-এই ছেলে তুমি ছাদে কি কর?
-কিছু করি না তো!
-তোমাকে কতবার বলেছি তুমি ছাদে আসবে না। আবার এসেছ কেন?
-আঙ্কেল আমার আসলে আসার কোন ইচ্ছাই ছিল না।
-তবে কেন এসেছো?
-সত্য কথা বলব?
-অবশ্যই সত্য বলবে। তোমার সাথে কী আমার ফাইজলামি সম্পর্ক?
-ছি ছি! ফাইজলামী সম্পর্ক হতে যাবে কেন। আপনি তো আমার দুলাভাই না। আপনি হলেন আমার আঙ্কেল।
-ভ্যাজভ্যাজ করো না। বল কেন এসেছ ছাদে আবার?
-চুমু খাওয়ার জন্য।
-কী বললে? কাকে?
-সত্য কথা বলব?
-অবশ্যই বলবি!
-আঙ্কেল আপনে রেগে যাচ্ছেন কেন? আমাকে তুই তুকারি করছেন!
-দেখ তোর করি কী আমি! আগে বল কাকে চুমু খাওয়ার জন্য এসেছিস।
-আপনার ছোট মেয়ে মধু কে!
– কি বললি তুই?
-সত্য কথা বললাম আঙ্কেল।
কিন্তু এতে আমার কোনো দোষ নাই। আমি নিরুপায়। আপনার মেয়েই আমাকে বলেছে প্রতিদিন বিকেলে যদি ছাদে এসে তাকে চুমু না খাই তাহলে সে গলায় দড়ি দেবে। এটা কি ঠিক হবে আঙ্কেল আপনেই বলেন? সামান্য একটা চুমুর জন্য এমন পরীর মত একটা মেয়ে মরে যাবে, তাও আমি থাকতে এটা কী সম্ভব বলেন?
-তোর ঘাড় আমি ভাংব রে হারামজাদা! তুই আমার সহজসরল মেয়ের সাথে..!
-আঙ্কেল আপনি অযথা বেশি উত্তেজিত হচ্ছেন। আমার দোষটা কোথায় বলুন।
উল্টা আমি তাকে বললাম, প্রতিদিন ছাদে তোমাকে চুমু খেতে এসে যদি তোমার বাবার হাতে ধরা খাই তখন? আপনার মেয়ে কি বলে জানেন? বলে বাবাকে ট্যাকেল দেওয়ার দায়িত্ব আমার আর তোমার দায়িত্ব নিয়ম করে প্রতিদিন আমাকে চুমু খাওয়া। অবশ্য আমি আস্তেই চুমু খাই আঙ্কেল! আমি অসভ্য না। আপনার মেয়েই রাক্ষস!
-তুই আজকেই আমার বাসা ছেড়ে দিবি। তোর মত ছেলেকে আর একমুহূর্ত আমি রাখব না! তোকে..তোকে আমি গুলি করে মারব!
-গুলি করে মারতে চাইলে মারবেন। বিখ্যাত হয়ে থাকব। পরের দিন পত্রিকায় প্রথম পাতায় আমার ছবি ছাপবে। বড়লোক বাপের মেয়েকে চুমু খেতে গিয়ে প্রাণ হারাল মেধাবি ছাত্র মুুকুল! অন্য পত্রিকা ছাপবে চুমুই কাল হলো মুকুলের! খারাপ না!
-তোকে আমি পুলিশে দিব রে শয়তান!
-পুলিশে দিলে ক্ষতি নাই। তবে আঙ্কেল অনুরোধ র্যাবে দিয়েন না। জানেন তো র্যাব হলো এ যুগের আজ্রাইল। ধরা মাত্র দ্রুম! কোনো তেড়িবেড়ি নাই। ডাইরেক্ট ক্রসফায়ার! ক্রসফায়ারে আমার ভয় নাই। আসলে ভয় হলো তা নিয়ে পরেরদিন পত্রিকায় যা ছাপা হবে, র্যাবের সঙ্গে ক্রসফায়ারে দূর্ধর্ষ সন্ত্রাসী চুম্মা মুকুল নিহত! নামের আগে চুম্মা সন্ত্রাসী ভাবেন একবার! আঙ্কেল প্রচন্ড রেগে গিয়ে মুকুলের চুলের মুঠি ধরলেন-
-বল আর কী করেছিস আমার মেয়ের সাথে?
-সত্য কথা বলব?
-বল রে হারামখোর!
-আমি কিছু করি নি। আপনার মেয়েই আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। এখন আমি না ধরলে খারাপ দেখায় না? সে একটা মেয়ে হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলে আমি কি হাত গুটিয়ে বসে থাকব? আপনিই বিবেচনা করেন?
-তোকে আমি ছাড়ব না। তুই আমার বংশের মানসম্মান নিয়ে টান দিয়েছিস!
-আপনার মেয়েই আমার মানসম্মান নিয়ে টান দিয়েছে।
-আমার মেয়ে এসব বুঝে..? সব নষ্টের গোড়া তুই রে হারামজাদা!
-আঙ্কেল শুধু শুধু আমাকে গাল দিবেন না।
আপনার মেয়ে এতটুকু হলেও পেকে গেছে। জানেন ও কী করেছে আরো..? আমাকে জড়িয়ে ধরে ছবি তুলেছে। বলেছে বুড়ো হলে এই ছবি দেখে আমরা নাকি খুব মজা পাব। আপনিই বলেন এভাবে ছবি তোলা কি ঠিক..? আঙ্কেলের মুখ থেকে যেন রক্ত চলে গেল সব। দেখাচ্ছে চরম ফ্যাকাশে। অতিরিক্ত রাগে মানুষের মুখ বোধহয় রক্তশূণ্য হয়ে যায়। তিনি কোনরকমে বললেন- ছবি গুলো কোথায়..?
-আমার কাছে কয়েকটা আছে। বাকী গুলো আপনার মেয়ের কাছে। শুনেছি ওর বান্ধবীর কাছেও কয়েকটি দিয়েছে কেমন হয়েছে তা দেখার জন্য। আর ছোট্ট একটা ক্লিপ আছে। সেটা অবশ্য আমার কাছে নেই!
-কিসের ক্লিপ রে হারামখোর?
-সত্য কথা বলব? আঙ্কেল মুকুলের চুলের মুঠি ছেড়ে দিয়ে উদাস হয়ে গেলেন।
-আঙ্কেল বেশি ঘাবড়ানোর কিছু নেই। আমি অতটা খারাপ না।
তেমন কিছুই না। কয়েকটা কিসিং সিন আরকী। এর বেশি কিছু না। আঙ্কেলের মনের মধ্যে কী ঘটে গেল কে জানে। তার গলা একেবারে খাদে নেমে গেল। তিনি মস্তবড় একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন। আস্তে আস্তে বললেন-
-মুকুল দেখ, আমার মানসম্মান ধুলায় মিশিয়ে দিও না বাবা! বড় করুণ শোনালো তার গলা।
-আঙ্কেল আপনে নিশ্চিন্ত থাকেন। যতক্ষণ আমার হাতে মধু আপনার চিন্তার কিছুই নাই।
-তোমার বাড়িতে আর কে কে আছে?
-কেন আঙ্কেল?
-এমনি!
– আমার তো আর তেমন কেউ নাই। আমি ত্রিভূবনে একা। গরীব মেধাবী ছাত্র!
-তৈরি হয়ে নাও। আজ সন্ধ্যায় তোমার বিয়ে!
-আমার বিয়ে?
-হ্যা তোমার বিয়ে।
-বলেন কী? কার সাথে?
-কার সাথে সেটা তুমি ভালো করেই জানো!
-আমি কিছু জানি না আঙ্কেল আপনি বলেন।
-মধুর সাথে আজ তোমার বিয়ে।
-বলেন কী? অসম্ভব।
-অসম্ভব কেন?
-আমি মধুকে বিয়ে করতে পারব না।
-আমার বংশের ইজ্জত নিয়ে খেলবে আর আমি তোমাকে এমনি এমনি ছেড়ে দিব ভেবেছ! আজ সন্ধ্যায়ই তোমার বিয়ে। তুমি রেডি হও।
-আঙ্কেল মধু আমাকে বিয়ে করবে না।
-মধু করবে মধুর মা-ও করবে।
-আঙ্কেল এসব কি বলেন? মধুর মা করতে যাবে কেন?
-দরকার হলে সবাই করবে। তুমি তৈরি হও। আঙ্কেল রাগে কাঁপছেন।
-আঙ্কেল আমি মধুকে বিয়ে করে রাখব কোথায়? আমি টিউশনি করে কোনরকমে চলি। সামান্য বাসা ভাড়াই দিতে পারি না। প্রতিমাসে আপনার ধমক খাই। আমি বিয়ে করব কি করে?
-তোমার বাসা ভাড়ার টেনশন নাই। তুমি থাকবে আমার বাড়িতে। তিনতলার ডান দিকে ফ্ল্যাটটা তোমাকে দিব।
-আঙ্কেল ওখানে তো ভাড়াটিয়া আছে। ওদের কি তুলে দেয়া ঠিক হবে।
-বেশি বুঝতে যেও না। যা বোঝার তাই বুঝ!
-কিন্তু আঙ্কেল এমন একটা পরীর মত মেয়েকে আমার মত বেকার ছেলের হাতে তুলে দেবেন?
-বেকার কোন সমস্যা না। সব ছেলেই একসময় বেকার থাকে। বিয়ের পর আমি তোমার চাকরীর ব্যবস্থা করব। তুমি রেডি হও।
-আমি রেডিই আছি। কিন্তু মধুর সাথে একবার কথা বলবেন না?
-কথা বলার কিছু নাই।
-মধু যদি আমাকে বিয়ে করতে না চায়?
-ওর চাওয়া না চাওয়াতে কিছুই যায় আসে না।
-আঙ্কেল আরেকটু ভাবেন। গুণিজন বলেন- ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না।
-তোমার উপদেশ দিতে হবে না। আমি ভেবেছি। যথেষ্ট ভেবেছি। সন্ধ্যায় কাজী সাহেব আসবে। এখন নিচে যাও। রেডি হও।
-আঙ্কেল শার্ট প্যান্ট পরে আসলে চলবে। আমার পাজামা-পাঞ্জাবী নেই। আঙ্কেল পকেট থেকে কড়কড়ে ছয়টা এক হাজার টাকার নোট বের করে দিলেন। মুকুল আঙ্কেলের পা ছুঁয়ে সালাম করে নিচে নামল।
মুকুল ও মধুর বিয়ে পড়ানো হলো রাত আটটার দিকে। বিয়ের পর অনেক্ষণ ধরে চলল কান্না পর্ব। মধু কাঁদছে। কাঁদছে মধুর মা বোন সবাই। মধু একটু পর পর একজনকে গিয়ে জড়িয়ে ধরছে আর কান্নায় ভেঙে পড়ছে। মনে হচ্ছে বিয়েটা যেন একটা উপলক্ষ মাত্র। কান্নাকাটিই সব। যে মধুকে কোনোদিন চোখের পানি ফেলতে দেখেনি মুকুল, সেই মধু মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে ইনিয়ে বিনিয়ে কাঁদছে। যদিও সবাই জানে মেয়ে বাড়িতেই থাকবে। বেকার ছেলের সাথে বিয়ে। জামাইর ঘর জামাই না থেকে উপায় নেই। তাহলে এত কান্নার কী আছে। কান্না পর্ব শেষ করে মুকুল ও মধুকে এক ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া হলো। ঘরে ঢুকেই মধু মাথার ঘোমটা ফেলে দিল। মুকুলকে একটানে বিছানার পাশে ফেলে দিয়ে তার উপর ঝপাৎ করে পড়ে গেল। তার বুকের ওপর চেপে বসে বলল-
-বাবাকে কী বলেছ তুমি? বাবা হঠাৎ জোর করে ধরে বিয়ে দিয়ে দিলো তোমার সাথে?
-কই কিছুই তো বলি নি!
-কিছুই বল নি মানে কী?
-কিছুই বলি নি মানে কিছুই বলি নি!
-তাহলে বাবা এমনি এমনি তোমার আমার বিয়ের আয়োজন করল? একদিনের মধ্যে?
-উনার বোধহয় মেয়ের বিয়ে খেতে ইচ্ছে করেছে, তাই বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।
-কী আবোল তাবোল বলছ? সত্য কথাটা বলো না কিভাবে রাজি করালে বাবাকে। আমার তো এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না! আমার মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি। স্বপ্নে বিয়ে হয়েছে তোমার সাথে। স্বপ্ন ভাংলেই সব উড়াল মারবে।
-স্বপ্ন টপ্ন কিছু না। যা দেখছ সব সত্যি। সত্যি সত্যি তুমি আমার বউ হয়ে গেলে। এখানে কোনো স্বপ্নের কারবার নাই।
-বল না বাবাকে রাজি করালে কিভাবে?
-আমি কোথায় রাজি করালাম? উনিই তো আমাকে রাজি করালেন!
-মানে কী?
-মানে সোজা! আমি ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছি। উনি এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন-
-মুকুল বাবা কর কী?
-আকাশ দেখি!
-শুধু আকাশ দেখলেই চলবে?
-আপনার বাসার ছাদ থেকে তো আর সাগর দেখা যায় না! দেখা গেলে শুধু আকাশ না সাগরও দেখতাম।
-সাগর আকাশ ছাড়াও জগতে দেখার আরো অনেক কিছু আছে!
-জ্বি আঙ্কেল! পাহাড় পর্বত, নদী নালা খালবিল সবই তো দেখার জিনিস। তাছাড়া রবীন্দ্রনাথ বলেছেন না, দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া একটি ধানের শীষের ওপর একটি শিশির বিন্দু!
-হুম! তা তো ঠিকই! কিন্তু আমাদের মধুকে তোমার কেমন লাগে?
-সত্য কথা বলব?
-বল বল। নির্ভয়ে বল।
-ও যদিও তেমন একটা সুন্দর না, তবে আমার খুব ভালো লাগে।
-সত্যি বলছ?
-জ্বি আঙ্কেল তিন সত্যি বলছি।
-যাও তৈরি হয়ে নাও।
-মানে?
-মানে তোমাদের বিয়ে। আজ সন্ধ্যায়। এই বাড়িতেই।
-আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না?
-কিছু বুঝতে হবে না। এই নাও ছয় হাজার টাকা। পাজামা পাঞ্জাবী কিনে আনো। আর শোনো পাঞ্জাবীর ঝুল যেন ঠিক মত হয়। খাটো হলে খবর আছে। যাও এখন। রেডি হও।
-আঙ্কেল আমার মত একটা বেকার ছেলের সাথে আপনি মধুর মত ফুটফুটে একটা মেয়ের বিয়ে দিবেন? আমি থাকব কোথায় বউ নিয়ে?
-বেকার ছেলেই আমার পছন্দ। মেয়ে বিয়ে দেওয়ার জন্য বেকার ছেলেদের উপর বেশি নির্ভর করা যায় বুঝলে! যাদের কিছু করার নাই, তারা স্ত্রী নিয়ে খুশি থাকে! আর থাকার চিন্তা তোমার করতে হবে না। তিন তলার ডান পাশের ফ্ল্যাটটা আমি তোমাকে লিখে দিব।
-সব ভেবে বলছেন তো?
-মরদ মানুষ দশবার ভাবে না। তুমি রেডি হও! ভাগো আমার সামনে থেকে! এই ছিল তোমার বাবা মানে আমার আঙ্কেল না মানে আমার শ্বশুর আব্বার সাথে কথোপকথন! এখন তৈরি হয়ে নাও!
-তৈরি হয়ে নাও মানে?
-তৈরি হয়ে নাও মানে তৈরি হয়ে নাও। আমাদের বাসায় ফিরতে হবে না?
-বাসায় ফিরব মানে? কোথায় যাব আমরা?
-আমার বাসায়। বিয়ে করে শ্বশুরের ঘরে বাসর করব নাকি?
শ্বশুরের যেই ঘরে বাসর আমারও সেই ঘরে বাসর ভাবো ব্যাপারটা? এতটা ছোটলোক ভাবলে কি করে? আগেই ভেবেছিলাম তোমার বাবা আমাদের বিয়ে দিয়ে দেবেন। তাই আগেভাগে একটা রুম ঠিক করে রেখেছি। তবে আজই যে দেবেন তা ভাবিনি। সাবলেটে উঠব। অবশ্য যেখানে যাব তোমার খুব কষ্ট হবে। ছোট্ট একটা রুম। তোমার দম বন্ধ হয়ে আসবে। কিন্তু কি আর করা! বেকার ছেলে বিয়ে করেছ! এখন বোঝ ঠ্যালা! যত কষ্টই তোমার হোক, দুইটা মাস কষ্ট করতেই হবে। তোমার বাবার ফ্ল্যাট নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। বিয়ে করে তার বিনিময়ে ফ্ল্যাট নেব? অসম্ভব! আমি পারব না। তুমি চাইলে যাবে না চাইলে যাবে না!
মুকুলের কথা শুনতে শুনতে মধুর গলাটা ধরে এলো। এত ভালো একটা ছেলে কিভাবে হয়? মধু মনে মনে বলল- তুমি যদি আমাকে নিয়ে কোনো বস্তিতে গিয়েও আশ্রয় নাও, আমি তোমার সাথে আছি। আমি তোমারে চাইগো সখা! আর চাই না কিছু! কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারল না। উঠে জিনিস পত্র গোছাতে লাগল। মুকুল চুপচাপ বসে আছে খাটের কোনায়। পায়ের ওপর পা তুলে নাচাচ্ছে। গোছগাছ শেষ হলে মুকুল মধুকে নিয়ে তার বাবা মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিতে গেল। মধু দৌড়ে গিয়ে মা কে জড়িয়ে ধরল।
-মা আমাদের বিদায় দাও!
-বিদায় দাও মানে?
-বা-রে! আমাদের বাসায় যাব না? বিয়ের পর কোনো মেয়ে কি বাপের বাড়িতে থাকে নাকি?
মধুর মায়ের মাথায় কিছুই ঢুকছে না। তিনি মধুর বাবাকে ডাকতে লাগলেন। মধুর বাবা পাশের রুমেই ছিলেন। সাড়াশব্দ শুনে বের হয়ে আসলেন। চোখের কোণাটা চিকচিক করছে তার। মনে হচ্ছে চিকচিকি মেখেছেন। চোখের পানিতে চিকচিকি থাকে। মাখার দরকার হয় না। তিনি চারদিকে চোখ বুলালেন। চোখে মুখে জিজ্ঞাসা।
-হচ্ছে টা কী? মধুর মা বললেন- ওরা চলে যাচ্ছে!
-চলে যাচ্ছে মানে?
-ওদের বাসায় চলে যাচ্ছে। তুমি কিছু বল। মুকুল তার শ্বশুরকে বলল-
-শ্বশুর মশাই! আপনার মেয়েকে নিয়ে এখানে থাকটা কী ভালো দেখাবে? শ্বশুর বাড়িতে বাসর! বলেন দেখি কেমন কথা? তার চেয়ে এক কাজ করেন আমাদের দোয়া করেন। রাত বেশি হয়ে যাচ্ছে।
-উঠবে কোথায়?
-পল্লবীতে একটা রুম নিয়েছি। সাবলেট। আপাতত চলে যাবে!
শ্বশুর কোনো মন্তব্য করলেন না। মধুর মার দিকে তাকিয়ে বললেন- ওদের এগিয়ে দিয়ে আস! মুকুল মধুকে নিয়ে বের হওয়ার সময় তার শ্বশুরকে সালাম করল। সালাম শেষে তার হাত ধরে বলল-
-শ্বশুর মশাই! ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। মানুষ মাত্রই ভুল করে। আমি ছোট্ট একটা অন্যায় করে ফেলেছি। সামান্য মিথ্যা কথা বলেছি।
-কি মিথ্যা কথা?
-সত্য কথা বলব? শ্বশুর মশাই কোন কথা বললেন না। মুকুল একটু ইতস্তত করে বলল-
-বিকেলে ছাদের ওপর আপনার সাথে আমার যা কথা হয়েছে, তার সব কথা সত্য না। কিছু সত্য কিছু মিথ্যা। মধু সংক্রান্ত সব কথা মিথ্যা। বানিয়ে বানিয়ে বলেছি। আর আমার সংক্রান্ত সব কথা সত্য! ছাদে পানির পাইপের পাশে ইটের নিচে কয়েকটি চিঠি রাখা ছাড়া ওর সাথে আমার আর কিছু আদান প্রদান হয় নি! মধুর বাবা চুপচাপ শুনছেন মুকুলের কথা। কোনো ভাবভঙ্গি দেখাচ্ছেন না। মুকুল কয়েক সেকেন্ড পর দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে বলল-
-শ্বশুর মশাই কী আমার ওপর রাগ করেছেন? রাগ করবেন না। এই বয়সে যত রাগ কম করবেন, তত ভালো। দুই একটা মিথ্যা বলা তেমন দোষের কিছু না। আপনিও মিথ্যা বলেন। পৃথিবীর সবাই মিথ্যা বলে কমবেশি। তাহলে আমার দোষ দিয়ে লাভ কী। মধু চল! দেরী হয়ে যাচ্ছে! মধু ও মুকুল বের হয়ে যাওয়ার পর মধুর মা মধুর বাবার কাছে জানতে চাইলেন-
-কী কথা হয়েছে বিকেলে তোমার সাথে? মধুর বাবা কোনো জবাব দিলেন না। মধুর মা চোখের পানি মুছতে মুছতে বললেন-
-ছেলেটা খারাপ না। মধুকে সুখেই রাখবে, তুমি দেখ। দুই একটা মিথ্যা কথা যদি বলেই থাকে মনে কষ্ট রেখ না। মন থেকে দোওয়া কর। ও যে ঘরজামাই না থেকে মধু কে নিয়ে নিজের বাসায় উঠেছে আমি খুব খুশি হয়েছি। এমন ছেলেই আমি চেয়েছিলাম! ভাঙবে তবু মচকাবে না! মধুর বাবা তবুও কোনো সাড়াশব্দ করলেন না। তিনি চুপচাপ উঠে চলে গেলেন!