হাততালিতে ভরে উঠেছে অডিটোরিয়াম। আজ বিখ্যাত লেখিকা তথা মৃণালিনী দেবী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শ্রীমতী বিজয়া স্যানালের লেখা “আর কতদিন ” বইটির আবরণ উন্মোচন অনুষ্ঠান। আবরণ উন্মোচনের পর দু একটি কথা বলে ধীর পায়ে নেমে এলেন বছর পঁয়ষট্টির বিজয়া। আস্তে আস্তে বেরিয়ে গেলেন হল থেকে। পেছন থেকে ছোটো দুই ভাইয়ের বৌ ও তাদের এক ছেলে ও মেয়ে। ছেলে মেয়েরা নিজেদের গল্পে মত্ত, দুই বৌ নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করছে খুব নীচু গলায়, বই বিক্রির এবার কত টাকা আসতে পারে তোর কোনো আইডিয়া আছে ছোটো? সে তো বেশ মোটা টাকাই হবে গো দিদি, দেখোনি এর আগের বার বইমেলায় বড়দির রেকর্ড সংখ্যক বই বিক্রি হয়েছিল বলে প্রকাশক নিজে এসে একটা মোটা টাকার চেক দিয়ে গেছিলো!
মোটা টাকা তুই বুঝলি কি করে, ও চেক তো চোখেই দেখতে পেলাম না, উনি নাম কেনার জন্য অনাথ আশ্রমে দান করে দিলেন। হুমমম্ ঠিক বলেছ, বেল পাকলে কাকের কি বল! দুজনেই জোরে হেসে উঠতে গিয়ে থেমে গেল। তোমরা কি আমার সাথে যাবে, বিজয়ার কথায় ওরা কিছু বলার আগে তাদের ছেলে মেয়েরা বললো, এখোনি বাড়ি, আজ কিন্তু আমাদের ট্রিট চাই পিপি, তোমার এতো নাম ডাক, এতো কত টাকা লাগবে তোদের? সে যা লাগবে লাগবে, তুমি তো দেখতেই পাবে! নাহ্ বাবুন, টুবলাই আমি যাবোনা, তোরা মায়েদের সাথে যা, গাড়ি থাক তোদের সাথে, আমি একটা ট্যাক্সি নিয়ে প্লিজ দিদি তুমিও চল না! না জবা, আমায় ডেকোনা, আমার বাইরের খাবার সহ্য হয়না, তোমরা বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরে এসো। আর এই নাও টাকা!
টাকাটা ওদের হাতে দিয়ে এগিয়ে গেলেন। এই বয়েসেও তিনি হাঁটাচলায় বেশ সাবলীল। সময় সম্পর্কে বেশ সচেতন, নিজের কাজ নিজেই করতে ভালোবাসেন। ভাই, ভাইয়ের বৌরা তার আড়ালে যাই বলুক না কেন তার সামনে কেউ কিছু বলে না। সংসারের বেশীর ভাগ খরচটা উনিই দেন। বৌরা তাতেও সন্তুষ্ট নয়, তবে ভাইয়েরা বলে আমাদের কিছু তো দিতে দাও দিদি! বিজয়া বলেন আমার তোদের ছাড়া আছে কে! তোদের ভবিষ্যৎ আছে, বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ আছে, থাকনা টাকা তোদের কাছে! বাড়ি ফিরে তিনি পোষাক পাল্টে এক কাপ কফি নিয়ে বারান্দায় এসে বসলেন, আজ অডিটোরিয়াম তিনি বিশাখকে দেখে চমকে উঠে ছিলেন, বিশাখও ওর দিকে তাকিয়ে ছিলো, কি ছিল ঐ চোখে! দয়াভিক্ষা, করুণা নাকি ঘৃণা!
পুরোনো কথাগুলো মনে পড়ে গেল তার। কলেজে এক নামেই বিজয়াকে সবাই চিনতো। রূপের চটক নিঁখুত করে বিশ্লেষণ করার মতো কিছু ছিলনা, তবে পড়াশোনায় খুব ভালো ছিলো। ছোটো ভাইয়ের যখন তিন বছর বয়স তখনই তাদের মা মারা যান। বুকে আগলে ভাইদের বড় করেন তিনি। বাবা শুভঙ্কর স্যানালের প্রথম মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবার পর ওনার মনে ভয় ঢুকে যায়, যদি স্ত্রীর মতো বিনা নোটিশে চলে যেতে হয় তো কি হবে তার ছেলেমেয়েদের! মেয়েটাকে যদি বিয়ে দিতে পারতেন তবে জামাই রূপে একটা ছেলে ও তার পরিবার কে পাবেন, যারা তার ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করতে পারবে। বিষয় সম্পত্তি তার কিছু কম ছিলনা। বসত বাড়ি ও বেশ মোটা অঙ্কের টাকা তিনি মেয়ের নামে করেছিলেন।
ভাবা মাত্রই কাজ, মেয়ের মতামত না নিয়ে জামশেদ পুর নিবাসী শ্রীযুক্ত রজনীকান্ত চৌধুরীর ছোট ছেলে শ্রীমান বিশাখ চৌধুরীর সাথে বিয়ে ঠিক করলেন। কাগজ তৈরির কারখানা তাদের, পয়সাও আছে প্রচুর। কপালের লেখা হয়তো এটাই ছিল, কলেজ শেষ করার আগেই বিয়ে হয়েগেল বিজয়ার। একবুক অভিমান বাবার ওপর নিয়ে বিজয়া চললো স্বামীর ঘর করতে। এতো তাড়াহুড়ো বাবা না করলেই পারত, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অদম্য ইচ্ছেটা পূর্ণ হলোনা। তার বাবা বলেছিলেন শ্বশুর বাড়ি মানে তো নির্বাসন নয়, যাওয়া আসা থাকবেই, পরীক্ষার সময় নিয়ে আসবেন তিনি। সে যাই হোক শ্বশুর বাড়ি ঢুকতেই বিজয়া শুনলো, তার বিদেশে থাকা বড় জা শাশুড়িকে বলছে, কি দেখে পছন্দ করলেন আপনারা, আর বিশু! ও চুপচাপ বিয়ে করেনিলো এই মেয়েকে, ও এতো আ্যম্বিশাস, আর এই বৌ যাবে ওর সাথে বিদেশে, মানাবে?
বিজয়া শুনলো প্রথম বিদেশ যাওয়ার কথা, বিশাখ বিদেশে যাবে, কই তাকেতো কেউ বলেনি। ফুলশয্যার দিন অনেক রাতে বিশাখের বৌদি বিশাখকে ঘরে দিতে এসে বললো, বৌকে একটু ভালোমতো ট্রেনিং দেওয়া শুরু কর আজ থেকে, নইলে তোমাকেই বিজয়াকে একবার দেখে নিয়ে বললেন, ওকে সারারাত জাগিয়ে রেখোনা যেন, ওর কিন্তু অভ্যেস নেই! বিশাখ ঘরে ঢুকে বললো আজ খুব দেরী হয়ে গেছে, তুমিও ক্লান্ত খুব, চল ঘুমোনো যাক, বলে পোষাক পাল্টে শুয়ে পড়েছিল। পরের দুদিন বাড়ি ভর্তি লোকজনের সামনে নতুন বৌ নিয়ে ঘরে দোর দিতে কেমন লাগের অযুহাতে মাঝরাত পার করে ঘরে এসেছিলো বিশাখ।
অষ্টমঙ্গলায় তাদের নিয়ে যেতে গাড়ি পাঠিয়ে ছিলেন বিজয়ার বাবা। বিশাখ বিজয়ার সাথে এসেছিল তার বৌদি। পরের দিন বাবার শরীর খারাপের খবর শুনে বিজয়ার বাবা মেয়েকে পাঠাতে চাইলে বিশাখ বললো না না অত উতলা হওয়ার কারণ নেই,আমরা চলে যাচ্ছি, তুমি থাকো, প্রয়োজন হলে পরে এসে নিয়ে যাবো। দশদিন পার হয়ে যাবার বিজয়ার বাবা তাকে নিয়ে এসেছিলেন শ্বশুর বাড়িতে। ততোদিনে বিশাখের দাদা বৌদি ফিরে গেছে বিদেশে। বিশাখ কারখানার কাজে কয়েকদিনের জন্য বাইরে গেছে। বিজয়াকে রেখে চলে এসেছিলেন তিনি। ঠিক চারদিনের মাথায় বিশাখ ফিরে এসে ছিল। শাশুড়ি মা তার আগেই তাকে বলেছিলেন রূপ দিয়ে ছেলেকে বাঁধার ক্ষমতা তোমার নেই, তবে তোমার গুণ যদি কিছু থাকে তাহলে তা দিয়ে বাঁধার চেষ্টা কর। চুপ করেই শুনেছিল বিজয়া, মনে তার একটাই প্রশ্ন যদি তাকে তাদের পছন্দ না হয় তো বিয়ে দিয়েছিল কেন। রাতে শুতে এসে বিশাখ বললো তোমায় যে বলে এসেছিলাম আমি গিয়ে নিয়ে আসবো, তার আগেই চলে এলে! বাবা ভাইদের চেয়ে আমার ওপর এই বাড়ির ওপর টান তোমার বেশি হয়েগেল! বিজয়ার কাছে কোনো উত্তর ছিলনা, ছিল অপমানের যন্ত্রণা আর চোখের জল।
তার সাথে একটা পাশবিক খেলায় মেতে উঠে ছিল বিশাখ, তার এই খেলায় তাকে সাড়া দিতে পারে নি বিজয়া।নিজে শান্ত হওয়ার পর তাকে বিছানার একধারে ছুঁড়ে ফেলে বিশাখ বলেছিল কেমন মেয়ে মানুষ তুমি, আকর্ষণ করার মতো চেহারার মধ্যে কিছু নেই, আর বিছানায় ও দেখছি তাই, শরীরটাকে শক্ত করে রেখেছো,তোমার সাথে এতোক্ষণ কাটিয়ে মনে হলো একটা মরা মানুষ! ছিঃ আমার গা ঘিনঘিন করছে। সারারাত বিছানায় শুয়ে শুয়ে কেঁদে ছিল বিজয়া, যত না শরীরের যন্রণায় তার চেয়ে বেশি অপমানের জ্বালায়। পরের দিন বিশাখ তাকে বলেছিল আগে নিজেকে সবদিক থেকে আমার উপযুক্ত করার চেষ্টা কর। এরকম মরা ম্যাড়ম্যাড়ে মেয়ে মানুষ আমার বৌ ভাবলেই… বিজয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে থেমে গিয়ে ছিল সে। দুদিন পর বিশাখ আবার কাজের জন্য বাইরে চলে গেছিলো, বলে গেছিলো ফিরতে দেরি হবে কয়েক দিন। বিজয়ার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হতে দুমাসের মতো বাকি। বিজয়া সবাইকে জানিয়ে বাড়ি এলো পরীক্ষা দিতে।
পড়াশোনা করে তাকে নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে হবে, তবেই সে উপযুক্ত জবাব দিতে পারবে। খুব মন দিয়ে আবার পড়াশোনা শুরু করলো বিজয়া। পরীক্ষার মাস খানিক আগে শুরু হলো তার ঘুসঘুসে জ্বর, শরীরে অসহ্য যন্রণা, বমি বমি ভাব, ডাক্তার বললেন আমি লক্ষণ ভালো দেখছি না, আপনি কোনো বড় জায়গায় দিশেহারা হয়ে অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে তার বাবা ছুটে এলেন বিশাখের বাড়িতে , বিশাখ সব শোনার পর তো আপনারা এখানে এলেন কেন? টাটা চলে যান, ওখানে এক সে এক বড় ডাক্তার আছে, টাকার জন্য এসেছেন! বিজয়ার বাবা বললেন না না বাবা, মেয়ের শরীর খারাপ, ভালো জায়গায় ডাক্তার দেখাতে.. ভাবলাম তুমি ওর স্বামী, তোমাদের না জানিয়ে কিছু করতে বিশাখের বাবা বললেন যা না বিশু, টাটার ডাক্তার বক্সির সাথে আমাদের পরিবারের ভালো চেনাশোনা আছে, ওনাকে না হয় একবার দেখিয়ে দে!
বিশাখ তাদের নিয়ে গেছিলো ডাক্তার বক্সির কাছে, উনি দেখে বললেন আমার মনে হচ্ছে পেশেন্টের ব্রেস্ট ক্যান্সার, তবে আমি সিওর নই, আমি একটা হাসপাতালের ঠিকানা ও ডাক্তারের ঠিকানা দিচ্ছি, ওখানে নিয়ে যান। ভয় পেয়ে গেছিলো বিজয়া, কি বলবেন ডাক্তার, বিশাখ! সে সারা রাস্তায় তার সাথে একটাও কথা বলেনি। ডাক্তার নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানালেন বিজয়ার ব্রেস্ট ক্যান্সার, এখোনি অপারেশন না করলে তাকে বাঁচানো যাবেনা। বিজয়াকে ভর্তি করার পর বিশাখ বললো আপনাদের মেয়ের এতোবড় একটা রোগ লুকিয়ে বিয়ে দেওয়া উচিত হয়নি, টাকা বাগানোর কতরকম মতলব জানেন দেখছি না না বাবা আগে এমনটা জানলে কি আমি কখনো মেয়ের বিয়ে দিতাম বলো! আমার টাকার দরকার নেই, আমি আমার মেয়ের চিকিৎসা চালাতে পারবো, শুধু তুমি একটু সাথে থেকো বাবা!
অপারেশন ভালো ভাবেই হয়ে গেছিলো বিজয়ার, প্রাণহানির আশঙ্কা ছিলোনা তার, হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জের আগের দিন বিশাখ বললো কোথায় ফিরে যাবে ভাবছো, তুমি বরং তোমার বাবার সাথে বাড়ি যাও, তোমায় এখন নিয়ে আমি কি করবো, শরীরের সৌন্দর্য বলেও তো তোমার কিছু রইলো না। বিজয়া খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললো ভয় নেই, আমি আপনার জীবনে কোনদিন ফিরবো না, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, জীবনে সবচেয়ে যদি ভূল কিছু করে থাকি, সেটা হলো আপনাকে বিয়ে করা, যার মধ্যে মানবিকতা বলে কিছু নেই।
বেশি বড় বড় কথা বোলোনা তো, ভূল তুমি করনি, করেছি আমি বুঝলে, আমি ভূল করেছিলাম একটা অসুস্থ রুগ্ন থেমে গেছিলো বিজয়ার বাবা আসতে। বিজয়ার বাবা মেয়েকে নিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় বিশাখকে বললেন তুমি ও চলনা বাবা, বিজয়া বললো নাহ্ বাবা, অকারণে ওনাকে ডাকাডাকি কেন, উনি কাজের মানুষ! বিজয়ার বাবা বিশাখকে কিছু বলতে গেলে বিজয়া বললো প্লিজ বাবা, তুমি যদি তোমার কাছে আমায় না রাখতে পারো তবে আমি মরে যাবো সেই ভালো তবু আমি ওখানে ফিরবো না। বিশাখ বলে জানো আমি তোমাদের বিরুদ্ধে আ্যকশন নিতে পারি, রোগ লুকিয়ে বিয়ে দিয়ে বিজয়া বললো আপনি যা যা পারেন করুন, বাবা ফিরে চল। মেয়েকে নিয়ে ফিরে এসেছিলেন তার বাবা। সেই যে এলো আর ফেরেনি বিজয়া। সুস্থ হতেই শুরু করেছিল পড়াশোনা, একের পর এক পরীক্ষা দিতে হচ্ছিলো তাকে।
একবার শ্বশুর বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন রজনীকান্ত চৌধুরী নিজেই, বলেছিলেন ফিরে চল, ছেলে আমার বিদেশে গেছে, আমরা দুটি প্রাণী একা একা, নাহ্ ক্ষমা করবেন আমি ওখানে আর ফিরবো না, আপনার ছেলে যখন আমাকে তার উপযুক্ত মনে করেনা, তখন মিথ্যে সম্পর্কের বোঝা বয়ে বেড়ানো কেন? ফিরিয়ে দিয়েছিল তাকে বিজয়া। কিছুদিনের মধ্যে ডিভোর্স পেপারে সই করে পাঠিয়ে ছিল বিশাখ, মিউচুয়াল ডিভোর্স হয়ে গেছিলো। বিজয়ার বাবা বোধহয় এতোটা নিতে পারলেন না, মাস কয়েক বিছানায় থেকে অবশেষে মুক্তি পেলেন। তারপর থেকে সব দায়িত্ব এসে পড়লো বিজয়ার ওপর, বড় ভাই কলকাতায় পড়াশোনা করতো, ছোটভাই সবে স্কুলের গন্ডি পেরিয়েছে।
বিজয়া চাকরি পেয়েগেল বাড়ির কাছে একটা স্কুলে, সবকিছু সে আর একাহাতে সামলাতে পারছিলো না, বাবার ব্যাবসাটা গুটিয়ে ছোটো করে নিল। নিজে, বি. এড, এম, এ. সব করলো এক এক করে। বড় ভাই একটা প্রাইভেট কোম্পানি তে চাকরি পাওয়ার পর সে জানালো বিয়ে করবে, মেয়ে তার নিজের পছন্দের। বেশ ধূমধাম করে ভাইয়ের বিয়ে দিল বিজয়া। কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ভাই ফিরে এলো বউ নিয়ে। বিজয়া বললো ভালোই হলো, তোরা দুই ভাই মিলেমিশে বাবার ব্যাবসাটাকে আবার বড় কর। তোদের সাপোর্ট দেওয়ার জন্য আমি তো আছি।
একবার ছোটো ভাই এসে বললো বিশাখ দা আবার বিয়ে করেছে, সে এখন বিদেশেই থাকে। বিজয়া বলেছিলো এসব কথা আর আলোচনা যেন না হয়, সে কিছুই জানতে চায় না। নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছিলো কাজের মধ্যে, সময় পেলে চলতো তার লেখালেখি। স্কুলের এক সহকারী শিক্ষক তাকে বলেন আমার চেনাশোনা একটা প্রকাশক আছে, উনি নতুন লেখকের লেখা ছাপতে আগ্রহী,আপনি চাইলে আমি কথা বলতে পারি। নাহ্ না, আমি তেমন কিছুই লিখিনা, ঐ একটু আধটু.. কলিগের জোরাজুরিতে একটা ছোট গল্পের বই বের হয়। ওটা পাঠক মহলে বেশ সাড়া ফেলে দেয়। তারপর বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে লেখা চেয়ে পাঠায়। অবসরে কলমকে সঙ্গী করে নিয়েছে বিজয়া।
স্কুল থেকে প্রধান শিক্ষিকা হয়ে অবসর নেওয়ার পর মোটা অঙ্কের টাকা ভাইপো ভাইজির নামে রেখেছেন। ঘরের রান্নাবান্নার দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জানেন তার লেখালেখি নিয়ে দুই ভাইয়ের বৌদের মধ্যে অনেক কথা হয় তবে সে কোনো কিছু গায়ে মাখে না। ওদের ছাড়া আর কে বা আছে জীবনে। লেখালেখির জন্য যে টাকা পয়সা পায় অনাথ মেয়েদের পড়াশোনার জন্য খরচ হয়। কোনো মেয়ে জেন সংসারে অবহেলিত হয়ে না বাঁচে তাদের জন্য এটুকু দিয়ে যা হয় তাই করে। তার জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাতের গল্প নিয়ে এবারের বই বেরিয়েছে। অডিটোরিয়ামে উপছে পড়া উচ্ছাসের মধ্যে বেরিয়ে এসে যখন ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষা করছিল তখন এগিয়ে এসে বিশাখ তাকে জিজ্ঞেস করেছিল কেমন আছো তুমি? খুব ভালো আছি, জীবনে বেঁচে থাকার মানে খুঁজে পেয়েছি। পাল্টা প্রশ্ন করেছিলো বিজয়া, তুমি নিশ্চয় তোমার উপযুক্ত কাউকে নিয়ে সুখী, ভালো থেকো বলে ট্যাক্সিতে উঠে পড়েছিল বিজয়া উত্তর না শুনেই। তার চলে যাওয়াতে বিশাখ নিশ্চয় বুঝতে পেরেছে এতো অবহেলা অপমান তার মেরুদণ্ডকে ভাঙতে পারেনি। বিজয়ারা কখোনো হারে না।