প্রতি বছরের মতো এই বছরেও বস্তির ছেলে গুলো আনন্দের সাথে বসে আছে কখন সান্তা আসবে তাদের জন্য উপহার নিয়ে।সারা বছর ধরে তারা এই দিনটার জন্য বসে থাকে।সারা বছর এখান ওখান কাজ করে কখনও রাস্তার ধারে পরে থেকে লাথি ঝেঁটা খেয়ে দিন চলে তাদের, কেউ ফিরেও তাকায়না তাদের দিকে।ভালো খাওয়া পরা কিছুই নেই ওদের।
তবু বছরে এই দিনটাতে সান্তা আসে ঝুলিতে খুশি ভরে নিয়ে তাদের খুশি উজাড় করে দিতে। সন্ধ্যে হলে যথারীতি ঘন্টা বাজিয়ে আসে তাদের সান্তা।সাথে প্রচুর উপহার আর দামি দামি খাবার,কেক,বিস্কুট,চকলেট সব।দৌড়ে আসে বাচ্চা গুলো সান্তার কাছে।সান্তা সবাইকে এক এক করে উপহার দেয় খাবার দেয়।তাদের মধ্যে প্রতি বছরের মতো খুশির বন্যা বয়ে যায় আবার।শুধু বাচ্চাদের নয় বস্তির সবাইকেই উপহার খাবার তাদের প্রয়োজনের জিনিস দেয় সান্তা।এই একটা দিনেই তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক জিনিস দিয়ে যায় সান্তা।সবাইকে সব দেওয়া শেষ হলে সান্তা দেখে ঝন্টু একধারে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
– “কি হলো ?এখানে দাঁড়িয়ে কেন একা একা ?আমার থেকে উপহার নেবে না?
– তুমি কে?
– আমি সান্তা গো সান্তাক্লজ।
– সান্তা বলে কিছু হয় নাকি?সেও তো মানুষ।আমরা তোমায় দেখতে চাই। কে গো যে আজকের দিনে এসে আমাদের খুশিতে ভরিয়ে দাও?কে তুমি?বলে একরকম জোর করেতে থাকে ঝন্টু।বলো না গো কে তুমি তোমার দাড়ি আর টুপি খোলো না গো..
-না না না সান্তার তো এই সব খোলা বারণ গো তাহলে তো সান্তা আর সান্তা থাকে না।তাহলে তো আমি আর তোমাদের কিছুই দিতে পারব না।আজ চলি আবার আসবো পরের বছর।টা টা।
– “আবার আসবে তো সান্তা?আমি তোমায় টুপি দাড়ি খুলতে বললাম বলে রাগ করবে না তো?
– না না না বাবু যত দিন বেঁচে থাকবো আসবো তোমাদের কাছে।টা টা।
– টা টা।
যাবার সময় পিছন ঘুরে বার বার দেখতে থাকলো বাচ্চা গুলো আর বস্তির লোকগুলোর আনন্দ।ওদের আনন্দ দেখে নিজের খুশি ধরে রাখতে পারছে না সান্তা। চোখের কোনে জল সান্তার।হ্যাঁ, সান্তা আজকে নিজের উপার্জিত অর্থের বেশিরভাগ টাই এই সমস্ত মানুষদের খুশি দিয়ে খরচ করে।এখন তাদের খুশিতেই সান্তার খুশি।নিজের অতীতটা যে আজও দুঃস্বপ্ন হয়ে রোজ রাতে হানা দেয় তাকে।তাই এদের সাথে বছরে একটা দিন হলেও কাটিয়ে নিজের দুঃস্বপ্ন কাটাতে চায় সে।কষ্ট করে বাঁচা কি জিনিস সে জানে।আর তার মধ্যেই আলো ছুঁয়ে যাওয়ার অনুভূতিটাও জানে।তাই নিজে যখন আলোর পথে গেছে সে ফেলে আসা অন্ধকারের জায়গা টা ভুলে না গিয়ে চায় সেই অন্ধকারে থাকা মানুষ গুলোর হাত ধরতে,তা হোক না বছরে একটা দিন।
একদিন সান্তা ওরফে গিরি এদের মতোই কোনো এক বস্তির ছেলে ছিলো।বাবা মা কে ছিল কিছুই জানতো না।শুনেছিল বাবা নাকি কোনো দুর্ঘটনায় মারা গেছিলো আর মা তাকে জন্ম দিয়েই মারা যায়।দিনের পর দিন রাস্তার ধারে পরে থাকতো।দয়া হলে কেউ খাবার দিতো নাহলে মুখ ফিরিয়ে চলে যেতো।এই ভাবে চলতে চলতে কোনো নিঃসন্তান বাবা মা তাকে নিজেদের কোলে তুলে নিয়েছিল।আজকের দিনেই তার নতুন জন্ম হয়েছিল, সেদিন তারাই ছিল তার সান্তা।তারপর তাদের কাছেই মানুষ হওয়া বড় হওয়া,নিজের পরিচয় বানানো।আজ সে নিজের জীবনে সৎ ভাবে প্রতিষ্ঠিত।
চাইলে পারতো সে নিজের দুঃস্বপ্নময় অতীতটাকে ফেলে এগিয়ে যেতে।হ্যাঁ, এগিয়েতো গেছেই কিন্তু ফিরে আসে নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিয়ে এই মানুষ গুলোর কাছে ,নিজের মতো করে সে তাদের কাছে ফিরে আসে বার বার।পারলে সে ফিরে এসে থাকতে পারে তাদের সাথে কিন্তু তার জীবনের সান্তা দু-জনেও তো তার জন্য অপেক্ষায় থাকে রোজ। এই সব ভাবতে ভাবতে কাঁধে ঝোলা ওঠালো সান্তা।আবার অন্য অন্ধকারে আলোর ছোঁয়া আনতে চললো সে। টা টা টা টা সান্তা টা টা। টা টা আবার আসব পরের বছর,আবার অনেক অনেক আনন্দ খুশি নিয়ে,ফিরে আসবে তোমাদের সান্তাক্লজ।
সমাপ্ত