অচেনা বউ

অচেনা বউ

সাত সকালে খালামনির ফোনে পেয়ে চোখ ডলতে ডলতে ঘুম ভাঙলো আমার। কি কপাল আমার বয়স সবে ২৩ এখনো বিয়ের কথা ভাবলামই না অথচ আমায় আদর করে জামাই ডাকার দায়িত্বটা সেই ১৬ বছর আগেই তিনি নিয়ে নিয়েছেন। যেদিন উনার ঘরে একটা মেয়ে জন্ম নিলো আর আমার শ্রদ্ধেয় মা জননী উনার বোনের আদরের ঘরের দুলালীকে দেখতে গেলেন সেদিনই আমি ফেসে গেলাম।

ভাবা যায় সদ্য জন্ম নেয়া এক কন্যা সন্তানের সাথে মাত্র ৭ বছর বয়সী এই নাবালক আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলল তারা দুই বোন। কি নিষ্ঠুর তারা! তখন তো কিছু বুঝতাম না প্রতিবাদ ও করতে পারিনি খালামনি আমায় জামাই ডাকত তাই আর লজ্জায় ও বাড়িতে যাওয়া হয়নি। এমনকি আমার সেই শিশু বউটিকেও আমি দেখতে যায়নি বড্ড লজ্জা পেয়েছিলাম। অবশ্য তার পর-পরই খালামনিরা আমেরিকা চলে গেছে। বড্ড বাচা বেচে গেছি আমি। কিন্তু ইয়ে মানে আমার হবু শাশুড়ীমা মাঝে মধ্যেই আমার সাথে কথা বলতেন আম্মুর ফোন দিয়ে। যদিও আমার তেমন একটা ইচ্ছে করেনা কিন্তু বলা লাগে আরকি।

তাছাড়া আমি অন্য কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছি এমন কিন্ত না সবে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছি আমার একটা লক্ষ আছে তাই ওসব সম্পর্ক টম্পর্কের দিকে খেয়াল নেই আমার। আজকে হবু শাশুড়ীর ফোন করার পেছনে একটা কারণ আছে আর সেটা হলো আমার শিশু বউটি আই মীন আমার খালাত বোন সাইমা আজ দেশে আসছে। তার পরীক্ষা শেষ আমি যেন আমার বউকে এয়ারপোর্টে নিতে যায় আর ওকে দেশটা একটু ঘুরে দেখায় কদিন। বাহ কি মহান দায়িত্ব পেয়ে গেলাম আমি। যাব কি যাব না ভাবছি এরই মধ্যে রুমে আম্মুর প্রবেশ-

-“কোথায় আমার সোনা ছেলেটার ঘুম কি ভেঙেছে কত রাত করে ঘুমিয়েছে আমার লক্ষীটি। আহারে কত বেলা হয়ে গেছে দেখো তো আমার সোনা-মোনাটার ক্ষুধা লেগে গেছে নিশ্চয় ওঠ বাবা ওঠ তোর পছন্দের নুডুলস রান্না করেছি আয় ফ্রেশ হয়ে খাবি আয়।”

ঘটনা কি আম্মাজান এত খোশামদ করতেছেন কেন? যেই আম্মা সাত সকালে ঝাড়ি মেরে ঘুম ভাঙায় আজ সেই মা আমায় এত আদুরে ডাক দিচ্ছে তো “ডাল মে কুচ কালা হ্যায়।” শাশুড়ীমা আমায় ফোন করার আগে আম্মারে জানায়নি তো?

-ওহ আম্মু সকাল সকাল আলাপ মাইরো না তো কি হেল্প লাগবে সেটা বলে ফুটো।

-ওমা! আমার সোনা ছেলেটা কি বলে এসব? আমার ছেলেটা কত বুদ্ধিমান সব বুঝে গেছে। যা বাবা ওঠ তারাতাড়ি নাস্তা করে এয়ারপোর্টে যা আমার লক্ষী বউমা আসছে ওকে বাসায় নিয়ে আয় তো।

-তোমার বউমা মানে এই আম্মা আমার আবার ভাই আসলো কোথা থেকে? আগে তো বলোনি আমার ভাইয়া আছে আর তিনি বিয়েও করে ফেলেছে।

-চুপ কর হারামজাদা। তোর কোন ভাই নাই। তুই আমার একমাত্র সন্তান। সাইমা মানে তোর হবু বউ আজ প্রথমবারের মত দেশে আসছে তাড়াতাড়ি উঠে এয়ারপোর্টে যা আর আমার বউমাকে নিয়ে আয়। এই নে গাড়ির চাবি আর শোন তোরা চাইলে এদিক সেদিক একটু ঘোরাফেরাও করে আসতে পারিস। তাড়াতাড়ি বের হ কইতাছি। বলেই তিনি রুমম থেকে চলে গেল।

ওহ ঘটনা তাইলে এইটা। কত আদুরে ডাক কত ভালবাসা। অন্যদিন গাড়ির চাবি চাইলে বকুনি শুনি ঘোরার কথা তো মুখেই আনা যেতনা আর আজ চাবি হাতে দিয়ে সারাদিন ঘোরার অফার দিচ্ছেন মাদার বাংলাদেশ। কি করি যাবনা সেই সাধ্য কি আমার আছে? অতপর চোখে মুখে পানি দিয়েই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম এয়ারপোর্টের দিকে। কুর্মিটোলা আসার পর আমার মনে হলো বাস্তবে তো নয় এমনকি মহারানীর ছবিটাও আমি দেখিনি আর মোবাইলটাও নিয়ে আসিনি যে ফোন দেবো এখন এই সাইমা নামের একজনকে কোথায় খুজে পাবো এয়ারপোর্টে? বাসায় ঘুরে যাব সেই সময়ও নেই আপাতত ষ্টেশনে যায় পেলে পাব না পেলে নাই আমার এত বউ খোজার ইচ্ছে নাই। এয়ারপোর্টে অনেক সময় দাড়িয়ে আমি কে জানে আমার বউ কোনটা ভাবতে গেলেও হাসি আসে প্রথমবারের মত বউকে নিতে আসছি কিন্ত তারে চিনিও না আর মোবাইল ও নেই।

গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে থাকতে থাকতে একটা পরীর দিকে নজর গেল আমার। এটা নিশ্চয় কোন মেয়ে নয়। পৃথিবীতে এই প্রথম কারো চেহারা আমার মনে ধরেছে। অপরূপ মায়াবি চাহনি মুখে বিরক্তিভরা ভাব নিয়ে আমার দিকেই চেয়ে আছে। মেয়েটাও সামনে থেকে সরেনা আর আমিও কোনদিকে যাইনা। বেলা গড়িয়ে গেছে আমার বউকেও তো দেখিনা। মেয়েটা কার সাথে যেন মোবাইলে কথা বলে আমার কাছে এসে অনুরোধের সুরে মিষ্টি করে বলল, আমি যেন তাকে মিরপুর পর্যন্ত লিভ দিয়ে দেই। এতো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! কিসের কি বউ বাদ দাও সব মেয়েটাকে লিভ দাও পরে হবে সব।

মনের দরজা খুলে মেয়েটাকে গাড়িতে বসিয়ে মিরপুরে লিভ দিতে যাচ্ছি। কথায় কথায় জানতে পারলাম মেয়েটার নাম সুবাহ। আর সে অনলাইনে মিরপুরে একটা হোটেল বুক করেছে এখন আপাতত সেই হোটেলে নামিয়ে দেয়ায় আমার কাজ। হোটেলে ছাড়ার সময় মেয়েটার ফোন নাম্বার নিয়ে নিলাম সহজেই। বাসায় আসতেই আম্মু অভিমান দেখিয়ে বললো বউ আমায় না পেয়ে পরের ফ্লাইটে নাকি আমেরিকা চলে গেছে। মনে মনে খুশি হচ্ছিলাম কিন্ত মাকে বলা যাবেনা সেটা। আপদ বিদেয় হয়েছে এখন সুবাহর সাথে বিয়েটা ঠেকায় কে আমার।

কি অদ্ভুদ ব্যপার জীবণে প্রথমবারের মত হবু বউকে নিতে গিয়ে প্রথম প্রেমের শিকার হলাম আমি ইতিহাসে এটা এক বিরল ঘটনা। দুদিন কথা বলতেই সুবাহ কেমন গলে মোমের মত হয়ে গেল। বিয়ের জন্য রাজিও হয়ে গেল। এবার আম্মা আর তার বোনরে উচিত শিক্ষা দেয়া যাবে। না জানিয়ে সুবাহ কে বিয়ে করে ঘরে আনবো আর সাইমা নামের হবু বউটার নাম কেটে দেব চিরতরে যেই ভাবনা সেই কাজ সুবাহকে বিয়ের জন্য রাজি করিয়ে ফেলেছি।

কাজী অফিস থেকে বউ সাথে ঘরে ফিরেছি আমি। ঘটনা কি আমার পাশে নতুন বউ দেখে আম্মার কোন ভাবান্তর নেই যে। পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে সুবাহ মায়ের হাত ধরে রুমে চলে গেল। এক-দুই মিনিট পরে জানালা দিয়ে তাকিয়ে সালা আমি তো অবাক! একজন আরেক জনের হাতে তালি জমিয়ে খুব হাসাহাসি করছে যেন তারা কোন লটারি জিতেছে। পুরো বোকা বনে গেলাম আমি। বাইরে এসে আমার সেই বোকা চেহারা দেখে সুবাহ আর আম্মা আরো অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে।

-রাজ বউমার নাম জানিস তো সাইমা সুবাহ মিম খুব সুন্দর তাই না? হা করে তাকিয়ে অবাক আমি।

-বউ এর নাম সাইমা সুবাহ মিম তো এত হাসির কি আছে?

-আহারে দেখেছিস সাইমা ধ্যাততেরি কা দেখছিস সুবাহ তোর স্বামীটা কত সহজ সরল কিছু বোঝেনারে আমার ছেলেটা। ওরে আমার বোকা ছেলেটা এটাই সাইমা, এটাই সুবাহ মানে সাইমা সুবাহ মিম আমার বোনের মেয়ে মানে হলো এটাই তোর হবু বউ ছিল। সাইমা তোরে আগে থেকেই চিনত আর ষ্টেশনেও দেখে চিনতে পেরেছিল। কিন্ত তুই তাকে না দেখেই পাত্তা দিতিনা আর ষ্টেশনে তোর হা করে তাকিয়ে থাকা দেখে আমায় ফোন করেছিল সাইমা। আর পরের সব ঘটনাগুলো আমাদের প্ল্যান করারা বুঝলি। কথা শেষ হাসা শুরু করল তারা আবারো।

-বাহ আম্মু বাহ ভারতীয় সিরিয়াল দেখে দেখে বেশ চালাকি আর প্ল্যান শিখে গেছো তো।

আমার কথা শুনে শাশুড়ি বউমা আরো হাসছে মাঝখানে বোকার মত দাড়িয়ে আমি। সালা শেষে কিনা নিজের বউটাই আমার অচেনা লেগেছিল এয়ারপোর্টে?

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত