‘আমি চাকরী করলে তোমাকে কিছু টাকা পয়সা দিতে পারবো। সারাজীবনে আব্বাও তো তোমাকে কোন হাতখরচ দেয় নাই।’ অনুফা বেগম ঠাস করে একটা থাপ্পর মারলেন স্বর্ণার গালে।
: বেয়াদব মেয়ে, বাপকে সম্মান দিতে শিখস নাই
: ক্যান ভুল কি কইসি? আব্বায় তোমারে দিছে?
: যদি না দিতে পারে তবে সেইটা সংসারের খরচের জন্য দিতে পারে নাই। তোদের পেছনেই খরচ করছে নিজের পেছনে না।
: সেই কারনেই তো এখন ফিরতি দিতে চাই, দায়ীত্ব নিতে চাই।
: কিসের দায়ীত্ব? ট্যাকা দেওনের?
: খালি টাকা দেওনের ক্যান হইবো, পুরা দায়ীত্ব।
: কি কইছিস? কি কইছিস শুনি, কোন দায়ীত্ব নিতাছস শুনি, কোনডা আমাগো দরকার?
: মা, তোমরা চাওনা তোমার মাইয়া চাকরী করুক?
: কেন চামু না, চাই ই তো।
: তাইলে এমনে কইতাসো ক্যান? বাবুরে একটু না দেখলে আমি কেমনে পারুম?
: এইতো আইসস পথে। পরথমে কইসস দায়ীত্ব নিতে চাস। এহন দেহা যাইতাসে দায়ীত্ব দিতে চাইতাসস।
: কোথায় চাইলাম?
: চাস নাই, তোর পোলারে মাইয়ারে রাহনের কথা কস নাই?
: কইসি, তোমাদের নাতিরে দেখবা না। তোমার নাতীরে ভালোবাসোনা? আমারে ভালোবাসনা?
: প্রশ্ন ঘুরাইস্না, স্বর্ণা। এখন সময় তোর বাপের আর মায়ের সেবা করনের। তুই চাইতাসস উলটা সেবা। তোরে করছি এহন তোর পোলারেও করন লাগবো। ভালো কথা সেইটারে আবার ভাও দিতাসস আমারে ‘পকেট খরচ’ দিবি। আইচ্ছা তাও মানলাম। এরপর কইলি তোর বাপে দিতে পারেনাই, তুই দিবি। তোর বাপেরে আমার চোখে ছোড করবার আইসস, এইডার পিছনে কি আমাদের সেবা আছে? না, সম্মান আছে?
: এইডা কি কও মা?
: কি কই! ঠিকই কই। দুইদিন বাদে ঝগড়া ঝামেলা হইলে কইবি তুমি তোমার নাতীরে দেখসো, ফাও দেখসো? তোমার লাইজ্ঞা কত্ত খরচ বাড়তি করসি। তহন আমারে খোটা দিবি। পেট ভর্তি তোদের কেবল স্বার্থ।
: কোথায় স্বার্থ দেখলা, পড়ালেখা করাইসো এইডা কামে লাগুক তা চাওনা তোমরা?
: কেডা কইলো চাই না, আলবত চাই। পড়ালেহা করাইসি যাতে নিজেগো দায়ীত্বডা নিজে বুঝস। আমাগো কইয়া না দেওন লাগে। যাতে মন বিশাল হয়, যাতে অন্যের লাইজ্ঞা নিজে কিছু করবার পারস। এহন পর্যন্ত খালি নিতাসস। তরাই নিবি। পড়ালেখা করাইসি যাতে কোন জায়গার ময়লা কোন জায়গায় গিয়া জমা হয় এইডা নিজে নিজে বুঝস। এইডা তো বুঝসনা উলটা মানুষরে ছোড করস, নিজেগো মহান বানাস – মারে হাতখরচ দিবি, বাপে দিবার পারে নাই, মানসিকতা আছিলো না।
ছি: বলে উঠেন অনুফা বেগম। হাত নেড়ে বলেন – দরকার নাই আমার হাত খরচ।
: কোন জায়গার ময়লা কোন জায়গায় জমে?
: দেখ, এহন তর বাচ্চাগো দেহনের লাইজ্ঞা আমার তর বাসায় আইস্যা থাহন লাগবো। তর বাসা তর একার বাসা না, এইডা তর জামাইরও বাসা। আমি যদি থাকি তইলে কি করন লাগবো?
: কি করন লাগবো কও।
: তর বাপেরেও থাহন লাগবো। তর বাপে বুড়া মানুষ, আমিও বুড়া।
: আমিও তো চাইতাসি আব্বায় থাকুক আমার লগে, কও চাইতাসি না?
: হ, চাইতাসস। কিন্তু এতে বুড়া মানুষটার কি কষ্ট অইবো ভাবছস কহনো?
: কি কষ্ট? তোমার লগেই থাকবো, নাতিপতির লগে থাকবো। সময় ভালা কাটবো?
: এই তো বুঝছস, কইছিনা তোগোরে চোহে আংগুল দিয়া দেহাই না দিলে তোরা দেহস না।
: কি দেখিনাই?
: তর বাপে বুড়া মানুষ। আমিও বুড়া। তর বাপের অধিকার আমার কাছে সবচাইতে আগে। তোগো থাইক্কাও। তোরা জোয়ান মানুষ, মানাই নিতে পারোস, তর বাপে পারবোনা। আমি মহিলা মানুষ, আমার বাইরের জগত ছোড, আমি তাই তগো লগে মিইশ্যা যাইতে পারুম। কিন্তু তর বাপে?
: কেন মিশতে পারবোনা, আমি কি আমার ভাবীর মতন পরের মাইয়া?
: এই যে, ব্যাপার জেদাজেদি তে নিতাছস। নিজের জেদাজেদি। তর বাপের টা কেমনে বুঝবি?
: আইচ্ছা বুঝাও দেহি।
: তর বাপ এহন আমারে ছাড়া চলতে পারেনা। মানুষটা অসহায়, আমি ছাড়া কেউ নাই। আবার তর কতা চিন্তা করলে তর লগে থাহন লাগে। আমি থাকতে পারুম। কিন্তু তর বাপের অইবো কষ্ট। যেই কষ্ট আমারে ছাড়া অন্য কাউরে দেহাইতে পারবোনা, হের শরম লাগবো, তোরা উলটা বুঝবি।
: বুঝাইয়া কও না তাইলে
: তর বাপ বাসায় থাকে, মাঝেমইদ্যে বাইরে যায়, সামাজিক মেলামেশা করে। এলাকার মাইনসের লগে আড্ডা দেয়। তারা উনারে সম্মান দেয়। তোগো লগে আইসা থাকলে তারে কে চিনবো? কে মানবো? কার লগে মসজিদে আলাপ করবো? হের দিকে কেউ চাইলেই তার মনে অইবো লোকে মনে মনে কইতাসে – “শশুর হইয়া জামাইর বাড়িতে থাকে!”. এই কষ্ট সে মানবার পারবো? পারবোনা।
: কে কইতে যাইতাসে উনারে এই কতা, উনি বুঝবো না
: মা রে, তুই জোয়ান মানুষ, তোর শরীলে শক্তি আছে। তুই ই তোর বাপেরে বুঝিস না, আর বুইড়া মানুষটা তগো সব বুঝুক এইডা চাস। এইডা স্বার্থপরতা। সারাজীবন তোগো লাইজ্ঞা খাটছে, এখন বুড়া বয়সেও মনের লগে যুদ্ধ করন লাগবো, খাটন লাগবো তগো চাহিদামতন। এই চাহিদা ঠিক না, স্বার্থ স্বার্থ গন্ধ তগো হৃদয়ে।
: এইডা কি কইতাসো মা?
: ঠিকই কইতাসি। আমি লম্বা সময়ের জন্য তর বাসায় বেড়াইতে আসলেও তর বাপে মাঝেমধ্যেই বাড়ি যায়গা, গিয়া একা একা রান্না কইরা একা বইসা খায়। এইডা চোউখে দেহস কিন্তু মনে দেহস না। দেখলে বুঝতি লোকটা অসহায়।
: তাইলে কি করুম মা?
: সেইডা আমি কি জানি, তোর দায়ীত্ব তুই দেখবি। তগোরে আমি পালছি, তগোর নানীর কাছে পালাই নাই। তোরাও তগো পুলামাইয়া পালবি, এইডা ওগো অধিকার।
: তাইলে তো চাকরী করন যায় না।
: চাকরী চাকরী চাকরী। উপার্জন বুঝুস? উপার্জন খালি চাকিরী দিয়া হয়না। ঘরের কাজের পাশাপাশি একটা কিছু চিন্তা কর যেইডা তোরে উপার্জন দিবো। হেইডা ভালা লাগেনা, চাকরী করবা, খালি চাকরী বুঝোস। চাকরী মানে উপার্জন, ঘরের কাজ নিজের দায়ীত্ব সামলাইয়া যদি পারো যা ইচ্ছা কইরো। জোয়ান বয়সেও ইনকামের লাইজ্ঞাবাপ মায়ের দিকে তাকাইয়া থাইক্কো না। নিজেরে মহান ভাইব্বো না। মহান তোমার বাপ তোমার মায়, যারা আজীবন করার পরেও বুড়া বয়সে তোমার লাইজ্ঞা নিজেগো চাহিদা বাদ দিতাসে। মহান কেডা হেইডা বুইজো। কিল্লাইজ্ঞা থাপ্পর দিসি এইবার বুঝছো? বাপের সম্মান না দিতে পারলে, মায়েরেও দিতে পারবানা, দুনিয়ার কাউরেই দিতে পারবানা।
: তাইলে মা আমি কি করবো? চাকরীডা ছাইড়া দেবো?
: এইটা তোমার আর তোমার স্বামীর ব্যাপার। ওইহানে আমাদের টাইনো না। এখন আমার কথা খুব মায়াহীন মনে হইবো। কারন এহন তোমরা আমাদের মতন বুড়াবুড়ি হও নাই। বয়স হইলে দেখবা সারা জগতের বুড়াবুড়ির একটাই চাওয়া – সম্মান আর সেবা, নিজেগো পোলামাইয়ার কাছথিকা। এর অন্যথা নাই।
স্বর্ণা অকূল পাথারে পড়লো। চাকরীর বিকল্প আয় রোজগারের কথা তো কোনদিন চিন্তাই করেনাই। মায়ের সময়, বাপের সময়, তাদের প্রতি দায়ীত্ব, এইসব নিয়ে এইভাবে কক্ষনো ভাবে নাই। আজ তার মায়ের দিকে তাকাইয়া সে বুঝতে পারতেসে – ভালোবাসা মানে নির্ভরতা, মানে মায়া। যেইটা তার আব্বার আছে মায়ের প্রতি, মায়ের আছে আব্বার প্রতি।
: পড়ালেহা কইরা তোদের দৃষ্টি আরো নিচা হইছে, উচা হয়নাই। তোরা ভাবছস আমার উপার্জন আছিলোনা। তরা দেখবারই পাসনাই, বুঝবারই পাস নাই, চাস নাইও আমার উপার্জন কি? কিন্তু তর বাপে দেখছে, তর বাপে বুঝছে। আমি মুরগী পালছি, গরু পালছি, একেকটা সময় কইতরও পালছি। বাড়ির উঠান জুইরা সবসময় শাকসব্জী লাইগাইসি। খেতা শিলাইছি, সুয়েটার বানাইসি, তোদের জামাকাপড় বানানের লাইজ্ঞা সিলাই মেশিন চালাইসি। এইসব খরচ আমার উপার্জন। এখন তগো বাসা বাড়িতে ঘরের কামের লাইজ্ঞা কাজের লোক রাখস। নিজের ঘরের কাজ নিজে করলে নিজেরে চাকরানী ভাবোস। তোর মা চাকরানী আছিলো! স্বর্ণার কষ্ট হতে শুরু করে, প্রচন্ড কষ্ট। এতোক্ষণ একটা জেদ ছিলো, সেই জেদ এখন সে টের পাচ্ছেনা। সেখানে ক্যামন যেন একটা অপরাধবোধ। অনুফা বেগম আবার বলতে শুরু করেন-
