বোন

বোন

আমার কলেজ আর আপুর ভার্সিটি পাশাপাশি। কলেজ শেষ করে যখন বাসায় ফিরতেছি, তখন শুনি কে যেন আমায় পিছন থেকে প্রিয়া,প্রিয়া বলে ডাকছে। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি আপু আর তার কয়েকটা বান্ধবী মিলে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে। আমি রেগে-মেগে আপুর কাছে গিয়ে বললাম,

— বাসায় ফাইজলামি করিস মেনে নেওয়া যায়।তাই বলে রাস্তাঘাটে ফাইজলামি করবি? আমার নাম পিয়াস। তুই আমায় প্রিয়া বলে ডাকিস কেন? আপু মুচকি হেসে বললো,

– আমার নাম সায়মা কিন্তু তুইও তো আমায় সোলেমান বলে ডাকিস আমি তখন আপুকে বললাম,
— তাই বলে সবার সামনে আমাকে প্রিয়া বলে ডাকবি? তোর এখন বুঝা উচিৎ আমি এখন ছোট না। আমি এখন কলেজে পড়ি। আমার একটা মান- সম্মান আছে আমার কথা শুনে আপুর বান্ধবী রিমি মুচকি হেসে আপুকে বললো,

~ সত্যিই তো, তোর ভাইটা এখন অনেক বড় হয়ে গেছে। তোর ভাই ছোটবেলায় ছিলো একটু বলদ টাইপের কিন্তু এখন বড় হবার পর হয়ে গেছে একদম হট আর সেক্সি। ইচ্ছে করছে তোর ভাইকে এখনি জড়িয়ে ধরে চুমু খাই এইকথা বলে রিমি আপি সত্যি সত্যি আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। আমি ছিঃ ছিঃ বলে কোন রকম দৌঁড়ে পালালাম বাসায় এসে দেখি মা রান্না করছে। আমি রান্নাঘরে গিয়ে কলেজ ব্যাগটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে মাকে বললাম,

— তোমার মেয়ে কতগুলো খারাপ মেয়েদের সাথে মিশে একদম খারাপ হয়ে গেছে..মা অবাক হয়ে বললো,
– মানে?আমি তখন চিৎকার করে বললাম,
— তোমার মেয়ে আর তার বান্ধবীরা মিলে রাস্তাঘাটে ছেলেদের সাথে ইভটিজিং করে..মা তখন আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
– কোন ছেলের সাথে ইভটিজিং করেছে?

আমি আর লজ্জায় বলতে পারি নি যে স্বয়ং আমার সাথেই ইভটিজিং করেছে। কারন আমি যদি এটা বলি তাহলে মা হাসাহাসি করবে রাতে বাসায় খাসির গোশত রান্না হয়েছে। আমি ছোটবেলা থেকেই খাসির গোশত খেতে পারি না কারন আমার কাছে কেমন যেন একটা গন্ধ লাগে। সবাই খাসির গোশত দিয়ে ভাত খাচ্ছে আর আমি বাধ্য হয়ে ডিম ভাজি দিয়ে খেলাম। আপু খাসির হাড্ডি চিবাতে চিবাতে মাকে বললো,

– মা, তরকারিটা খুব মজা হয়ছে। আমি মনে করি পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার হলো খাসির গোশত। কিন্তু কিছু কিছু বিরল প্রজাতির মানুষ খাসির গোশত খেতে পারে না। কথায় আছে না, কুকুরের পেটে ঘি হজম হয় না.. আমি বুঝতে পারছিলাম আপু আমাকে রাগাবার চেষ্টা করতেছে। কিন্তু আমি না রেগে তাড়াতাড়ি কোনোরকমে আমার খাবারটা শেষ করে আমার রুমে আসলাম। একটু পর ফিরে এসে মাকে বললাম,

–মা, বাবা খাসির গোশত কোথা থেকে এনেছিলো? মা তখন বললো,
– কেন, কাওরান বাজার থেকেই তো এনেছে। আমি তখন আপুর সামনে এসে আপুকে বললাম,
— একটা ভাইরাল নিউজ শুনবি? আপু বললো,
– কি?

আমি তখন পড়তে শুরু করলাম, ” কাওরান বাজারের কিছু অসাধু কসাই যারা কুকুরের মাংসকে খাসির মাংস বলে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত সেসকল কসাইদের ২ লাখ টাকা করে জরিমানা আর ৬ মাসের জেল দিয়েছে! “আপু নিউজটা শুনে হা করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি তখন মুচকি হেসে আপুকে বললাম,

— মাত্র যে গোশতটা খেয়েছিস সেটা কি আদৌ খাসির গোশত না কি কুকুরের গোশত সেটা একটু ভেবে দেখ্!

আপু ভাতের প্লেটটা ফেলে দৌঁড়ে ওয়াশরুমে গেলো। আপু ওয়াশরুমে ভিতর বমি করছে আর আমি ওয়াশরুমে বাহিরে দাঁড়িয়ে থেকে আপুকে বলতেছি,

— তুই ঠিকিই বলেছিস কুকুরের পেটে ঘি হজম হয় না কলিংবেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলে দেখি আপু। আপুর দুইহাতে শপিং ব্যাগ। আমায় দেখে আপু মুচকি হেসে বললো,

– আজ টিউশানির টাকা পেয়েছি। তাই তোর জন্য কিছু শপিং করে নিয়ে আসলাম। ওয়্যার হাউজ থেকে প্যান্টটা ২২০০ টাকা দিয়ে, স্টাইল পার্ক থেকে শার্টটা কিনেছি ১৫০০ টাকা দিয়ে আর টিশার্টটা কিনেছি ইজি থেকে ১০০০ টাকা দিয়ে। আমি আপুর হাতথেকে ব্যাগগুলো নিয়ে দৌঁড়ে আমার রুমে চলে গেলাম। প্রতিটা কাপড়-চোপড় আমার পছন্দ হয়েছে। হঠাৎ মনে হলো আপুকে তো ধন্যবাদ দেওয়া হয় নি। আপুকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য যখন আপুর রুমে গেলাম তখন শুনি মা আপুকে বলছে,

~ এত দামী কাপড় কিনে দেবার কি দরকার ছিলো? আপু তখন হাসতে হাসতে বললো,

– আরে কে বলেছে এত দামী কাপড় এইগুলো? মার্কেটের সামনে ফুটপাতের কাপড় এইগুলো। আমি মার্কেটে যাওয়ার সময় বাসা থেকে পুরাতন শপিং ব্যাগ গুলো নিয়ে গিয়েছিলাম। ফুটপাত থেকে কাপড় কিনে ও্যায়ার হাউজের আর স্টাইল পার্কের শপিং ব্যাগের ভিতর ভরে নিয়ে আসলাম আর তোমার রামছাগল ছেলে মনে করেছে এইগুলো ব্র্যান্ডের কাপড়। আপুর মুখ থেকে কথাগুলো শুনে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো। কাপড় গুলো এনে আপুর মুখে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললাম,

— তোর মত দুই নাম্বার বোন থাকার থেকে না থাকা আরো বেশি ভালো। তারপর মাকে বললাম,
— তাড়াতাড়ি তোমার মেয়েকে বিয়ে দিয়ে এই বাসা থেকে বিদায় করো। কথা গুলো বলে যখন রুম থেকে বের হয়ে যাবো তখন আপু পিছন থেকে বললো,
– আমি বিয়ের পর যখন অন্যের বাসায় চলে যাবো তখন বুঝবি আমি কি ছিলাম| ৮ মাস পর….

আপু সেদিন ঠিকিই বলেছিলো। আজ আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি আপুর শূন্যতা। আপুর বিয়ে হয়েছে আজ ৩ দিন হলো। রাতে যখন খেতে বসি তখন আমি আপুর খালি চেয়ারটার দিকে শুধু তাকিয়ে থাকি। কলেজ থেকে আসার সময় ফুচকার দোকানটার দিকে তাকিয়ে থাকি। যে কাপড় গুলো আপুর মুখে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলাম সেগুলো এখন খুব যত্ন করে পরি। পাশের জেলাতেই আপুর বিয়ে হওয়ার কারনে খুব ঘনঘন আপুর কাছে চলে যাই। আপুর শ্বশুরবাড়ির লোকজন বিষয়টা প্রথমে ভালোভাবে নিলেও এখন আর ওরা তেমন ভালো ভাবে নিচ্ছে না ব্যাপারটা। H.S.C পরীক্ষার পর আপুর বাসায় গেলাম। আমার আসা দেখে আপু দুলাভাইকে বললো,

-পিয়াস এসেছে তুমি গরুর গোশত কিনে নিয়ে এসো তো। ফ্রীজে শুধু খাসির গোশত আছে। পিয়াস খাসির গোশত খেতে পারে না। দুলাভাই তখন বললো,

~তোমার ভাইতো দুইদিন পর পরই আসে। ওকে আবার নতুন করে আপ্যায়ন করতে হবে না কি? আমি এখন গরুর গোশত আনতে পারবো না। যা আছে তাই রান্না করো দুপুরে খাবারের সময় খেয়াল করে দেখি আপুর চোখমুখ লাল হয়ে আছে। আমি খাসির তরকারি দিয়ে ভাত খেতে খেতে আপুকে বললাম,

— আপু তুই ঠিকিই বলেছিলি। খাসির গোশতের তরকারি হলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ খাবার। আমি বোকার মত এতদিন শুধু-শুধু খাসির গোশত খাই নি দুপুরের খাওয়া শেষে আমি যখন বিদায় নিবো তখন আপু আমায় বললো,

– জানিস, এই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অভাগা হলো মেয়ে জাতি। ওরা জন্মের পর যে মানুষগুলোর মুখ দেখে বড় হয় সেই মানুষগুলোকেই বিয়ের পরে পর করে দিতে হয়। আমি তখন আপুকে বললাম,

— আপু আমি আসি রে। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে.. আপু চোখের কোণে জমে থাকা জলটা মুছতে মুছতে বললো,
– পিয়াস, তুই সত্যিই বড় হয়ে গেছিস রে….

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত