আমার ১২ বছরের মেয়ে তুলি, আমারি সামনে কাজের মেয়ে রাখির গায়ে হাত তুললো ব্যাপার টা আমায় কিছু মুহুর্তের মধ্যেই রাগিয়ে তুললো।। তুলির কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে বললাম, এটা কি করলা তুলি??(আমি) ও আমার জুস আনতে দেরি করলো কেনো মামনি??(তুলি) জুস আনতে দেরি করছে জন্য তুমি রাখির গায়ে হাত তুললে?? (আমি) হুম। আমি টিভিতে দেখেছি, কাজের মেয়ে কাজ ঠিক করে না করলে মারতে হয় (তুলি)
তুলির কথা শুনে আমি তাজ্জব হয়ে যায়। মেয়েটা আমার অতি মাত্রায় সিরিয়াল দেখে। ব্যাপার টা আমার ভাল্লাগতো না। কিন্তু তবুও ওর খুশির জন্য ওকে সিরিয়াল দেখতে দিতাম। কিন্তু এখন তো দেখছি, সন থেকে বড় ভুল টা করে ফেলেছি।।।
আর এটুকু বুঝতে পারলাম, সিরিয়াল গুলোর বাজে প্রভাব তুলিকে গ্রাস করেছে। আমি নীল কে ডিস লাইন নিতে বারণ করেছিলাম শুরুতেই। কিন্তু মেয়ের জেদের কাছে হেরে গিয়ে নীল বাসায় ডিস লাইনের লাইন টা লাগিয়েই নেয় রাখির বয়স ১৮ বছর। বাবা মা নেই। এক দাদিমা আছে যে ওকে মানুষ করছে। দাদিমার এখন আর কাজ করে খাওয়ানোর মতো অবস্থা নেই জন্য রাখি সকলের দোঁড়ে দোঁড়ে ঘুরে বেড়িয়েছিলো একটা কাজের জন্য।
আমার ঘরের সামনে এসেও রাখি একই কথা বলেছিলো। আর কথাটা ছিলো,, আপা, আমারে একটা কাজ দেবেন। বিনিময়ে খালি ২ বেলা খাইতে দিয়েন। আর কিছুর দরকার নাই আপা। আমি বাড়ির সব কাম কইরা দিমু। আমারে একটা কাম দেন…(রাখি) আমি রাখির দিকে তাকিয়ে শুধু এটুকু ভাবছিলাম, একটা মানুষের চাহিদা এত অল্প হয় কেমনে?? শুধু ২ বেলা ভাত? আর আমার মেয়ের চাহিদার তো শেষ ই করতে পারি না। এত দেয়ার পরেও মেয়ে বলে,, বাবা এবার আমাকে কিছুই দেয় নি যাহোক, রাখির এমন সহজ সরল মন আর নিষ্পাপ চাহনি তে কাজ টা আমি ওকে দিয়েছিলাম।
সারাদিন আমি তুলির জন্য দৌঁড়ানিতে ব্যস্ত থাকতাম জন্য বাসার কাজে প্রচুর চাপ থাকতো। কিন্তু রাখি আসাতে আমার সমস্ত চিন্তা আর প্রেসার দূর হয়ে গেলো রাখির গায়ে হাত তুলা ব্যাপার টা আমি রাত্রে নীল কে জানায়। নীল বলে, ছোট বাচ্চা বাদ দাও। বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে। নীলের কথাটা আমি মেনে নিতে পারিনি। তাই নিজেই চিন্তা করলাম কি করা যায়… পরের দিনঃ তুলির টিচার সবুজ যথারীতি তুলিকে পড়াতে এসেছে আমি রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে রাখির কাজগুলো দেখছিলাম। হঠাৎ ড্রয়িং রুম থেকে তুলির কান্না ভেসে এলো।
আমি ড্রয়িং রুমের ভেতর প্রবেশ করে,, কি হয়ে সবুজ, তুলি কান্না করছে কেনো??(আমি) তুলি আমার কাছে ছুটে এসে,মামনী স্যার আমায় মেরেছে (তুলি) আমি সবুজের দিকে তাকিয়ে, সবুজ, তুমি তুলিকে কেনো মেরেছো??(আমি) আন্টি তুলি অনেক গুলো ম্যাথে ভুল করেছে, তাই এটা শাস্তিস্বরূপ পেয়েছে…(সবুজ) আমি তখন কোন কথা না বলে তুলির হাত টা উল্টিয়ে দেখি ওর হাত টা লাল হয়ে আছে। মামনী, ব্যাথা করছে???(আমি) তুলির চোখ থেকে পানি পড়ছে, মাথা নাড়িয়ে আস্তে করে বললো, হুম মামনি(তুলি) আজ অবধি আমি বা নীল কেউ ই তুলির গায়ে হাত তুলিনি। তাই আমি জানি, তুলির ঠিক কেমন লাগছে। আমি তখন তুলিকে বললাম, তোমার যেমন কষ্ট হচ্ছে এখন, গতকাল রাখি আপারও কিন্তু এমন টাই লেগেছিলো মা (আমি)
তুলি চুপ করে আমার কথা শুনছে, দেখো মা, রাখি আপাও মানুষ। তুমিও মানুষ। তোমাকে মারলে যেমন তুমি ব্যাথা পাচ্ছো। রাখি আপাকে মারলেও সে কষ্ট পাবে (আমি) তুলি মাথা নিচু করে থাকে. মা, শোনো। জীবনে কখনো মানুষ কে উঁচু আর নীচু বলে বিচার করবা না। যদি তেমন টা করো, তো, চরিত্রের দিক দিয়ে তুমিও নিচু প্রকৃতির ই হবে…(আমি) তুলি আমার দিকে তাকিয়ে হুম সূচক মাথা নাড়লো,, আমি তুলির কপালে চুমু দিয়ে,, গত কালের জন্য রাখি আপুর কাছে ক্ষমা চেয়ে আসো, যাও(আমি) তুলি আমার দিকে এক পলকের জন্য তাকিয়েই, পরক্ষণে ছুট লাগালো, রান্না ঘরে গিয়ে দেখি, তুলি রাখির কাছে গিয়ে রাখির থেকে ক্ষমা চাচ্ছে। আর রাখি, তুলিকে ক্ষমা চাইতে নিষেধ করছে।
হালকা হেসে, ড্রয়িং রুমে এসে সবুজ কে বললাম, ধন্যবাদ সবুজ। সাহায্য টুকু করার জন্য (আমি) কি বলছেন আন্টি। এগুলো কিছু না। বরং আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আন্টি, তুলিকে সঠিক শিক্ষা টা দেয়ার জন্য আমায় সুযোগ টা দিয়েছিলেন (সবুজ) মুচকি হেসে রান্না ঘরে চলে এলাম ওইদিনের পর থেকে তুলি রাখিকে বড় আপু ভলে ডাকতো। আর সবসময় হাসি খুশি আর খুনসুঁটি তে মেতে থাকতো দুজন…