: ঘরের ধান চাউল খেড় শুকাইছি। সারাদিন পরিশ্রম শেষে রাইতে ঘুমাইসি। তগো মতন মোবাইল টেপাটিপি আর নাটক দেহি নাই। দুই বচ্ছরে একবার মায়ের বাড়ি যাইবার পারি নাই, তোদের জন্য। আর তোরা আমার উপার্জন দেহস না, কারন আমি চাকরী করি নাই। “চাকরী না করলে মান ইজ্জত নাই“এই কতা কেউ কয় নাই তহন আমার পরিবারে। এহন তোরা কস। তোরা উতপাদন বুঝোস না। জগতের সেরা উতপাদন হইলো গিয়া মানুষ। সেইটা উতপাদন করে মেয়ে মানুষ। সেইডারে তোরা মর্যাদা দিতে শিখস নাই। উতপাদন মানে খালি জন্ম দেওনও না, প্রতিপালন। সেই প্রতিপালন তোরা নিজেরা করবি না, কাজের মহিলা দিয়া করাইবি, মা বাপ দিয়া করাইবি, শশুর শাশুড়ি দিয়া করাইবি । জগতের সবচেয়ে মহৎ উতপাদনরে তোরা ছোড বানাইয়া কইতাসস তরা মহান! ছিঃ! স্বর্নার মনে হচ্ছে কেউ একজন তাকে মরিচ লাগিয়ে দিচ্ছে হৃদয়ে। হৃদয় জ্বলে যাচ্ছে। এত্ত হেয়জ্ঞান সে না জেনেই করে আসছে মায়েদের এটা জানা ছিলোনা স্বর্ণার। অনুফা বেগমকে পেয়েছে কথায়। তিনি বলতে লাগলেন-
: পড়ালেহা করছস, তাইলে এখন কি করা উচিত? তগো উচিত এই যে ঘরের কাম, বাচ্চাকাচ্চা প্রতিপালনের কাম এই কাজরে সমাজের বুকে তুইল্যা ধরা। সমাজের চক্ষে আংগুল দিয়া দেহাইয়া দেওয়া -কোথায় কোথায় সমাজ নারীগো হেয় করসে। তাগো অধিকার তাগো সমর্পণরে সন্মান দেয় নাই -চোখে আঙ্গুল দিয়া সেইটা দেহাই দেয়া। না তরা লাগছস চাকরীর পেছনে, দায়ীত্ববোধের বালাই নাই, কিস্যু নাই। কারে কহন অসম্মান করতাসস হেই বোধও তগো নাই। মহান সাজস। এই ঘরের কাজ, সন্তানের কাজরে যেদিন তোরা নিচা চউহে দেহনের শুরু করছস সেদিন থাইক্কা খালি বিরোধ বাড়ছে পুরুষগো লগে। পুরুষের ভুল দেহাইতে পুরুষের ভুল ধরাইতে গিয়া তোরা নিজেরা ভুল করতাসস। স্বর্ণা হাহাকারের কন্ঠে বলে উঠে – “আমি কি এহন তোমার মত হাস মুরগী পাইলা উপার্জন করার সুযোগ আছে, মা”! অনুফা বেগম হাসলেন।
: এইতো আসছিস পথে। আমাগো সময় যেইটা সুযোগ আছিলো আমরা সেইডা করছি। তগো এখন আরো আগাইন্যা সময়। তোরা এই সময়ের উপযোগি একটা কিছু বাইর করবি এই কারনেই না তরে পড়ালেহা শিখাইছি। তুই আমার থাইক্কা বেশি পড়ছস, তুই আমার থাইক্কা আরো বাড়তি উপার্জন করবি, সুন্দরভাবে সংসার সামলাবি- এইডাই তো আমরা আশা করি রে মা। তরা কি করতাসস? স্বর্ণার গলা ভেংগে আসে, কান্না চেপে সে বলে- “আরো কও মা”।
: তরা চাকরি করবি, তাই আমারে লাগবো, বুড়া মানুষটারে কষ্টে থাহন লাগবো। ক্যান তোরা নিজেরা সাবলম্বী হইবার পারোস না? আমি তো স্বাবলম্বী আছিলাম, আছি। নিজে ইচ্ছামতন খরচ করতে পারি নাই কইতাসস। আমাগো ইচ্ছা ছিল – তোরা মানুষ হইবি, মানুষরে সম্মান দেয়া শিখবি, নারীরে সম্মান দেয়া শিখবি। পুরুষের লগে সমঝোতায় আগাইয়া আসবি, কাধে কাধ মিলাইবি। আগে আমি কত্ত কিছু কম বুঝতাম। তর বাপের অনেক কিছুই তহন বুঝিনাই। এহন তুই বুঝবি। বুইঝা এইটা দেখবি যে, পুরুষরে আর কেমনে ভালা বন্ধু বানান যায়। তগো যে নারীনেত্রীরা খালি বুলি ফাডায় হেগোরে পারলে জিগাইস – পৃথিবীর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ কি? দেহিস জবাব দিতে পারবোনা। ‘কি, মা?’- কান্নাভেজা স্বরে স্বর্ণার জানতে চাওয়ার আকুতি।
: তাঁরা জবাব দিতে পারবোনা। আশপাশ দিয়া জবাব দিবো। কারন পরিবার তাগো কাছে কোন মাইনে রাহেনা। সবাচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হইলো পরিবার, পরিবারে থাহন মিল্যামিশ্যা থাহন, একজনের সুখে দুঃখে অন্যজনের বন্ধুর মতন থাহন এইডা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তরা কোন থাকা থাওতাসস? কে শিখাইসে তগোরে এম্নে থাকনের? ঝগড়া, পাল্টাপাল্টি এইগুলা থাহন, একসাথে থাহন? তর বাপে এহন রোজ বিকাল বেলা চা লইয়া বইসা গুটুর গুটির গল্প করে আমার লগে – কেম্নে কেম্নে আমরা গোটা জীবনডা পাড়ি দিছি। কহন কেম্নে তারে আমি আগলাইয়া রাখসি, কহন কেম্নে তারে আমি বুদ্ধি দিসি। সব কয়। কহন সে না বুইজ্জা আমারে কষ্ট দিছে, কহন আমি বেবুঝের মত করছি, কহন সে করসে। এগুলা তগো ভাষায় কথা।
আর এইগুলা আমার কাছে সন্মান, এইগুলা আমার অহংকার। সে তারে আমার কাছে অসহায় কইরা তুলে না, আমি যে তার কতখানি জুইড়া আছি সেইটা বুঝায়। কেন কয় কেন বুঝায় জানোস? কারন সে আমারে চাকর ভাবেনা, শত্রু ভাবেনা। সে আমারে ভাবে তার সহধর্মিনী। তোরা এই ভাবনাডা না জানি না ভাবাইতে পারোস, না ভাবতে পারোস- আমার ভয় লাগে।কলিজা শুকাইয়া আসে ভয়ে। সে যহন আমার চামড়া কুচকাইন্না হাতটাতে ছোয়, তহন সে আসলে ছোঁয় না সে আমারে বুঝায় – সে আমার কাছে ঋণী, মুখে বলেনা। কিন্তু এই না কওন আরো গভীর, আরো স্পষ্ট। তোরা এই গভীরতা বুঝবি না। আমার ভয় লাগে এই ছোয়াছোয়ির গভীরতা তোরা টের না পাইয়াই মইরা যাবি আর ভাববি একটা কষ্টময় জীবন সংসারে পার কইরা আসলি।
স্বর্ণা অনুতপ্ত বোধ করে। স্বর্ণা বোধ করে- তার দৃষ্টিভংগী তার মায়ের চাইতেও দূর্বল। এই দূর্বল দৃষ্টভংগি সে রাখবেনা। সবল হয়ে ঊঠবে তার মায়েরই মতন। বিকল্প আয় হিসেবে একটা কিছু সে দ্রুতই বেছে নেবে। মায়ের দৃষ্টিতে এতোদিন সে পৃথিবীটা কে দেখতে পারেনি। মায়ের সেই দৃষ্টিতে পৃথিবীটা দায়িত্ববোধের ও দায়িত্বপালনের মাধ্যমে আত্মতৃপ্তির, সম্মানের। এ দৃষ্টির সন্ধান এতদিন স্বর্ণার অজানাই ছিলো।











