তৃতীয় পক্ষ

তৃতীয় পক্ষ

অফিস থেকে ফিরেই দেখি রিনকি মুখ গোমড়া করে বসে অাছে। ও ছিল ওদের বাড়ির সবচেয়ে ছোট মেয়ে। একটুতেই অভিমানে চোখ ছলছল করে।তাই পাত্তা না দিয়ে মায়ের ঘরে গেলাম।গিয়ে দেখি সেখানে ও মেঘলা আকাশ।বাবা-মা দুই জন ই মুখ কালো করে বসে আছে।এইবার খটকা লাগল! সামথিং রং!! ভেরি ভেরি রং!! নরম স্বরে ডাকলাম মা ও মা… মা ম্লান হাসি দিল।টুকটাক কথা হল।কিন্তু মন খারাপ এর ইশুটা টা ধরতে পারলাম না। রাতে খাওয়ার টেবিলে দেখি মা ও রিনকি মধ্যে কথা চলছে তবে ভাব বাচ্যে। এই পাতে ইলিশের টুকরা দেওয়া হোক টাইপের। তারমানে আমার লাইফে এ বউ শাশুড়ি দ্বন্দ্ব শুরু!! ও আল্লাহ্ এখন থেকল আমার লাইফ ও, জীবন মানেই জি বাংলা!!

কিন্তু একটা বিষয় বুঝতে পারছিলাম না কি করে বৌমা আর শাশুড়ির দ্বন্দ্ব শুরু হল! কারন মা আর রিনকির সম্পর্ক অনেকটা মা মেয়ের মতন। আমি ই একমাত্র সন্তান আমার বাবা-মার।ফলে মায়ের মেয়ের তৃষ্ণা মিটেছে রিনকি কে পেয়ে।অন্য দিকে বেকার ছেলেকে বিয়ে করে রিনকি হয়েছিল ত্যাজ্য কন্যা। তাই তো শাশুড়ির বুকে মাথা রেখে মা-বাবার আদরের পিপাসা মেটাতো রিনকি।মা রিনকি কে তুই বলে ডাকত।আর মাকে রিনকি ডাকত তুমি বলে। মায়ের আহ্লাদে রিনকির ভাব এতো টাই বেড়ে গিয়েছিল একটু বকলেই কেঁদে মার কাছে নাক ফুলাতো।মা তো আমায় একবার মারতে ও গিয়েছিল কেন রিনকি কে বৈশাখীতে শুধু শাড়ী কিনে দিয়েছি? জুতা,চুড়ি,টিপ দেয়নি কেন? কেন মায়ের মেয়ের প্রতি আমি এতো অবহেলা করি?

আমার সাথে রিনকির রাগারাগি হলেই ও মার সাথে ঘুমায়! বলতে গেলে রিনকি আর মায়ের সুপার কেমিস্টির জন্য মাঝে মাঝে আমি ফিজিক্স /ক্যামেস্টি সব কিছুতেই ফেল করি!! বুঝলাম নাআমার সুখের ঘরে এমন কোন ক্যাটালিস্ট ঢুকলো যে বৌ শাশুড়ির কেমিস্ট্রিতে তে আগুন ধরাচ্ছে!! রিনকি কে ডাকতে যাব এমন সময় কানে ভেসে আসল ওর কন্ঠ, হ্যা ভাবী,জানি তো উনি আমায় এখন দেখতে পারেন না।বোঝেন ভাবী, পেগনেন্ট আমি, কিভাবে কাজ করবো! একটু ক্লু পেলাম,কোন ভাবী ছড়ি ঘোরাচ্ছে! বিছানায় আসতেই রিনকি কে জিগেস করলাম, কে ইপু (ওর বান্ধবী) ফোন করেছে? রিনকি বলল না। রফিক ভাবী ফোন দিয়েছে।

বন্ধু মহলে যার যার বৌকে ভাবী ডাকা হয়। যেমন রিনকিকে কে ডাকা হয় শামীম ভাবী। যাক ধরতে পারলাম প্যাচ লাগিয়েছে রফিকের বৌ। কিন্তু মা ও কেন রেগে রিনকির সাথে? সকালে অফিস এ যাবো রিনকি বললো,একটু খাসীর মাংস আর দই এনো। বাহ্ স্পেশ্যাল খাবার।কে আসবে গো জান? ও হেসে বলল রফিক ভাবী প্রায় আসে, প্রতিদিনই নরমাল খাবার খাওয়াই। তাই,আজ একটু ভালো-মন্দ খাওয়াবো। ওকে, নিয়ে আসবো, আল্লাহ হাফেজ বলে বিদায় নিলাম।সারা দিন অফিসে ভাবলাম কিভাবে সমাধানে আসব,ওদের মিষ্টি সম্পর্ক আমি কিছুতেই ভাঙতে দেব না! যাওয়ার পথে রিনকি আর মার জন্য ২ টা শাড়ী কিনলাম।

রাতে মা আর রিনকির হাতে পৃথক ভাবে শাড়ী তুলে দিলাম।মা কে বললাম মা রিনকি আসার পথে বার বার বলে দিছে মা এর জন্য শাড়ি নিয়ে আসো, মা আমার সাথে রাগ করছে, মা রাগ করলে মরে যেতে ইচ্ছে করে। মা ভয় পেয়ে যায়, বালাই ষাট, আমার মেয়ে কেন মরবে? আর রিনকে ও এভাবেই।ওরা দুজনেই অবাক! মা ভাবছে বৌমা এই ঝগড়ার মধ্যে শাড়ী কিভাবে উপহার দিল,একই অবস্থা রিনকিরও! রাতেই পারিবারিক মিটিং ডাকলাম। মা আর রিনকিকে আগের চেয়ে কোমল লাগছে।হয়বো বা একজন আরেকজনার উপহার পেয়ে অনুতপ্ত এই ভেবে যে কেন তারা ঝগড়া করল!

প্রথমেই শুরু করলাম, মা আর রিনকি তোমরা কি জানো এক জন ব্যক্তি তোমাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছে। আচ্ছা মা তুমি রফিক ভাবী কে রিনকিকে নিয়ে কি বলেছ? মা বলল, আমি কি বলব? তোর বৌ ই বলেছ,আমি নাকি বুড়ি কিছুই করতে পারিনা,তোর বৌ কে আদর করি না,সংসারের বোঝা আমি! রিনকি কাঁদো কাঁদো গলায় বললো মা তোমায় এই গুলো বলিনি। বরং রফিক ভাবীই বলেছিল যে তুমি নাকি বলছ, তোমার বয়স হয়েছে তবু ও তোমার অনেক কষ্ট করতে হয়, শামীমের পছন্দের খাবার বানাও,আমি কনসিভ করার পর তোমার অনেক প্রেসার হচ্ছে?

মা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।  রিনকি আর ও উঁচু গলায় বললো কিন্তু মা তুমি আমার নামে কেমনে বললা আমি নাকি নবাবজাদি, কোন কাজ করি না,? ছি মা তুই কি বলিস? আমি তো বলছি তুই কত বড়ো ঘরের মেয়ে তবু ও তুই এই সংসার কে মমতায় আগলে রেখেছিস।এখন তোর বাবু পেটে দেখে কাজ করতে তো আমি ই না করি।আমি রফিকের বৌ কে বললাম যে তুই ভালো করে খেতে ও পারিস না।উল্টো ও ঠোট বাকিয়ে বলল আমরা ও তো মা হয়েছি খালাম্মা, সব ওই বড়লোকের মেয়ের ন্যাকামী।এই বয়সে আপনাকে বুয়ার মতন খাটায়। আমি আর রিনকি হতভম্ব!!

কি সূক্ষ্ম প্যাচ লাগিয়েছে! হঠাৎ রিনকি দৌড়ে গিয়ে মা কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল।মা ও কান্না। রিনকি কান্নাভেজা কন্ঠে বলল মা আমি তোমার মেয়ে,তুমি পরের কথায় আমায় ভুল বুঝবা না।মা ও আদুরে গলায় বলে,তুই ক্যান পরে কথায় মার লগে রাগ করস? আমি ওদের একা রেখে রুম থেকে বের বের হলাম! আজ শুক্র বার। দুপুরে রফিক আর ওর বৌ বেড়াতে আসলো। এসেই ওর বৌ কখনো মা আর কখনো রিনকির সাথে ফিসফিস করছে। রফিকরা বিকেলে যখন চলে গেলে দেখি মা আর রিনকি একসাথে হাসাহাসি করছে।

এমন হাসছ কেন, জিগেস করতেই ও বলল জানো, ভাবী আজ কোন কিছু বলে পাত্তা পাইনি তো,তাই মুখ ভার করে তাড়াতাড়ি চলে গেল!! সত্যি ই কত্ত সুন্দর সাজানো সংসার আমার ভাঙতে চলছিল শুধু মাত্র এক জন তৃতীয় পক্ষের জন্য।ফোড়নকারীরা আমার সংসার হতে ১০০ হাত দূরে থাকুক। রফিক ভাবীর জন্য সমবেদনা যে ভেজাল করে আনন্দ পায়। আর আমার সংসার হোক আলোকিত এক খোলামেলা আলোচনায়!!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত