আজব রিভেঞ্জ

আজব রিভেঞ্জ

ভাইয়া, এই ভাইয়া
– কি হল, এত সকাল সকাল ডাকতেছিস কেন।
– ভাইয়া ২০০ টা টাকা দে না।
– এই সাঝ সকালে টাকা দিয়ে কি করবি।
– দে না ভাইয়া, দরকার আছে।
– আগে বল কি দরকার, তারপর দিব।
-বলতে পারব না, টাকাটা খুব দরকার, আমার লাইফ এর প্রশ্ন ভাইয়া।
– বলতে পারলে বল, টাকার কি দরকার। না হলে ফুট এখান থেকে। আমার কাছে টাকা নাই। আগে বল কি দরকার তারপর ভেবে দেখব টাকা দেওয়া যায় কি না।

– ভাইয়া অনেক দিন থেকেই একটা মেয়েকে ভালবাসি, কিন্তু বলতে সাহস পাই না। আজ অনেক কস্টে মনের সাহস জোগিয়েছি। কিন্তু পকেটে সাহস নাই, টাকাটা দে না ভাই।

-আমি ওর কথা শুনে থ হয়ে রইলাম। আবার বলতে লাগলাম। সাব্বাস ভাই এই না হলে আমার ভাই। আমার মানিব্যাগ থেকে টাকাটা নিয়ে যা, কিন্তু কথা হল ২০০ টাকা দিয়ে কি করে হবে বল, ৫০০ টাকা নিয়ে যা।

– না ভাইয়া ২০০ টাকা দিয়ে হবে, ৩ টা গোলাপ ১৫০ টাকা আর একটা ডেইরী মিল্ক ১০ টাকা। হয়ে যাবে ভাই।
– আচ্চা, আমার নতুন জুতা টা নিয়ে যা ভাই, দেখতে ভাল লাগবে। আর শুন, যদি প্রপোজ করার পর রাজি না হয়। তাহলে কোন কথা নাই উদুম খেলানো শুরু করবি।
– দোয়া করবেন ভাই, যেন সফল হয়ে বাড়ি ফিরতে পারি।
– best of luck ভাই।
-thank you ভাই, আসি তাহলে।
-ওকে ভাই।

ছোট ভাইকে বিদায় দিয়ে ঘুম থেকে উঠলাম। যাই এবার ফ্রেশ হয়ে আসি গিয়ে। অহহ, আপনাদেরত পরিচয়টাই দেওয়া হল না। আমি সুব্রত, বাকিটা আপনাদের জানাই আছে, নতুন করে বলার মত কিছুই নাই। নতুন করে বলার মত শুধু এইটাই, এতক্ষণ যার সাথে কথা বলছিলাম সে আমার ছোট ভাই প্রিতম। এই বছর ক্লাস টেন এ উঠবে। ওর সম্পর্কে আর কি বলব। এমনিতেই বুজতে পারবেন। যাই হোক গল্পে ফেরা যাক।

– আমি আমার ফ্রেশ হয়ে হালকা একটু নাস্তা করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পারলাম। একটা চা এর দোকানে বসে আপন মনে সিগারেট ফুঁকতেছি। এর মাঝেই হটাত মোবাইল এর রিংটোন বাঁজতে লাগল। মনে মনে কোন সালায় বিরক্ত করল বলে তাঁর চৌদ্দগোষ্টি উদ্দার করতে লাগলাম। মোবাইলটা বের করতেই স্তব্দ হয়ে গেলাম। আমার একমাত্র প্রাক্তন গফ সমাপ্তির নাম্বার দেখেই বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো। এই বুঝি থাপ্পড় খেলাম। সেই থাপ্পড় কি আর ভুলা যায়। ব্রেকাপ করব ভাল কথা, কিন্তু কি থাপ্পড় ই না মারছিল। এতদিন পর হঠাৎ কল করলো। কারন কি। ভয়ে ভয়ে ফোন রিসিভ করলাম….

–হ্যা…হ্যা…হ্যলোা…?
-হারামজাদা কই রে তুই, থাপ্পড়ের কথা মনে নাই নাকি, না ভুলে গেছিস?
–হ মনে আছেতো।

কি থাপ্পড় ই না মারছিল, আচ্ছা এই তুমি কি মানুষ না অমানুষ বলত, একে ত ব্রেকাপ করছ, আবার যাওয়ার সময় কি না দুই গালে গুনেগুনে মোট ১০ টা থাপ্পড় মেরেছিলে। সেই থাপ্পড় কি আর ভুলা যায়। এখনও আমি মাঝেমাঝে সেই থাপ্পড় স্বপ্নে দেখি আর গাল হাতাই।

-ঐ রাখ তর আজাইরা পেঁচাল। তুই কই আছস এখন?
– কেন! আমি এখন আবারো কি করলাম। একেত তুমি নিজে আমারে কল দিছ, তারউপর এখন বলতেছ পেঁচাল মারতেছি।

-ঐ তর ছোট ভাইরে তুই কি শিখাইছোস?
-কেন? আমিতো কিচ্ছু শিখাই নাই। আর প্রিতম রে দিয়া তুমি কি করবা। ও আমাদের বংশের একমাত্র ভাল ছেলে। ওর নামে কিছু বললে আমি কিন্তু সহ্য করতে পারব না।

-মিথ্যা বলবিনা একদম। তর ছোট ভাই আজকে আমার ছোট বোনরে প্রপোজ করছে।
-আরে বাহহহ। ঠিক-ই তো আছে। তাহলে বেয়ান সাহেবা বলেন। বিয়া কবে? অনেক দিন হল কূর্মা পোলাও খাই না।
-এই চুপ। থাবড়ায়া তর কান দিয়া গরম ধুমা বাইর করমু। ফাইজলামি করছ আমার লগে?
-আমি আবার কি করলাম?
-আমার বোইন প্রপোজালে রাজি হয়নাই, যারফলে তর ভাই তন্নিকে (ছোট ভাই যারে প্রপোজ করতে গেছে তার নাম) ইচ্ছা মত পিডাইছে।

–সাব্বাস. এই না হল আমার ভাই, আমার অপমানের প্রতিশোধ নিছে আমার ভাই।

-তর ভাইরে বাঁচাইতে চাইলে এক্ষুনি লেকের পাড় আয়।
– বুজতে আর বাকি রইল না। কাহিনি জটিল।

তারাতারি ফোন কেঁটে দিয়ে লেকের দিখে দৌড় দিলাম। আগে
ভাইকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসি। পরের টা পরে চিন্তা করা যাবে। লেক বেশি দূর না থাকায় ২০ মিনিট এর বেশি সময় লাগলনা । দেখি ছোট ভাইকে সমাপ্তি হাত দিয়ে ধরে রেখেছে। তন্নির দিকে তাকিয়ে দেখি তার নাকের মাথা লাল হয়ে গেছে। চুল এলোমেলো, তারমানে চুলের মুডি ধইরা পিডাইছে আবার নাকেও ঘুষি মারছে। মনে মনে বললাম ‘সাব্বাস ভাই সাব্বাস,এই না হলে আমার ভাই, এতদিনে একটা কামের কাম করছো। আমার থাপ্পড়েরর প্রতিশোধ ওর বোনের উপর দিয়া নিছো।

– আমাকে দেখে সমাপ্তি রাগে অগ্নিময় হয়ে গেলো। আমি বললাম।
-কি হয়েছে?
– কি হয়েছে মানে দেখ তর ছোট ভাই কি করছে আমার বোনের অবস্তা। (তন্নিকে দেখিয়ে)
-হুমম তাতে আমার কি? আমি কি করতে পারি। এটা ওদের ব্যাক্তিগত ব্যাপার ।
-তর কি মানে, তুই নাকি বলছোস প্রপোজালে রাজি না হলে পিডাইতে?

-এই খাইছে আমারে। আমিই ওরে বলছিলাম পিডাইতে। সেটা পরে হবে আগে এখান থেকে উদ্ধার হই। প্রিতমকে চোখের ইশারা করলাম, কিরে আমি তরে এই কথা বলছি?

–না ভাইয়া? (প্রিতম)
-মনে মনে বললাম যাক বাবা ভাই আমার চোখের ইশারা বুজছে তাইলে।
-ঐ তুই না একটু আগেই বললি তর ভাই শিখাইছে ।
-বুঝলাম ভাই খুব চাপেই আছে। তাই আমি ভাইকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলাম।
-আচ্ছা আচ্ছা ওয়েট আমি দেখছি কি হয়েছে। আচ্ছা প্রিতম বলত কি হয়েছে? আসল কাহিনি কি বল? (আমি)

-ভাই, অনেক কস্টে খুজে খুঁজে ৩ টা গুলাপ ফুল কিনে আনলাম। আর তন্নিরে প্রপোজ করছি সে রাজি হয়নাই, উল্টা আমারে থাপ্পড় দিছে।

–হুমম তারপর?
-প্রেম করবোনা ভাল কথা, আমারে থাপ্পড় মারল কেন। আমার আমার রাগ উঠছিলো চুল ধইরা ইচ্ছামত মাইর দিছি।

–তাইলে তো ঠিকই আছে। সমাপ্তি আমাকে থাপ্পড় দিয়েছিলো ১০ টা, আর তরে তন্নি দিছে ১ টা। মোট ১১ টা। তুই তন্নিরে কয়টা মারছস। সোদবোধ।
– সটিক বলতে পারব না, তবে একটা ঘুষি দিছি।
-আমদের কথা শুনে সমাপ্তি বলে উঠল…
-তর ভাইয়ের বিচার কর,তা না হলে। বলেই প্রিতমকে আমার দিখে এগিয়ে দিল।

সমাপ্তির হাত থেকে ছাড়া পেয়েই প্রিতম বিদ্যুৎ গতিতে দৌড়ে গিয়ে তন্নিকে গুমুর গুমুর কিল শুরু করলো। এমন পরিস্থিতিতে আমি আর সমাপ্তি দুজনেই হতবাক হয়ে গেলাম। প্রিতমের হাত মনে হয় এতক্ষণ থেকে মারার জন্য চুলখাইতেছে । আমি দৌড়ে গিয়ে প্রিতমকে টেনে ধরলাম। কিন্তু ও ছাড়ছেনা। সমাপ্তিও ধরলো তন্নিকে। কিন্তু কিছুতেই ছাড়াতে পারছেনা। এত টানাটানিতে বাধলো আরেক বিপত্তি। প্রিতম তন্নির চুল ধরে আছে অপর দিকে সমাপ্তি তার বোনকে টানছে। তন্নির চুল ছেড়ার উপক্রম প্রায়। উপায়ান্তর না পেয়ে আমি প্রিতম এর হাত ছেরে দিলাম। তা না হলে যদি চুল ছিরে নিয়ে আসে। প্রিতম ছাড়া পেয়েই ডুম ডুম করে কয়েকটা করে কিল দিয়েই দৌড়াতে লাগল ।

-দৌড়াইতে দৌড়াইতে বলতে লাগল, ভাই ওরা আমাদের মোট ১১ টা মারছিল, আমরা আরও বেশি মেরেছি। আমরা জিতেছি ভাই।এখন পালাও পালাও।

– আমি ভাই এর পিছু পিছু দৌড়াচ্ছি আর বলতেছি। সাব্বাস ভাই সাব্বাস। তুই আমাদের বংশের গর্ব। তর জন্য আজ আমার মাথাটা অনেক উঁচু হয়ে গেল ভাই।

– ২০ মিনিট দৌড়াইতে দুই ভাই বাড়িতে আসলাম। অনেক দৌড়াইছি, এখন একটু বিশ্রাম দরকার, কি বলেন আপনারা।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত