সকাল ১০টা রাফি চোখ কচলে বলল, চা খাওয়া এক কাপ৷”
-এত সকালে? অফ ডে?” আর বলিস না বেটা৷ বৌ এ পানি ঢেলে দিছে মুখে৷ গরম কালের গরম আর শীতের পানি আমার সহ্য হয় না৷ তাই আর শুয়ে থাকতে পারিনি৷”
-বৌ এর সব কথা মানা লাগে? ঘাড়ত্যাড়ামী করতে পারস না?”
-পাগল নাকি? একবার অফিসের কলিগের কথায় বীর সেজে বৌ কে বলেছিলাম, শুনো! আজ সারাদিন আমি ঘাড়ত্যাড়ামী করবো৷ তুমি বাপের বাড়ি চলে যেও না আবার৷”
-তারপর কী হয়েছে বুঝস?
-কী?
-ঐদিন সারাদিন আমাকে ঘাড় ত্যাড়া করে বসিয়ে রেখেছে৷”
একবার রাগ করে বলেছিলাম, ভাত খাবো না৷” একসপ্তাহ আমাকে ভাত দেয়নি ঘরে৷ রুটি আর করলার বাজি খেয়েছি৷” ঐ সুযোগে ভুড়ির সাইজটাও কমেছিল বটে৷” একবার আহ্লাদ করে বলেছিলাম, শুনো আমি বাজার করবোনা৷” বৌ বলল, খাবে কী?” ন্যাকামো করে বলেছিলাম, “লিপস্টিক৷” তারপর কী হয়েছে জানিস?”
-কী?
-হ্যা তুই যা ভাবছিস তাই৷ লিপস্টিক খেয়েছি নিয়ম করে৷
ভাতের টাইম হলেই তোর ভাবী আমার ঠোঁটে লিপস্টিক লাগায় দিতো৷ ওগুলো আমি নিজে নিজে খেতাম৷ বৌ এর কঠোর নজরধারীর মধ্যেই৷” রাফির এমন অত্যাচারের কথা শুনে আমরা ব্যথিত হলাম৷ কয়েকজন সিদ্ধান্ত নিল, তারা বিয়ে করবেনা৷ আর ক’জন রাফিকে কাপুরুষ বলছে৷”
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে রাফি বলল, তোর ভাবী যা বলে বা আমি যা বলি৷ তাই করে-করায়৷ জ্যামিতিতে সে ভালো ছিল৷ তাই মুখের কথা আর কাজ সমান্তরাল কোণে হিসাব করে৷” এই সমান্তরাল এর আবার চাঁদের মত অমাবস্যা আর পূর্ণিমা আছে৷ অমাবস্যার গল্পশেষে এবার পূর্ণিমার গল্প বলি শোন৷” একবার বন্ধু থাকাকালে তোর ভাবীকে বলেছিলাম, তোরে বাদাম খাওয়াতে আমার যত খরচ হয়েছে৷ জমালে আইফোন কিনতে পারতাম৷” তোর ভাবী দাঁত মুখ শক্ত করে বাদামগুলো ব্যাগে ঢুকিয়ে বলেছিল, তোরে আইফোন দিয়েই আমি বাদাম মুখে দিবো৷”
-তারপর কী হইছে জানস?”
-কী?
-তোরা যেটা ভাবতেছছ সেটা না৷ আইফোন দেয়নি৷”
আমরা হতাশ হলাম৷” তবে নতুন ১টা ফোন দিছিলো৷” আমরা আবার পুলকিত হলাম৷ ১১শ মডেলের নকিয়া ফোন৷” আমরা আবার হতাশ হলাম৷” ফোনের পেছনে “গিফ্টেড বাই**” তার নাম লিখা ছিল৷” আমরা খুশি হলাম৷ “সাপের গেমস খেলা নিষিদ্ধ ছিল৷” আমরা ধুর ছাই বলে হতাশ হলাম৷” তোর ভাবী আমার কেমনে হইলো জানস?”
-না৷”
-তোর ভাবীরে আমি ভালোবাসতাম৷
কিন্তু বলতাম না৷ শুধু বলতাম, আমারে প্রেমিকা জোগাড় কইরা দে৷” তোর ভাবী আমার কলার ধরে বলতো, আচ্ছা দিবো!” অথচ আমি চাইতাম সে বলুক, নো প্রেম আমি থাকতে৷” একবার ফুচকা গেলাতে গেলাতে তারে বললাম, ফুচকার কসম খা৷ তোর বিয়েতে আমারে প্রেম করাই দিবি?”
“সে খায়লো!” বিয়ের দাওয়াত দিল৷ আমি গেলাম৷ ভেতরে বেদনা৷ তারে হারাবো৷ আবার ভেতরে খুশি, প্রেমিকা পাবো৷” আবার বেদনা৷ তারে হারাবো৷ কিন্তু আমি তা চাইনা৷” আমি মিনমিন করে বললাম, কথা কাজে মিলান্তি৷ আমার প্রেমিকা কই?” সে চোখ গোল গোল করে বলল, ভুলে গেছি৷ দাঁড়া আসতেছি৷” সেদিনই তার বিয়ে হয়ে গেল!” আমরা হতাশ হইলাম৷” আমার সাথে! আমি চাইলাম প্রেমিকা, পেয়ে গেলাম বৌ৷” আমরা আবার খুশি হইলাম৷” “আমারে প্রচুর অত্যাচার করে!” আমরা ব্যাথিত হইলাম আবার৷”
“মিষ্টি অত্যাচার, ভালোবাসার অত্যাচার৷ আমার ভালো লাগে৷ মনে হয় এগুলা ছাড়া বাঁচবোনা৷” আমরা চরম খুশি হইলাম৷ প্রচুর খুশি হয়ে রাফি ভাইরে জড়াইয়া ধরলাম৷ তারপর মোড়ের বিরিয়ানীর দোকানে নিয়ে গেলাম৷” বিরিয়ানীর পর রাফি ভাইয়ের সিগারেটের নেশা৷ বৌ কে ফোন দিলো রাফি ভাই৷ আমি পন্ডিতি দেখিয়ে ফোন কেড়ে নিয়ে বলে ফেললাম, ভাই আজ সিগারেট খাবে৷” কুট করে লাইন কেটে গেল৷” রাফি ভাই আমার দিকে ঝিম মেরে তাকিয়ে রইলো৷ তারপর বিরিয়ানি চিবোতে চিবোতে বলল, পেস্ট নিয়ে যাওয়া লাগবে৷ পোড়া জায়গায় পেস্ট লাগালে আরাম লাগে বেটা৷” গিল বিরিয়ানী গিল৷”