্তাল।মাথাটা প্রচন্ড ঝিম ধরে আছে। রাত ৪টা ৩০মিনিট।ডিউটি চলছে। অপারেশন নির্মূলের শেষ দিন।উত্তাল সমুদ্র আর প্রচন্ড গতির বাতাসের মধ্যে জাহাজ বর্ডার লাইনে পেট্রোলিং করছে।উত্তাল সমুদের ঢেউ জাহাজের ফক্সলে আচড়ে পড়ছে।ব্রিজের পিলোরাসটা শক্ত করে ধরে দাড়িয়ে আছি।বাহিরে এত বাতাস আর ঠান্ডা তবুও আমি ঘেমেই চলছি। নাহ হাল ছাড়লে চলবে না।যেভাবেই হোক রাতটা পার করতে হবে।এখন শুধু সকাল হওয়ার অপেক্ষা।
জাহাজ দুপুরের পর Enter Harbour শুরু করল।এইবার ফেরার পালা। আর মাএ ৩০ মাইল পরেই মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে। মোবাইলটা অন করতেই লক স্ক্রিনে প্রিয়ন্তির হাসিমুখটা চোখে পড়ল।কেউ একজন আমার জন্য,আমার কথা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ভাবতেই এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করতে লাগলো। আমি জানি কেউ একজন ফোনটা আজ হাতে নিয়েই বসে আছে।কল পাওয়ার সাথে সাথেই রিসিভ করেই কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলবে “আপনি ঠিক আছেন তো? সেই কখন থেকে আপনার জন্য অপেক্ষা করছি!! আপনি আমাকে এত পেইন কেন যে দেন!!! আপনি আসলেই অনেক খারাপ মানুষ। নাহ আপনাকে বিয়ে করা যাবে না।ডিসিশন ফাইনাল।আপনাকে বিয়ে করলে আমার জীবনটাই শেষ।” –That’s i call a million dollar Feelings.
অপেক্ষার পালা প্রায় শেষ। অপেক্ষা আছে বলেই হয়ত ভালোবাসা বা প্রেমে পরার অনুভুতিগুলো এত সুন্দর।বেঁচে থাকুক পবিত্র ভালোবাসাগুলো। দূর থেকে শুনবো তোমার কন্ঠস্বর,বুজবো তুমি আছো…তুমি আছো.. ভালোবাসি প্রিয়ন্তি ….