মায়ের শিক্ষা

মায়ের শিক্ষা

“কি এত গুনগুন করে পড়ছিস?চিৎকার করে পড়।আমি যেন রান্না ঘর থেকে পড়ার আওয়াজ পাই।” মায়ের এমন ধমকে আমরা দুই ভাই চিৎকার করেই পড়তাম।পড়া হয়ে গেলে যেই মা’কে বলতাম..

“মা,পড়া হয়ে গেছে। পড়া ধরবে তো? তখন মা বলতো..

“যা পড়েছিস,তা খাতায় লেখ।আমি শুধু লেখাটাই দেখব।” পাতা ভর্তি করে খাতায় লিখে ফেলতাম।আর মা শুধু খাতায় চোখটা বুলিয়ে নিয়ে বলত..

“আরো ভালো করে লেখার চেষ্টা কর।”

তখন একটা কথাই বুঝতাম কি বাংলা,কি অংক বা ইংরাজী.. মা সব বিষয়েই পারদর্শী।আসলে মা এর ছিল কড়া শাসন।তাই মা এর কথাই শেষ কথা। সেখানে আমাদের দুই ভাই এর পছন্দ অপছন্দ খুব একটা মূল্য পেত না।হাজার বাহানা করেও কিছু চাইলেও সেটা পাওয়া ছিল দূর অস্ত।বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মা ই হয়ে উঠেছিল আমাদের সর্বেসর্বা।সব কিছুই যেন নিয়মে বাঁধা। তাই মাঝে মধ্যে মা এর উপর ভীষণ রাগ হতো।এখন বুঝতে পারি, সেদিন মা কেন আমাদের শাসন করত।মোটের ওপর আজ আমরা দুই ভাই ই প্রতিষ্ঠিত।ভাই ডাক্তার,বর্ধমান মেডিকেল কলেজে আছে।আর আমি গভমেন্ট স্কুলের শিক্ষকতা করি। পঁচিশ বছর পর।আজ মাধ্যমিকের রেজাল্ট।সকাল থেকেই আমরা বাড়ির সকলেই বেশ টেনশনে আছি। ভাই ও বার বার ফোন করে খবর নিচ্ছে।

“কি গো,রেজাল্টের কিছু খবর পেলে?” অনিন্দিতা জিজ্ঞাসা করে।অনিন্দিতা আমার স্ত্রী।

“না,এখনো কোনো খবর পাইনি।”

“সকাল দশটার পর ওয়েব সাইটে রেজাল্ট দিয়ে দেওয়ার কথা।”

“দশটা তো বাজতেই যায়।”

“খুব ভয় করছে আমার।” হঠাৎ মোবাইলটার রিং বেজে ওঠে। ভাইয়ের ফোন। ততক্ষণে ওয়েবসাইটে দেখে নিয়েছে রেজাল্ট।

“হ্যালো.. বল রে..”

“দাদা ভীষণ আনন্দ হচ্ছে।ফার্স্ট ডিভিশন একে বারে।”

“বলিস কি রে।”

“হ্যাঁ দাদা, মা ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েছে।”

মা ততক্ষণে ঠাকুর ঘর থেকে পুজো সেরে বেরিয়ে এসে প্রসাদটা হাতে দিয়ে বলে “এসবই তোদের কৃতিত্ব।আমি আর কি করলাম।আমার অপূর্ণ সাধ তোরা আজ পূরণ করেছিস। ছোটো বেলায় তোরা যখন পড়া শোনা করতিস তখন তোদের পড়ানো বা খাতায় তোরা যা লিখতিস সেটা দেখার মতো যোগ্যতা আমার ছিল না।বিশেষ করে ইংরেজি বা অংক।শুধু ভাবতাম আমি যা পারিনি, আমার দুই ছেলে যেন তা করে দেখায়। আজ তোদের কৃতিত্বে আমি আমি ভীষণ খুশি।আর আজ যে মাধ্যমিক পাশ করলাম তার সবটুকু কৃতিত্ব বৌমার।বৌমার নিরলস চেষ্টায় আমার সে সাধ পূর্ণ হয়েছে।”

না মা তোমার শিক্ষা না থাকলে তা কি করে সম্ভব হতো? সন্তান দের মানুষ করার পিছনে মায়ের ভূমিকাই যে সব থেকে বড়ো কথা।জন্মের সেই প্রথম আলো দেখানোর দিন থেকেই যে শুরু হয়ে যায় যে সে শিক্ষা। যা পুঁথিগত শিক্ষার থেকেও অনেক বড়ো।আমাদের এই দুই ভাই বড়ো হওয়ার পিছনে শিক্ষাগত যোগ্যতার যত সার্টিফিকেট আছে, এগুলো তো সব তোমারই প্রাপ্য।তুমি তো মানুষ হতে শিখিয়েছো আমাদের।তাই আমাদের জীবন পথে পাথেয় হয়ে থাকবে মায়ের শিক্ষা, সব থেকে বড়ো কথা এই মানুষ হওয়ার শিক্ষা।

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত