ভাইয়া ফোন করে বলল বাসায় মানিব্যাগে ফেলে গেছে। তাই মানিব্যাগটা নিয়ে আমি যেন বাসার নিচে এসে দাঁড়াই। বাসায় কাকপক্ষীও সেদিন উপস্থিত না থাকায় দরজায় তালা দিয়ে মানিব্যাগটা নিয়ে নিচে এসে দাঁড়ালাম। বাসার গেইটে দাঁড়িয়ে ভাইয়া যে রাস্তা ধরে আসার কথা সে রাস্তার দিকে তাকিয়ে, হাতে থাকা চাবি দিয়ে কাতুকুতুর নিচে চুলকাচ্ছিলাম।
পাশের বাসার প্রিয়ন্তী আমাদের নিচতলার ভাড়াটিয়া রফিক চাচার মেয়ে মিলির সাথে দেখা করার জন্য এসেছিলো। ওরা দু’জন একই কলেজে পড়ে। প্রিয়ন্তী চেয়েছিল আমার হাতের নিচ দিয়ে ফাঁকি মেরে ভেতরে চলে যাবে। কিন্তু আমার কাতুকুতুর গন্ধে সে বমি করে দিলো। বমি করেছে আমার পায়ের উপর। সকালে নিশ্চয় প্রিয়ন্তী পাঙাশমাছ দিয়ে খেয়েছে। বিশ্রী খাবার বের হয়ে আসছে তার পেট থেকে, বমির দিকে একদমই তাকানো যায়না। মিজাজটা বিগড়ে গেলো। প্রিয়ন্তীকে দিলাম এক থাপ্পড়। শুরু হলো তুমুলঝগড়া।
ভাইয়া কখন এলো টেরই পেলাম না। ভাইয়া এসে আমাদের ঝগড়া দেখে পুরাই ভেবে বসলো, খালি বাসা পেয়ে প্রিয়ন্তীকে আমি ডেকে এনেছি। এদিকে আমার শরিরে বমির বিশ্রী খাবার দেখে ভাইয়া ভাবলো প্রিয়ন্তী বোধহয় প্রেগন্যান্ট হয়ে গেছে। আর এসবের পিছনে আমিই একমাত্র দায়ী। ভাইয়াকে দেখে প্রিয়ন্তী আমাদের বাসায় না গিয়ে উল্টো নিজেদের বাসায় চলে গেলো। পরলাম মহাবিপদে।
মানিব্যাগটা ভাইয়ার হাতে দেয়ার আগেই ভাইয়া কষে দুইহাতের সর্বুচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে দুইটা থাপ্পড় মারলো। আমার মনে হচ্ছিলো থাপ্পড়ের চুটে গাল দুইটা পেরালাইজড হয়ে গেছে। কিছুই বলতে পারলাম না ভাইয়াকে। সে প্রিয়ন্তীকে ডেকে বলল,, “প্রিয়ন্তী তুমি কাউকে কিছু বলিওনা। আম্মা আব্বা বাসায় আসুক তারপর বিষয়টা আমি দেখছি। আমি ভাইয়ার কথা তখনো কিছুই বুঝিনি। এদিকে প্রিয়ন্তীও কিছু বললনা। সে কি বুঝলো সে নিজেই জানে। আম্মা আব্বা বাসায় আসার পর আমি বুঝতে পারলাম, ভাইয়া আসলে কি ভেবেছিল সেদিন। আম্মা তো রাগে আমার সাথে কথা বলাই অফ করে দিয়েছে। এদিকে বারবার মিলিকে ডেকে এনে জেরা করছে,, “মিলি! সত্যি করে বলো ওদের রিলেশনশিপ সম্পর্কে তুমি কিছু জানো কিনা। সত্যিটা না বললে বাসা থেকে আজই তোমাদের সবাইকে বিদায় করে দেব।
এদিকে মিলি মাইনকার চিপায় ফেঁসে গেলো বাসা থেকে বের হওয়ার হুমকি শুনে। সে ডাহামিথ্যে সাজিয়ে গল্প একটা বলে বসলো,, “জ্বি আন্টি আপনার ছেলে প্রিয়ন্তীর সাথে প্রেম করে। প্রিয়ন্তীও আমাদের বাসায় আসার কথা বলে তার সাথে দেখা করে যায়। সিঁড়ির নিচে ডলাডলিও করে। আমি নিজে দেখছি। মিলিও শেষ পর্যন্ত এমন মিথ্যা অভিযোগ মেরে দিলো যে, আমার মনে হচ্ছিল চারপাশের সবদিকের চিপায় পরে আমি চাইরকা চিপায় পরেছি।
আম্মা মানসম্মানের কথা চিন্তাভাবনা করে মিলিকে প্রিয়ন্তীর বমি করার বিষয়ে কিছুই বলল না। একদিন সন্ধ্যায় চুপিচাপি প্রিয়ন্তীর পরিবারের সাথে আলাপসালাপ করে আমার সাথে প্রিয়ন্তীর বিয়ে ঠিক করে আসলো,, সুফায় বসে কথাবার্তার ফাঁকে আমি যখন বললাম,, “আমি বিয়েটা করবনা” অমনি ভাইয়া এসির রিমোট দিয়ে মাথায় এমন এক আঘাত করলো যে, আমি মাথা ঘুরানি খেয়ে দরজার চিপায় গিয়ে পরলাম। কিছুক্ষণ পর হুঁশ ফেরার পর মনে হলো এটা দরজার চিপা নয়, মাইনকার চিপা।
সবশেষে বাধ্য হয়েই আমার বিয়েটা করতে হলো।বিয়ের পর আম্মা তো রাগে প্রিয়ন্তীর সাথে ঠিকমতো কথাই বলেনা। বাসরঘরে প্রিয়ন্তী এসে আমার কাছে আম্মার তারাসাথে কথা না বলার বিষয়টা বলল, এটা শুনে প্রিয়ন্তীকে একটা থাপ্পড় মেরে বললাম,, বমিটা সেদিন না করলে এই সর্বনাশটা আজ হতনা। তোর মত একটা ডাইনি মাইয়া কপালে ঝুটবে জীবনেও ভাবিনি। এখন থেকে সারাজীবন কাতুকুতুর গন্ধ দিয়া তরে গাইরালবাম। থাপ্পড় দিয়া বাসরঘর থেকে বের হয়ে দেখি আমার বিয়ের খবর শুনে জিএফ এসে বাসায় হাজির। বাসা ভরা মেহমানের সামনে জিএফ এসেই মা মরা মেয়েদের মত বিলাপ শুরু করে দিয়েছে। আমাকে দেখামাত্রই বলা শুরু করেছে,, “কুত্তা, শয়তান, বেইমান! আমার জীবন ধ্বংস করছস। আর বিয়া করছস আরেক মেয়েরে??
আম্মারে দেখলাম দু’জন মিলে ধরাধরি করে বিছানায় নিচ্ছে। একজন পানির বালতি নিয়ে দৌড়াচ্ছে, আরেকজন ওয়েলক্লথ নিয়ে। ভাইয়াকে দেখলাম গ্যাসের চুলার পাইপ নিয়ে আমারে মারার জন্য দ্রুততার সাথে এগিয়ে আসছে। আমি এসব দৃশ্য দেখে মাথা চক্কর মেরে বেহুঁশ হয়ে গেলাম। জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে হাসপাতালের বেডে শায়িত পেলাম। আমার পাশে আমার বউ প্রিয়ন্তী বসে আছে। এদিকওদিক তাকিয়ে দেখি আশেপাশে আর কেউ নেই।
প্রিয়ন্তী বলল,, লুচ্চা বেডা এবার বাসায় চলো, আর ভং ধরতে হবেনা। বাসায় সবাইকে গল্পটা শুনিয়ে আসছি। অনেকেই গল্পটা শুনার পর হাসতে হাসতে বেহুঁশ হইছে। আর কেমন ডাইনি মেয়ের সাথে প্রেম করলা! দেখতেও কেমন যে একটা ঢং। আবার তোমারে গিফট কিনে দিছে বলে গিফটের টাকাও ফেরত চাইছিল। ভাইয়া দেখলাম দশ হাজার টাকা দিয়া ওরে বিদায় করলো। চোখে কি এতকাছে থাকার পরও আমারে পরেনাই কোনদিন?? প্রিয়ন্তীর কথা শুনে আমি আবারও বেহুঁশ।