মানুষ রূপী অমানুষ ডাক্তার

মানুষ রূপী অমানুষ ডাক্তার

নিপু সদ্য মাত্র ডাক্তারি পাশ করেছে।তার বয় ফ্রেন্ড তিন বছর আগেই ডাক্তারি পাশ করেছে।তাদের নিজস্ব একটা বেসরকারি হাসপাতালও আছে।তার সুবাদে নিপু সেখানে জয়েন করেন। নিপুর ডাক্তারি হাত খুব ভাল বলে অল্প দিনেই সার্জন হিসেবে বেশ খ্যাতি ছড়িয়েছে।সাথে তার হবু স্বামীর হাসপাতালেরও।তাই ছোট বড় সব অপারেশনের জন্য মানুষ দূরদূরান্ত থেকে এই হাসপাতালেই মানুষ ভীর করতো। আজ নিপুর জন্মদিন তাই সবাই তাকে হাসপাতালে সারপ্রাইজ দিবে বলে ঠিক করেছে।তার মাঝেই নিপুর বাবার ফোন

“হ্যালো বাবা বল”

“আজ না তোর জন্মদিন”

“”হ্যাঁ বাবা তবে অতীতের ২৮ টা জন্মদিনের মত কি আজ কোন নতুন সারপ্রাইজ আছে?””

“”অবশ্যই মা।আজ তোকে এক ভিন্ন স্বাদের এক নতুন সারপ্রাইজ দিবো যা তোর জীবনের সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ।””

“”বাবা গিফট থাকবে তো?””
“হ্যাঁ মা।আমি সবচেয়ে বড় গিফট নিয়েই তোর সামনে হাজির হবো””

“”দেখা যাবে বাবা তুমি আজ কি এমন গিফট দেও।আশা করি সবচেয়ে সেরা হবে।””

“”অবশ্যই সব থেকে সেরা আচ্ছা আমি বিকালে হাসপাতালে আসবো””

“”আচ্ছা বাবা তাড়াতাড়ি আসবা বললাম তুমি না আসলে আমি কিন্তু কেক কাটবো না””

“”আচ্ছা মা এখন বায়””

নিপুর হাসপাতালের সব ক্লাইন্টরা তৈরি হচ্ছে সেরা ডাক্তারের বাথ ডে সেলিব্রেশন করার জন্য। এমন অবস্থয়া দুপুর গড়িয়ে বিকেল প্রায়।সবাই পুরোপুরি তৈরি। হঠাৎ করেই একটা লোক একটা আধা বুড়ো লোক কোলে করে ডাক্তার!!ডাক্তার!! চিৎকার করে হাসপাতালে ঢুকে পড়ল।কর্তব্যরত সব চিকিৎসক আজ উপস্থিত।এবং তারা তাদের কর্তব্য মতো সেই আধা বুড়ো লোকটাকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল।

সাথে সাথেই তাকে আইসিইউতে নেয়া হল।সাথে অঅক্সিজেন ও হার্টরেট যুক্ত হলো।ডাক্তাররা নিশ্চিত হল যে তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।এবং অপারেশন লাগবে। নিপু ভাবছে আজ হয়তো তার জন্মদিন অনুষ্ঠানটাই মাটি।যাক কারো প্রাণ বাঁচানোর জন্য এতটুকু তো করাই যায়। নিপু সব বাদ দিয়ে হার্টে রিং বসানোর জন্য ও অপারেশনের জন্য তৈরি হল।তখনি নিপুর হবু স্বামী হাসপাতালের মালিক নিপুকে বলল যেন অপারেশন করার আগে সব টাকা বা ব্যাংক গ্যারান্টি নিয়ে যেন অপারেশন শুরু করে।

সাথে সাথে নিপু থমকে দাঁড়ালো।অপারেশন বাতিল করে রুগীর গার্জিয়ান এর সাথে দেখা করতে গেলে দেখা গেল রুগীর কোন আত্মীয় সজন নেই।এবং অপারেশন করা হলে বিল পরিশোধ করার মত কেউ নেই তাই তাদের লোকসান হবে বলে তার চিকিৎসা বাতিল করা হল। এবং অক্সিজেন খুলে দিয়ে সরকারি হাসপাতালে বদলি করা হল।এবং হাসপাতাল থেকে নামিয়ে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে ২০ মিনিট লেগে যায় তার মাঝেই আধা বুড়ো লোকটা মৃত্যুবরণ করেছে।

কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই।লাশটাকে নিয়ে মর্গে রাখা হলো। সবাই তৈরি হচ্ছে নিপুর জন্মদিন পালন করা যাবে। সব কাজ শেষ।নিপু তৈরি কেক কটার জন্য তবে তার বাবা না আসায় অপেক্ষা করছে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই নিপুর বাবা জল জল চোখ লাল চোখ আর হাতে একটা খাম নিয়ে নিপুর সামনে হাজির। নিপু একটু ভয় পেয়ে তার বাবাকে জিজ্ঞাস করল তার আবার কি হলো।নিপুর বাবা উত্তর না দিয়ে তার হাতে থাকা খামটাকে নিপুর হাতে ধরিয়ে দিল।

নিপু খামটা খুলতেই ভেসে এলো একটা চিঠি।তাতে লিখা নিপু সম্পূর্ণ চিঠিটা পড়ার আগে কিছু জিজ্ঞাস করবে না।তোমাকে একটা সত্য কথা বলার ছিল।সেটাই ছিল তোমার সারপ্রাইজ।তবে আমি ব্যর্থ সেটা পারলাম না।আর সত্যিটা হল আজ থেকে ঠিক ২৮ বছর আগে আমার হাতে তুমি ভূমিষ্ঠ হও।আর তুমি ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় তোমার মা মারা যায়।তোমার দাদা দাদি কেউ ছিল না।আর তোমার কারের বাবা ছিল প্রবাসে।তোমার মা মারা যাবার পর তোমার সব দায়িত্ব আমি নেই।আর কখনো বুঝতে দেই নি আমি তোমার আসল বাবা।

তবে আমি তোমার আসল বাবাকে অনেক খুঁজি কিন্তু পাইনি সেও তোমাকে অনেক খুঁজেছে কিন্তু পায়নি।অবশেষে তোমার যখন ১৫ বছর তখন তার সাথে আমার প্রথম দেখা হয় তবে আমি তাকে তোমার পড়ালেখার কথা বুঝিয়ে বললে সে নিজ থেকেই দূরে সরে যায় আর অপেক্ষা করে পড়ালেখা শেষ হয়ে আজকের মত এমন একটা দিনের।তবে তোমার দূর্ভাগ্য আমিও অপরাধী তোমাকে তার সাথে দেখা করাতে পারলাম না।একটু আগে যেই লোকটা চিকিৎসার অভাবে মারা গিয়েছে সেটাই তোমার বাবা।সে তোমার হাসপাতালের সামনে অপেক্ষা করছিল আমার জন্য একসাথেই তোমার সামনে হাজির হতাম আর এটাই হতো তোমার সবচেয়ে বড় গিফট।বড় সারপ্রাইজ।আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো নিপু।

নিপু পুরো চিঠি পড়ে শেষ করতেই তার অশ্রুজলে পুরো চিঠিটা ভিজে কলম কালির লিখা গুলো একে অপরের সাথে গড়াগড়ি খাচ্ছে। নিপু দৌঁড়ে ছুটে গেল তার বাবার লাশে পাশে।এক নজর তার বাবার মুখ খানি দেখতে।অবশেষে অজ্ঞাত লোকটার পরিচয় মিলেই দাফন কাজ সম্পূর্ণ হলো।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত