বিয়ের রাতেই বর এক ধমক দিয়ে বল্লো, নামো খাট থেকে। নামো, নিচে গিয়ে ফ্লোরে শুয়ে পড়ো। বাবা মায়ের কথা রাখতে তোমাকে আমার বিয়ে করতে হয়েছে। কত ইচ্ছে ছিলো প্রেম করে বিয়ে করবো,তা আর তাদের জন্য হলোনা।প্রেম করার আগেই গলায় ঝুলিয়ে দিলো বউ নামের সাইনবোর্ড টা। যাও খাট থেকে নেমে নিচে গিয়ে বিছানা করে শোও।আর কোন দিন তুমি আমার কাছে স্ত্রীর অধিকার নিয়ে আসবেনা। কথা গুলো শুনে ইয়াহু বলে একটা চিৎকার দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বললাম, ওকে ওকে থ্যাংক ইউ সো মাচ। প্লিজ চলুন আমার সাথে, বর আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
-কই,চলুন না।
-কই যাবো?
-আরে,আমাকে আমার বফের কাছে দিয়ে আসতে।
প্লিইইইজ চলুন। চলুন চলুন চলুন। আমার বর ইয়া বড় একটা হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এই যে হা করে কি দেখছেন? আমি জানি আমি সুন্দর।তাই বলে এই ভাবে হা করে দেখতে হবে? আমার বফও আমার দিকে এইভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতো। আমি ওকে আদর করে ওর গালে ঠুন দিয়ে বলতাম,যাহ দুষ্টু এভাবে দেখতে হয়? লজ্জা লাগে না বুঝি। আমার বর আমার কথা শুনে এবার মুখ বন্ধ করে আমাকে বল্লো, ওই নাম খাট থেকে,এক্ষুণি নামবি। সকালেই আমি সবার সামনে তোর এই কুকীর্তির কথা উন্মোচন করবো।
তুই শব্দটার প্রতি ছোট বেলা থেকেই খুব রাগ। এই তুই শব্দ টা শুনলেই গায়ে জ্বালা শুরু হয় আমার।তুই শব্দটা আম্মু আর আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড ছাড়া অন্য কারো মুখে শুনলেই মাথায় রক্ত উঠে যায় আমার। জানিনা ছোট বেলা থেকেই কেন যেন তুই শব্দ টা আমার কাছে অসহ্য লাগে। শুধু মাত্র আমার আম্মু আর ক্লোজ ফ্রেন্ড ছাড়া আমাকে কেউ তুই ডাকেনা। আমি এই দুইজন ছাড়া কারো মুখে ভুল করেও তুই শুনলে মাথায় যেন আগুন ধরে যায়। আর আমার বর,যাকে আমি কিছু ক্ষণ আগে তিন কবুল করে বিয়ে করেছি সে কিনা আমাকে তুই বলেছে। এবার আমিও গেলাম রেগে। রেগে গিয়ে বললাম,
~ওই ওই ওই!
বার বার খাট থেকে নাম খাট থেকে নাম যে করছিস, খাট টা কি তোর বাপের? এটা আমার বাপের খাট,আমার বাপ আমাকে দিছে এই খাট। খাট থেকে নামতে হলে তুই নামবি। ফ্লোরে শুতে হলে তুই শুবি। mআমি না। বর আমার বাংলার পাঁচের মত চেহারা করে খাট থেকে নেমে গেলো। এবার ঠিক বুঝতে পেরেছে, কাকে কি বলেছি আমি। বর খাট থেকে নেমেই সোফায় গিয়ে বসলো, তখনই আমি বলে উঠলাম,
~সোফাটাও আমার বাপের টাকায় কেনা। আমার বাপে দিছে আমারে। নেমে আপনার বাপের করা ফ্লোরে শুয়ে পড়ুন। নামুন। এবার বর আমার খাটের উপর থেকে কম্বল টানছে।
~এই যে মিঃ কম্বল কেন টানছেন?কম্বলটা আমার বাবা আমার জন্য বিদেশ থেকে নিয়ে এসেছেন।আমার বাবা আমাকে কম্বল দিয়েছেন বলে,কিছু ক্ষণ আগে আপনার মা এসে রুম থেকে আপনার কম্বল নিয়ে গেছেন।
গেস্ট দের গায়ে দিতে দিবেন বলে। কম্বল টাও আমার বাপের। সো,ছাড়ুন বলার আগেই ছেড়ে দিন আমার কম্বল। এবার আমার বর যা করলো তা দেখে আমি তো আমার দুই চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিনা।
~শোনো বউ,তুমি আমার লক্ষী বউ,জাদু বউ,জানু বউ,সোনা বউ।প্রান পাখি বউ।
তুমি না আমার বউ? তুমি আমার বউ মানে তোমার বাবা আমার শশুর বাবা। আমার শশুর বাবার টাকায় কেনা খাট যদি তোমার হয় তাহলে সেই খাট আমারও হয়। যেহেতু তিনি এখন আমারো বাবা হন। আর তার কম্বলও তাহলে তোমার আর আমার। ঠিক বলেছিনা?কমার্সের ছাত্র আমি। mহিসেবে পাকা। চলোনা দুজন মিলেই শুয়ে পড়ি। বুঝলাম না হঠাৎ আমার তেজস্বী বর এতটা চুপসে কেন গেলো।সিংহ থেকে বিড়াল হয়ে গেলো কেন। বেচারার মুখের দিকে চেয়ে মায়া হলো। তাই বললাম,ঠিক আছে দুজন ভাগাভাগি করেই খাটে শুবো আর কম্বল গায়ে দিবো। এমন দিনে বিয়েটা হলো, শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে।ঠান্ডায় কাঁপুনি দিইয়ে ছাড়ছে এই শীত। কবুল বলার সময়ও কাঁপতে কাঁপতে বলতে হয়েছে আমার কক কক কক কবুল।
এই নিয়েও লোক জনের কত কথা, মেয়ে মোরগ ডাক দিচ্ছে কেন। অথচ কেউ বুঝলোনা শীতের চোটে মুখ দিয়ে আমার আওয়াজ বেরুচ্ছেনা। শেষমেস অতিকষ্টে তিন কবুল বলেছি। শীত আমি একদম সহ্য করতে পারিনা। সবার কাছে শীত কাল টা পছন্দের হলেও, আমার কাছে তা খুবই অপ্রিয়। শুয়ে আছি দুজন। হঠাৎ করেই যেন শীত টা বেশিই লাগছে। mতাই বরকে একটু জড়িয়ে ধরলাম। কালমা পড়ে বিয়ে করেছি, শীতের মধ্যে এত কষ্ট করে কবুল বলেছি। তাকে জড়িয়ে ধরার অধিকার তো আমার আছেই। বরকে জড়িয়ে ধরার সাথে সাথে বর আমার উঠে বসে পড়ে বল্লো,
-তোমার না বফ আছে? আমাকে কেন ছুঁচ্ছো?
-বফ?কিসের বফ?
-তুমি না বললে আমাকে আমার বফের কাছে দিয়ে আসুন।
-ওটা তো আপনাকে রাগাতে বলেছি।আপনার রিয়েকশন দেখতে বলেছি। আমার কোন বফ টফ নাই। থাকলে কি আর আপনার মত আধবুড়া লোককে বিয়ে করি?
-কি আমি আধ বুড়া?
-আধবুড়া নয়তো কি?
-আসো বুঝাচ্ছি আমি আধবুড়া কিনা।
-এই হাত ধরবেন না। আমি মেয়েটাও কিন্তু আমার বাপের।
-তাতে কি বউটা তো আমার।
-আহা বউ এর প্রতি খুব ভালবাসা জাগছে তাইনা?
-জাগবেনা,১০ টা না ৫ টা একটা মাত্র বউ আমার।
-কি করতে পারবেন বউ এর জন্য?
-তুমি যা বলবে,
-এক রাত কম্বল ছাড়া শুয়ে দেখান।
-এই শীতের ভয়ে কম্বলের লোভে বউ এর কাছে হার মানলাম।
এক মাত্র কম্বলের জন্য বউর সামনে সহজ সরল বাচ্চা ছেলে হয়ে গেলাম। আর এখন বউ বলে কিনা এই কম্বল ছাড়তে। নায়ায়ায়ায়া এটা হতে পারেনা। এই শীতের রাতে বউ ছাড়তে পারবো। কিন্তু কম্বল না।
-কিইইইই? বরের সামনে বাঘিনী সাজতে গিয়ে এবার যেন আমি নিজেই বিড়াল হয়ে গেলাম।
-আমার চেয়ে ওই কম্বল বেশি দামি আপনার কাছে? থাকুন আপনি কম্বল নিয়ে। আমি সকাল হলেই চলে যাবো বাপের বাড়ী।
-সমস্যা নেই।রাত টুকুতেই কম্বল টা লাগবে।
সকালে আমিই কম্বল প্যাক করে তোমার সাথে পাঠিয়ে দিবো। অবশেষে বর কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমাতে লাগলো, আর আমি বসে বসে এই বলে কাঁদতে লাগলাম, এ্যা এ্যা এ্যা। শেষমেস একটা কম্বলের কাছে আমি হেরে গেলাম। এই সামান্য এক কম্বলের জন্য বাঘিনী থেকে বিড়াল হয়ে গেলাম।