-আমি আসলে সব বেশ্যাদের মাঝে বড় হয়েছি!
বনানীর এই চমৎকার রেস্টুরেন্টটার ডেকোরেশন অদ্ভূত সুন্দর। কাচের দেয়ালের ওপাশে ফুটপাত পর্যন্ত মসৃণ করে কাটা ঘাসের মখমল ছোঁয়া লাগানো সবুজ বাগিচার মতন। সেই ছোট্ট বাগানে একটি চমৎকার শ্বেত পাথরের মা মূর্তি। কোলে শিশু পুত্র। মাতৃত্বের মধুময় হাসি তার মুখে এত প্রাণময়! ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। কাচের দেয়ালে বৃষ্টির অবিরাম পতনের সাথে মা মুর্তির মধুর হাসি, বৃষ্টি ধোঁয়া ঘাসের ডগার সবুজাভ! এইসবে এত বেশি মগ্ন হয়ে ছিলাম যে, আমার ওপাশের মহিলার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। “বেশ্যা” শব্দটা শুনে ভয়ানক চমকে গেলাম!
আগা গোড়া কালো বোরকায় ঢাকা, চোখে সানগ্লাস, খুলেন নি। তবে সেই হাল্কা কালো সানগ্লাসের ভেতর দিয়েই গভীর কালো কাজল টানা চোখের দিকে তাকালে বুকের ভেতর চিন চিন একটা ব্যথা টের পাচ্ছিলাম।
-আমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি, সেইবার প্রথম বুঝতে পারি আমি নাকি পুরুষদের ঘুম হারাম করা সুন্দর! সেটাও তিন মাস আগে বিয়ে হয়ে আসা আমার কাকীর মুখেই শুনলাম!
আমাদের টেবিলে দুই কাপ কফির মগ। সাথে কিছু কুকিজ। আমার মগ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। সেতুর মগ তেমনি পড়ে আছে। সেতু ছদ্মনাম। এ নামেই ওর ফেসবুক একাউন্ট। প্রোফাইলে তেমন কিছু নেই। বিভিন্ন “কোট” আর কিছু ভিডিও শেয়ার দেয়া। তাও আবার অনলি ফ্রেন্ড করা। প্রোফাইলটিও লক করা। ইসলামী পেজ থেকে কালেক্ট করা কিছু ছবি। এমন বর্নহীন প্রোফাইল কেন লক করা, আমার মাথায় আসেনি। কখন তার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করেছি তাও মনে নেই। তবে একদিন খুব চেষ্টা করেছিলাম দেখতে। কি মনে করে একদিন প্রায় মধ্য রাতে আমাকে ম্যেসেঞ্জারে নক করলেন।
আমি ইগ্নোর করেছিলাম। কিছু লেখালেখির কাজ বাকী ছিল। সেগুলো শেষ করতে চাইছিলাম। আবারো নোটিফিকেশন এলো, উঁকি মেরে দেখতে চাইলাম কে, কি পাঠিয়েছে বা জানতে চায়। ওমা, আমার লেখা কয়েক বছর আগের এক কবিতা পেস্ট করে পাঠিয়েছে। কৌতুহল থেকে খুললাম। কবিতার নিচে লেখা, আমার জীবনের গল্পটা এমনই, কাইন্ডলি শুনবেন? স্বাভাবিক কৌতুহল থেকে উনার প্রোফাইলে ঢু মারলাম। প্রোফাইল দেখে মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া যায় অন্য সবার, এই মেয়ের তেমন কিছুই নেই। আমি জানতে চেয়েছিলাম, বলুন কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি!
এরপর মাঝে মাঝেই আমাদের কথা হত ম্যাসেঞ্জারে। প্রতিবারই এড়িয়ে যেত, যখনই তার গল্প শুনতে চাইতাম। আর সত্যি বলতে, ফেইক আইডি সন্দেহে আমি নিজে থেকে কখনো নক করতাম না। সে কি মনে করে হঠাৎ হঠাৎ উদয় হত তিন চার বা পাঁচদিন পরে। একদিন হঠাৎ করে আমার সাথে দেখা করতে চাইল। মুখোমুখি বলতে চায় সব কিছু। আমি এরপরও ফেইক আইডি নিয়ে সন্দিহান হয়েছিলাম। সে কে, পুরুষ না মহিলা, কি করেন, বিয়ে করেছেন কিনা, বয়স কত এই ধরণের নানা কৌতুহল থাকতেই পারে। আমি সরাসরি বলে দিলাম, আমার পক্ষে তার সম্মন্ধে অগ্রিম কিছু ধারণা না নিয়ে দেখা করতে পারি না। সে নেট অফ করে বিদায় নিল!
আজ ভোরে নামাজ পড়ে লেকের পাড়ে হাঁটতে বেড়িয়েছি, ম্যাসেঞ্জারে টুং টাং শব্দ এলো। দেখি মধ্য তিরিশের একটি অপরূপা সুন্দরী মেয়ের ছবি। ওপেন করে দেখি, সেতুর ম্যাসেজ। আমি সেতু (ছদ্মনাম), বয়স তেত্রিশ। বিবাহিতা। বনানী আমার বাড়ী। আমার আসল নাম…
আমি বেশ লজ্জিত হয়েছিলাম এমন কাট কাট কথায়। ‘স্যরি’ বলে সহজ হতে চেষ্টা করলাম। উত্তরে লিখলেন, বিকেল চারটেয় এই রেস্টুরেন্টে থাকবেন, মুখোমুখি বসে সব গল্প করবেন। আর আমি যেন একাই থাকি ওখানে।
ঠিক চারটে বাজতেই আমি হাজির হয়ে গিয়েছিলাম, যদিও অনেক দ্বিধা দ্বন্দ কাজ করছিলো মনে। রাস্তার পাশের এই টেবিল থেকে কালো বোরকা পড়া একটি হাত আমায় ইশারা করলো! আগের থেকেই অর্ডার করা ছিল কফি আর কিছু কুকিজ। বেশ অস্বস্তি হচ্ছিল। একটু কেশে বললাম, স্যরি, আপনি কি সেতু?
-হুম, বসুন!
কাঁধের থেকে ব্যাগ নামিয়ে বসলাম। বেশ আরামদায়ক সোফা। এই রেস্টুরেন্টে আগে আসা হয়নি। একটু অপ্রস্তুত হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তারপর, কেমন আছেন?
-ভালো, আপনি?
-হুম, আমিও বেশ আছি!
-আপনি কিন্তু আপনার প্রোফাইলে শেয়ার করা ছবির মতন নন একেবারেই!
-সত্যি? তা কি রকম?
বুঝতে পারছিলাম, মেয়েটি (অথবা মহিলা) বেশ চপল, অথবা হয়ত আমাকে সহজ করে নিতে চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না!
-আপনার প্রোফাইলের বিভিন্ন ছবি দেখে একটা ধারণা করেছিলাম। কিন্তু সেসব ভুল!
-তাই? কেমন?
-আপনার ফটোজেনিক চেহারা নয়, ছবিতে একদমই ভাল আসে না। বাস্তবের আপনি ঢের সুন্দর!
এমন প্রশংসা পেলে যে কোন ছেলেই বর্তে যাবে। আমিও গেলাম।
-লজ্জায় একেবারে লাল হয়ে গেলেন!
আমি আমতা আমতা করছিলাম। সত্যি বেশ অপ্রস্তুত হয়ে গেছি। আর কোন অপরিচিতা মেয়ের সাথে একাকী এক রেস্টুরেন্টে, এটা এই প্রথম! শ্রাগ করে স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করলাম, ‘আমাকেই কেন আপনার জীবনের গল্প শোনাতে চাইছেন!’
-আপনি আমার অপরিচিত, আবার খুব অপরিচিতও নন!
-বুঝলাম না!
-আমি আপনার লেখালেখির একজন গুণমুগ্ধ ভক্ত! আপনার লেখার হাত বেশ ভাল লাগে আমার!
আমি আবার লজ্জায় অবনত হলাম, এমন কিছু লেখালেখির সঙ্গে আমি যুক্ত নই। ফেসবুকে কয়েকটি গ্রুপে লেখালেখি করি নিতান্ত সময় কাটাতে। আর আমার লেখার বিশেষ কোন ভক্তও নেই। লিখিও খুব অল্প।
-আপনার লেখা অন্য দশজনের মতো দৈনন্দিন জীবন যাপনের নয়। সাহিত্যের পুরো রস পাওয়া যায় আপনার লেখায়। আপনি খুব গুণী একজন লেখক। খুব কম লেখেন।
-তা সত্যি, খুব কমই লিখি।
-আর আপনার কবিতা ভীষণ রকমের ম্যাচুরড! ভাষার ব্যবহার, উপমার ছন্দময় উপলব্ধি, আর ভীষণ আবেগ দিয়ে লেখা আপনার সব কবিতা!
আমি কি আর বলবো, নিশ্চুপ হয়ে শুনছিলাম। এবার একটু সহজ হলাম বলে মনে হলো, জিজ্ঞেস করলাম, ফেসবুকে আজকাল প্রচুর ভালো লেখক লিখেন নিয়মিতই। সবাইকে বাদ দিয়ে আমাকেই কেন বলতে চাচ্ছেন আপনার গল্প। নাকি কেউ শুনতে রাজী হয়নি! কিছু মনে করবেন না, একটু হার্স হয়ে গেল কথাগুলো।
-না, না! কি যে বলেন! আপনি কি কখনো আমার প্রোফাইল ঘেটে দেখেন নি? আমার ফেসবুক বন্ধু একদমই হাতে গোনা। লেখকদের মধ্যে শুধু আপনি!
-ওহ! তাই বলুন!
-আপনার লেখা পড়ে আমি বুদ হয়ে থাকি। খুঁজে খুঁজে আপনার সমস্ত লেখা পড়ে ফেলেছি। আর জানি না কেন। আমার মন বলছিল আপনাকেই আমার সব গল্প খুলে বলবো। আমি নিশ্চিত ছিলাম না আপনি আসবেন কিনা।
-হুম। আপনাকে ধন্যবাদ। তবে একটু বেশি মূল্যায়ন করে ফেলেছেন। আমি এসবের যোগ্য নই। আপনি শুরু করুন।
-আমি চাই আপনি আপনার কোন এক লেখায় আমার গল্প বলবেন।
-তাই? কথা দিতে পারছি না। হয়তো লিখবো আপনাকে নিয়ে।
-বুকে প্রথম হাত পড়ে আমার সেই কাকার! কাকীই সেই সুযোগ করে দেয়! এই কাকা আমার দাদার কেমন এক দূর সম্পর্কের ভাইয়ের ছেলে। আমার আব্বা জন্ম হবার সময় আমার দাদীর নাকি বিভিন্ন কমপ্লিকেশন ছিল। আর সন্তান নেন নি। পরে আমার দাদা তার সেই দূর সম্পর্কের ভাতিজাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসেন। একান্নবর্তী পরিবার আমাদের।
-হুম…
-আমি সেদিন স্কুল থেকে মাত্রই বাড়িতে ফিরেছি। অনেক্ষণ ধরে কলিং বেল বাজানোর পর কাকী এসে দরোজা খুললেন। আমাকে চোখ টিপ দিয়ে তার ঘরে যেতে বললেন!
সেতু ঠান্ডা হয়ে আসা কফির মগে ছোট একটা চুমুক দিলেন। আমার হাতে নতুন এক কফির মগ। বেশ সুঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। বাইরে বৃষ্টিটা এখনো ধরে আসেনি। টিপ টিপ করে ঝরেই পড়ছে!
-ড্রেস চেঞ্জ করে কাকীর রুমে নক করলাম, দরোজা খুলে আমাকে একটানে ভেতরে নিয়েই বন্ধ করে দিলেন! ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে ঘর! সিগারেটের গন্ধের থেকেও কড়া সে গন্ধ, পরে বুঝেছিলাম ওটা গাঁজা ছিল!
-‘তারপর?’ ভয়ংকর অস্বোস্তি নিয়ে গল্প শুনছি, মিথ্যে বলবো না।
-ওরা একসাথে ব্লু ফিল্ম দেখছিলো! আমি বাকহারা হয়ে তাকিয়ে ছিলাম টিভির পর্দায়!
-মাই গড!
-সেই জানোয়ার কাকা উঠে এসে আমার দুই বুকে চাপ দিয়ে বললেন, ঐ পাশের সোফায় বসে পড় তো! আমি হতবিহবল হয়ে পড়েছিলাম। হাত পা কাঁপছিলো। এক ছুটে দরোজা খুলে বাইরে চলে আসি!
-কি শোনাচ্ছেন!
-উনারা এক সাথে ভার্সিটিতে পড়তেন। পরে জানতে পারি উনারা একসাথে বিভিন্ন ড্রাগ নিতেন সেই ভার্সিটি লাইফ থেকেই। ছোট ছিলাম, তাই মনে নেই কি করে উনাদের বিয়েটা হয়েছিল। তবে বিয়েতে আমার আব্বা আম্মা রাজী ছিলেন না মোটেই। তাদের বিয়ের অনেক আগেই আমার দাদা দাদীর মৃত্যু হয়েছিল। যাহোক, এই ঘটনার পর আমি একেবারে নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিলাম। সারাদিন রাত একটা ভয়ংকর ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমিও আমার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। কাউকেই পাচ্ছিলাম না শেয়ার করার মত। আর পারলেও করতে পারতাম কিনা জানিনা!
আবারো একটু বিরতি নিলেন। সেতুর কালো চশমার আড়ালে কান্না খোঁজার বৃথা চেষ্টা করলাম। মাথা নিচু করে কফির মগে চুমুক দিলাম। খুব আস্তে করে বললাম, ‘বলুন আপনি। আমি শুনছি।‘
-এই ঘটনার বছর চারেক পর অনেক ঝগড়াঝাটির মধ্যে বাবা উনাদের বের করে দেন। নিত্য পুলিশ এসে ঝামেলা পাকাতো। উনারা নাকি ড্রাগ ডিলার হিসেবেও কাজ করতেন। উনারা চলে গেলেও কাকীর সাথে আমার মাঝে মাঝে যোগাযোগ হত। বিভিন্ন কারণে আমাকে ব্ল্যাক মেল করে টাকা নিতেন। বলা হয়নি। উনাদের ঐ আসরে আমি আরো কয়েকবার গিয়েছিলাম। জানি না কেন। তবে কাকী ডাক দিলেই যেতাম। ঐ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ঘর আর ব্লু ফিল্মের প্রবল টান অনুভব করতাম! সেই আসরেই পরিচিত হই মামুন ওয়াসিফের সাথে। সে জাহাঙ্গীর নগরে পড়তো।
বাইরে বৃষ্টি ফের ঝুম ঝুম করে শুরু হলো। আমি কাচের দেয়ালে সেই বৃষ্টির নাঁচ দেখছিলাম। ঠিক হজম হচ্ছিল না এই আলাপচারিতা। কফির নেশাটা বেশ লাগছিল বটে, তবে মনের ভেতর থেকে শান্তি পাচ্ছিলাম না ঠিক ঠাক। বললাম, থামলেন কেন?
-আপনি কি বিরক্ত হচ্ছেন খুব?
-না, না! বেশ লাগছে কিন্তু। একটু অন্য ধরণের যদিও!
-সেই মামুনের সাথে প্রথম সেক্স করি আমি যখন ক্লাস এইটে! কাকীদের ঘরেই! আমি রীতিমত চমকে গিয়েছিলাম, সত্যি বলতে, ভেতরে ভেতরে ভীষণ ঘেমে গিয়েছিলাম।
-আমি ঠিক বুঝতাম না কি হচ্ছে, কিন্তু নেশাটা চড়ে গেলে নিজেকে সামলাতে পারতাম না!
এবার হঠাৎ করে কফির পেয়ালায় বড় করে চুমুক দিলেন সেতু। তারপর আগের চেয়েও গলা নামিয়ে বললেন, ‘নাইনে উঠতেই আমাকে প্রথমবারের মতো বাচ্চা ফেলতে হয়! যাহোক, এরপরের গল্প গুলো বেশ দ্রুত বলে যাব। আপনার মূল্যবান সময় আর বেশি নেব না!’সেতু খুব জোড়াজুড়ি করছিলো অন্য কিছু নিতে। ইতিমধ্যে আমার দ্বিতীয় মগ কফি প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। আমি এবার একটা এক্সপ্রেসো নিতে চাইলাম। তিতকুটে ভাব পেলে মনে হয় একটু চনমনে হতে পারবো।
-যা হবার তাই হলো। আমি নিয়মিত ড্রাগস নেওয়া শুরু করি। আব্বু আম্মু প্রথমে প্রথমে বুঝতে পারেননি। বুঝলেন, যখন কাকা কাকী বাড়ী ছেড়ে চলে গেলেন এবং আমি এসএসসি না দেবার সিদ্ধান্ত নেই। সারাদিন ঘরে পরে থাকি। এর মধ্যে কম করে হলেও দশ বারোটি ছেলের সাথে আমি শুয়েছি। ড্রাগসের জন্যই হোক। অথবা অন্য কোন নেশা। আমি নেশাগ্রস্থ, এই ব্যাপারটি আমার দারুণ সফল আব্বু আম্মু মেনে নিতে পারেন নি। যাহোক, আমি মুক্তি ক্লিনিকে তিন সেশনে প্রায় বছর খানেক কাটাই। এবার বৃষ্টিটা ধরে এসেছে। বিকেলের সাদা রঙ বদলে সোনালী রঙের আভা ছড়িয়ে দিতে শুরু করেছে।
-আমার এক দূর সম্পর্কের ফুপু এসে থাকা শুরু করেছিলেন যখন আমি ড্রাগসে প্রায় পাগলপ্রায়। কাকা কাকীরা চলে যাবার পর। উনি ডিভোর্সী ছিলেন। এবং পরে জেনেছিলাম, উনিও বেশ্যাই ছিলেন। উনিও আমার উপকারের চেয়ে অপকার করে গেছেন, অথবা একটি উপকার করে গেছেন। কি উপকার করে গেছেন, হয়তো পরে এক সময় বুঝতে পারবেন। পরবর্তিতে যে সমস্ত ছেলে আসতো আমার কাছে, তাদের সেই ফুপুই নিয়ে আসতো। আমি এমন নেশাগ্রস্থ ছিলাম যে, মনে হতো এটাই জীবন। আশ্চর্য কী জানেন, সেই ফুপু টাকার বিনিময়ে আমার খদ্দের যোগাড় করে দিতেন। অথচ আমি জানলাম সেই ফুপু হঠাৎ করে বলা নেই কওয়া নেই স্ট্রোক করে মারা গেলেন, তারপর। ঐ সময়ের এক বয়ফ্রেন্ড আমাকে এসব বলেছিল। উনার মৃত্যুটা হয়তো আমার ভালো হবার একটা উপলক্ষ্য ছিল। আবেদ আজিজ নামের সেই ছেলেটির সাথে কি করে যেন আমার প্রেম হয়ে গেল!
আমি নির্বাক শ্রোতা। এই গল্পের মাঝে আমার অংশগ্রহণ জরুরী নয়। ধরে আসা বৃষ্টির ফোঁটাতে আসন্ন সন্ধ্যার সোনালী আলো বেশ লাগছিল!
-আবেদ আজিজ ছিল আজিজ গ্রুপের কর্ণধার মিস্টার সামাদ আজাদের বড় ছেলে। ওদের বিভিন্ন ধরণের ব্যবসা আছে সাড়া বাংলাদেশ জুড়ে। আমাকে নেশা থেকে বের হয়ে আসতে এবং পড়াশুনায় ফিরিয়ে নিতে এই ছেলে তার জীবন বাজি রেখেছিল। আমি কি করে যেন বেশ ভাল ভাবেই এসএসসি আর এইচএসসি খুব ভালো রেজাল্ট করে বেড়িয়ে নর্থ সাউথে ভর্তি হয়ে যাই। যার পুরো ক্রেডিট ছিল আবেদেরই।
-সেকেন্ড ইয়ারে পড়ার সময় সে আমায় বিয়ের প্রস্তাব দেয়। এবং আমার মনে হয়, আমার জীবনের সেরা দিনটি ছিল ও যেদিন আমাকে প্রস্তাব দেয় বিয়ের। আমাকে নিয়ে সে সেই চাঁদপুর চলে যায় এক বিকেলে। তারপর সন্ধ্যায় আমরা এক লঞ্চে উঠে বসি। পুরো লঞ্চটি সে ভাড়া করেছিল সেদিন! আকাশে ভীষণ বড়ো এক চাঁদ উঠেছিল। নদীর নিস্তরঙ্গ ঢেউয়ে ভাসতে ভাসতে সেই লঞ্চ একদম নির্জন এক পাড়ে এসে নোঙর ফেলে। আমরা ছাদে চলে যাই। সেখানে সে রীতিমত বিশাল এক ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের আয়োজন করেছিল। সেই অদ্ভূত মোহনীয় চাঁদনী রাতে নদীর কুলুকুলু ঢেউ চারিদিকে স্বর্গের এক পরিবেশের জাল বিছিয়ে দিয়েছিল। ডিনারের মাঝে সে হঠাৎ হাঁটু গেড়ে আমার ডান হাতের তর্জনীতে একটি ডায়মন্ডের আংটি পড়িয়ে দেয়। তারপর সেই হাতে চুমু দিয়ে বলে, ‘আমি কী বাকী জীবন এই হাত ধরে রাখার অনুমতি পেতে পারি!’ আহ! কী যে এক ভালো লাগায় মিশে গিয়েছিলাম সেই সময়!
আবার একটু বিরতি নিলেন সেতু। এবার গ্লাস থেকে হাল্কা করে পানিতে চুমুক দিলেন। কিছুক্ষণ বাইরের আলো আঁধারীতে বৃষ্টির ঝরে পড়া দেখলেন। কাঁধ শ্রাগ করে ফের শুরু করলেন। একবার মনে হয় আমাকে আঁড়চোখে তাকিয়ে দেখে নিয়েছিলেন। আমি তার কথা শুনছি কিনা। অন্তত আমার তাই মনে হল!
-বিয়ের তিনমাসের মধ্যে টের পাই। প্রেমিক আর স্বামী এক নয়। তাদের কেয়ারিং, তাদের চাওয়া, তাদের ভাবনার জগত, আমার কাছে মনে হলো, পুরোটাই অপোজিট। আমার সেই বয় ফ্রেন্ড আর আগের মতন নেই! রাত্রি করে বাড়ী ফেরা, পার্টিতে যাওয়া। বিভিন্ন ক্লাবে যাওয়া। এসবই মনে হলো খুব বেড়ে গেল আমি এ বাড়ীতে আসার পর। আমি জিজ্ঞেস করলে বলতো, বেবি, আমাকে আমার বাবার সব বিজনেস বুঝে নিতে হচ্ছে। একটু সময় দাও।
-কিন্তু সেই সময় আর কখনোই আমার ফিরে আসে নি। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরের এক বড় কোম্পানির সাথে তার বিজনেস ডিল হবে, সে একদম একাকী করছে এটা। আমাকে নিয়ে বিভিন্ন পার্টিতে যাওয়া শুরু করলো। ধীরে ধীরে টের পেলাম, আমি আবার মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়ছি। এক পার্টিতে তুমুল মদ খাবার পর আমার হুশ ছিল না। গভীর রাতের সোনারগাঁ হোটেলের সেই পার্টিতে কী হয়েছিল আমার মনেই নেই। ভোরে নিজেকে আবিস্কার করলাম হোটেলের এক স্যুটে একদম উলঙ্গ! পাশে উদোম গায়ে এক বিদেশী ভদ্রলোক! ঘিন ঘিন করে উঠলো পুরো গাঁ। একটু সময় লেগেছিল বুঝতে কি হয়েছিল। আবেদকে ফোন দিলাম। ভেবেছিলাম ও খুব পেরেশান থাকবে, ওমা, হেসে বলে, রাতটা কেমন কেটেছে বেবি তোমার! একদম আকাশ থেকে পড়ার মত বলতে যা বোঝায়, আমার ঠিক সেই অবস্থা। একটু কেশে জানতে চাইলাম, মানে?
-মানে, আবেদ আমাকে তার বিজনেসের ডিল পেতে বিদেশী কাস্টমারের হাতে তুলে দিতে শুরু করলো! একবার নয়, দুবার নয়, এমন সে বারংবার করতে লাগলো। আবেদের নিজের এক বিশাল বিজনেস সাম্রাজ্য দাঁড়িয়ে গেল। সে সাম্রাজ্যে আমি বেশ্যার বেশে বিভিন্ন কাস্টমারের মনোরঞ্জন করি মাত্র!
এটুকু বলে সেতু উঠে দাঁড়িয়ে পড়লেন। আর আমি ভাবলাম, এই তুমুল ক্লাইমেক্স এ রেখে সেতু চলে যাচ্ছেন! একটু বোকা বোকা দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালাম। সেতু মনে হয় বোরকার আঁড়াল থেকে একটু হাসি দিলেন। বললেন, আপনি বসুন, আমি একটু ওয়াশ রুম থেকে আসছি!
-আমার গল্পের শেষ ধাপে চলে এসেছি। আপনি কি আরো একটু কফি বা অন্য কিছু নেবেন?
আমি একমনে পুরো গল্প সাজাবার চেষ্টা করছিলাম। একটু হতাশা কাজ করছিল। অথবা বুকের গহীনে সেতু নামের এক অজানা মেয়ের জন্য কিছুটা মায়াবোধ, অথবা অনুরক্তভাব এসে থাকলে থাকতেও পারে!
সেতু আরো একটু পানি মুখে তুলে নিলেন। আর আমি মগের এক্সপ্রেসো কফির তলানি চুমুক দিলাম! বাইরে সোনা রোদ হঠাৎ করে ম্লান হয়ে ফিকে হতে হতে মিলিয়ে গেল। বৃষ্টিটা মাঝে কিছু সময়ের জন্য থেমে গিয়েছিল। আবার ইলশে গুঁড়ি শুরু হল এবার। রাস্তার নিয়ন আলোয় চারিদিক ঝলমলে করে উঠেছে। আমার একটু তাড়া ছিল। তারপরও কি এক সম্মোহনের নেশায় বুদ হয়ে বসে রইলাম সেতুর দিকে তাকিয়ে!
আরেক মগ এক্সপ্রেসো চলে এসেছে আমার জন্য। সেতু তার নিজের জন্য এবার ল্যাটে অর্ডার করেছিল। দুজনে চুপচাপ কিছু সময় কফি পান করতে লাগলাম। সেতু একহাতে নেকাব সরিয়ে মাথা নিচু করে কফির মগে চুমুক দিতে লাগল, বেশ বোঝা যাচ্ছিল, সে চাচ্ছে না আমি তার চেহারা দেখে ফেলি। আমিও তার চেহারা দেখার বাসনায় ক্ষান্ত দিলাম!
-একবার আবেদ তার ব্যবসার কাজে ফ্রান্সে গিয়েছিল। আমার হাতে কিছু দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিল। আমি চেয়ারপারসন হিসেবে অফিসে মাঝে মাঝে বসতাম। এই অফিসটি আমার শ্বশুরের বিল্ডিং-এ ই ছিল। তো একদিন সন্ধ্যায় কাজ করছি, আমার শ্বশুর বেশ কয়েকজন ভদ্রলোক নিয়ে আমার রুমে হাজির, তাদের মাঝে দুজন ইটালিয়ানও ছিলেন। আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন তাদের সাথে, এরপর বলে গেলেন, রাত দশটার দিকে আমি যেন হোটেল ওয়েস্টিনে এসে উনাদের সাথে ডিনারে যোগ দেই। আমার তাড়া ছিল না কিছু। তাই কাজ শেষ করে গাড়ি নিয়ে ওয়েস্টিনে চলে যাই। সেই যাওয়াটাই আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল!
এবার মনে হলো ভেতরে ভেতরে কাঁদতে শুরু করেছেন সেতু। আমার তাই মনে হল। আমার অনুমান সত্য হলো, যখন দেখলাম সেতু নামের রহস্যময়ী সেই মেয়েটি টেবিলের উপর থেকে টিস্যু পেপার তুলে নিয়ে নেকাবের নিচে দিয়ে চোখ মুছলেন। আমি নিশ্চুপ হয়েই শুনছিলাম। এবার বুকের ভেতর কী যেন এক বেদনা বোধ কাজ করতে লাগলো। ধীরে ধীরে সহজ হতে লাগলেন সেতু। আমি অনুরোধ করলাম, আজ আর না বললেই নয়! সেতু উপেক্ষা করলেন আমায় পুরোটাই। ফের শুরু করলেন।
-ওয়েস্টিনের সেই ডিনারের শেষে বল রুমে চলে গেলাম আমরা। আমাদের সাথে আরো কিছু মেয়ে যোগ দিয়েছিল। প্রথমে খেয়াল করিনি। পরে বুঝতে বাকী রইলো না। একটু একটু করে ড্রিংক করছিলাম সবাই। ইটালিয়ান দুজন বেশ হিউমারাস। নানা জোকস বলে বলে হাসাতে লাগলেন আমাদের। রাত ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো। এক সময় টের পেলাম, আমার পা আর চলছে না। ধপাস করে ফ্লোরে পড়ে যাই। পরে টের পেয়েছিলাম আমার ওয়াইনের গ্লাসে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়া হয়েছিল। পরদিন বেশ বেলা করে ঘুম ভাঙলে আমাকে আবিস্কার করলাম হোটেলের স্যুটে! তবে একদম একাকী।
-বলেন কী!
আমি হয়তো বেশ জোড়েই উচ্চারণ করে ফেলেছিলাম শব্দ দুটো, আশে পাশের কিছু টেবিল থেকে উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখতে লাগলেন কেউ কেউ! আমি আরেক চুমুক দিলাম কফিতে!
-কয়েকদিন যেতে হঠাৎ আমার মেইলে একটা ভিডিও ক্লিপ আসলো! অবাক কান্ড কী জানেন? সেই ভিডিও ক্লিপে ইটালিয়ান দু’জনকে দেখা গেল একে একে আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করলো, আর এই পুরো সময়টায় পাশের এক সোফায় বসে আমার শ্বশুর খুব শান্ত ভাবে হাতের ওয়াইন গ্লাস থেকে ধীরে ধীরে লাল তরল চুমুক দিয়ে গেলেন। খুব সম্ভবত আগের থেকেই লুকোনো ক্যামেরায় ধারণ করা ছিল। শুধু তাই নয়। সেদিনের রাতের পার্টির অনেককেই সেই ক্লিপে দেখা গেল!
আমি এবার একেবারেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম। ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না কি বলব, বা সান্তনা দেব কিনা, সেটাও বুঝতে পারছিলাম না! ঘড়ির দিকে অবচেতন মনেই তাকালাম, প্রায় ছয়টার মত বাজে। সেতু বলে উঠলেন, আপনাকে ছেড়ে দিচ্ছি। আর পাঁচ মিনিট, ব্যস!
-সেই মেইল থেকে আমাকে ব্ল্যাক মেইল করা শুরু করলেন কে যেন। আমি লজ্জায়, ঘৃণায়, অপমানে কুঁকড়ে যাচ্ছিলাম। সেই ছোট বেলার সেই ট্রমা ফের ফিরে আসল! কতবার ভেবেছি আত্মহত্যা করবো! কতবার ভেবেছি আবেদের সাথে শেয়ার করবো। আমার কিছুই করা হয়নি! আমার ইউএস সিটিজেনশিপ আগেই ছিল। আমার আব্বু আম্মু পরে সেখানে সেটেলডও হয়েছিলেন। আব্বু নেই। তবে আম্মু একাকী সেখানেই রয়ে গেছেন।
আবার দুজনে নিঃশব্দ বসে রইলাম কিছুটা ক্ষণ। কফির মগ থেকে ধীরে ধীরে চুমুক দিতে লাগলাম। আমি ভেতরে ভেতরে বেশ পেরেশান হয়ে পড়েছিলাম। কেমন এক অদ্ভূত অনুভূতি আমাকে ছেয়ে রেখেছিল। বাইরের সেই ইলশে গুঁড়ি বৃষ্টি, বৃষ্টিস্নাত রাস্তা, মসৃণ করে কাঁটা সবুজ ঘাসের বাগিচা, শ্বেত পাথরের মা মূর্তি। সব কিছু মিলে একটা অলৌকিক আবেশ আমাকে ঘিরে ছিল। আমি আবারো ঘড়ির দিকে চোখ মেললাম। আমাকে উঠতেই হবে। সেতু মনে হয় বুঝতে পেরেছিলেন, বললেন, এইতো শেষের দ্বারপ্রান্তে। আমি আগামীকাল ভোরের ফ্লাইটে মিশিগান চলে যাচ্ছি।
এটুকু বলে আবার চুপ হয়ে গেলেন। আমি ওয়েটারকে ডাক দিলাম হাত ইশারা করে। সেতু হেসে উঠলেন খিলখিল করে! কী যে মিষ্টি উনার সেই খিলখিল হাসি! মনে হচ্ছিলো শরত শেষের মেঘলা আকাশের বিদ্যুৎ চমকের গুড়গুড় ধ্বনি! কেমন প্রাণোচ্ছল সেই হাসি! হাসি থামিয়ে এবার বললেন, কি করে ভাবলেন আমি আপনাকে বিল দিতে দেব? আমি নিজেই আপনাকে ডেকে এনেছি, হোস্টতো আমি। আমি বিল পে করে দিয়েছি ঐ যে ওয়াশরুমে যাব বলে উঠলাম না, তখনই! চলুন উঠা যাক। বেশ দারুণ একটা সময় কাটালাম আপনার সাথে। আজীবন মনে থাকবে! আর আমাকে ইউএস এর নতুন জীবনের জন্য উইশ করবেন না?
আমি সত্যি বলতে লজ্জায় মারা যাচ্ছিলাম, অথবা কী যেন এক সংকোচবোধ থেকে নিজেকে ঠিক রাখতে চেয়েও পরাজিত হচ্ছিলাম। তাই ভাবছিলাম যত দ্রুত এই যাদুকরী কন্ঠের থেকে দূরে চলে যাওয়া যায়। বেশ কষ্টসাধ্য একটা হাসি দিতে চেষ্টা করলাম, বললাম, আপনার নতুন জীবন সুখের হোক। যদিও জানি না একা যাচ্ছেন, না কিভাবে যাচ্ছেন। কী করবেন বা কোথায় উঠবেন। তবে সব মিলিয়ে, আমি আপনার নতুন জীবনটা বেশ প্রানবন্ত আর সুখের দেখতে চাই!
হেসে দিলেন সেতু। আবার তার সেই খিলখিল হাসি। বললেন, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনি আমার ছবিটা রেখে দিতে পারেন। আমি একটু পর আমার আইডি ডি এক্টিভেট করবো। আপনার লেখা আমি সেই সুদূর এমেরিকা থেকে পড়ব, কাইন্ডলি প্রাইভেসি পাব্লিক রেখে দেবেন। আমি আপনাকে আর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাবো না!
-সে কী! কেন? আপনি আমার ফ্রেন্ড লিস্টে থাকলে নিজেকে বরং ধন্য মনে করবো!
আমরা দুজনেই কাচের বিশাল দরোজার কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছি। বোরকার আঁড়ালে থেকে গ্লোভস পড়া হাত বের করলেন, তারপর আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, হাতটা মেলাতে পারেন! তারপর তার সেই সুমিষ্ট হাসিতে ভরিয়ে দিলেন। আমি হাত বাড়িয়ে শেক করলাম। মৃদু হাসি দিয়ে হাত ছাড়িয়ে দরোজা দিয়ে বের হতে যাব, সেতু আমার হাতটা ধরে একটু টান দিলেন! ফিসফিস করে বললেন, আপনি নিশ্চিন্তে আমার এই গল্পটা লিখতে পারেন নিজের মতন করে, আমার কোন আপত্তি থাকবে না। তবে কাল সকালের নিউজ প্যাপার অবশ্যই পড়ে নেবেন, কিছু একটা খবর সেখানে পেতে পারেন!
এটুকু বলেই গার্ডের খুলে দেয়া দরোজা দিয়ে দ্রুত বাইরে চলে গেলেন সেতু। দরোজার পাশেই এক বিশাল অডি গাড়ি পার্ক করা। গাড়িতে উঠতে ফের আমার দিকে ফিরে হাত নাড়ালেন। এরপর ঝুপ করেই গাড়িটা সেতুকে নিয়ে সবেগে চলে গেল। আমি এদিকে ঘটনার মোহাবিষ্ট ভাব কাটাতে পারি নি পুরোপুরি। কাঁধ শ্রাগ করে আমিও রাস্তায় নেমে এলাম!
পরদিন অফিসের কাজে বেশ ব্যস্ত ছিলাম। সকালে একবার মনে হলেও খবরের কাগজ পড়া হয়নি। দুপুরে লাঞ্চ আওয়ারে হঠাৎ সেতুর কথা মনে হল। হয়তো হেয়ালী করেই বলে গিয়েছিলেন সংবাদপত্র দেখতে। যাহোক, আগ্রহ একসময় ইচ্ছেশক্তিকে হারিয়ে দিল। লাইব্রেরী রুমে চলে গেলাম। প্রথম আলোই সবার আগে মেলে ধরলাম। প্রথম পৃষ্ঠার নিচের দিকে একটি জোড়া খুনের ঘটনা। আজিজ গ্রুপের কর্ণধার বাবা এবং ছেলেকে তাদের নিজস্ব বেডরুমে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। খুনি ধারালো অস্ত্র দিয়ে দুজনের পুরুষাঙ্গ কেটে নিয়েছে। দুজনের রুমেই মদের গ্লাসে কিছুটা মদ পাওয়া গেছে। আর তাতে বেশ কড়া ঘুমের ওষুধ মেশানো ছিল!