আমার বউ ফোন দিয়ে আজ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে বলল। কারন আমার শ্বশুর বাড়িতে কী জানি একটা ঝামেলা হয়েছে। ইচ্ছা না থাকলেও বউয়ের হুকুম অমান্য করার মত দুঃসাহস আমার নেই। তাই তাড়াতাড়ি-ই বাসায় ফিরলাম। বউ আমায় ফ্রেশ হওয়ার সুযোগ পর্যন্ত হতে দিল না। আমি বাসায় যাওয়ার সাথে-সাথেই আমাকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল। বউকে আগে আমি এত ভয় পেতাম না। অল্প-অল্প পেতাম। কিন্তু গেল মাসে একটা ঘটনার পর থেকে ভয়টা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। বলতে গেলে এখন আমি তাকে যমের মত ভয় পাই। ছোটবেলায় মা আমায় যে রাক্ষস-কুক্ষষ এর গল্প শুনিয়ে ঘুম পারাত তারচেয়েও বেশি পাই।
জ্যাম ঠেলে, রাস্তায় বহু ঝক্কি-ঝামেলা শেষ করে অবশেষে আমরা শ্বশুর বাড়িতে হাজির হলাম। কিন্তু গিয়ে অবাক না হয়ে আর পারলাম না। আমার শ্বশুর-শাশুড়ি ঝগড়া লেগে দুজন বাসার দুইপাশ দখল করে বসে আছে। আর তাদের মাঝখানে ইন্ডিয়া-পাকিস্তান বর্ডার শাশুড়ির দিকে শ্বশুরের যাওয়া নিষেধ, আর শাশুড়িরও শ্বশুরের এলাকায় প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
সারা বাড়ি যেভাবে নিস্তব্ধ হয়ে আছে এ যেন কোনো প্রলয়কারী ঝড়েরই আগাম বার্তা। মনে হচ্ছ এই বাড়িতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে, আর উল্টা-পাল্টা কিছু করা মাত্রই পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যাবে। আমি ভীতু মানুষ হলেও এমন ঘটনায় এখন আর খুব বেশি একটা ভয় পাই না। কারন বউয়ের ঝাড়ি খেতে-খেতে এসব ঝগড়া-ঝাঁটির ভয় আমার কবেই উড়ে গেছে।
তা কোন কারনে এই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছে তা জানা দরকার। সেটা জানতেই বউ আমার শাশুড়ির ঘরে প্রবেশ করল। বউয়ের আচল ধরে পিছু-পিছু আমিও গেলাম। এই ঘরটায় আগে আমার শ্বশুর-শাশুড়ি দুজনই থাকত। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর শ্বশুরকে বের করে দিয়ে শাশুড়ি দখল করে এখন নিজের বেজ-ক্যাম্প বানিয়েছে।
ঘরে ঢুকেই আমার বউ শাশুড়িকে বলল, ‘আম্মা তুমি এতদিনেও কিছু শিখলা না! আব্বা তোমার সাথে ঝগড়া করার সাহস কই থেকে পায়? তোমাদের জামাইকে দেখো কেমন সোজা করে ফেলেছি— এখন যদি এখানে, এই ফ্লোরে সারাদিন কান ধরে উঠ-বস করতে বলি তাই করবে। একটা টু শব্দ পর্যন্ত করবে না। আর আম্মা তুমি! আমি অবাক না হয়ে আর পারিনা…আম্মা।’ বউ আমার বিন্দু পরিমাণও মিথ্যা বলেনি। সে যাইহোক পাঠক তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারনটা এখন আপনাদের বলা দরকার। আমার শ্বশুর এক মহা ভুল করে ফেলেছে। বলতে হয় মহা পাপ, মহা অপরাধ। আর এমন ভুলের জন্য এমন টুকটাক একটু শাস্তিও অস্বাভাবিক কিছু না।
গতকাল আমার শ্বশুর-শাশুড়ি বাইরে খেতে যায়। সেখানে গিয়ে নাকি তারা অনেকগুলা সেলফিও তুলে। সে পর্যন্ত সব ঠিকঠাক-ই ছিল। কিন্তু রাতে বাড়ি ফিরে এসে ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় আমার শ্বশুর মহাশয় মহা ভুলটা করল। শাশুড়ির ভাষ্যমতে শ্বশুর নাকি ইচ্ছা করেই তার সবগুলো খারাপ খারাপ ছবি এডিট না করেই ফেসবুকে আপলোড দিয়েছে; কিন্তু নিজের বেলায় ঠিকই সবচেয়ে ভালো ভালো ছবিগুলো বেছে-বেছে আপলোড দিয়েছে। ঘটনা এখানে শেষ হলেও পারত। কিন্তু হলো না। সেই ঘটনা বা আগুনে ঘি ঢেলে দিল আরেক মহিলা। সেই এডিটবিহীন সবগুলো ছবিতে নাকি ঐ মহিলা হাহা রিয়েক্ট দিয়েছে। আর সে মহিলার দিকে নাকি আমার শ্বশুর ভার্সিটি লাইফে বিভিন্ন সময় আড়চোখে তাকাত। এ নিয়ে নাকি আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ির প্রেম চলাকালে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকবার ঝগড়াও হয়েছিল।
এবার আমার আর কিছু বুঝবার বাকি রইল না। বেচারা শ্বশুরের ভবিষ্যৎ ভেবে আমার খালি দুঃখ হতে লাগল। আমার শাশুড়ি আর বউ এখন শ্বশুরের ঘরে প্রবেশ করছে; কিন্তু আমি বাইরে নিঃশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছি। কারন গেলো মাসে বউয়ের কয়েকটা মেকআপবিহীন ছবি আপলোড দিয়ে কী ঝামেলাতেই-না পড়েছিলাম সেটা এখনো ভুলিনি আমি— এখনো যে আমাবস্যা-পূর্ণিমার রাতে মাঝেমধ্যে আমার শরীরের হাড়গুলা টনটন করে।