জীবন যেখানে যেরকম

জীবন যেখানে যেরকম

আমার একটা গল্পের সমাপ্তি টেনে দিবেন?, ইনবক্সে বলেছিলো মেয়েটি। আমি বললাম, চেষ্টা করতে পারি। তবে, কথা দিতে পারছি না। আমার কথা শুনে মেয়েটি বললো, শুনুন তবে ক্লাস টেনে থাকতে আমার বিয়েটা দিয়ে দেওয়া হয়। হঠাৎ করেই হয়েছিলো। আত্নীয়র বাসায় মা ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিলো। সেখানেই পাত্র এসে আমায় দেখে গ্যালো। তবে, বিয়েটা পাঁকা করলো না। এরপর বেশ কয়েকবার ছেলে মায়ের সাথে কথা বললো। তারপর বলা যায় তার পরিবারের অমতেই আমায় বিয়ে করে। ও বলে রাখা ভালো, ছেলেটা সৈনিক পদে সেনাবাহিনীতে চাকরী করে।

বিয়ের পর ছেলেটা আমায় তার বাসায় তুলে নিলো না। রেখে গ্যালো আমার বাপের বাড়িতে। বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, দশমাসে দেখতে এসেছিলো দু’বার। শেষবারের বার আমি জোর করেই চলে আসি তার কাছে। কিন্তু, সেখানে এসে পড়লাম বিপদে। খুলনার এক অজোপাড়াগায়ের মেয়েকে নিয়ে এসে একা ফেলে চলে গ্যালো। হাতে নেই কোনো টাকা পয়সা। তারপর, কোনোভাবে ঘর থেকে টাকা এনে কয়েকদিন রইলাম। এরমাঝে মহারাজা উদয় হলো। আশপাশ থেকে জানলাম তার নাকি একমেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে। ফোনও পেতাম ওয়েটিংয়ে। বাধ্য হয়ে তাই জিজ্ঞেস করলাম। মহারাজা উড়িয়ে দিলেন। তারপর, তার মোবাইল থেকে নাম্বার দিয়ে দিলাম ফোন। মেয়েটি ধরলো না। সিম বদলে আবার দিলাম। এবার অন্য পরিচয়ে কথা বলে জানলাম সবই সত্য। পরিবারকে জানালাম। তারা বললো, পুরুষ মানুষের একটু আধটু দোষ থাকেই, মানিয়ে নাও।

কিন্তু, মানলাম না। চলে এলাম বাবার বাড়ি। বাবা মা চলে যেতে বললো। তবু থাকলাম। এর মাঝে জানলাম আমি গর্ভবতী। সন্তানকে তো মেরে ফেলা যাবে না। মারলে নাকি আবার পাপ হবে। তাই রেখে দিলাম। খবর শুনে মহারাজা আসলো না বাড়ি। দূর থেকেই টাকা পাঠালো। এমনকি প্রসবের দিনও এলো না। সেদিন অবশ্য ফোন দিয়েছিলো। পরিস্থিতি বিচারে বুঝলাম তখন সে অন্য এক নারীর শয্যাসঙ্গী। কি আর করার! মেয়ে তো মানিয়ে নাও। তাই, মানিয়ে নিতেই হলো। বাচ্চা নিয়ে পোড়াকপালীকে ফিরতে হলো স্বামীর ঘরে। স্বামীর ঘরে এসে জানলাম মহারাজার আরও তিনজনের সাথে শয্যাসম্পর্ক আছে।

তবু মেনে নিলাম। কিন্তু, মানতে পারলাম না যেদিন সে তারই এক বসকে ঢুকিয়ে দিলো আমার শয্যায়। কোনোমতে সেদিন চিৎকার করে পার পেয়ে গেলাম। কিন্তু, মার থেকে রেহাই মিললো না। পাশাপাশি লেগে গ্যালো পাগলের তকমা। এরপর যতই মার খাই না কেনো চিৎকার করলে শুনতে হতো আমি পাগল, চিৎকার করি প্রায়ই। যদিও কাপড়ে থাকে মার খাবার স্পষ্ট চিহ্ন। এর মাঝে অভিযোগ করলাম তার অফিসে। কিন্তু, তারাও পাগল বলে আমলে নিলো না। এভাবে চলতে চলতে একদিন মার দিতে দিতে আমায় প্রায় মেরেই ফেললো। আমি কোনোমতে সেদিন বাড়িতে ফিরলাম। অবশেষে পরিবারের অমতে একা একা ঢাকা গিয়ে নিয়ে নিলাম ডিভোর্স। তারপর?

মা সেই ছেলেকে ঢুকিয়ে দিলো আমার শয্যায়। যদিও আমাদের সেদিন কিছু হয়নি। কিন্তু, মুক্তিটা মিললো না। পরিবারের সাপোর্ট নেই, পড়ালেখা নেই সাথে জুড়ে আছে একটি প্রাণ। কই বা যাবো বলেন? তারপরও চেষ্টা করলাম চাকরীর। কিন্তু, সব শুয়োরের বাচ্চাই সুযোগ খোঁজে। শরীর না দিলে নাকি চাকরী হবে না! তো কি করবো? বাধ্য হলাম ফিরতে। প্রাক্তন স্বামীর কাছে। কারণ, তার নাকি আমার উপর দরদ উথলে পড়ছে। আজকাল তার সাথেই আমায় থাকতে হচ্ছে। কি আর করবো বলেন? বাপ-মা নিচ্ছে না, সন্তানও আছে- তাই চলে এলাম।

আচ্ছা আপনি কি আমার গল্পের সমাপ্তি টানতে পারবেন? পারবেন মুক্তি দিতে? তবে, মৃত্যুর কথা বলিয়েন না যেনো। এর মধ্যে অনেকবার মরতে গিয়েছি। কিন্তু, বাপ-মায়ের মতো মৃত্যুও যে আমায় নিলো না! এখন, আমি কি করতে পারি? কোথায় পাই মুক্তি- বলুন না? মেসেজটি পড়ে চুপ করে রইলাম। অনেকক্ষণ চুপ থেকে বললাম, পরে জানাবো। ওপাশ থেকে তখন উত্তর এলো, সবাই পরে জানাবো বলে কেউই আর জানায় না। আমি উত্তরটি দেখে থমকে গেলাম। কি বলবো? উত্তরটা যে আমারই অজানা।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত