এক মায়ের গল্প

এক মায়ের গল্প

সাবিত্রী, এই সাবিত্রী! শোন তো একবার মা! মরণ, তুই এখানে জানলার ধারে হা করে তাকিয়ে কি দিশ্য দেখছিস লা, কানে ঢুকতেছেনি তোর? ওদিকে গিন্নি মা যে সাবিত্রী, এই সাবিত্রী! চমকে ওঠে সাবি, একবার মানু মাসির দিকে তাকিয়ে ছুট দেয় গিন্নিমার ডাক লক্ষ্য করে। দুয়ারের কাছে দাঁড়াতেই গিন্নি মা বললেন, কোথায় ছিলি রে, সেই কখন থেকে ডাকছি! আমার ঠাকুর ঘরে পূজার জোগাড় করে দে তো মা, পায়ের ব্যাথাটা সারারাত ঘুমতে দেয়নি, হায় রে হায়, কি ব্যথা, শীত পড়লেই আমার মরণ! যা না মা, কতক্ষণ আর আমার গোপাল না খেয়ে থাকবে!

আমি, আমি যাব গিন্নি মা ঠাকুর ঘরে! কেন রে রোজ তো সকাল সকাল স্নান করিস, আজ করিস নি বুঝি! থাক্ বাছা পরেই করিস, ঠান্ডা লেগে গেলে মুস্কিল! নাহ্ গিন্নি মা, আমি তো কোন ভোরেই তো যা না মা , আমার গোপালটাকে তুলে একটু জল বাতাসা দে, ঘরটা একটু ধুয়ে মুছে রাখ, আমি পরে গিয়ে পূজা সারবো। গিন্নি মা, আমি পারবোনা তোমার গোপাল কেন পারবিনে শুনি! তোদের হলো এই এক দোষ! না খেয়ে তো মরতেছিলিস! গিন্নি মার ছি চরণে ঠাঁই না পেলে শেয়াল কুকুরে আহ্ মানদা!

ওভাবে মেয়েটাকে বোলোনা, বড্ড ভালো গো সাবিত্রী, আমার যা যত্ন করে, ও না থাকলে তো আমায় ওভাবে যা না হা করে শুনতেছিস কি! গোপাল ঠাকুরটারে একটু জল বাতাসা আমি কি করে এতো বড় পাপ কাজটা করব! থাম্ মুখপুড়ি থাম্! যতবড় মুখ না ততবড় কথা তোর, গিন্নি মা যখন কোইতেছেন তুই থাম দেখি মানদা, মেয়েটা যখন বলছে ও কি বলবে কন দেখি তো গিন্নি মা, না খেয়ে তো মরতে ছিল, আমি না থাকলে, আর আপনার দয়ার শরীল, যদি কাজ না দিতেন তো তাই তো বলছি মানু মাসি, আমি এতো বড় পাপ কাজটা করে সংসারে অমঙ্গল ডেকে আনতে পারবোনা। গোপালের সেবা কি পাপ কাজ সাবিত্রী, কথাগুলো বলে তার দিকে বড় বড় করে চাইলেন গিন্নি মা। সাবিত্রী বললো, না গিন্নি মা, গোপালের সেবা করা কোনো পাপ নয় তবে আমি মোসলমান ঘরের মেয়ে, এটা কি করে করি আপনি বলুন!

কি বললি তুই, তুই মুসলমান! মানদা যে বলেছিলো তুই হিঁদুর ঘরের মেয়ে! না গিন্নি মা, মানু মাসির কোনো দোষ নেই, দয়া করে ওনাকে কাজ থেকে ছাড়াবেন না, প্রয়োজনে আমাকে.. শেষের দিকে গলাটা ধরে আসে সাবিত্রীর। নিজেকে খানিক সামলে নিয়ে সে বলে মাসি আমাকে খুব ভালোবাসে গিন্নি মা, বাপটা যখন আবার বিয়ে করে আমার সৎ মাকে ঘরে আনে তখন থেকে আমার দুর্গতির শেষ থাকে না, ঐ মায়ের এক লম্পট ভাইয়ের কুনজর আমার ওপর পড়ে। আর সেদিন তো মাঝ রাতে আমার ঘরে ঢুকে আমায় ছিঁড়ে খুড়ে ওলো থাম পোড়ামুখি, গিন্নি মা যদি তোকে এখন বাইর করে দেন তো আহ্ মানদা, তুই থাম, ওকে বলতে দে!

সেদিনই ওর হাত থেকে বেঁচে পালিয়ে ছিলাম কোনো মতে, তারপর সকালে বাড়ি ফিরে যেতে বাপ মা মেরে তাড়িয়ে দিয়েছিল, রাস্তায়, গাছতলায় দুরাত কাটানোর পর মানু মাসি আমাকে নিয়ে কি করতাম গিন্নি মা বলেন, মায়ের প্রাণ তো কেঁদে উঠে ছিল, আমার মেয়েটা বেঁচে থাকলে যে ওর মতোই এতো বড়টা হতো, আমি সাবিনারে সাবিত্রী সাজায়ে.. কেঁদে গিন্নি মার দু পা জড়িয়ে ধরে মানদা বলে তাড়ায় দিলে আমাদের দুজনেরে তাড়ায় দ্যান গিন্নি মা, এই বয়েসের একটা মেয়েকে তো পথে একা ছেড়ে দিতে পারবোনি আমি!

পা ছাড় আমার মানদা, তোর কোনো দোষ নেই, তোর জায়গায় আমি হলে তাই করতাম। যা যা অনেক বেলা হলো, আমার গরম জলটা বসিয়ে দে, আর সাবিত্রী তুই যা ঠাকুর ঘরে, আমার গোপালের সেবা দে গে, পাপ যা হবে তা যেন আমার হয়, এটা আমি কি করে ভুলি বল তো, আমি ও যে একটা মেয়ে! মেয়েরা যদি মেয়েদের বিপদে পাশে না থাকে তো গিন্নি মা, আপনি সাক্যাত দেবী মা, এতো বড় আপনার মন! আহ্ মরণ যা না, আর কতক্ষণ সবাই উপোস দেবো বাছা! গিন্নি মা, বাতের ব্যাথার তেল নিয়ে পায়ে লাগাতে বসলেন।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত