আনমনে হাঁটতে হাঁটতে কখন যেনো জর্জ ওয়াশিংটন ব্রিজটার সামনে চলে এলো পুনম। একটু দূরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সুবিশাল সেতুটার দিকে তাকাতেই মনে পড়ল, আগামীকাল বড়দিন। নানারঙের আলোকসজ্জা এবং তৎসঙ্গে অগুনতি দ্রুতগামী গাড়ির আলোতে ব্রিজটা যেনো উৎসব উপলক্ষে নতুন পোশাকে সেজে উঠেছে বর্ষবরণ করবে বলে।
ছোটবেলা থেকে টিভিতে,গল্পের বইয়ে বিদেশের খ্রিস্টমাস আর নিউইয়ার সেলিব্রেশন ওকে প্রচন্ডভাবে আকৃষ্ট করলেও স্বপ্নটা যে কোনোদিন বাস্তবায়িত হবে তেমন দুরাশা সে কখনো করেনি। দিল্লীর উচ্চ মধ্যবিত্ত পাঞ্জাবী পরিবারে জন্ম হলেও চাড্ডা পরিবার বরাবরই খুব রক্ষণশীল মানসিকতায় বিশ্বাসী। তাছাড়া যৌথ পরিবার হওয়ার সুবাদে পুনমের বাবার মতামতের চাইতে জ্যেঠামশাইয়ের আদেশই শিরোধার্য ছিলো বাড়িতে। যদিও পড়াশোনার শেষে চাকরি করার পারমিশনটুকু অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু বাড়ির মেয়ে বিদেশে গিয়ে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সাথে মাখামাখি করবে, বিদেশি আদব-কায়দা রপ্ত করে যথেচ্ছারিতা করবে, তা কখনোই বরদাস্ত করা সম্ভব নয়।
জ্যেঠামশাইয়ের মতে, মেয়েদেরকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ছাড়তে নেই, তাহলে মেয়েরা স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে। পুনমের কখনো কখনো জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে, ‘স্বেচ্ছাচারিতা কি লিঙ্গভেদে নির্ভর করে!’ নিজের নিয়তিকে একরকম মেনেই নিয়েছিল সে, কিন্তু যেদিন কোম্পানি থেকে একটা প্রজেক্টের কাজে দুবছরের কন্ট্রাক্টে নিউইয়র্কে পাঠানোর প্রস্তাব দেয়, সেদিন আবার পুরনো স্বপ্নগলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। আসলে ছোটবেলা থেকে বাধা নিষেধের বেড়াজালে বড় হয়ে ওঠা বন্দী জীবনে বড়ো হাঁপিয়ে উঠেছিলো পুনম, তাই একটু মুক্তির আস্বাদনে ওর মনটা খাঁচাবন্দী পাখির মতোই ছটফট করতো।
তাছাড়া চাকরি জগতের কম্পিটিশনে এধরনের প্রস্তাব যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তাও ওর ভালোভাবেই জানা ছিলো। তাই এনিয়ে বাড়িতে বিস্তর জলঘোলা হলেও, এই প্রথম চিরকালের স্বল্পভাষী মেয়েটির সিদ্ধান্ত অনড় ছিল। জ্যেঠামশাইয়ের ত্যাজ্য কন্যা করার হুমকিও সেসময় পুনমের স্বপ্নের উড়ানকে থামাতে পারেনি। কিন্তু এতকিছু করেও, এতো ঝড়ঝাপ্টা পেরিয়ে এসেও এবার বোধহয় আর শেষরক্ষা হবেনা। এ যেনো অনেকটা তীরে এসে তরী ডোবার মতো। কথাটা মনে পড়তে আপনাআপনি চোখদুটো জলে ভরে এলো পুনমের। মেয়ে বলেই কি জীবনের প্রত্যেকটা পদে পদে ওকে পরীক্ষা দিতে হয়! কেনো ভাগ্যদেবতা প্রায়সময়ই ওর উপর বিরূপ থাকেন! “দ্য ব্রিজ ইজ ওল্ড বাট বিউটিফুল।”
হঠাৎ পাশে একটা পুরুষকন্ঠে চমকে উঠে ঘুরে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলো পুনম। ওদের কোম্পানির এবং বর্তমানে প্রজেক্ট মেম্বার পিটার মার্টিন ওরদিকে হাসিমুখে তাকিয়ে আছে। পিটারের বাবা আমেরিকান হলেও মা ইন্ডিয়ান মাড়োয়ারি পরিবারের মেয়ে। সে নিজেও নাকি দুবার ইন্ডিয়া ঘুরে এসেছে। ইন্ডিয়ান কালচার, বিশেষত ইন্ডিয়ান স্ট্রীট ফুডগুলোর কথা ভাবলেই বুঝি এখনো জিভে জল আসে ওর। কিছুটা সেই কারণেই পুনমের সঙ্গে যেচে আলাপ করেছিলো পিটার। একসাথে কাজের সুবাদে কিছুটা ফ্রেন্ডলি হলেও সেই অর্থে ফ্রেন্ড হয়ে উঠতে পারেনি এখনো দুজনে। তাই বেশ আশ্চর্য হয়েই জিজ্ঞেস করল পুনম,
“তুমি এখানে কি করছো পিটার ?”
“ভাবলাম তোমাকে একটু কম্পানি দিই। আফটার অল, তুমি আমাদের দেশের অতিথি।” মুচকি হেসে বলল পিটার।
“থ্যাঙ্কস, কিন্তু আমার জন্য তোমাকে কষ্ট করতে হবেনা। তাছাড়া আগামীকাল খ্রিস্টমাস, তোমার নিশ্চয় অনেক প্ল্যান প্রোগ্রাম আছে।”
জোর করে মুখে অল্প হাসি এনে কথাটা বলল পুনম। আসলে এইমুহুর্তে কারো সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না ওর। কিছুসময় একান্ত নিরিবিলিতে থাকতে চায়। অনেকটা সেই কারণেই এখন কোম্পানির এলোটেড এপার্টমেন্টে ফিরে যেতে চাইছে না সে। আজকে সকালে বেরোনোর সময় দেখে এসেছে ওর বাকি দুজন রুমমেটরা সেলিব্রেশনের তোড়জোড় করছে। এমনিতেই ছোটবেলা থেকে তিনতলা বাড়ির খোলামেলা পরিবেশে বড় হয়ে এখন এই সুবিশাল টাওয়ারের বারোতলার ওয়ান.বি. এইচ.কে স্টুডিও এপার্টমেন্টে কেমন যেনো দমবন্ধ লাগে ওর, তার উপর এইমুহুর্তে মনের যা অবস্থা, তাতে আর যাইহোক অন্তত হাসিফুর্তি করার মতো মানসিকতা অবশিষ্ট নেই ওর মধ্যে।
“আমি নাহয় কষ্ট করবোনা, কিন্তু নিজের এতো কষ্টে অর্জন করা কাজটার দায়িত্ব এভাবে মাঝপথে ছেড়ে দেবে ?” শান্তকন্ঠে জিজ্ঞেস করল পিটার।
“তুমি কিভাবে জানলে কথাটা ?” চমকে উঠে জিজ্ঞেস করল পুনম।
“ক্যান্টিনে বসে যখন তুমি লিজাকে বলছিলে, তখন শুনেছি। হয়তো সেইসময় এতো টেন্সড ছিলে যে খেয়ালই করোনি পাশের টেবিলে আমি বসেছিলাম।” আবারও অল্পহেসে বলল পিটার।
“তাহলে তুমি কি বলতে চাইছো যে আমার টেনশন অনর্থক ?” গম্ভীরস্বরে জিজ্ঞেস করল পুনম।
“না, আমি শুধু এটাই বলতে চাইছি, টেনশন করে প্রবলেম সল্ভ হয়না।
ডিসিশন নেওয়ার আগে একবার ঠান্ডা মাথায় ভাবো, কোনো না কোনো সলিউশন ঠিক বেরিয়ে আসবে। রাগের মাথায় এরকম ড্রাস্টিক স্টেপ নেওয়া উচিত নয়। বাই দ্য ওয়ে, আমরা কি একটু ওই সামনের বেঞ্চটাতে বসতে পারি ! ঠান্ডায় পা দুটো সিঁটিয়ে আসছে তো।” পিটারের এই আকুতিতে দুশ্চিন্তার মাথায়ও হেসে ফেলল পুনম। বাস্তবিকই, ঠান্ডাটা যেনো চামড়া ভেদ করে হাড়ে ঢুকতে চাইছে। “রিজাইন করা ছাড়া আমার প্রবলেমের অন্য কোনো সলিউশন নেই পিটার।” কিছুসময় অন্যমনস্কভাবে বসে আস্তে আস্তে বলল পুনম। “মে বি ইউ আর রাইট। কিন্তু এখানে রিজাইন করে দিলেই যে ভবিষ্যতে এইধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবেনা, তার কি কোনো গ্যারেন্টি আছে ?” দুহাত বুকের কাছে জড়ো করে গুটিসুটি মেরে বসে বলল পিটার।
“এই প্রজেক্টটা কমপ্লিট হতে আরো পাঁচমাস বাকী আছে। এই অবস্থায় আমার দেশে ফেরার পারমিশনও কোম্পানি দেবেনা। কারণ, কন্ট্রাক্ট অনুযায়ী মাঝপথে কাজ ছাড়তে চাইলে রিজাইন করা ছাড়া গত্যন্তর নেই।কিন্তু আমার পক্ষে এখানে আর একটা দিনও কাজ করা সম্ভবপর নয়। দিনের পর দিন অহেতুক লাঞ্ছনা আর গঞ্জনার চাইতে নিজে থেকে ইস্তফা দেওয়া ঢের সম্মানজনক আমার কাছে।” প্রায় ভেঙে পড়া কন্ঠে বলল পুনম। “পালিয়ে গেলেই বুঝি সম্মান বেঁচে যায় ?” পিটারের কথায় যে অল্প শ্লেষমেশানো ছিল তা পুনমের আঘাতে যেনো নুনের ছিটে দিলো। তাই চোয়াল শক্ত করে উত্তর দিলো, “আমি পালিয়ে যাওয়ার মতো ভীরু নই পিটার। আজকে নিজেকে এই জায়গায় পৌঁছাতে আমাকে কম স্ট্রাগল করতে হয়নি। কিন্তু কিছু টাকা রোজগারের বিনিময়ে নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিতে পারবোনা।”
“আত্মসম্মান যদি এতো প্রিয় হয়, তবে ইস্তফা না দিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও।” পিটারও ততোধিক শক্ত মুখে কথাটা বলে উঠল। “কথাটা বলা যত সহজ, করা যে ততটাই কঠিন, এটা আশা করি তুমিও ভালোমতো জানো পিটার। তাইতো সব দেখেশুনেও চুপ করে বসে থাকো আর এখন বিনামূল্যে কিছু উপদেশ দিয়ে নিজেকে মহান প্রমাণ করার চেষ্টা করছো।” তীক্ষ্ণ একটা ব্যঙ্গের হাসি হেসে বলল পুনম।প্রত্যুত্তরে পিটারকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে নিজেই আবার বলতে শুরু করল, “এইদেশে আমার চেনা পরিচিত বলতে গেলে কেউ নেই।
আমি যদি প্রজেক্ট ম্যানেজারের চরিত্রে আঙুল তুলে বলি যে, শুধুমাত্র লোকটার নোংরা প্রস্তাবে রাজি না হওয়াতে সে আমার কোনো কাজ এপ্রুভ করছে না এবং হাজার ভালো প্রেজেন্টেশন দিলেও ইচ্ছে করে সবার সামনে বারবার আমাকে অপদস্থ করে, তখন একটা লোকও আমাকে সাপোর্ট করবে না, কারণ সে ‘হেড অব প্রজেক্ট’ আর আমি সাধারণ একজন এমপ্লয়ি। তাছাড়া রুখে দাঁড়ানোর কথা বলছো, শুনেছি, এইধরনের কাজ লোকটা আরো অনেকের সাথেই করেছে, কিন্তু লোকটার মিথ্যে কেসে ফাঁসানোর হুমকিতে ভয় পেয়ে প্রতিবাদ করার সাহস করেনি কেউ। কারণ এখানে আমার মতো আরো অনেক দেশের মেয়েরা কাজ করে। আর বিদেশ বিভূঁইয়ে আইনসংক্রান্ত মামলা যে কতটা কড়াকড়ি তা সবার জানা আছে। যদিও আমি ফ্যামিলির এগেন্স্টে গত দেড়বছর ধরে এখানে আছি, তবু এখনো এতোটাও লিবারেল হতে পারিনি যে কিছু টাকার বিনিময়ে নিজেকে বিকিয়ে দেবো।”
“কারো ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করে কিছু করানো ক্রাইমের সমতুল্য। সেখানে তোমার দেশ, আমার দেশ বলে কিছু হয়না। কিন্তু এতোদিন অন্য কোনো মেয়ে এই নিয়ে আওয়াজ তোলার সাহস করেনি বলে যে তুমিও করতে পারবে না, এমন মাথার দিব্যি কে দিয়েছে! এই পজিশনে তুমি তোমার অধ্যবসায় আর যোগ্যতায় পৌঁছেছো, কাউকে তোয়াজ করে নয়। অন্যায় কাজ ওই লোকটা করেছে, তুমি তো নও।
তবে তুমি কেন মিথ্যে অপবাদ মাথায় নিয়ে পিছু হটার সিদ্ধান্ত নেবে ? হোকনা সে প্রজেক্ট ম্যানেজার, হোকনা সে এখানকার বাসিন্দা, অন্যায় মানেই অন্যায়। সেখানে দেশ, জাতি, নাগরিক এসবের কোনো ভেদাভেদ থাকেনা। একবার সাহস করে গর্জে উঠে দেখোই না, হয়তো তোমাকে দেখে আরো পাঁচটা মেয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পাবে। আর একান্তই যদি তেমন কিছু না ঘটে, তখন নাহয় রেজিগনেশন লেটারটা ওই লোফারের মুখে ছুঁড়ে দিও। কারণ এই পিক টাইমে এমনিতেও কেউ তোমার রেজিগনেশন লেটারটা হাসিমুখে দু-চারটে অম্লমধুর বাক্য না শুনিয়ে রিসিভ করবে না।”
একনিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে একটু থামল পিটার। তারপর আস্তে আস্তে আবার বলল, “সব জেনেবুঝেও আমার চুপ করে থাকার কারণ হচ্ছে, তোমার সাপোর্টে কিছু বলতে গেলে তোমার বিড়ম্বনা বাড়ত বৈ কমতো না। ‘দুষ্টের ছলনার অভাব হয়না’ এই প্রবাদবাক্যটা শুনেছো আশাকরি। কথাটা কেনো বললাম, একটু ভাবলেই উত্তরটা পেয়ে যাবে। এনিওয়ে, বারোটা বাজতে আর মাত্র কিছুক্ষণ বাকী, তাই এবার আমাদের ওঠা প্রয়োজন।” খ্রিস্টমাস আর নিউইয়ারের ছুটির সঙ্গে গ্র্যানির মিথ্যে শরীর খারাপের অজুহাতে আরো দুদিনের একস্ট্রা ছুটি কাটিয়ে ফুরফুরে মেজাজে পিটার কাজে জয়েন করে মনে মনে ভাবল, ‘ভাগ্যিস বাড়িতে কেউ জানতে পারেনি ওর এই কুকর্মের কথা, নইলে খবরটা শুনে হয়তো সত্যি সত্যি শরীর খারাপ হয়ে যেতো বুড়ির।’
কিন্তু অফিসে পদার্পণ করে সেদিন অল্প হলেও এতোদিনের চেনা পরিবেশটা কেমন যেনো একটু অন্যরকম লাগল পিটারের কাছে। কিন্তু পরিবর্তনটা কি, সেটা কোনোমতেই আঁচ করতে না পেরে শেষমেশ ওর বরাবরের নিউজ সাপ্লায়ার, অফিসের রিসেপশনিস্ট বছর পঁয়তাল্লিশের মিসেস মারিয়া রবিনসনকে পাকড়াও করল। পিটার মনে করে, এই কোম্পানির প্রত্যেকটা ধূলিকণারও খবর মিসেস রবিনসনের কাছে থাকে। তাই কারণ জিজ্ঞেস করতেই মারিয়া পাক্কা হলিউডের থ্রিলার মুভির মতো যা ব্যাখ্যা করল, তার সারমর্ম হচ্ছে যে, পুনম চাড্ডা বলে ইন্ডিয়ান মেয়েটা নাকি ওই শয়তান প্রজেক্ট ম্যানেজার জ্যাকব ব্যানেটের বিরুদ্ধে কমপ্ল্যান করেছে ম্যানেজিং কমিটির কাছে ওকে অহেতুক উত্ত্যক্ত করার জন্য, তাও আবার প্রমাণসাপেক্ষে এবং আরো দুটো মেয়েও নাকি পুনমকে সাপোর্ট করেছে এই ব্যাপারে।
তাই ম্যানেজিং কমিটি একটা আর্জেন্ট মিটিং ডেকে জ্যাকবকে কড়াভাষায় ভর্ৎসনা করেছে এবং যেহেতু এই প্রজেক্টটা এখন দোড়গোড়ায়, তাই জ্যাকবকে বহিস্কার না করে ফাইনাল ওয়ার্নিং দিয়ে বলেছে, ফারদার এরকম কোনো খবর ওদের কানে পৌঁছলে জ্যাকবের এগেন্স্টে বড়োসড়ো স্টেপ নেওয়া হবে। জ্যাকবের রুড বিহেভিয়ারের জন্য অফিসের শতকরা ষাট শতাংশ লোকই যে লোকটাকে অপছন্দ করে তা পিটার জানে। কিন্তু কাজকর্মে লোকটা এতো তৎপর আর অভিজ্ঞ যে ওর খিটখিটে স্বভাব আর রুক্ষ্ম ব্যবহার অনেকেই অনেকসময় সহ্য করে নেয়। কিন্তু এখন মারিয়ার এতোদিন ধরে জমানো বিরক্তির বিষোদগারের ধরণ দেখে সহানুভূতি দেওয়ার পরিবর্তে হেসেই ফেলল বেচারা পিটার। একটুপরে এককাপ ধোঁয়াওঠা কফি নিয়ে নিজের কিউবিকলে ঢুকতেই টেবিলের উপর রাখা একটা খাম আর তৎসঙ্গে গিফ্টপ্যাক চোখে পড়ল ওর।
কৌতুহলী হয়ে চেয়ারে বসেই খাম খুলে চিঠিটা পড়তে শুরু করল, ছোটবেলা থেকে স্লেজগাড়িতে চেপে লাল সাদা পোশাক আর টুপি লাগানো সাদা গোঁফওয়ালা সান্টাক্লজকে চাক্ষুষ দেখার ইচ্ছে ছিল। ভাবতে পারিনি এবার সেটা সত্যি হয়ে যাবে। নাহ্… সে লাল সাদা ড্রেস কিংবা টুপি কোনোটাই পরেনি অথবা স্লেজগাড়িতে চেপেও আসেনি, আর তার ইয়া লম্বা গোঁফও ছিলনা, তবু কেনো জানি মনে হলো চেহারা না হলেও চরিত্রটা যেনো বড্ড সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। ধন্যবাদ জানিয়ে ছোট করতে চাইনা বলেই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ একটা ছোট্ট উপহার দিলাম। জানিনা সান্টা কি শুধু গিফ্ট দেয় নাকি কেউ দিলে সেটা গ্রহণও করে!!!”
চিঠিটা টেবিলে রেখে পাশে রাখা গিফ্টবক্সটা খুলতেই একটা ছোট্ট সান্টাক্লজ পিটারের দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে দুহাত মেলে যেনো সাদর সম্ভাষণ জানালো। প্রত্যুত্তরে মুচকি হেসে ভদ্রলোককে টেবিলে রেখে কাপটা হাতে নিয়ে কফিতে একটা লম্বা চুমুক দিয়ে তৃপ্তিতে দুচোখ বুজলো পিটার।