ফেক আইডি

ফেক আইডি

জানেন আমি না আপনাকে অনেক ভালবাসি ” টেক্সটটা যখনই আমার চ্যাটহেডে ভেসে উঠলো বিশাল একটা ছ্যাবলা খাইলাম। অনেক প্রপ্রোজাল পাই বাট ইনিয়ে বিনিয়ে নানান সুরে। কিন্তু ডাইরেক্ট এমন একশনের অভিজ্ঞতা আমার কখনও হয় নি। সে যাই হোক লেখছিলাম গল্প লেখা বাদ দিয়ে তার মেসেজ সিন করে ভাবতে লাগলাম সে কে? তাড়াতাড়ি করে তার প্রোফাইলে ঢুকে দেখতে লাগলাম সে কে? ভাল করে প্রায় দশমিনিট যাবৎ তার প্রোফাইল ঘেঁটে দেখেলাম সে হেব্বি চার্মিং টাইপের পাবলিক আর অনেক নামীদামী পাবলিক আছে তার ফ্রেন্ডলিস্টে। আর কমেন্ট বক্স সে তো মাশাল্লাহ সুবহান আল্লাহ, ও আপনি এত ড্যাশিং, আপনার হেয়ার স্টাইল তো জোশ ব্লা ব্লা অনেক কিছু। মনে মনে একটু গর্বও হতে লাগল এমন একটা পোলা আমারে পছন্দ করে। একটু পরে আবার আসলো টেক্সট, ” কি হল কিছু তো বলেন, আমি কিন্তু কিছু একটা বলেছিলাম “। আমি সাথে সাথে দুই ঢোক খেলাম। কিছু না বলেই নেট থেকে বেরিয়ে এলাম। কি বলব আমি বুঝতেই পারতেছি না।

আসলে ফেসবুকের রিলেশনের উপরে বাজে অভিজ্ঞতা আছে আমার। তাই রিলেশন তো দূরের কথা প্রেম ভালবাসা থেকে একশ হাত দূরত্ব বজায় রেখে চলি। এজন্য নানান কথাও শোনা লাগে আমাকে। সে যাই হোক মেইন প্রসঙ্গে আসি। আমি এমন অসাম বসাম পোলার প্রপ্রোজাল পাইয়া মনের মধ্যে কুছ কুছ হোতা হ্যায় পিকের গান বাজাইতে লাগলাম উইত মিউজিক। একটু পরেই মনের মিউজিক বিবেক এসে থামিয়ে দিল। চিন্তায় পড়লাম ছেলেটা কে। আপায় উপায় না পেয়ে আমার বুদ্ধিদাতা দোস্তরে নক দিলাম মেসেঞ্জারে। কপাল ভালই ছিল ভদ্র মহিলা অনলাইনেই ছিলেন। মেসেজ দিলাম,

___ ” জান কি করেন “।
___ ” ওই ফাজিল আমার বর পাশে তোর জান পরান দেখলে ভাববো আমি আরেক পোলার লগে লাইন মারি “।
___ ” দোস্ত ভাত খাইছত “।
___ ” আনে দানের কথা বাদ দিয়ে কি হেল্প লাগব তাই ক “। বুঝলাম এখানে বাটার লাগাইলে কাজ হইত না৷ তাই মেইন পয়েন্ট আসলাম বললাম,
___ ” দোস্ত এক পোলায় কইছে আমারে সে পছন্দ করে “। ওপাশ থেকে কি যেন লেখতেছে দেখলাম। অনেক্ষন টাইপের পরে আসলো একটা রাগের ইমোজি। তারপর আসলো,

___ ” এরে ফাজিল বেডি এমন কইরা কইতাছত মনে হয় তরে আংটি লইয়া হাঁটু গাইড়া প্রপোজ করছে। ফেসবুকে টুকটাক লেখালেখি করিস এই পারপাস কইছে তোরে হের ভালা লাগে ” আমি একটা স্যাড ইমোজি পাঠাইলাম। দোস্ত এর পর সান্ত্বনা দিয়ে বলল,

___ ” শোন এই সব আউল ফাউলের কথায় আকাশে উড়িস না “।

আমি একটা লাইক দিয়াই বাইর হইয়া আসলাম। মনে মনে ভাবতে লাগলাম বান্ধবীর বিয়া হইয়া গেছে তো তাই আমার দুঃখ বোঝে না। সে যাই হোক ছেলেটা কন্টিনিউস মেসেজ করে আর আমি সিন করে করে রেখে দেই। একদিন ভাবলাম তারে খুব সুন্দর করে বলি আমি এসব ব্যাপারে ইন্টারেস্টিং না। যেই ভাবা সেই কাজ খুব বড় একটা টেক্সট করলাম আমার কি কি সমস্যা কেন আমি এই ব্যাপারে আগ্রহী না। সব শেষে এটাও লিখলাম যে আমার ফেসবুকে একটা রিলেশন ছিল ছেলেটা ছ্যাঁকা দিয়ে ব্যাকা করে চলে গেছে আমারে। ও মোর আল্লাহ একটু পরেই দেখি ভাইয়ার কল। কল রিসিভ করে কিছু বলার আগেই শুনলাম ভাইয়ার হুংকার,

___ ” টিকটিকি তেলাপোকা হারামী ফেসবুকে রিলেশন করছ আবার ছ্যাঁকাও খাস। এর জন্য বিয়ে পর্যন্ত করতে চাস না। সব গুলোর বিয়ে হয়ে গেছে খালি তুই মোচড়া মুচড়ি করস। আজকে খালি বাসায় আই। রাস্তায় যারেই পামু তারেই ধরইরা নিয়ে তোর লগে বিয়া করায়ে দিমু। ”

ভাইয়া মেশিনগানের গুলির গতিতে কথা গুলো বলেই ফোন কেটে দিল। আমার কান যেন ঝাঁ ঝাঁ করতে লাগল। আল্লাহ গো কি হইল এটা। কেমনে কে। আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে সন্ধ্যা হল। অন্য দিন ভাইয়া আসে রাত্রে আজকে সন্ধ্যায় এসে হাজির। এসেই ধরল আমার চুলের মুঠি। খালা ভাবি এত বলে কাজ হয় না সে আমারে বিয়ে দেবে মানে দেবেই। খালার অনেক প্রশ্নের পরে ভাইয়া এই বলল,ও একটা ফ্রেইক আইডি দিয়ে আমার সাথে চ্যাটিং করেছে আমি তাকে কি কি বলেছি সবাইকে দেখালো। আমি তো শরমে মরে যাই যাই পালা। খালা রেগে আমারে পারে না ভাইয়ার হাত থেকে নিয়েই মাইর শুরু করে। ভাবিও দেখি চুপ করে আছে। খালা বলল আজকেই ছেলে দেখবে বিয়ে দিয়ে দেবে দুই দিনের মধ্যেই। এমন সময় হঠাৎ আমি বললাম,
___ ” পরী ভাবি আপনার বরের এই ফেক আইডি চেক করেন দেখেন কত মেয়ে হের সাথে ইটিশ পিটিশ করে”।

আমার এই এক কথা যেন টনিকের মত কাজ করল। খালা আর ভাবি চুপ আর জয় ভাইয়া… সে তো বিস্ফোরিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবি খপ করে ভাইয়ার হাত থেকে ফোন টেনে নিল। ভাইয়া ফোন নিতে যাবে এমন সময় খালার চোখ রাঙানিতে শান্ত হল। ভাবি সব দেখে খালাকে বলল,

___ ” আম্মা শুধু বাবুর জন্য ছেলে দেইখেন না আপনার ছেলের জন্যও একটা মেয়ে দেখেন আমি চললাম বাপের বাড়ি।”

___ ” তুমি কেন বাপের বাড়ি যাবা, গেলে এই হারামজাদা ঘরের থেকে বের হবে “। খালা গলা ছেড়ে বলল। ভাইয়াকে ঘর থেকে বের করে দেওয় হয়েছে। সে আমারে একটু পর পর কল দিয়ে হুমকি দিচ্ছি। ভাবীরে আর খালারে কল দিয়ে দিয়ে মাফ চাচ্ছে।এখন আমি বসে ভাবতেছি কি থেকে কি হইয়া গেল।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত