আমার বাহারি খোঁপায় তোমার ফুল গুঁজে দেওয়ার অপেক্ষায়” ব্যস! শুধু এইটুকু। শুধুমাত্র এই টুকু লিখতে দেখেই আম্মাজানের ধারণা আমি বিয়ে করতে রাজী। ছুটে ছুটে গিয়ে আব্বু আর ভাইয়াকে ডেকে বলে দিলো, “ শুকরিয়ার বিয়ে করতে ইচ্ছে হয়েছে, তোমরা তাড়াতাড়ি পাত্র দেখো।
আমি পড়েছি ব্যাপক ঝামেলায়। লাস্ট প্রায় একবছর ধরে আম্মাজান আমাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে। ভাইয়া হলো আম্মুর সাপোর্টার। কারণ আমার বিয়ে না হলে সেও তো বিয়ে করতে পারছে না। কোথায় লেখা আছে আগে বোনকে বিয়ে না দিয়ে ভাই বিয়ে করতে পারবে না? আর এইদিকে আমার আম্মাজানের ধারণা যা দিনকাল পড়েছে তাতে আর দুই /তিন বছর পরে সে আর সুপাত্র পাবে না। তাই এখন ই মেয়েকে পাত্রস্থ করে নিশ্চিন্ত হতে চান।আমার দলে তাই আব্বু ছাড়া আর কেউ নেই।
প্রথমে আমাকে না জানিয়েই পাত্র দেখার কাজটি চললো কিছুদিন। জানতে পারার পর আমি খুব রাগারাগি করলাম। বিয়ের বয়স হলেও আপাতদৃষ্টিতে আমাকে দেখতে বাচ্চা বাচ্চাই লাগে। তাছাড়া আমি তো নিজের দায়িত্বই নিতে পারিনা বরের দায়িত্ব, সংসারের মত এত গুরু দায়িত্ব আমি কিভাবে নিবো? আম্মাজানকে তাই বলে দিলাম,
— বিয়ে দিবেন ভালো কথা আগে আমাকে বড় হতে দিন। মা আমার মাথায় হাত দিয়ে শুধাইলো,
— আর কবে বড় হবি? ভাইয়া আমার কান টেনে ধরে জিজ্ঞেস করলো,
— কতদিন এমন লিলিপুট হয়ে থাকবি আর আমার হাড় মাংস এভাবে জ্বালিয়ে খাবি? আমি বললাম,
— যেদিন আমার মনে হবে বড় হয়ে গেছি সেদিন। জননী আমাকে বোঝানোর নিমিত্তে বলিলেন,
— দেখ মা, ফাইনাল ইয়ার হচ্ছে মেয়েদের জন্য বিয়ের পারফেক্ট বয়স। তোর তো সেটা হয়েছে।নাকি তুই বুড়ি বয়সে বিয়ের পীড়িতে বসতে চাস? আমিও চট করে উত্তর দিলাম,
— বিয়ের বয়স সবে হয়েছে তবে পার তো আর হয়ে যায়নি। আম্মাজান আমাকে আরো কাকুতিমিনতি করে বললেন,
— সোনা মা আমার, লক্ষ্মী মা আমার, কাল বুখারী আসবে। তুই একটু কথা বলে দেখ। আচ্ছা দেখা করলে, কথা বললেই তো তোর আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না। প্লিজ রাজি হয়ে যা। ছেলেটা বড্ড ভালো। এমন ভদ্র ছেলে আজকের দিনে পাওয়া অতো সহজ না রে মা।তাছাড়া একটা কথা ভেবে দেখ, তোকে কিন্তু দেখতে আসছে না, তুই পাত্র দেখতে যাচ্ছিস। এমন সুযোগ কয়জন মেয়ে পায় বল দেখি?
বিরক্তি নিয়ে ‘না ‘ বলতে গিয়েও থেমে গেলাম। আম্মুর মুখের দিকে তাকিয়ে মায়া লাগলো খুব। আর ‘ না ‘ বলা হলো না। অগত্যা রাজী হয়ে গেলাম। ভেবে দেখলাম, ” সত্যিই তো, কথা বলতে গেলেই তো আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না। তাছাড়া এমন জ্বালাবো না! ওই পাত্রের বিয়ের নাম ভুলিয়ে দেবো। বাসায় ফিরে বলে দেবো যে ওই ছেলেকে আমার পছন্দ হয়নি। ব্যাস, ঝামেলা তো মিটেই গেলো তাহলে। আম্মার কথাও রাখা হলো আর আমার কথাও থাকলো। ” যেই ভাবা সেই কাজ। বিকালের দিকে আসরের নামাজ শেষে ভাইয়াকে সাথে নিয়ে গেলাম পাত্র দেখতে। বাসার কাছেই এক রেস্টুরেন্ট আছে, সেখানেই তার অপেক্ষা করে থাকার কথা।
রেস্টুরেন্টে ঢুকার সাথে সাথেই দেখলাম একজন ছেলে এসে হাসিমুখে সালাম দিয়ে ভাইয়ার সাথে হ্যান্ডশেক করলো। তারপর আমার দিকে তাকিয়েই আবার চোখ ফিরিয়ে নিলো। একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে আমরা বসলাম । আমি আর ভাইয়া পাশাপাশি, আমাদের অপজিট পাশে সে। কুশল জিজ্ঞাসার পর ভাইয়া জরুরি কাজের অজুহাত দিয়ে আমাদের আলাদা কথা বলার সুযোগ করে দিয়ে বের হয়ে গেলো। এতক্ষণ আমি তার দিকে না তাকিয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তাই বের হওয়ার সময় তাকে উদ্দেশ্য করে ভাইয়ার চোখের ইশারা দেওয়া আমার নজর এড়ালো না। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম এই পাত্রের আমদানিদাতা তাহলে আমার ভাইয়া। যেহেতু আমি বিয়েতে এখন রাজি ছিলাম না তাই আমার ভাইয়ার উপর রাগ হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম আমার এখন আর রাগ হচ্ছে না।তার পরিবর্তে অদ্ভুত এক ভালোলাগা কাজ করছে।”এ কেমন মন আমার?” কথাটা ভেবে নিজের উপর নিজেই বিরক্ত হলাম।
– শুকরিয়া…
মাথা নিচু করে বসে ছিলাম। তার ডাকে ফিরে তাকালাম। সে যে ভদ্র, সুদর্শন, সুপুরুষ তাতে কোন সন্দেহ নেই। সেটা তার শান্ত, উজ্জ্বল মুখশ্রীতেই ফুটে উঠেছে। দুনিয়াতে কিছু মানুষ থাকে যাদের কে অকারণেই ভালোলেগে যায়, যাদের উপর মন পড়ে যায়, যাদের প্রতি কোন কারণ ছাড়াই, কোন যুক্তি ছাড়াই শ্রদ্ধা তৈরি হয়, যাদেরকে বিশ্বাস করে , যাদের উপর আস্থা রেখে বাকী জীবন কাটিয়ে দিতে ইচ্ছা করে। আমার সামনে বসে থাকা মানুষ টা ঠিক তেমন ই একজন। তার উজ্জ্বল চোখদুটো তে তাকাতেই আমার মনের মধ্যে কম্পন শুরু হয়েছে। এমন অনুভূতির সাথে আমি অপরিচিত। চোখদুটো যেন তার অপরিসীম ব্যক্তিত্ববোধের পরিচয় দিয়ে দিচ্ছে আমাকে। আমাকে এভাবে ভাবনার জগতে ডুব দিতে দেখেই যেন তিনি আমায় আবার ডাক দিলেন। সামান্য চমকে উঠে কথা বললাম আমি,
— জ্বী বলুন কথাটা বলে নিজেই অবাক হলাম। বলতে তো আমি আসছি। আসার আগে যে পাত্রকে শায়েস্তা করার জন্য এত এত আজগুবি সব প্রশ্ন সাজালাম মনে মনে সেগুলো কি এখন হাওয়ায় উড়ে গেলো? একটা ও তো মনে করতে পারছি না। হঠাৎ কি হয়ে গেলো আমার ?
— কোন সমস্যা হচ্ছে কি তোমার?? আবার সে প্রশ্ন করলো।
— না, নাতো । কেন বলুন তো? প্রশ্ন করলাম আমি।
— বারবার এতো গভীর ভাবনায় ডুব দিচ্ছো তাই আর কি..
— আমার কিছু জানার ছিলো আপনার ব্যাপারে। আমার প্রশ্নতে আপনার আপত্তি নেই তো? মনে মনে আরেকদফা অবাক হলাম। ভাবছি এত ভদ্র আমি কবে থেকে হলাম ? ঝাড়ি দিতে এসে এত সুন্দর করে কথা বলছি। সাথে সাথেই উত্তর এলো,
— আপত্তি কেন থাকবে। আমি তো আজ তোমার কথা শুনতেই এসেছি। জিজ্ঞেস করলাম,
–আমি প্রথমেই আপনার নামাজ আদায়ের ব্যাপারে জানতে চাই। কারণ আমি সবসময় এমন একজন কে জীবনসঙ্গী হিসেবে চেয়ে এসেছি যে আমাকে জান্নাতের পথে হাঁটতে সাহায্য করবে। আর নামাজ তো হলো জান্নাতের চাবিকাঠি। তাই আমি জানতে চাই নামাজের ব্যাপারে আপনি কতটা সিরিয়াস। প্রশ্ন শুনে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো বুখারী সাহেবের মুখে। উত্তরে বললেন,
— আমি যথাসাধ্য লক্ষ্য রাখি যাতে নামাজ কাজা না হয় আর একেবারেই যে হয়না সেটা বলবো না। তবে সেটা খুব বেশি অসুবিধায় না পড়লে হয় না।কিন্তু সে সংখ্যাটা খুবই কম। তবে সময়, সুযোগ হলেই সাথে সাথেই আমি আদায় করে নিই। । আর আমার পেশা জানোই তো। একজন ডাক্তারের পক্ষে জামায়াতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া টা বেশ ডিফিকাল্ট। তবুও আমি চেষ্টা করি। তবে হ্যাঁ, ফজরের নামাজ নিয়মিত মসজিদে গিয়েই পড়া হয়।
— তাহাজ্জুদ?
— নিয়মিত হয়না। কিছু কিছু দিন মিস হয়ে যায়।
— নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত হয়?
— চেষ্টা তো থাকেই। তবে যেদিন সময় পাই না সেদিন কাজের ফাঁকেফাঁকে সুযোগ পেলেই কুরআনের মুখস্ত আয়াতগুলো তেলাওয়াত করে ফেলি। মনে মনে বলে উঠলাম , “ চমৎকার ”। কিন্তু মুখে গাম্ভীর্যভাব বজায় রেখে আবার প্রশ্ন করলাম,
— নফল রোজা কি রাখা হয়? আর প্রতি শুক্রবারে সূরা কাহাফ পড়া হয় কি আপনার? জানেন নিশ্চয় যে, “ যে ব্যক্তি জুমআর দিনে সূরা কাহাফ পাঠ করে আল্লাহ তার দুই জুমআর মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেন ”। ( সুনানে ইবনে নাসাঈ, বায়হাকী) তাছাড়া, যে সূরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্ত করে সে দাজ্জালের ফিৎনা থেকে নিরাপদ থাকবে। ” ( মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী) লম্বা একটা প্রশ্ন করে থামলাম। এবারেও পজেটিভ উত্তর ই পেলাম অর্থাৎ জুমআর দিনগুলোতে সে নিয়মিত সূরা কাহাফ পড়ে।
— “আচ্ছা, আপনার প্রিয় একটা দু’আ বলেন তো”। আমার প্রশ্ন।
— ” আল্লাহুম্মা ইন্নী আস- আলুকাল জান্নাতা ওয়া আ’উজুবিকা মিনান্নার।”
অর্থাৎ, হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে জান্নাত প্রার্থনা করছি এবং আপনার কাছে জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। মুগ্ধ নয়নে আমি তার দিকে চেয়ে আছি। সে ও আমার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়েছে। হয়তো পরবর্তী প্রশ্নের জন্য অপেক্ষা করছে। আমি সত্যিই বিস্মিত তার ধৈর্য্যের লেভেল দেখে। একটা মেয়ে তাকে অনর্গল প্রশ্ন করে চলেছে আর সে সামান্যতম বিরক্ত না হয়ে হাসিমুখে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে চলেছে। তার কণ্ঠস্বরে বাস্তবে ফিরলাম। লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম। আমাকে চুপ থাকতে দেখেই হয়তো বেচারা সুযোগ পেয়েই আমাকে কথাটা বলেছে,
— তোমার প্রিয় দু’আ কি শুনতে ইচ্ছা করছে খুব।
মৃদু হাসলাম। আমার হাসি দেখে তার ঠোঁটেও হাসি ফুটলো। আমার চেহারা থেকে গাম্ভীর্যভাব কেটে গিয়ে সে জায়গা সম্ভবত মুগ্ধতা দখল করে নিয়েছে। উত্তরে আমার সবচেয়ে প্রিয় দু’আ তাকে শুনিয়ে দিলাম – ” আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্- আলুকা হুব্বাক। ওয়া হুব্বা মান ইয়ুহিব্বুক যার অর্থ, “ হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আপনার ভালোবাসা চাই এবং তার ভালোবাসাও চাই যে আপনাকে ভালোবাসবে। ” শেষ অংশটুকু বলতে গিয়ে আমার গলা কেঁপে উঠলো কিছুটা। বুঝতে পারছি এই কম্পন আমার মনের মধ্যে যে কম্পন চলছে তার প্রতিফলন।
আবারো দুজনেই চুপ। সাধারণত কারো সাথে কথা বলার সময় নীরবতা আমার খুব অপছন্দ। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমি অনুভব করছি নীরবতার ও ভাষা আছে। যে ভাষা আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে সদ্য পরিচয় হওয়া সামনে বসা মানুষ টাকে আমার ভালো লেগে গেছে। নীরবতা ভেঙে সে ই প্রশ্ন রাখলো,
— কুরআনের সবকটা আয়াত ই অসম্ভব সুন্দর, একটার সাথে আরেকটা অতুলনীয়। কিন্তু তবু কিছু আয়াত থাকে যেগুলো একটু বেশিই পছন্দের হয়ে থাকে। এমন একটা আয়াত কি তুমি শুনাবে আমাকে? মন্ত্রমুগ্ধের মত আমি তার কথা শুনে গেলাম তারপর তাকে শুনালাম,” ফাবিআয়্যি আলা ঈ রব্বিকুমা তুকায্যিবান ”।
– তোমরা তোমাদের রবের কোন কোন অনুগ্রহ কে অস্বীকার করবে? (সূরা আর রহমান)।
আমিও তার পছন্দের আয়াত জানতে চাইলে তিনি সূরা বাকারার ১৫২ নং আয়াতটি খুব সুন্দর তেলাওয়াত করে শুনিয়ে দিলেন যার অর্থ, তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করবো। ” সত্যিই আয়াতটি কত সুন্দর অর্থ বহন করে। আল্লাহর মত এমন আপন, এমন দয়ালু, আমাদের এত কাছে আর কে আছে যাদেরকে মনে মনে ডাকলেই পাওয়া যায়? কেউ নেই। বিমোহিত আমার মুখ থেকে আর কোন কথাই সরছে না। পরিবেশ আর আগের মত নেই। আমার মনে হচ্ছে এখন বাতাসে শুধু আমার ভালোলাগা ভেসে বেড়াচ্ছে।
এরই মধ্যে ওয়েটার কফি দিয়ে গেলো। কিছুসময় পর কফিতে চুমুক দিতে দিতে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলাম। সে বলছিলো আর আমি শুধু শুনে যাচ্ছিলাম। আমার নিজেকে কেমন যেন ব্লাংক লাগছিলো। সে হয়তো বুঝেছিলো আমি কথা বলার জন্য কিছু খুঁজে পাচ্ছি না তাই হয়তো আমাকে সহজ করার জন্য জিজ্ঞেস করলো,
— আচ্ছা, আমি শুনেছি তুমি নাকি সবকিছুতেই শর্তজুড়ে দাও। তো আমাকে তোমার কোন শর্ত দেওয়ার নেই? হাসলাম আমি। তারপর বললাম, আমার শর্ত শুনে যদি ছুটে পালিয়ে যান তাই বলিনি। বুখারী ও হেসে বললো,
– যদি পালিয়ে যাই তো?? গম্ভীরকণ্ঠে উত্তরে বললাম,
-নাথিং।
— আচ্ছা, ঠিক আছে। তুমি তোমার শর্তাবলি বলে ফেলো।পালানোর জন্য আমি আসিনি, শুকরিয়া। তার শেষের কথায় অদ্ভুত এক সুরের টান। যে সুর ভরসা জাগায়। খুশি হয়ে উঠলাম অজান্তেই। তারপর বলা শুরু করলাম,
— আমার একটা চুড়ির গাছ বানিয়ে দিতে হবে। আমি চুড়ি খুব ভালোবাসি। মানে একটা কাঠের গাছ বানিয়ে দিতে হবে আর সেটার ডালপালা আমি চুড়ি দিয়ে ভর্তি করে ফেলবো। সব চুড়ি আপনাকে কিনে দিতে হবে। ফুল ভীষণ পছন্দ করি। প্রত্যেক মাসে অন্তত একটা করে ফুলের গাছ আর বই গিফট করতে হবে। রাত দুপুরে আইসক্রিমের বায়না ধরলে না করতে পারবেন না। যেখান থেকে পারেন এনে দিতে হবে। কোল্ড কফি বা লাচ্ছি খাওয়াতে কোন রেস্ট্রিকশন দিতে পারবেন না। ঠাণ্ডা লাগবে, খাওয়া যাবে না এসব হাবিজাবি বলবেন না।
যতক্ষণ আমার খেতে ইচ্ছা করবে ততক্ষণ পর্যন্ত খাবো। কোন ভুল করলে সুন্দর করে, যত্ন করে বুঝিয়ে বলতে হবে। বকা দিতে পারবেন না কিন্তু। সপ্তাহে একদিন আমাকে কিছু না কিছু নিজের হাতে বানিয়ে খাওয়াতে হবে সেটা যত সামান্য ই হোক না কেন। কখনো কখনো উল্টাপাল্টা সাজবো আর উল্টাপাল্টা রান্নাও করবো দুটোতেই কিন্তু মুগ্ধ হতে হবে। আর আমি যেমন আপনার পরিবারকে ভালোবাসবো আপনাকেও কিন্তু আমার পরিবারকে সমান ভালোবাসতে হবে। এতটুকু বলে থামলাম আমি। একটা বড় শ্বাস নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে দেখি সে মিটিমিটি হাসছে। হাসির কারণ জিজ্ঞেস করাতে উত্তর না দিয়ে পালটা প্রশ্ন করলো,
— ব্যাস.?? আর কোন শর্ত নেই?
— ক্রমশ প্রকাশ্য।আমিও হেসে উত্তর দিলাম।
— আচ্ছা কেমন বিয়ে তোমার পছন্দ?
আমি বুঝতে পারলাম কেন সে আমাকে প্রশ্নটা করেছে। আজকের দিনে মেয়েরা বিয়েতে যে পরিমান অহেতুক খরচ করে তাতে আমাকে কথাটা জিজ্ঞেস করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বললাম,
— আল্লাহর রাসূল (স) তো বলেছেন, যে বিয়েতে খরচ কম, যে বিয়ে অনাড়ম্বর সেই বিয়েতে বরকত বেশি। সুতরাং আমি কিছুতেই চাইবো না আমার বিয়েতে অকারণ শো অফ করতে গিয়ে অপচয় হোক। কথাটা শেষ করে আমিই আবার জিজ্ঞেস করলাম,
— আমাকে আপনার কেন পছন্দ?আমি তো আপনার জন্য পারফেক্ট নই। আরো অনেক বেটার অপশন আপনার আছে।
— ভালো লেগে গেছে তো।
— পরে যদি আফসোস হয়?
–হবে না। নিজেকে আমি জানি।
— ওভার কনফিডেন্স হয়ে যাচ্ছে না?
— কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজন আছে।
একটু চুপ থেকে আবার বললেন, আমি তোমাকে না জেনে তোমার সাথে কথা বলতে আসিনি শুকরিয়া। আমি শুনেছি তোমার স্বপ্নের কথা,তোমার ইচ্ছেগুলোর কথা, তোমার অদ্ভুত সুন্দর লক্ষ্যের কথা। যার এত সুন্দর চিন্তাভাবনা নিঃসন্দেহে তাকে পাওয়ার ইচ্ছা করা যায়। মানুষের ভাবনাতে, স্বপ্নে, ইচ্ছায় তার মনের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। আমি সেটা অবজার্ভ করতে পেরেছি বলে নিজেকে ভাগ্যবান ভাবছি। তাছাড়া যোগ্যতা কি শুধু চকচকে চেহারা আর একাডেমিক সার্টিফিকেট দিয়ে বিচার করা যায়?যদি তাই করিও তাহলেও তো তুমি পিছিয়ে নেই। আচ্ছা, এই যে তুমি কত সুন্দর করে কথা বলো এটাও তো অনেক বড় একটা যোগ্যতা। কারণ প্রত্যেকটা ভালো কথাই হলো সাদাকাহ্।তাছাড়া আল্লাহ তা’য়ালা যদি আমার জন্য তোমাকেই ঠিক করে রাখেন তাহলে তুমিই যে আমার জন্য পারফেক্ট সেটাতে আর সন্দেহের কোন অবকাশ থাকে কি? চুপ করে রইলাম আমি। আমাকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে বুখারী ই আবার জিজ্ঞেস করলো,
— তবে কি আমি ধরে নিতে পারি যে তোমার নীরবতা সম্মতির লক্ষণ?
উত্তর দেওয়ার আগেই আমার ভাইয়া চলে আসলো। এরই মধ্যে মাগরিবের আজান পড়ে গেলো। সবাই উঠে পড়লাম। বাইরে এসে ভাইয়ার সাথে বিদায়ী হ্যান্ডশেক করে একবার আমার চোখের দিকে তাকালেন। মনে হলো তার প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। কিন্তু আমি কিছুই না বলে রিক্সায় উঠে বসলাম।
বাসায় ফিরে কয়েকঘণ্টা পর ভাইয়ার ফোন থেকে তার নাম্বার নিয়ে মেসেজ করলাম, ” শুনুন, আমি চাই আমার বিয়ের বেনারসি টা আপনার পছন্দের হোক। শাড়িটা আপনি কারো কোন হেল্প ছাড়াই নিজে গিয়ে পছন্দ করে কিনবেন। ” সাথে সাথেই ছোট্ট একটা রিপ্লাই এলো আমার ফোনে,” আলহামদুলিল্লাহ। আমিও মুচকি হেসে বলে উঠলাম ‘ আলহামদুলিল্লাহ্ ‘।