ভয়ে রনির হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবী তে কাউকে যদি রনি ভয় পেয়ে থাকে তা একমাত্র ওর বাবা, অরিন্দম সেন। রনি ভাবতেই পারেনি সামান্য ঘটনা কে এত বড়ো করে মুখার্জি আন্টি বাবা কে বলে দেবে। ও তো ইচ্ছে করে কিছু করেনি।এমনকি আন্টির ক্ষতি হয় এমন কিছু ও ভাবতেই পারেনি। কিন্তু অঘটন টা এমন ভাবে ঘটে গেলো যে সব দোষ রনির উপরেই এসে পরলো।
এখন ও ভাবতে পারছে না ওর সাথে কি হতে চলেছে। বাবা কি ওকে অন্ধকার ঘরে বন্ধ করে রাখবে? নাকি আবার ওকে কোলে তুলে ছাদ থেকে ফেলে দেবে বলে ভয় দেখাবে? সেটা তাও ভালো। অন্ধকার ঘরে বন্দি থাকার থেকে অনেএএএএক ভালো। আচ্ছা, বাবা কি মা কে যেমন ইস্ত্রির ছ্যাঁকা, সিগারেটের ছ্যাঁকা দেয়, ওকেও ওরম কিছু করবে? রনি জানে, বাবা রেগে গেলে সাংঘাতিক। ও লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছে মা কে বেল্ট দিয়ে কি প্রচন্ড মেরেছিল বাবা শুধু রাতে মাংস রুটি বানাতে পারেনি বলে। রনি জানে, মায়ের গায়ে ঐদিন ধুম জ্বর ছিলো। মার খেতে খেতে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আগের মুহুর্ত অব্দি মা দরজার ফাঁক দিয়ে এক দৃষ্টে রনির দিকে তাকিয়েছিল। রনি জানে সে দৃষ্টির মানে। মা রনি কে চলে যেতে বলছিল, মা রনিকে বারণ করছিল বিষয় টা নিয়ে ভাবতে,রাগ করতে।
মা রনি কে সবসময় বাবার থেকে আগলে রাখতে চায়। রনিকে বোