খালাম্মা! আমারে এক্কান বড় ওড়না কিন্না দিবেন? রমিজার কথা শুনে তার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকলেন সেলিনা বেগম। পান মুখে দিতে দিতে বলেন,
~ ক্যান তুই ওড়না দিয়া কি করবি?
~তর্জনী দিয়ে মাটিতে আঁকিবুঁকি কেটে- কেটে রমিজা জবাব দেয়, শরীর ঢাইকা রাখুম, কিন্না দিবেন কন?
সেলিনা বেগম হু হু করে হাসলেন। তারপর বলেন, “আইচ্ছা”। রমিজা খুশী হয়ে বাড়ি বাইরে দৌড় দেয়। রমিজার বয়স চৌদ্দ। কয়েক বছর আগ থেকেই খাঁ বাড়িতে কাজ নিয়েছে সে। তার মা মারা যায় জন্মের এক ঘন্টার পর পরি, তাই রামিজার মাথার উপর ছাদ বলতে লেংড়্যা বাবা। কিন্তু রমিজার বাবা লেংড়্যা হলেও ইতর খাইটের লোক, সে নিজে কাজ কর্ম না জোগার করেই মেয়েকে কাজে লাগিয়ে দিয়েছে। প্রতিমাসে কিছু টাকা সহ আধা বস্তা চাল পায় সেটাই তার কাছে ঢের, গায়ে বাতাস লাগিয়ে বসে বসে সারাক্ষণ বিড়ি টানে সে। সেলিনা বেগম রমিজাকে মেয়ের মতোন আদর করেন, রমিজার টুকিটাকি ইচ্ছা পূরণ করে দেন অনায়াসে। স্বামী সৌদি আরবে থাকায় বাড়ির কর্তী হয়ে আছেন সেলিনা।
ইদানীং রমিজা টের পায় সে বড় হচ্ছে, তার বুকে, কোমরে দিকে প্রায়ই তারেক ঠ্যাব ঠ্যাব করে তাকিয়ে থাকে। তারেক সেলিনা বেগমের ছেলে! শুধু তারেক না এই গ্রামে অনেক পুরুষ তার দিকে অন্যরকম তাকায়, সে দৃষ্টি কোনো মায়া নেই বরং আছে খারাপ রকমের কু-দৃস্টি। সেদিন তারেক এর ঘর গোছাতে গিয়ে রমিজার গায়ে হাত দিয়ে দেয়, টের পেয়ে রমিজা দৌড় দিয়ে পালিয়ে আসে। ব্যাপার টা সেলিনা বেগম কে কিছুতেই বলতে পারে না সে, তারেক অতি আদরের ছেলে তার। এসব জেনে যদি রমিজা কে এ বাড়ি তে বের করে দেন। তাহলে তাকে অসহায় মতো থাকতে হবে, মায়ের মত যে আদর টা কপালে জোটেছে সেটাই হয়তো ফিকে হবে। সেটা ভেবে রমিজা চুপ করে থাকে পাছে, প্রকান্ঠ ভয় ও সবধানী চোখ বুলায় চারিদিক।
দু’দিন পরেই গাওয়াল কাছ থেকে রমিজার জন্য সত্যিই -সত্যিই ওড়না কিনে দিলেন সেলিনা। কেবল ওড়না না সেলোয়ার- কামিজ সহ কয়েকটা জামা কিনে দিলেন। এতোগুলো কাপড় পেয়ে খুশিতে রমিজার চোখে পানি টলমল করে, বারংবার শ্রদ্ধায় নুয়ে পড়তে চায় সেলিনা বেগমের প্রতি। লাল-নীল হরেক রঙের জামা রমিজা নেড়েচেড়ে দেখে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে। উঠান থেকে দেখেন সেলিনা বেগম, রমিজার ভাব -ভঙ্গি দেখে বড়ই খুশী হন তিনি। রমিজাকে স্কুলে ভর্তি করাতে চান, বছর ঘুরলেই পাশের স্কুলে নিয়ে যাবেন সেলিনা।রমিজার চোখে অনেক সম্ভাবনা দেখতে পান তিনি, তার মতে!দেখা যাবো, কামলা বেডি থ্যাইকা হইয়া গেলো মাস্টারনী। ভাবতে ভাবতে মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে সেলিনা বেগম এর। টিভিতে পর্দায় বিশেষ বুলেটিন ভাসে, এক ধর্ষিতা মেয়ের আত্নহত্যা! সংবাদ টা দেখে সেলিনা বেগম ঠোঁট উল্টে হরবর করে কথা বলেন,
~হু মইরা গিয়া জান রে কি উদ্ধারো দিছে, মরার আগে ওই খাটাস রে মারতি।তাইলে মইরা গিয়াও শান্তি পাইতি। আসলে কি জানোস! যে মানুষ অন্যায় কাম করে হে জালিম, লগে যেটায় অন্যায় সয্য করি বেক্কাত কইরা মইরা যায়, কিছু করে না হেইডাও জালিম। যতক্ষণ শ্বাস আছে ততক্ষণ লইড়্যা যাইতে হয়, মরবার লাইগ্যা আল্লা কেওরে দম দেয় নাই।
রমিজা বড় বড় চোখে এক দৃষ্টিতে সেলিনা বেগম দিকে তাকিয়ে আছে, তার যেনো বিস্ময়মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এসব খিস্তি কার প্রতি আওড়াচ্ছেন সেলিনা সেটা রমিজা আধো বুঝতে পারে না। রমিজা ভেবে পায়না, এই পরিবারের মা -ছেলের মধ্যে কত রকমের ফারাক।
কয়েক দিন পর সেলিনা বেগমের ইচ্ছা হলো শাক -ভাত খাওয়ার, তাই রমিজা কে বললেন পাশের ঝোপ থেকে শাক তুলে আনার। রমিজা কাজ পেয়ে যেনো টগবগ, প্লাস্টিকের ঝুড়ি নিয়ে ছুটলো শাক তুলার দায়িত্বে। কচি- কচি ঘাসের মাঝারে ছোট – ছোট শাকের পাতা, আলগোছে পাতা তুলছে রমিজা। হঠাৎ রমিজা অনূভব করে তার পেছন দিকে কার ঠান্ডা হাতের স্পর্শ, পাশ দিয়ে সামনে থাকাতেই দেখতে পেলো তারেক কে। ভয় আতংকে জমে গেলো রমিজা, এবং কাঁপা গলায় তারেক কে উদ্দেশ্যে করে বলে,
~ আরে তারেক ভাই! আপনে এনে?
~ তারেক লকলকে জ্বিব নেড়ে উত্তর দেয়, ক্যান আইছি বুঝোছ না তুই!
এই বলে হেচড়া টান দিয়ের রমিজা কে মাটিতে ফেলে দেয় সে, শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। রমিজা প্রাণপন লড়ে যায় তারেক এর হাত থেকে ছুটবার। ইতিমধ্যেই তারেক এর শরীরে কামুকের সুরসুরি শুরু হয়ে গিয়েছে, হলুদ দাঁত কেলিয়ে রমিজার শরীরের দিকে চেয়ে তাকে সে, আজ যেনো এতো দিনের খায়েস মিটবে তার। চোখ বন্ধ করে প্যান্টের জিপার খুলতেই হাতভর্তি হয়ে যায় রক্তে এবং দেখতে পায় তার যৌনাঙ্গ মাটিতে লুটপুটি খাচ্ছে। পাশে খটমট দাঁতে -দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে আছে রমিজা, হাতে তার রক্তমাখা চকচকা ব্লেড। তারেক বুঝতে পারে শাক তুলে আনার জন্য যে ব্লেড রমিজার হাতে ছিলো সেটা দিয়েই তার করুণ অবস্থা হলো, আঘাতে যন্ত্রণায় ছটফট করতে-করতে ঝোপ থেকে দৌড়ে বেড়িয়ে এলো তারেক। বাড়ির উঠোনে পা দিয়েই “আম্মা” বলেই চিৎকার করেই পড়ে গেলো সে। ঘর থেকে শব্দ শোনেই বাইরে আসতেই আহাজারি করতে -করতে ছেলের দিকে ছুটলেন সেলিনা। কান্না গলায় ছেলেকে বলে উঠেন,
~ ওরে আমার বাপ, তোর এমন অবস্থা হইলো ক্যামনে?? তারেক ঠোঁটে “র” উচ্চারণ করতেই পরক্ষণে কথাটি গিলে নেয় সে। নামটা আর আওড়াতে পারে না আর, রমিজার সাহসী চোখ ভেসে আসে তার। ভয় ভিষণ ভয় করে তারেক।