আম্মা রাগে কিড়মিড় করতে করতে বলল, ‘তুই এত বড় মিথ্যে কথা কেন বললি? কি দোষ করেছিলাম আমরা? কেন লুকালি আমাদের কাছ থেকে।’ আমি তখন আহাম্মক হয়ে গেলাম। ভাবতে লাগলাম কি কু’কর্ম করেছি। কিন্তু তেমন কিছুই মনে পরছেনা। বিনয়ের স্বুরে বললাম…
–আম্মা শইলডা ভালানি? সকালে খাইছুইন?
-এক থাপ্পড়ে দাঁত ফেলাই দিব। ফাইজলামি করছিস?
–ফাজলামো করব কেন?
-মেয়েটা কে?
–কোন মেয়েটা? (অবাক হয়ে)
-আহা! কচি খোকা উনি।
–আজবতো! আম্মা কি শুরু করলা বলোতো?
-তুই আমাদের লুকিয়ে প্রেম করছিস ছিঃ! এইগুলো তোকে শিখিয়েছি আমি? তুই আমাদের ছেলে হয়ে এমনটা করতে পারলি?
–ধুর টাকলুর মেয়ে (নানা টাকলু) কি বলছো?
-হারামি আমার বাপরে টাকলু বলবিনা। এখনি বাসা থেকে বের হ!
–কিন্তু কাহিনী কিছুই বুঝলাম না।
-কেন তুই ফেসবুকে পোস্ট দেসনি যে তোর গার্লফ্রেন্ড জেএসসিতে প্লাস পেয়েছে?
–হুম তো?
-আবার তো তো মাড়াচ্ছিস!? তোর সাহসতো কমনা। প্রেম করছিস আবার বড়বড় কথা।
–পোস্টের সাথে প্রেমের সম্পর্ক কই?
-মেয়েটা তোর গার্লফ্রেন্ড না? আর গার্লফ্রেন্ড হলে তো প্রেমই করস।
আম্মার লজিক শুনে মনে মনে বললাম ঠিকইতো কইছে। কিন্তু আজব! ওটাতো জাস্ট ফানপোস্ট। আম্মাকে বললাম….
–ধুরু আম্মা, তুমিওনা! আরে ওটা ফান পোস্ট।
-তুই আমাকে ফান পোস্ট শেখাচ্ছিস?
–বিশ্বাস করো মা, ওটা ফান পোস্ট।
-আমি জানতাম তুই এটাই বলবি। তাই তোর বন্ধু সিয়ামকে বলেছিলাম ঘটনা কি। সিয়াম বলল তুই নাকি তোর বাপের পকেট মেরে মেয়ের জন্য আইস্ক্রিম কিনে নিয়ে যাস। মেয়ের জন্মদিনে গিফট করিস।
–আব্বার কসম মা। সিয়াম মিথ্যা বলছে।
-তুই বের হবি কিনা?
–প্লিজ গুলুমুলু মমটা এমন করেনা।
-ফাম দিসনা ফাম দিসনা, ফাম দিয়া মাঠে নাইমা প্রেম শুরু করছস।
আয়হায় আম্মাও দেখি তাহেরি ভার্সন শুরু করছে। নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে। আম্মায় বোঝেনা কেন। দৌঁড়ে গেলাম আব্বার রুমে। আব্বা পেপার পড়ছে। বললাম..
–স্লামালাইকুম আব্বা। কেমন আছেন?
-কে ভাই আপনি? চিনলাম না।
তওবা তওবা, আস্তাগফিরুল্লাহ! আব্বা এইসব কি বলে। আমি মুহূর্তেই আবুল হয়ে তাকিয়ে রইলাম। আব্বার মাথায় কো সমস্যা হলোনাতো। অনুনয় করে আব্বাকে বললাম….
–কি হয়েছে আব্বা।
-তুই আমাদের ছেলেনা। তোকে রাস্তায় কুঁড়িয়ে পেয়েছি, বের হয়ে যা তুই।
–ছিঃ কি বলছো এসব আব্বা। আমি তোমাদের ছেলে।
-আমাদের ছেলে কখনো এমন কাজ করতে পারেনা।
–কি করলাম?
-তুই আমার পকেট মেরে তোর জেএসসির গার্লফ্রেন্ডকে গিফট করিস? আইস্ক্রিম খাওয়াস? আমি ভাবতে পারছিনা তুই এমন।
–বিশ্বাস করো আব্বা সিয়াম এসব বানিয়ে বানিয়ে বলেছে। আর আমার কোন গার্লফ্রেন্ডই নেই। আমিতো মেয়েদের সাথে কথাই বলিনা।
-রুবেলের মা কই গেলা রশিটা আনোতো, ওকে বেঁধে রাখব আজ।
-ধুর আব্বা সত্যি এসব মিথ্যা আর ওটা ফান পোস্ট।
আমার কথা বলা শেষ হতেই আব্বা হুংকার দিয়ে চেয়ার থেকে উঠলো। আমি ভয় পেয়ে ঘুরান্টি দিয়ে দৌঁড় দিলাম। ভাবছি আজকে থাকব কোথায়! খাব কি? সামান্য একটা ফেসবুক ফান পোস্টের কারণে আজ আমার এই কাহিনী। নাহ! বাঙ্গালি মানুষ ভালা না। একটু পরই মারিয়ার ফোন। মারিয়া আমার ছোট বেলার ক্রাশ। কিন্তু কখনো পাত্তা দেয়নি আমায়। ওর নাম্বার আমি এক বন্ধুর মাধ্যমে জোগাড় করেছিলাম। কিন্তু আজ মারিয়ার কল পেয়ে ফোনের সাথে মনটাও নেচে উঠলো। রিসিভ করতেই মারিয়া বলল….
–হ্যাঁ আমি তোমায় কখনো পাত্তা দিতামনা, কিন্তু মনে মনে ঠিকই তোমায় ভালোবেসেছি রুবেল। আর তুমি আমার সেই কচি ভালোবাসার অপমান করলে? ছিঃ রুবেল ছিঃতুমি একটা ভণ্ড, প্রতারক।
-এসব কি বলছো মারিয়া? তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে। বিশ্বাস করো আমি শুধু তোমায়ই ভালো বাসি। আমার মনে প্রানে, ফুসফুসে, হৃতপিণ্ডে, পাকস্থলীতে, রক্তে, শরীরের প্রত্যেকটি জয়েন্টে গিড়ায় গিড়ায় তোমার নাম মারিয়া। আমি তোমাকে ভালোবাসি।
–চুপ করো তুমি? কি প্রমান আছে তোমার কাছে হু?
-কি প্রমান চাও?
-তুমি, জেএসসিতে তোমার গার্লফ্রেন্ড প্লাস পেয়েছে এটা পোস্ট দাওনি? সবার কমেন্টের রিপ্লে ভালোবাসা রইলো বলে দোয়া চাওনি? ছিঃ রুবেল সিয়াম ভাই আমাকে মিথ্যে বলবে!? কখনো না। আই হেট ইউ রুবেল। তুই একটা চিকা, আস্ত ইঁন্দুরের ছাউ।
-আরে শেষে তুমি? ঐ পোস্ট মজা করে দিয়েছিলাম।
–টুটটুট….
মারিয়া গালি দিয়ে ফোন কেঁটে দিলো। আহারে এত স্বাদের ক্রাশটাও আমাকে ভুল বুঝলো। এ জীবনটা বৃথারে। সব নষ্টের মূল ঐ সিয়াম। ওরে পাইলে লুঙ্গীর ভিতরে জাস্ট ইঁদুর ছেড়ে দিব। সাথেসাথে মোবাইলে পকিং করে শব্দ হলো। মেসেজ আসছে, দেখলাম সিয়াম মেসেজ দিয়েছে ‘বন্ডু তুমি একা হলে আমায় দিও ডাক, তোমার সাথে গল্প করব আমি সারারাত।
হি হি হি কেমন দিলাম, লুপ্পেল বন্ডো?’ মেজাজ তিনগুণ খারাপ হয়ে গেলো। মোবাইল আছাড় দিতে গিয়েও দিলামনা। এই পৃথিবীর মানুষগুলো সব স্বার্থপর হয়ে গেছে। নাহ আর থাকা যাবেনা। সব ছেড়ে মহাকাশে চলে যাবে। ওখানে ভেসে ভেসে স্যার মাহফুজুর রহমানের গান শুনবো। জীবন রঙ্গীন করতে হবে। আই এ্যাম মহাকাশ।