কাঁচের চুড়ি

কাঁচের চুড়ি

ঘুমিয়ে ছিলাম হঠাৎ কিছু একটার শব্দ শুনে ঘুমটা ভেঙে গেলো।তাঁকিয়ে দেখলাম ফারহানার হাতে একটা শপিং ব্যাগ।ওকে জিজ্ঞেস করলার এটার ভেতর কি? ও উত্তর দিলো কাঁচের চুড়ি!একটু অবাক হলাম এখন কাঁচের চুড়ি কোথায় পেলো ও? তাঁরপর বললাম কাঁচের চুড়ি পেলি কোথায়?

ও উত্তর দিলো এগুলো আমার না,রুমমেটের ফ্রেন্ডের।সে নাকি তার গার্লফ্রেন্ডের জন্য কিনে রেখেছে কয়েকমাস আগে।আর সেই চুড়ি গুলো এতদিন রেখেছিলো আমাদের রুমমেট নীলের কাছে।ব্যাপার টা বেশ মজার লাগলো আমার কাছে।তবে সব থেকে মজার কথা হলো, উনিশ জোড়া রঙ-বেরঙের কাঁচের চুড়ি! ছেলেটা তাঁর গার্লফ্রেন্ড কে বার্ডেতে গিফট দেবে বলে, অনেক আগে থেকে প্লান করে কিনে রেখেছে।আসলেই মজার না ব্যাপার টা..?

হঠাৎ কেন জানি মনে হলো মেয়েটা আসলেই ভাগ্যবতী।কারণ যেখানে বেশিরভাগ ছেলেরা নিজের বিয়ে করা বউয়ের,বার্ডে ভুলে যাই।সেখানে এই ছেলেটা অনেক আগে থেকেই, সারপ্রাইজ প্লান করে রেখেছে।দেখা যাক এত ভালোবাসার শেষ কোথায় যেয়ে হয়। সন্ধ্যা সাতটা বাজে ঘড়িতে।আরশি দাঁড়িয়ে আছে, ওদের চিরো-পরিচিত সেই পার্কের সামনে।আদ্র এক ঘন্টা আগে ওকে ফোন করে আসতে বলেছে এখানে।অথচ যে এত আয়োজন করে ডেকে আনলো তার ই কোনো পাত্তা নেই এখন!

এমনিতে ছেলেটা আমার বার্ডে ভুলে বসে আছে। তাঁর উপর আধা-ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি এখানে।কোনো খোঁজই নেই তাঁর।রাগে কান্না পাচ্ছে এখন আমার। কতবার করে কত উপায়ে আমার বার্ডে সেটা মনে করিয়ে দিতে গেলাম,গরুটা একটা বার বুঝতেও পারলো না।রাগে-দুঃখে নিজের মাথার চুল নিজেরি টেনে ছিড়ে ফেলতে মন চাইছে। হারামি টা এলো টানা এক ঘন্টা দুই মিনিট দশ সেকেন্ড পর।মন চাইছে এখন ইচ্ছা মত ঝাঁড়ি।কিন্তু ওর মুখটা দেখে আমারি কান্না পেয়ে যাচ্ছে এখন।ঝাঁড়ি কি দেবো! উল্টা নরম শুরে বলে বসলাম এত দেরি কেন হলো?কোনো সমস্যা হয়নি তো আসতে তোমার?

সরি বাবু!রাস্তায় প্রচুর জ্যাম ছিলো তাই আসতে একটু লেট হলো। এক ঘন্টা দুই মিনিট দশ সেকেন্ড,লেট করে এসে এখন তুমি বলছো একটু লেট?এই তোমার মাথা কি গেছে হ্যাঁ? এই রাতের বেলা পার্কে কেন ডেকে আনছো তুমি আমাকে?কি চলছে তোমার মাথায় সত্যি কথা বলবে কিন্তু!এতক্ষণ ধরে যত রাগ জমে ছিলো, তা এক মুহুর্তের জন্য ভেতর থেকে ফেঁটে বেরিয়ে এলো যেন।

আদ্র কিছু বলছে না।মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে বেচারা।আর কিছু না বলে গটগট করে পার্কের ভেতর ঢুকে পড়লাম।চারদিকে ভুতের মত অন্ধকার।প্রচন্ড রাগ হলেও কিছু বললাম না।চুপ করে একটা বেঞ্চের উপর বসে পড়লাম।আদ্র পাশে এসে বসলেও সেদিকে না তাঁকিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলাম। এই,বাবু সরিতো।দেখো কান ধরে সরি বলছি আর এমন হবেনা। আদ্রর কাচুমাচু মুখ দেখে, রাগ গলে জল হয়ে গেলেও, এমন ভাব করলাম যেন খুব রেগে আছি আমি এখনও।হঠাৎ দেখলাম ও আমার দুই চোখ হাত দিয়ে চেপে ধরলো।আচমকা এমন করাই ভয় পেয়ে গেলাম আমি।

আরে,কি করছো তুমি?পাগল হলে নাকি! কোনো কথা না বলে পাগলিটার চোখ ধরে উঠে দাঁড়ালাম। তারপর বললাম কোনো চিটিং করবানা। চোখ বন্ধ করে থাকো। আমিও বাধ্য মেয়ের মত চোখ অফ করে থাকলাম।আগেই বুঝেছিলাম এই পাগল টা কিছু একটা কান্ড করবে। সেজন্য আমাকে এখানে ডেকে এনেছে। চোখের উপর কালো ফিতা দিয়ে বেঁধে দিলো আদ্র।তারপর আমার হাত ধরে এক পা এক পা করে কোথায় যেন আগাতে লাগলো। এই মুহূর্তে আমার নিজেকে অন্ধ বলে মনে হচ্ছে।

কিছুক্ষনের মধ্যে আমাকে কোথায় যেন এনে দাঁড় করিয়ে,চোখ থেকে ফিতা খুলে দিলো।তারপর আস্তে করে চোখ খুলতে বলল। চোখ খুলতেই এক ঝলক রঙিন আলোর ঝালকানিতে, চোখ সাথে সাথে বন্ধ হয়ে এলো।চোখ বন্ধ অবস্থায় শুনতে পেলাম আমার খুব পরিচিত কাছের মানুষ গুলো উচ্চ স্বরে বলছে হ্যাপি বার্থডে আরশি এবার ভালো করে তাঁকিয়ে দেখলাম সব ফ্রেন্ডরা সামনে দাঁড়িয়ে আছে।পার্কের এক সাইডে সুন্দর করে লাইটিং করে সাজানো।বড় করে গাদা ফুলের পাঁপড়ি দিয়ে একটা লাভ সেপ দেওয়া।আর তাঁর চারপাশ মোমবাতি দিয়ে সুন্দর করে সাজানো।

হঠাৎ হাতে টান পড়তেই ঘোর কাটলো আমার।আদ্র আমার হাত ধরে লাভটার মাঝে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলো।তাঁরপর আমার সামনে হাঁটু ভাজ করে বসে,আমার সামনে ডান হাতটা এগিয়ে দিয়ে বললো আরশি আমার বৃদ্ধ বয়সে পাশে থাকার সঙ্গী হবে? আমি কোনো রকমে হুম,বলে হাতটা এগিয়ে দিলাম।

আমার হাতটা এগিয়ে দিতেই ও পকেট থেকে এক গুচ্ছ লাল কাঁচের চুড়ি বের করে আমার হাতে পরিয়ে দিয়ে বলল শুভ জন্মদিন বউপাখিটা সবাই চিৎকার করে হাত তালি আর শিষ দিতে লাগলো।লজ্জায় আর অজানা সুখে দুচোখ ভরে উঠলো আমার। আরও বেশি অবাক হলাম যখন দেখলাম,আদ্র একটা বড় চারকোনা বক্স এনে আমার হাতে তুলে দিলো তখন।

আমি বক্সটা হাতে নিতেই ফ্রেন্ডরা বার বার বক্সটা খুলতে বলল।আমি একবার আদ্রর দিকে তাঁকিয়ে বক্সটা নিয়ে যেয়ে টেবিলের উপর রাখলাম।তারপর খুলতে শুরু করলাম।বক্স খুলে দেখলাম অনেক রকমের কাঁচের চুড়ি।সবাই আবার খুশিতে হাততালি দিয়ে উঠলো।আর আমি অবাক চোখে তাঁকিয়ে থাকলাম চুড়ি গুলোর দিকে।হঠাৎ লক্ষ করলাম একটা চিরকুটও আছে।চিরকুট টা হাতে নিয়ে খুলে দেখলাম তাতে লেখা আছে পৃথিবীর সব কাঁচের চুড়ির উপর একমাত্র অধিকার আমার মায়াবতীর……..

এবার সত্যি আর কান্না ধরে রাখতে পারলাম না।আদ্রর দিকে তাঁকিয়ে দেখলাম ও মুচকি মুচকি হাসছে।সব ভুলে এক দৌঁড়ে যেয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।একদিন বলেছিলাম আমার কাঁচের চুড়ি খুব পছন্দ। পাগলটা সেদিনের কথা মাথায় রেখে এই কান্ড করেছে।আজ বুঝতে পারছি সুখেও মানুষ অশ্রু ঝরায়।হুম তাইতো আমিও আজ সুখের অশ্রুতে আমার পাগলটার শার্ট ভিজিয়ে দিচ্ছি।আর ও আমাকে হাত দিয়ে আগলে নিয়েছে বুকের মাঝে।আজ মনে মনে খুব বলতে ইচ্ছে করছে, এই সুখের মুহূর্তটা কখনও শেষ না হোক।স্তব্ধ হয়ে যাক ঘড়ির কাঁটা এখানেই…..

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত