সার্কাস

সার্কাস

হ্যালো বাবু, আজ একটু হসপিটালে আসতে পারবা? আল্ট্রাস্নো করতে হবে। ঘুমের ভিতরে প্রেমিকার মুখ থেকে “আল্ট্রাস্নো”কথাটা শুনেই লাফ দিয়ে উঠলাম। কাপা কাপা গলায়বললাম, নওরীন তুমি এসব কী বলছো!

-কী বলছি মানে! বোঝ না তুমি আমি কী বলছি? তুমারএকসাথে দু কান ই গেছে সেটা তো আর আমি জানিনা। বোঝাবুঝির কিছু নাই, হসপিটালে চলে আসো দ্রুত।ছেলে বাবু নাকি মেয়ে বাবু হবে সেটা চেক করতেহবে।

-হ্যালো নওরীন, হ্যালো…হ্যালো। ফোনটা কেটে দিল এভাবে! প্রেমিকার মুখ থেকে আল্ট্রাস্নোর কথা শুনেআমারই মাথা ঘুরতে শুরু করল, সাথে বমি বমি ভাব তো আছেই। কিন্তু এটা কী করে সম্ভব? মেলামেশা তো করেছি শালীনতা রেখেই, তবে নওরীন কেন আমার সাদা চরিত্রে দাগ দিচ্ছে! না কিছু মাথায় ঢুকছে না। নেট অন করে ফেসবুকে ঢুকলাম বন্ধু রাজুকে সব খুলে বলতে হবে। এই মুহুর্তে ও পারে আমাকে গাইড করতে। ফেবুতে ঢুকেই দেখি নওরীন স্ট্যাটাস দিয়েছে। স্ট্যাটাসে

লেখা- ফিলিং মাদারহুড! OMG, এ কেমন মুসিব্বতে ফেললা আমাকে! সেখানে কয়েকটা মেয়ের কমেন্ট এসেছে –

অ্যানি: দেখিস মেয়ে বেবী হবে.. শোন আমার ছেলেরসাথেই কিন্তু বিয়ে দিতে হবে।

তন্বী: আমি আন্টি হব! ইয়ায়ায়ায়ায়ায়া

সুমাইয়া: দোস্ত পার্টি চাই.।

কণা: আমি বললাম ছেলে বাবু হবে, অ্যানি আর তুই বাজিতে হারবি। হারলেই খাওয়াবি কিন্তু। প্রতিটা কমেন্টে কান্দার রিয়েক্ট দিয়ে চলে আসলাম। মাথা খারাপ হয়ে গেছে নওরীনের স্ট্যাটাস দেখে। রাজুকে সব খুলে বললাম ও আমাকে বিশ্বাস ই করল না! এতদিন আমাকে এই চিনল! নওরীন কী তবে অন্য কারোর দায় আমার ওপর চাপাচ্ছে! ছিঃ ছিঃ! নওরীন ওমন মেয়ে না। আমি এসব কী ভাবছি। কিন্তু আমিও তো ওরকম না তাইলে কেমনে কী! সাত-পাচ ভাবতে ভাবতে হসপিটালে গেলাম। হসপিটালে গিয়ে দেখি নওরীন মন খারাপ করে বেঞ্চের ওপর বসে আছে। আমি ভয়ে ভয়ে কাছে গিয়ে বসলাম। নওরীনের কাছে কিছু বলার আগেই সে কাঁদতে শুরু করল! অনেক কষ্টে কান্না থামিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে? সে চোখ মুছতে মুছতে বলল……

– দেখো এরা বলছে, এরা নাকি এখানে আল্ট্রাস্নো করেনা। তাইলে কিভাবে বুঝব আমাদের ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে? আমার গলা শুকিয়ে আসল। এই মুহুর্তে গলাটা ভিজানো জরুরি। নওরীনকে বললাম, আচ্ছা চলো ওই দিকে গিয়ে একটা জুস খেতে হবে। নওরীন আমার দিকেরাক্ষসীদের মত চেয়ে চিৎকার করে বলল….

-আমাদের ছেলে বাবু হবে নাকি মেয়ে বাবু হবে সেটা নিয়ে আমি চিন্তায় মরে যাই আর তুমি আছো জুস খাওয়া নিয়ে! বিয়ের পর বেবি হলেও তো তুমি এমন করবা!

-বিয়ের পরে বেবি দিয়ে আর কী করব, বেবি তো এখনই হয়ে যাচ্ছে। নওরীন কাঁদো কাঁদো গলায় বলল…
– এটা তো আর সত্যি সত্যি তোমার বেবি না।
– মানে? একটু আগে বললা আমাদের বেবি। আর তুমি অন্যর বেবি আমার উপরে চাপিয়ে দিচ্ছো কেন আমি বুঝলাম না! এই তুমি কী বিবাহিত? অন্য কারো সাথে প্রেম আছে তোমার? আমি তো কিছু করিনাই ।

-ছিঃ ছিঃ তোমার মেন্টালিটি এত নিচু! তুমি আমাকে এতটাই খারাপ ভাবো? আমাকে চরিত্রহীনা ভাবো? তোমার মত সস্তা, নিচুমনার সাথে আমার পক্ষে সম্পর্ক রাখা পসিবল না। আর শোন, আল্ট্রাস্নো আমার আ্যনিলাকে করাতে এনেছিলাম, আ্যনিলার মেয়ে বিড়াল বাবু হবে নাকি ছেলে বিড়াল বাবু হবে সেটাই জানতে এসেছিলাম। তুই আর জীবনেও আমার সাথে দেখা করবি না ছোটলোক কোথাকার।

নওরীন নওরীন শোন শোন। নাহ তাকে আটকানো গেলোনা আর। ভেবেচিলাম বাসায় ফিরে ঠান্ডা মাথায় তাকে বোঝাবো। ফেবুতে ঢুকেই দেখি ব্লক দিয়ে দিয়েছে সে! ফোন থেকেও আমাকে ব্লক দেয়া! এদিকে ছ্যাকা খাইয়া আমি চ্যাগাইয়া আছি, সকাল বিকাল কান্দা আসে। নওরীনের ছবি দেখে দেখে দেবদাসের মত ডায়ালগ ঝাড়ি ইদানীং। রুমমেট থেকে শুরু করে ময়লার ঝুড়ি নেয়া রবিউল ভাই, রান্না করা খালেদা আপা সবাই আমাকে বোঝায় যাতে আমি নওরীনকে ভুলে যাই, উল্টাপাল্টা কিছু না করি। সবাই ভাবে আমি উল্টাপাল্টা জিনিস খেয়ে দেবদাস ডায়ালগ মারি! আসলে আমি কান্দি ঠিক আছে তবে ঐসব খাই না।

নওরীন কি কি করে সেটা দেখার জন্য একটা ফেইক আইডি খুললাম। ওমা, এ কি।রিলেশনশিপ স্ট্যাটাসে লেখা “ইন এ রিলেশনশিপ উইথ শাকিল”! ধাক্কাটা আরো জোরে খেলাম যখন ছেলের আইডিতে গেলাম, কেননা এই ছেলেকে সে মামা বলে ডাকত! এই মামার সাথে সে দেড় দুই ঘন্টা মেসেঞ্জারে কলে থাকত! আমি জিজ্ঞেস করলেই বলত, মামা লাগে আমার! চুপচাপ ফেবু থেকে বেরিয়ে আসলাম, চিন্তা করতে লাগলাম কী করা যায়। নওরীন আর আমার তোলা ছবিগুলো শাকিলকে পাঠিয়ে দিলাম, সাথে আমাকে দেয়া নওরীনের মেসেজ গুলো আগেই স্ক্রিনশট করে রাখাছিল।

সে গুলো পাঠিয়ে দিলাম, মেসেজগুলো ছিল এরকম- “শুভ, আমি শুধু তোমাকেই লাভ করি বাবু, তোমাকে ছাড়া আর কাওকে বিয়ে করা পসিবল না। যদি কারো সাথে বিয়ে হয় তাহলে সে আমার দেহ পাবে, আমার মন পাবেনা। দরকার হলে তাকে খুন করে তোমার কাছে চলে আসব” বাহ! দশ মিনিট হতে পারলনা তার আগেই নওরীন আমাকে ফোন দেয়া শুরু করেছে! ফোন বেজেই চলেছে, না আজ আর ফোন ধরব না। নে মামুর লগে প্রেম কর ধুমাইয়া, আমি থাকি ঘুমাইয়া।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত