প্রতি বছর একবার করে পাহাড়ে ঘুরতে যাওয়া এখন নন্দার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।কখন অফিস কলিগদের সাথে কখন বন্ধুদের সাথে আর যদি কাউকে না পায় তো সে তার স্পর্শকাতর মুঠো ফোন আর হেডফোন বেরিয়ে পড়ে পাহাড়ের কোলে।এবারেও তার অন্যথা হলো না।এক ঘেয়ে জীবন থেকে ছুটি নিয়ে এবারেও বেরিয়ে পড়েছে পাহাড়ের কোলে।এবারে কাউকে পায়নি তাই একাই এসেছে।
একটা হোমস্টে তে এসে উঠেছে নন্দা।বেশ সুন্দর জায়গাটা একদম ঠিক যেন পাহাড়ের কোলেই আছে মনে হচ্ছে।ব্যালকনি থেকে পাহাড়টা একদম সামনে।রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে এক কাপ কফি আর পকোড়া নিয়ে মোবাইলে দেখে নিচ্ছে কি কি ঘুরতে যাবার জায়গা আছে।গাড়ি যদিও বলা আছে তবুও একবার নিজে দেখে নিচ্ছে কোথায় যাবে কি জায়গা আছে।ফোনটা হঠাৎ বেজে উঠলো
– “হ্যাঁ, মা বলো।
– কি রে কি করছিস
-এই তো বসেই আছি।তোমরা কেমন আছো?
– আমরা ভালো আছি এখন,আচ্ছা ঠিক আছে শোন না,তোর বাবা একটা ছেলে দেখেছে তোর…
– মা এই ব্যাপারে আমি কোনো কথাই বলতে চাইনা তুমি জানো।আর আমি বাড়িতে থাকলে বললে অশান্তি করবো বলে এখানে আসার পর বলছো কিন্তু,আমার ডিসিশন বদলাবে না মা তাই এই ব্যাপারে কথা না বলাই ভালো।
ফোনটা কেটে দেয় নন্দা।এমনি সে এই কটা দিন সমস্ত লোকজনের ভীড় একঘেয়ে জীবন থেকে দূরে থাকতে চায়, তার ওপর প্রতি বারেই মা সেই একই ভাবে বাইরে এলেই নন্দা কে বিয়ের কথা বলবে।না!সে ভালো আছে সে বিয়ে করবে না কাউকে।ফোনটা সুইচ অফ করে ব্যালকনি তে গিয়ে বই নিয়ে বসে সে,কখন যে বই পড়তে পড়তে চোখ লেগে গেছে, দরজা নক করার আওয়াজে ঘুমটা ভেঙে যায় নন্দার চোখ কচলাতে কচলাতে গিয়ে দরজা খোলে
-“ম্যাম আপনার ডিনার রেডি।
– ও আচ্ছা আমি আসছি।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ন’টা বাজে।বেশ ঠান্ডা লাগছে, গায়ে জ্যাকেট চাপিয়ে খেতে গেল নন্দা, খাওয়া দাওয়া করে এসে ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে বেশ সুন্দর দেখতে লাগছে পাহাড়ের বুকে শহরটা।পুরো পাহাড় জুড়ে ছোট ছোট আলো জ্বলছে খুব সুন্দর দেখতে লাগছে বেশ খানিকক্ষণ প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের পর বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে নন্দা।সারা বছরের ক্লান্তি রয়েছে শরীর জুড়ে।বিছানায় শুয়ে আবার ঘুম।ঘুম থেকে যখন উঠলো ঘড়িতে সাতটা।সাড়ে আটটায় গাড়ি আসবে সাইট সিনে বেরোবে,উঠে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট করে একটু আস পাশ তা ঘুরে দেখছিল নন্দা মুহূর্তে দাঁড়িয়ে পড়লো সে।তার থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে দীপ।সারা শরীরে আবার সেই প্রথম দিনে দেখা করার অনুভূতি জাগছে নন্দার।সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছে তার।দু পা এগিয়ে ও থমকে দাঁড়িয়ে গেল সে,দীপ ও দেখতে পেল তাকে,এগিয়ে এলো নন্দার দিকে,দুজনের মধ্যেই তখন হাজার প্রশ্ন চোখ সরাচ্ছে না কেউ কারুর থেকে,সেই একই আছে দুজনে এগিয়ে গেলো নন্দা
– ” কেমন আছো দীপ?
– ভালো,তুমি?
– যেমন দেখছো।
– এখনও সেই ভাবে উত্তর দেওয়া গেলো না তোমার
– কি ভাবে যাবে বলো আমি তো একই আছি।তবে তুমিও তো বদলাও নি দীপ এখনো সেই আগের মতোই স্মোক করছো দেখছি,বারণ করতাম।
– না এটা ছাড়তে পারিনি এখন হয়তো আর একটু বেশিই খাই।
– কেন?
– কেনোর উত্তর টা জানা নেই তুমি কিছু বলতে গিয়েও চুপ করে যায় দীপ।
দুজনেই চুপ এত বছর পর কি বলবে দুজন দুজনকে ভেবে পাচ্ছে না।দুজনেই বাকরুদ্ধ হয়ে শুধু তাকিয়ে আছে একে অপরের দিকে খুব ইচ্ছে করছে একবার জড়িয়ে ধরে কাঁদতে,চেপে রাখা রাগ অভিমান ভালোবাসা গুলো একসাথে কেঁদে বের করে আবার নতুন করে শুরু করতে।দশ বছর আগে দুই বাড়ির সম্মতি না থাকায়,নিজেদের মধ্যে যে অভিমান,রাগের সৃষ্টি হয়েছিল ইচ্ছে করছে সব ভেঙে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরতে।পুরোনো সব কত স্মৃতি ভেসে উঠছে দুজনের চোখের সামনে।চোখের কোনে দুজনেরই জল হেসে ফেলল দুজন দুজনকে দেখে,আরো একটু এগিয়ে গেলো দুজন দুজনের দিকে,”নন্দা তুমি “কিছু বলতেই যাচ্ছিল দীপ পিছন থেকে ডাক এলো “বাবা তাড়াতাড়ি এসো গাড়ি এসে গেছে”।থমকে গেল নন্দা পিছন ফিরল দীপ আর নন্দা কিছু না বলেই এগিয়ে গেলো দুজন দু অভিমুখে,কানে হেডফোন টা লাগলো নন্দা ,তখন তার মুঠোফোনে একটাই গান “প্রেমে পড়া বারণ।
গাড়িতে উঠলো দীপ,পাহাড়ের বুক দিয়ে তখন গাড়ি উঠছে আরো উঁচুতে,ঠান্ডা শীতল হাওয়ায় নিজের অশান্ত মনকে শান্ত করার চেষ্টা করছে দীপ।দুজনের মনে ভালোবাসা থাকার সত্বেও আজ দূরত্ব।পরিস্থিতির চাপে আজও তাদের প্রেমে পড়া বারণ।