সব চরিত্র কাল্পনিক নয়

সব চরিত্র কাল্পনিক নয়

নবীন— ভাই ভালো কথা বলছি, আর বেশি দেরি করিস না।। চল, মালটাকে বিধাননগর হসপিটাল এর পিছন দিকটায় নামিয়ে দিয়ে আসি ফাঁকা জায়গাটায়।।। মরে গেলে কিন্তু কেস হয়ে যাবে।

আসিফ –তুই বাচ্চা, বাচ্চার মত থাক। বেশি ওস্তাদি করিস না। কেস হয়ে যাবে তখন যখন মালটা ঠিক হয়ে পুলিশ এর কাছে চলে যাবে।। তুই বুঝিস কিছু? চুপ থাক।।।

শিবু — ঠিক ই তো বলেছে আসিফ ভাই। তুই খামোখা নাক গলাস ক্যানো বাচ্চা ছেলে। প্রসাদের ভাগ পেয়েছিস, ভোগ করেছিস এবার চেপে যা। আসিফ দা আমি একটা জায়গা চিনি কিন্তু একটু দূরে নিউটাউন এ। লেক এর মত জায়গা টা।। ওখানে বডি টা ফেলে দি স্কুটি সমেত। লোকে ভাববে জলে ডুবে মরে গ্যাছে পরে গিয়ে।।।

কানে আসছিলো কথা গুলো। কিন্তু হাত পা নাড়ানোর মত ক্ষমতা ছিল না বিশ্বাস করো।। সব কেমন যেন ঘোরের মধ্যে শুনতে পাচ্ছি মনে হচ্ছিলো।।। সকাল থেকে আজ অনেক গুলো ক্লিনিকে গেছিলাম। কিন্তু শেষ ক্লিনিক টায় ওই যে কালো কুকুর টা, ওর জন্যই এত দেরি হয়ে গেল।। পায়ের ওপর দিয়ে বাইক চলে গেছিলো ওর। আজ এ করতে হতো অপারেশন টা। নাহলে বাঁচানো যেত না কুকুর টা কে।

তো যাই হোক, কালো কুর্তি টা দিদি শখ করে দিয়েছিল, বেশ সুন্দর দেখতে কুর্তি টা। কাল ই প্রথম পরেছিলাম, একটু ঢিলা শুধু এই যা।। একটানে আমার কুর্তি টা ছিড়ে দিলো ওরা।।। তারপর চার জন মিলে আমায় এক ঘন্টা ধরে প্রথমে অনেক চেষ্টা করেছিলাম আটকানোর..জানো.. চিৎকার করার, নিজেকে ছাড়ানোর।। কিন্তু ওই চারটে কুকুরের গায়ে তখন পাশবিক শক্তি আর সেটা মদ খেয়ে বেড়েছে আরো কয়েক গুন… পাশেই একটা ইট পড়ে ছিলো, তুলে নিয়ে মারতেও গেলাম..পারলাম না। পারবো টা কি করে? আমার ভাই এর মুখ টা ভেসে উঠলো যে। কোঁকড়ানো চুল, ভাইয়ের মতোই রোগা।৷ রঙটা শুধু একটু কালো এই যা।।একই তো বয়স প্রায় | কি যেন নাম ছেলেটার–নবীন… মারতে পারলাম না || কারন শারীরিক শক্তি অল্প একটু বেঁচে থাকলেও, মনের কাছে হেরে গেলাম৷৷ ” দিদি স্কুটারটা আমায় দাও আমি নিয়ে যাচ্ছি কাছেই গ্যারেজ আছে, সারিয়ে এনে দিচ্ছি। ভাবতে পারিনি কিভাবে তখন আমায় দিদি বলে ডাকল!!

যদিও বা মারতে পারতাম … কিন্তু ওর দিদি ডাকটা খুব কানে লাগছিল যাই হোক্, এতে ওদের রাগ গেল আরো বেড়ে।। আমার বাঁধা হাত দুটোর একটা একটু খুলতে পেরেছিলাম.. আবার বেঁধে দিলো। আর পারছিলাম না। বোতল টা আমার সামনেই পড়েছিল, শেষের তলানির যে টুকু ছিলো, পুরো আমার মুখের মধ্যে ঢেলে দিলো।। বাবা খেত মারা যাবার আগে.. ওই তখন ই একবার লুকিয়ে খেয়েছিলাম কলেজ এ পরার সময়।। এত বিশ্রী গন্ধ, বমি করে ফেলেছিলাম। কিন্তু এবার আর বমি পেলো না, কেনো জানিনা।। শরীর টা নিস্তেজ হয়ে আসছিল ক্রমশ।

বুঝতে পারছিলাম আমি হয়তো আর বেশিক্ষন বাঁচবো না। চোখ টা বন্ধ হয় যাচ্ছিলো আস্তে আস্তে।। পেটে প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে বুঝতে পারছিলাম। তারপর আবার!! একে একে ওরা চারজন আবার উঠলো আমার উপর..শেষের দিকটায় শুধু বুঝতে পারলাম একটা শক্ত হাত, আমার নাক আর মুখ টা টিপে ধরেছে। আর আমার গলা টা আরেক জন। এত কিছু করতেই হতো না। কিন্তু ওরা কি আর শুনবে। আরেকটু আগে যদি আপনার জ্ঞানটা চলে যেত,ভালো হতো। আসলে মেয়ে তো, শরীর টাকে অজানা স্পর্শ থেকে বাঁচিয়ে চলতে হবে সারাজীবন, এ শিক্ষা ছোটো থেকেই তো পেয়ে এসছি। কিন্তু শেষটায় যে এভাবে নিজেকে উৎসর্গ করে যেতে হবে… ভাবতে পারিনি।।যদি কিছুই না বুঝতে পারতাম, যদি ওরা আমায় আগেই মেরে ফেলতো। খুব ভালো হতো…খুব।।

লেক এর পিছন দিক দিয়ে সূর্য টা সবে উঠেছে। আমাকে আমি একটুও চিনতে পারছিনা। মা এর দেওয়া গলার লকেট টা শুধু পোড়েনি। ও হ্যাঁ, আর আমার হাতটা। ওই যে, যে হাত টা দিয়ে ইট টা মারতে গেছিলাম, শুধু সেই ডান হাত টাই।। পুলিশ এর গাড়ি টা দেখলাম উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে আছে।। যাক, আমায় খুঁজে পেয়েছে তবে। ওরাও আসলে ভয় পেয়েছে আমার বডি দেখে।। দুটো ও বি ভ্যান ও দেখতে পাচ্ছি। ভালই হলো.. সামনেই শনি রবি, ছুটি আছে। কদিন বেশ সময় কাটবে টিভি খুলে কি বলেন। সুমন বলবে,সুমন গাইবে, আমার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে আমার একটা সুন্দর ছবি, আমার ডিজেল এ পোড়া মুখটা র জায়গা করে নেবে.. কয়েক হাজার মোমবাতি বিক্রি হবে… বিদেশি বন্ধু দের কাছে “মেরা ভারত মহান” বলা বুকগুলো হয়ত একটু ছোটো হয়ে যাবে.. কদিন এর জন্য হলেও সব এমএলএ এমপি রা আমার হয়ে গলা ফাটাবে,এক হয়ে।।

তদন্ত হবে.. হয়তো ওই চারটে ধরাও পড়বে। কিন্তু, তাতে লাভ?? তোমাদের কাছে আমার জীবনের মূল্য ওই প্রথম পেজের আমার খবরের বক্স টার সাইজ এর সমানুপাতিক। ঠিক না?মিলিয়ে দেখো যদি পরের সোমবার অফিস পৌঁছে, কিম্বা বিয়েতে আইসক্রিম টা শেষ পাতে খেয়ে, বা নাইট শো থেকে বেরিয়ে আমার নাম টা মনে পরে কিনা। জানি পরবেনা। আমার নাম টাও ওই নির্ভয়াই হয়ে যাবে, কারণ ওটাই মরার পর আমাদের ব্র্যান্ড।। যেটা সবচেয়ে বেশি বাজারে কাটে।। আমার মা,ভাই,,আমার দিদি, হ্যাঁ, তারাও আস্তে আস্তে মানিয়ে নেবে কালের নিয়মে। কিন্তু আমি?? আমি কি মরে গেছি? এত সহজে?এই আকাঙ্খার শরীর এর খোলস টা হয়তো আর নেই… কয়লার চেয়েও কালো আমি..কিন্তু আমি মরিনি যে।।

আজকাল অনেকেই চায় তাদের মেয়ে হোক, হ্যাঁ, তাদের বলছি… আর মেয়ে চেও না।। ভুল করছ, আমি তো মরিনি। বেঁচে আছি। দ্যাখো, আবার আসছি ফিরে, এই তো, প্রতিনিয়ত.. তোমার ই কারু র ঘরে। কোল আলো করে। কিন্তু ভগবানের কাছে প্রার্থনা করো তোমাদের ঘরে যেন ছেলে হয়। আর যদি ভুল করে মেয়েও হয়, তবে তা যেন, শুধু মায়ের হয়… প্রার্থনা করো তোমাদের ঘরে যেনো শুধু ছেলে হয়।।।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত