আমার স্বামী থাকা সত্ত্বেও অন্য একজন আমার মেয়ের সকল দায়িত্ব নিচ্ছে। এখন থেকে তার পড়ালেখা সহ সব যাবতীয় দায়িত্ব। আমি পানির গ্লাস হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছি। মা’কে সকালের ঔষুধ গুলো দিব বলে।
সকালে আমার জা কিছু পুরনো সুয়েটার আমার মেয়েকে পড়িয়ে দেয়। আমি কিছু বলিনি বা এখানে বলার কিছু না। ঘুম থেকে উঠেই যখন শাহেদ মানে আমার দেবরকে টেবিলে চা দিলাম তখন সে কোনো একটা কারণে একটু জোরে কথা বলা শুরু করল। মা ড্রয়িং রুমে ই বসা ছিলেন তাই পানি নিয়ে সেখানে গেলাম। শাহেদ তার স্ত্রী মোহনার উপর প্রচন্ড রাগারাগি করছে। আমি ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না ঠিক এর কারণ টা কি..!
যখন এই বাড়িতে আমি নতুন তখন পরিবারের সব মানুষগুলোর সাথে মানিয়ে নিতে একটু কষ্ট হচ্ছিল। অন্য একটা পরিবার থেকে এসে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগছিল। বিশেষ করে, শাহেদ মানে আমার দেবরের একটু বেশি মজা করা তার কথাবার্তা আমার কাছে একটু কম ভালো লাগত। না, তার মানে এই না যে সে খারাপ ইঙ্গিত করত এমন কিছু না। কিন্তু আমার বেশি কথা বা মজা করা পছন্দ ছিল না। তাই যথাসম্ভব ওর কথাগুলো আমি এড়িয়ে চলতাম। তবে, এই ধারণটা আমার বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। পরিবারের সব দায়িত্বগুলো যেমন সে পালন করত ঠিক তেমনি খেয়াল করলাম ছোট ছোট বিষয়গুলো তেও তার নজর ছিল প্রখর। ঘরের কোন জিনিষ সৌন্দর্য বাড়াবে কি লাগবে সব খেয়াল রাখত।
আমি নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে। আমার স্বামী একটু বোকা টাইপের তবে অত্যন্ত ভালো মানুষ। কিন্তু এই এখনকার দুনিয়ায় কি এত সহজ সরল মানুষ দিয়ে চলে..! আমার স্বামীর এই দূর্বলতার কারণে ই হয়ত আমার শাশুড়ি আমাদের মত পরিবার থেকে আমাকে এনেছেন। কারণ, আমার জা মানে দেবর বিয়ে করেছে যথেষ্ট অবস্থা সম্পন্ন ঘরের মেয়েকে।
তার চলাফেরা একজন বউ হিসেবে আমার থেকে অনেক ভিন্ন আর হবে নাই বা কেন সংসারে যার স্বামীর প্রতিপত্তি বেশি তার একটু চলাফেরাটা ভিন্ন। কিন্তু আমার এমন না। আমার স্বামী পরিবারে তেমন একটা কিছু দিতে পারেন না বলে আমাকে কাজের বেশ একটা দায়িত্ব নিয়ে চলতে হয় মানে একদিকে না থাকলে অন্যদিকে পূরণ করা আরকি।
সবকিছু মেনে নিয়ে আমি আমার মত ই আছি। তবে অনেক বিষয় আমাকে অনেক ভালো কিছু অনুভব করায়। যেমন, কয়দিন আগে আমার ছোট বোন এসেছিল সাথে ভাইটাও দুদিন থেকে যায় ওরা শাহেদ আমার কিছু না বলা সত্ত্বেও ওদের জন্য জামাকাপড় কিনে আনে যাওয়ার দিন।
এই পরিবারে আমার তেমন কোনো চাহিদা নেই। যেরকম আছি ভালো শুধু সন্তান গুলোকে একটু ভালো ভাবে মানুষ করার চিন্তাটা বেশি। হঠাৎ গত কয়দিন আগে রাতে মেয়েটার শ্বাসকষ্ট হয় ওর আগে এমন কোনো সমস্যা ছিল না স্বামী বাড়িতে ছিলেন না মা একটা কাজে গ্রামে পাঠিয়েছেন তখন শাহেদ রাত তিনটায় বাজারের কোনো ডাক্তারের কাছে বা নিয়ে গিয়ে একজন ডাক্তার কে ফোন করে উনার চেম্বারে নিয়ে যায়। খুব ভালো মানের ডাক্তার। মেয়েটার এমন দেখে খুব কস্ট হচ্ছিল।
একটু ভালো হল মেয়েটা। আমার জমজ ননদিনী দের জন্মদিন ছিল। সেই বিকেলে ওদের জন্য শাড়ি আনে আমার দেবর। সাথে আমাকেও একিরকম শাড়ি এনে হাতে তুলে দিয়ে বলে, আমার আরেক বড় বোন তুমি ভাবি। তাই তোমার জন্য নিয়ে এলাম একরকম। তখন কোথায় জানি অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করল। ভাই বোনের মত সম্পর্ক গুলো আমি এমনভাবে অনুভব করিনি আমার ভাইটা বেশ ছোট আর সে সময়টুকু পাইনি। নিজের জন্য শার্ট পানজাবি কিনলে আমার স্বামীর জন্য একি এরকম কিনে আনত। এসবের পরে শাহেদকে আমার নিজের ছোট ভাইয়ের মত দেখতাম আর কোনো ভুল করিনি।
শাহেদের এই চিৎকার করার কারণ আমার মেয়েকে পুরনো সুয়েটার পরিয়ে দেওয়া হয়েছে কেন। বাসার সব বাচ্চাদের জন্য নতুন সোয়েটার আনা হলে ওকে পুরনো টা দেওয়ার কি কারণ। আমার এতে কিছু বলার নেই। কারণ এসবে বলার মত আমার তেমন ক্ষমতা নেই। আমার জা’য়ের ভাষ্যমতে, পুরনো কিছু বাইরের কাউকে দেওয়া থেকে তো ঘরের কাউকে দিলে বা পড়লে ভালো। আর ভাইবোনের জিনিষ এক অন্যেরটা পড়তে ই পারে। হ্যা, সেটা ঠিক। কিন্তু আমার দেবরের কথা হল, সবার নতুন হলে ও পুরনোটা কেন পড়বে। তাকে অন্যভাবে দেখা হয়েছে। তার নতুন সোয়েটার টা তাকে কেন দেওয়া হয়নি।
যখন দেখলাম কথা বেশি এগিয়ে গেলে বিপত্তি বাঁধবে তাকে আটকালাম। বললাম, আমি ই বলেছি পুরনো গুলো আগে পরুক তারপর না হয় নতুন আছে তো ওগুলো। তখন আমার দেবর আরো রেগে গিয়ে আবার ঠান্ডা হয়ে বলল, আমার ভাইটার কিছু অক্ষমতার জন্য এসবের প্রভাব তার সন্তানের উপর কেন পরবে। আমি তো কখনো আমার ভাইকে আলাদা চোখে দেখিনি তাহলে তার সন্তানদের এমন কেন হবে।
আমি আমার ভাইকে ছোট বেলা থেকে আগলে রেখেছি আমি ছোট তারপরেও আমি জানি আমার ভাই এই দুনিয়ার সাথে এতটা বুঝাপড়া করতে পারে না। তাই সবসময় উনার পাশে ছায়ার মত থেকেছি। তার সন্তানদের সাথে এমন আচরণ আমার দৃষ্টিযোগ্য না। আমি সবসময় চেষ্টা করেছি এই পরিবারে ভাইটার যতটুকু দায়িত্ব তার কিছুটা যেন আমি পুরণ করতে পারি। নিজের সন্তানের মত ই ওদের সব কিছু আমি দেখব এখন থেকে।
আমি তাকিয়ে ছিলাম এই মানুষটার দিকে। ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের কতটা ভালবাসা থাকলে কতটা যত্ন সম্মান থাকলে একটা মানুষ এতটা করতে পারে। সব ভাইগুলো যদি এমন হত। তখন মন থেকে মানুষটার জন্য শ্রদ্ধা জাগ্রত হচ্ছিল। সম্মান আর শ্রদ্ধা করতে বয়স লাগে না লাগে ভালো একটা মন। যা সবার থাকে না। আর দোয়া করছিলাম সারা জীবন যাতে ভাইগুলো এরকম ই থাকে।