চোখ মুছে ঘুমাতে যাব বিয়ের অনেক কাজ,এমন সময় ফোনটা বেজে উঠল বিরক্তির সাথে ফোনটা ধরতে হলো ধরলাম যেই ধরতে যাবো শুনলাম সেই পুরনো কন্ঠস্বর। কেমন যেনো থমকে গেল আমার সব এক নিমিষেই। ওপাশ থেকে, বলল ফোনটা কেটো না বললাম হুম ওপাশ থেকে ,বলল জানি ভালোই তোহ আছো বটে। বললাম হুম কি চাই!? বলে বসল , তোমাকে চোখ মুছে মৃদু হেসে বললাম এতো রাতে কি ঠাট্টা বিদ্রুপ করতে ফোন করেছ!? হঠাৎ বলছে কালকে একটু সময় দিতে পারবে!?
জয় সবসময়ই এরকম ছেলেমানুষি করে এসেছে আজও তাই ।কিন্তু বিগত তিন বছর পর.. সাল ছিল ষোলো, প্রথম দেখা হয়েছিল মামার বাসায়। সেই থেকে ছেলেটার মুখে এক অদ্ভূত মায়া ছিল আর সেখানেই প্রথম অঘটনটা ঘটে মামার বাসায় যাতায়াত এ তার সাথে দেখা আস্থা বাড়তে থাকে বন্ধুত্ব ভালো হয়. ও জানতো না আমি ওকে প্রচণ্ড ভালোবাসি শুধু বুঝতো ভালো লাগা কাজ করে ওর জন্য ও যেনো আমার প্রতি দুর্বল হতে থাকে আর আমি তোহ্ তাই চাচ্ছিলাম..ও আমাকে ভালবাসার কথা বলেও ফেলে চলছিল ভালোই সবকিছুই ।
কমতি ছিল না..যতরকম পাগলামি সবই ছিল আমাদের মধ্যে..মোটামুটি সবাই জানে . মা বাবার এক মেয়ে হওয়ায় সুবিধা ছিল বেশি চাওয়ার আগেই হয়ে যেত সব. একদিন হঠাৎ করে শুনি জয়ের মা মারা গেছেন.ছেলে টা কেমন যেনো বদলে গেছে আগে যেমন ছিল, এমন কোনো কিছুই তার মধ্যে নেই অথচ বাকি সব কিছুতেই তার ঢের স্বাভাবিক চলছে..পরিবর্তন কেবল আমার ক্ষেত্রে ..
মান সম্মান বেশি থাকায় তাকে জোড় করিনি কেন এমন হলো .কিন্তু বুঝে নিয়েছিলাম তার ভালোই পরিবর্তন এসেছে আমাকে তার বিরক্ত লাগে এমনকী আমার যত্নগুলোও..তবুও কখনো অভিযোগ করি নেই ,প্রশ্ন করি নেই
চলতে লাগলো আমরা অনেক বার দেখা করেছি ,বৃষ্টিতে ভেজা অনেক মধুর স্মৃতি.. একদিন কি হলো জয় হঠাৎ বলল আজকে তোমাকে লাগবে ,বৃষ্টি প্রচুর তাও গেলাম ছেলেটার আবদার আমি ফেলতে পারি না..গেলাম দেখি কাঁদছে কি হয়েছে কিছু বলল না..কেমন যেন ওর কান্নায় আরও দুর্বল হয়ে পড়লাম..ভালোবাসতাম তোহ্ অনেক..সবসময়ই মায়া কাজ করত ওর প্রতি.. আর মায়া কেবল বাড়েই অনেক শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ছিলাম এমনটা অনেক হয়েছে আমার শান্তির জায়গাটাই ছিল ওর বুকটা..
সেদিন আমি ওকে কোনো বাঁধাই দেইনি..এমন কিছুই হয়ে গেল আমাদের যা অস্বাভাবিক কিছু ছিল..কিন্তু বাস্তবতা মেনে নিতেই হবে তারপর কি ভেবেছেন (বাচ্চাকে দুনিয়ার আলো দেখাতে হব এমন কিছু!!? এরমধ্যে পড়াশোনার জন্য তার থেকে যেতে হলো দুরে তার জীবনে এক অতীত ছিল যা আমি জানতাম না..কখনও তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়নি যাতায়াতের একটা দুরত্ব বেড়ে গেল পড়াশোনার কারনে তাকে সময় দাওয়া কমাতে হলো আমি কিন্তু তাকে আগের থেকে আরও ভালবাসি এর থেকে বেশি বিশ্বাস ছিল..মায়ায় যখন পড়েই গেছি ,ক্রমশ বাড়ছে বটে তোহ্ আসি তার বিশ্বাস ভাঙার ঘটনাতে তার যে অতীত সুমনা,
মেয়েটাকে অনেক ভালবাসতো এমনকী মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা ছিল কিন্তু পরিবারে জানাজানি হলে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেয় আর ওর পরিবার প্রভাব শালী থাকায় কোনো ঝামেলায় পড়তে হয়নি..এছাড়া মেয়ের বাবাও জয়ের কাছে সুমনাকে দিতে নারাজ তবে অন্তঃসত্ত্বা বিষয় কেবল সুমনা আর জয়ই জানতো..মেয়ের বিয়ের পরও জয় এর সাথে কথা হতো..
আমার সাথে থাকা অবস্থায় ও আমি এসব কিছুই জানিনা একদিন না বলে জয়ের বাসায় যাই ওকে দেখিনা অনেক দিন তাই চমকে দিব বলে না বলেই চলে যাই বাসায় ।গিয়ে শুনি সে বাসায় নেই ।তোহ যে কাজ করতেন সে ভিতরে বসতে দিলেন অপেক্ষা করতে লাগলাম উনি আমাকে চিনতেন সে আমাকে দেখে কিছু বলতে চাইছিলেন কিন্তু বলছেন না আমি আর জোড় না করে বললাম খালা আমি একটু ওর রুমে বসি..!??আটকানোর চেষ্টা করতেছিলেন পরে সে জানে লাভ নেই তাই আর সে বেশিক্ষণ চেষ্টা করলেন না.রুমে গিয়ে দেখি লেডিস পারফিউম এর একটা দমকা গন্ধ..একটা মেয়ে মানুষের জামা আমি মনে মনে ভাবলাম হয়তো ওর মার কিছু হবে যেটা সবসময় রাখে ওর কাছে খালাকে ডাক দিলাম বললাম ওর রুমে সব এলোমেলো তুমি গুছাও না এই যে আন্টির জামা ,ওর গোসলের তাওয়েল…
খালা কেমন যেনো মাথা নিচু করে বলল মা তুই বাড়ি যা বললাম।আমার কেমন যেনো খটকা লাগলো..বললাম, খালা কি হইছে বলবা!? আমি না তোমার মেয়ের মতন. বলবা না ..??সে যা বলল তা শুনে আমি বসে পড়লাম মাটিতে ,খালার কথা এমন আব্বায় বাসায় এক মাইয়া নিয়ে আহে মা তুই বাড়িত যা জীবনে আমি মেয়ে হিসাবে খুব কম কেঁদেছি..আমি খালাকে জড়ায় ধরে মরা কান্না করতেছিলাম তখন খালাও কাঁদছিল আমার কান্না দেখে..উঠলাম বাসায় যাবো আম্মু কেও বলিনি যেআসব বাসায় যাওয়ার ইচ্ছা নাই কি করব বুঝতেছি না..তাও গেলাম বাসায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম..বললাম মাথা ব্যাথা সকালে দেখি আম্মু খাবার বিছানায় দিসে কালকের সব চোখের সামনে ভাসতেছে…আর যাচ্ছে আম্মু কে বললাম বিয়ে করব..ছেলে দেখো আম্মু আর কিছু বলল না জয় ফোন দিল কোনোখোঁজ নাই, কই..বললাম কেন কি দরকার!? বলল দেখতে মন চাইছে …কতদিন দেখি না তোমার ক্যাম্পাসে আসি!? কিছু বলি নেই বললাম বিকেলে আসিও আমরা যেখানে দেখা করি.. ও বলল তুমি ঢাকা আসছ অথচ বল নি..কেন!!?
আমি বললাম দেখা করলে বলব সব গেলাম গিয়ে দেখি খুব ভদ্র ভাবে এসেছে অন্যরকম সুন্দর লাগছে ওকে কিন্তু খালার কথা অনুযায়ী ওরে দেখে আমার ঘেন্না লাগতেছে কিছু বললাম না..স্বাভাবিক ছিলাম খুবই বললাম তোমার ফোনে টাকা আছে বাসায় ফোন দিব কল হিস্ট্রি তে সুমনা নামে অনেকবার কল রিসিভ হয়েছে আবার কলকরাও হয়েছে..নাম্বার নিলাম ..তারপর ফোন দিলাম ওকে.. বুঝেনি ও বাসায় গিয়ে মেয়েকে এক আপুর নাম্বার থেকে কল করে বললাম কে কোথায় কি নাম ..সব বলল একটা মেয়েও আছে..তার বর দেশের বাহিরে কাজে গেছে খোঁজ নিলাম মেয়ের আরও অনেকের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে
পরে জয়ের বাসায় গেলাম আবার এর মধ্যে আমি অর্ধেক পাগল আছি ওদের নষ্টামি দেখে আমার বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছে..এখন অন্যের বউ!!ছিঃছিঃ ঘেন্নায় ,রাগে শরীর জলতেছে গেলাম বাসায় দরজা খুলল ঘুম থেকে উঠেছে মাত্র গলায় তিন চারটা কামরের দাগ দেখলাম ওর ,দিলাম চড় সে কিছু বুঝে উঠার আগেই বললাম অন্যের বউ খুব ভাললাগে তোমার তাহলে আমাকে বলতে বিয়ে করে রিলেশনে জড়াতাম..
পরে ও আমাকে গল গল করে বলতে শুরু করল ,সুমনা আর ওর ব্যাপারে ওদের সেই বাচ্চা…সুমনা বিয়ের পর ও ওর সাথে সম্পর্ক রেখেছে..আর ও নাকি ওর বাচ্চা টানে ওর কাছে যেতো..আর সুমনা ওকে ভোগ করত আমি সেদিন আসলেই একবারে শেষ হয়ে গেছিলাম কিছু বলে নি সেদিন চোখ মুছে এসে পড়েছিলাম..কাকে কি বলব..মনে হচ্ছিল মরে গেছি আমি..কিছু বুঝে উঠতে পারতেছিলাম না এর মধ্যে বাসায় বিয়ে ঠিক করল সবখানে বললাম বিয়ে করছি ওকে দেখাতে আসলে পড়ে আর বিয়েই করিনি ও জানত আমার বিয়ে হয়ে গেছে তিন বছরে আমি ওকে ভুলতে পারিনি সব ভাসে চোখের সামনে আমার এখনো ও ওর খোঁজ নেই নি আর…
দেশের বাহিরে চলে গিয়েছিলাম. আজ দশ দিন হলো এসেছি ওর কথাই ভাবছিলাম ।ওর কারনে যে কত বিয়ে মানা করেছি হিসেব নেই যাই হোক ওর ফোন এলো, গেলাম দেখা হলো কেমন যেনো হয়ে গেছে চিন্তার এক চাপ মুখে ,চোখের নিচে কালো দাগ। নতুন এক জয় কিন্তু বরাবর এর মতো সুন্দর লাগছে ..অন্যরকম সুন্দর লাগছে..আমার দেয়া শার্ট পড়েছে দেখে হাসলাম মনে মনে তারপর বললাব কেমন আছো!? কি খাবে? বলল কফি বলল কেমন চলছে সংসার আমার!? বললাম ভালো এক দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলল তোমার ছেলে মেয়ে কয়জন!?
আমি বললাম তিন জন কেমন জেনো এক কালো মুখ করে বলল, ভালোই তোমাকে দেখে বোঝাই যায়না হাসলাম আর বললাম অন্যের জিনিসে তেমন আকর্ষণ নাই তোহ্..তাই বেশকিছু বোঝা যায় না কিছু ক্ষণ চুপ থেকে বলল,তোমাকে কিছু বলার ছিল..প্লিজ পুরোটা শোনো ..তারপর ও বলল সুমনার কাছে যে বাচ্চার টানে যেতাম সে আমারই না বললাম আর কত মিথ্যে বলে নিজেকে ছোট করবে!.আমার কাছে!? সে বলল সত্য। কারন সে তার মরা মায়ের কসম কেটেছে তবে তোহ্শুনতে হয় এখন কাহিনী..
বললাম তাড়াতাড়ি বল, বাচ্চা রেখে এসেছি ওরা কাঁদবে জয় বলল সুমনা তাকে ঠকিয়েছে.. জয়ের সাথে থাকা অবস্থায় সুমনা অন্য আরেক ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে ছিল..আর জয়ের টাকার কারনে ওর চাহিদা পূরন করত জয়ের মাধ্যমে সেই ছেলের সাথেও সুমনা এখন ও জড়িত…আর তারা দুইজন মিলে জয়কে ব্যবহার করছে..এ জয় এখন সবটা জেনে গেছে..তাদের আর কোনো সম্পর্ক নেই এখন আর..
আমি কফি না খেয়ে উঠে এক দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে জয়কে বললাম, নিয়তি তার শোধ নেয় আর আমার বিয়ে পরশু জয় যেনো চমকে উঠল আর আমি জয়কে বললাম ,আগেই জানতাম তোমাকে বলিনি কারন তুমি আমাকে ঠকিয়েছো এখনো মাঝে মাঝে জয়ের ফোন আসে কিন্তু ওপাশে থেকে কেবল দীর্ঘ শ্বাস টুকুর শব্দ ই শোনা যায় কিছু অতীত যেনো সর্বত্রই বয়ে বেড়াতে হয় খুব গোপনে..