কিছু কথা অজানা

কিছু কথা অজানা

রাহুলের রুমটা একবারে অন্ধকার। কেউ একজন এই রুেম থাকে, সেটা কেউ বলবেনা। একটা অন্ধকার রুমে কেমন করে মানুষ থাকে।এতো বড় রুম, কিন্তু কোন লাইট নেই।দক্ষিনের জানালা গুলোও খোলা হয়না। রাহুলের রুম থেকে কিছুক্ষণ হল তার বন্ধুরা বেরিয়ে গেল।অনেকেই বুঝাল যে;চল বাহিরে কোথাও ঘুরে অাসি, কিন্তু কারও সাথে কোন কথায় বললনা

কিছুদিন অাগেও এমন ছিল না রাহুল।বন্ধু বান্ধবের সাথে অাড্ডা কম দিলেও,বন্ধুদের চোখের মণি ছিল রাহুল।হয়তো নিজের কথা বার্তার দ্বারা বন্ধুদেরকে হাসাতে পারতো না।তবে বন্ধুদের কে সবসময় সাহায্য করে তাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখতো। কোন এক ঝড়ে হাসিটা কেঁড়ে নিয়েছে। ঝড় নামের সেই মানুষটির নাম সাথী।সাথী যাকে সে পাগলের মত ভালবাসতো।

রাহুল প্রেম ভালবাসাতে খুব একটা অাগ্রহ ছিল না।তার বন্ধু বান্ধব অনেক প্রেম করতো। কিন্তু সে কখনোই প্রেম শব্দটি মুখেই অানতো না। হঠাৎ রাহুলের লাইফে ধূমকেতুর মতো উদয় হল সাথী। সেদিন ছিল ভার্সিটির বর্ষফূর্তি অনুষ্ঠান। রাহুলের লেখনির হাত ছিল ভাল।সারা ভার্সিটি সেটা জানে। তাই তার উপর দ্বায়ত্ব পড়ে ;একটা গান লেখার। সে অনুযায়ী গান লেখে। খাওয়ার মতো কাউকে না পাওয়াই রাহুল নিজেই গান গাই;গানের সাথে নিজে গিটারও বাঁজাই। অনুষ্ঠানের শেষে পরিচিয় ঘটে সাথীর সাথে।

–অামি সাথী, অাপনার গিটার বাঁজানো অার গান দুটোই খুব ভাল লেগেছে। রাহুল ছোট্ট করে একটা ধন্যবাদ দেয়।
–গানটা নাকি অাপনি নিজেই লেখেছেন।অসাধারণ হয়েছে।

অাবারও ধন্যবাদ দেয়। তারপর সাথী নিজেই বন্ধুত্বের হাত বাড়ায়। রাহুল একটু ধিদ্বায় পড়ে যায়। তখন সাথীই বলে সমস্যা নেই,বন্ধু না হতে চাইলে জোর করবো না।তবে ভাববো যে অাপনার প্রতিভা যতটুকু ভাল।মনটা ততটুকু ভাল না।মেয়েটা কথার দ্বারাই রাহুলের মনে অাঘাত করে;তাই রাহুল সাথীর বন্ধুত্ব এক্সেপ্ট করে। বন্ধু হওয়ার পর এক্সট্রা কেয়ারিং একটা কথা খুনসুটি।এমন ভাবেই একদিন সাথীই রাহুলকে তার ভাললাগা ভালবাসার কথা জানায়। রাহুলও না করতে পারেনি। কারণ রাহুলও অাস্তে অাস্তে সাথীর প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ে।তারপর শুরু হয় বন্ধুত্বের রাস্তা থেকে ভালবাসার রাস্তায় পথ চলা।

সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। এতো দিনে সাথীকে অনেক বেশি ভালবেসে ফেলেছিল রাহুল।কিন্তু হঠাৎ একদিন সাথী বলে;রাহুলের সাথে যা করেছে সবটাই অভিনয়। তার কিছু বান্ধবী বাজি ধরেছিল রাহুলকে প্রেমের জালে ফাঁসানোর।তাই সাথী সে বাজি জিততেই রাহুলের সাথে এই অভিনয় করেছে।তাকে যেন ক্ষমা করে দেয়।রাহুল কিছুই বলতে পারেনি।কারণ যে মুখ দিয়ে সাথী বলতো পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি রাহুলকে ভালবাসে ;কোন কিছুর বিনিময়ে হারাতে চায় না।অাজ সেই সাথীই বলছে, যা করেছে সবটাই অভিনয়। তাই রাহুল কিছু বলতে পারেনি।

কথায় অাছে, ভালবাসার মানুষ ভাল না বাসুক। তবুও তাকে দেখার মাঝেও শান্তি অাছে। রাহুল সবকিছু তার ভাগ্যে লেখা ছিল।তা মনে করে মেনে নিয়েছে।তবুও ভালবাসার মানুষটিকে প্রতিনিয়ত দেখার জন্যে অপেক্ষা করতো। কিন্তু হঠাৎ অারেকদিন সাথী ফোন দিয়ে বলে তাকে যেন ক্ষমা করে দেয়। তার জন্যে যেন এভাবে কোথাও দাঁড়িয়ে অপেক্ষা না করে।সাথী লন্ডন চলে যাচ্ছে। সেখানে তার মা বাবাও অাছে।প্রবাসী ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে, অার লন্ডনে গেলে বিয়ে হয়ে যাবে। সব কিছুর জন্যে যেন মাপ করে দেয়।

সেদিনের পর থেকে রাহুলও অার রুম থেকে বাহির হয় না।কারণ সাথীর ভালবাসা তাকে খুব বেশি গ্রাস করেছে। তাই সাথীর ভালবাসাহীন জীবনটাকে অন্ধকার ঘর বন্ধী করে নিয়েছে রাহুল।সাথীর ভালবাসাহীন জীবনটাকে একলা করে নিয়েছে। তাই তো অন্ধকার রুম রাহুলের একমাত্র সঙ্গী।অালোকিত জীবন চাই না সে সাথী ছাড়া। বন্ধু বান্ধবের ডাকে সাড়া দেওয়াটাও তুচ্ছ, অন্ধকার ঘর অার অন্ধকার জীবন যার কাছে এখন মূর্খ। সবকিছুর শেষ হয়েও যেন হয় না

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত