টক মিষ্টি ঝাল

টক মিষ্টি ঝাল

বেহায়ার মতো বুকের আচল ফেলে দিয়ে আমাকে কাছে টানার চেষ্টা করছো কেন? ওর কথা শুনে তাড়াতাড়ি আচল ঠিক করলাম। খুব জেদ কাজ করছে আমার । নিজের বউকে কেউ এভাবে বলে? আমি কি ইচ্ছা করে বুক উদোম করে রাখছি? ভুলবসত আচল পড়ে গেছে। আর সেজন্য কথা শুনাতে হবে। অদ্ভুত লোক। উঠে উনার কাছে গিয়ে বললাম, এই যে মি. আদনান। কি ভাবেন নিজেকে। চুড়ির সাথে আটকে গিয়ে শাড়ির আচল পড়ে গেছে। বুক উদোম করে আপনাকে বিমোহিত,শিহরিত কোনোটাই করার ইচ্ছা আমার নেই। তাও আবার আপনার মতো লোককে। আপনি কতোটা কাপুরুষ বুঝতে পারছেন। বাসর রাতে বউয়ের সাথে গল্প করবেন, আদর করবেন। তা না করে উল্টো কথা শুনাচ্ছেন।

ইস! তোমাকে করব আমি আদর, ভাবলা কি করে। বিয়ের সময় এমন কোনো শর্ত দেয়নি তোমার বাবা-মা। আর বলেও নি,”আমার মেয়েকে সারা রাত আদর করবা।” বলেই হে হে করে হেঁসে উঠলো আদনান। ওর হাঁসি দেখে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। রেগে গিয়ে বললাম, ওহ! আপনার বাবা-মা ও এমন কোনো শর্ত দেয়নি বিয়েতে, যে বুকের আচল আপনার সামনে ফেলে রাখা যাবে না। আর জানেন আপনি,এমনিতেই আপনাকে বানরের মতো দেখায়। আর হাসঁলে দেখায় হনুমানের মতো। বলেই জিহ্বায় কামড় দিলাম। ইস কি বললাম। লোকটা আবার রাগ করবে না তো!! কিন্তু আদনান রাগল না। উল্টো আমাকে বললো,” আলিফ লায়লার ভূত দেখছো? যে মানুষগুলো দেখতে ভালো দেখায় না, তাদেরকে প্রচুর ময়দা মাখায়। তখন তাদেরকে ভূতের মতো দেখায়। আর আমার সামনে এখন সেরকম এক পেত্নী বসে আছে।

— কি!! আমি দেখতে পেত্নীর মতো।
–: না ,পুরাই তেলাপোকার মতো। আচ্ছা তোমার নাম জুইঁ রাখলো কেন? তুমিতো জুইঁ ফুলের মতো সুন্দর নও। তোমার নাম রাখা উচিৎ ছিল তেলাপোকা। তুমি একটা উইঁপোকা।”

–: আমি রেগে গিয়ে বললাম, আমি তেলাপোকার মতো কোন দিক দিয়ে। আপনি একটা তেলাপোকা। আমার পেট তেলাপোকার মতো বড় নাকি। ও ফিসফিসিয়ে বললো, দেখলে বুঝতাম পেট কেমন। আর এখন বড় না হলেও হয়ে যাবে।

প্রচুর রাগ হচ্ছে এই আদনানের উপর। জানতাম এমনটাই করবে। তাও কষ্ট হচ্ছে খুব। ওয়াশরুমে ঢুকে মেকআপ উঠাচ্ছি আর ভাবছি সত্যিই কি আমি দেখতে পেত্নীর মতো? বাসর রাতে সকল মেয়েই সুন্দর হোক বানা হোক আশা করে, জামাই এসে ঘোমটা উঠিয়ে বলবে,” তুমি এত সুন্দর কেন? জানো, তোমার ওই কাজল-কালো চোখের মায়ায় পড়েছি। তোমাকে রুপবতী হতে হবে না। আমার মায়াবতী হয়ে সারাজীবন আমার সাথে থেকো” আর আমার কি কপাল! প্রশংসাতো করলোই না, উল্টো আচল বুক থেকে সরে যাওয়াতে কতোগুলো কথা শুনালো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি উনি ফেসবুক চালাচ্ছে। আজব লোক! ইনিই হয়তো প্রথম লোক যে বিয়ের রাতে ফেসবুক চালাচ্ছে। উনার কাছে গিয়ে বললাম,

–: কেমন লোক আপনি?
–: পাঁচ ফুট ১০ ইঞ্চি লম্বা সুদর্শন এক যুবক আমি।
–: সেটা জিজ্ঞাসা করিনি। বলছি আপনি কি রকম লোক, বাসর রাতে ফেসবুক ইউজ করছেন।
–: কেন ? আজ কি কোনো বিশেষ রাত যে ফেসবুক ইউজ করা যাবে না।
–: অবশ্যই বিশেষ রাত।
–: আমি তো দেখতেছি অন্য সব দিনের মতো একটা চাঁদই উঠছে। বিশেষ কোন দিক দিয়ে।
–: আপনি একটা। ইচ্ছা করছে ফোনটা এখন ভেঙ্গে দেই।
–: কেন? ফোন আবার কি করলো?
–: ফোন কিছু করেনি, করছেন তো আপনি।
–: তো ফোন ভাঙ্গবা কেন? পারলে আমাকে ‌ভাঙ্গো।
–: পারলে তাই করতাম। কি ভাব ফোনের সাথে। বাসর রাতে বউ রেখে ফোন নিয়া টিপাটিপি।
–: তো , তোমাকে টিপতাম?

মুখে কিছুই আটকায় না এ লোকের। বুঝলাম ,এর সাথে আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। উনাকে বললাম, রুম থেকে বের হন। শাড়ি পাল্টাব।

–: ওয়াশরুমে গিয়ে পাল্টাও।
–: না, সেখানে পাল্টালে শাড়ি ভিজে যাবে।
–: তো আমার সামনেই পাল্টাও।
–: আপনার মতো লুচু লোকের সামনে আমি শাড়ি পাল্টাব!! কখনো না।
–: হোয়াট ইজ লুচু, ডিয়ার? এটা কি বরিশালের ভাষা? বরিশাইল্লা মানুষ দেখতেও ভালো না, ভাষাও সুন্দর না।
–:বরিশাল নিয়ে আজে- বাজে কথা বলবেন না। বরিশালের মানুষ সবচেয়ে ভালো। ওরা আপনাদের মতো গন্ডার মার্কা না। আর আমার বাড়ি বরিশাল নয়, ভোলা।

–: ওই একই , লাউ আর কদু।
–: না! ফরিদপুর, নারায়ণগন্জ, নরসিংদী ঢাকার মধ্যে । কিন্তু ওদেরকে কেউ ‌ঢাকাইয়্যা বলে না। আর আপনার সাথে প্যাচানোর ইচ্ছা নেই। দয়া করে বের হন রুম থেকে। নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
–: না, যাবো না।
–: আপনি বের হবেন , নাকি চিৎকার করে উঠব। তখন সবাই ভাববে,যে ছেলে বিয়েই করতে চায়না,সে এখন বউ পাওয়ার আগেই..
–: থাক আর কিছু বলতে হবে না। গেলাম।

অবশেষে বের হলো আদনান। যাক লোকটা গেল তবে। গরমে ঘেমে গিয়েছি খুব। শাড়ি পড়ার অভ্যাস নেই। ভার্সিটিতে ভাইভাতে শাড়ি পরতাম মাঝে মাঝে। ভাইবা রুমে যাওয়ার আগ মুহূর্তে শাড়ি পরতাম। তাও শাড়ি ছুটে যেত। একবার তো ভাইবা রুমে ঢুকলাম। আর তখনি শাড়ির কুচি ছুটে গেল। কি বাজে অবস্থা হয়েছিল তখন। কোনো রকম শাড়ি ধরে রাখলাম। যে মেয়ে শাড়ি সামলাতে পারি না, সে কি করে এই ছ্যাচড়া লোকটাকে সামলাবো।
আসলে ওকে বিয়ে করবো আমিও ভাবিনি। ওর ছোট বোন আনিলা আমার সাথে পড়ে। খুব ভালো মেয়েটা। আসলে আদনানের পরিবারের সবাই অনেক ভালো এবং মিশুক। সারাদিন আনিলা আমার কাছে ওর পরিবারের গল্প করতো। একদিন বললো,

–: জানিস, জুইঁ। আমার ভাইয়ার জন্য গত দুই বছরে ১০০+ মেয়ে দেখছি। কিন্তু ওর নাকি কাউকেই ভালো লাগে না। একটা না একটা সমস্যা বের করবেই। কতোজন ঘটকের কাছে যে মা গিয়েছে তা মা জানে,আর আল্লাহ জানে। ঘটকগুলোও এখন বিরক্ত। ভাইয়ার বিয়ে হওয়ার পর মারুফ আর আমার বিয়ে হবে। মারুফ তো খুব রেগ আছে ভাইয়ার ওপর। ও বলতেছে ভাইয়ার নাকি বিয়াই হবে না। আর আমাদেরও বিয়ে করতে হবে না।

–: হি হি। মারুফ ভাইয়ার তো আর সইছে নে । কি করবে বেচারা। তা তোর ভাইয়ার কেমন মেয়ে পছন্দ?
–: তার আর পছন্দ। কতো মেয়ে কতো কিছু করলো ভাইয়ার জন্য। কিন্তু ভাইয়ার তাও পছন্দ না। সে অসাধারণ কাউকে নাকি বিয়ে করবে। আমার মনে হয় ভাইয়া বিয়েই করবে না।

–: তাহলে পরীস্থান থেকে পরী এনে দে। তাকে তো পছন্দ করবে। সে অসাধারন হবে।
–: নারে আমার যে ভাইয়া। তাও বলবে পাখা আছে কেন?
–: আমাকে বিয়ে করতে বল।
–: উহু ,করবে না।
–: আমাকে দেখলে তোর ভাইয়া বিয়ে না করে পারবেই না।
–: নারে, দেখবি তাও সমস্যা বের করবে।
–: চ্যালেন্জ করলাম। বিয়ে উনি আমাকে করবেই।
–: আমিও চ্যালেন্জ করলাম।

যদি ভাইয়াকে বিয়ে করতে পারিস তাহলে তোকে আমার হানিমুনে নিয়ে যাব। আর তুই হারলে আমাকে তোর হানিমুনে নিয়ে যাব। এর কয়েকদিন পর সত্যি সত্যি আনিলা ওর ভাই ,মা, বোন আর চাচাকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসলো। ওদের পরিবারের সবারই আমাকে পছন্দ হলো। আদনানকে ওর চাচা জিজ্ঞাসা করলো, আমাকে পছন্দ হয়েছে কি না। ও হয়তো সমস্যা খুজছিল। ও কিছু বলার আগেই আমি বললাম, আমার পছন্দ হয়নি উনাকে। সবাই তো অবাক। আনিলা বেশি অবাক হলো। কারন আদনানকে পছন্দ না করার কিছু নেই। আর তাছাড়া আমিই দেখতে আসতে বলছি।

সবাইকে আরো অবাক করে আদনান বললো, ওকে আমি বিয়ে করবো। এবং এই মুহূর্তে। আমি জানতাম উনি যা ঘাড়ত্যাঁড়া লোক, উল্টা- পাল্টা কিছু বললে বিয়ে করতে পারে। আর তাই হলো। সেদিনই আদনানের সাথে আমার বিয়ে হলো। আর আজকে আমাকে ওদের বাসায় আনলো। আমি উনাকে রিজেক্ট করছি , সেজন্য এখন তার প্রতিশোধ নিচ্ছে। ওরপ্রতিটা কথাই যেন তেতো, আর ঝাল মিশ্রিত। তবে কিছু তো একটা সমস্যা আছেই। ও কেন বিয়ে করতে চায়নি আমাকে জানতে হবে। এর মধ্য কিছু তো রহস্য লুকিয়েই আছে। দরজা ধাক্কানোর শব্দে আমি কল্পনা থেকে ফিরে এলাম। এতোটাই কল্পনাতে বিভোর ছিলাম যে শাড়ি পাল্টানোর কথা ভুলে গিয়েছি। তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দেখি আনিসা আপু দাড়িয়ে আছে। আমাকে আপু বললো,

–: এই মেয়ে ,তোমাকে রেখে ও রুম থেকে বের হয় কি করে।
–: আসলে আপু আমিই বের হতে বলছি।
–: ওর দোষ নিজের ঘাড়ে নিতে হবে না। আমি আমার ভাইকে চিনি খুব ভালো করে।

তারপর আদনানকে রুমে আসতে বলে আপু চলে গেল। আসলে আমি সরি। আমার জন্য আপনাকে কথা শুনতে হলো। ” আমার কথা শুনে আদননান বললো, থাক আর সরি বলতে হবে না। আর তুমি পাল্টাবা শাড়ি। পারবা না যখন আমাকে বললেই পারতে। আমি কিছু বলার আগেই ও শাড়ির পিনগুলো ছুটিয়ে দিল। তারপর বললো, আমি অন্যদিকে তাকিয়ে আছি। তুমি শাড়ি পাল্টাও । আর ঝামেলা করো না।

শাড়ি পাল্টানোর পর, আদনান আমাকে ওযু করে আসতে বললো। আমি কিছু বললাম না। ওর কথামতো ওযু করে আসলাম। একসাথে দুইজন নামাজ পড়া শেষ করে উঠে দাড়াতেই, ও টেনে আমাকে ওর কাছে নিয়ে গেল। কানে কানে বললো, তোমাকে মেনে নেই বা না নেই, তুমিতো আমার বউ। ওর ঠোটঁ দুটো আমার কানে লাগতেই কেমন যেন এক অনুভূতিতে হারিয়ে গেলাম। ও আমার কপালে একটা চুমু খেয়ে বললো, বউ হিসেবে এটা তোমার প্রাপ্য। ওর মুখে বউ কথাটি শুনে অদ্ভূত এক ভালো লাগা কাজ করছে। এই লোকটা এমন কেন! কিছুক্ষণ আগেও কতো কথা শুনালো । আর এখন। সত্যিই কি সে আমাকে মেনে নিবে, নাকি ক্ষণিকের মোহ…

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত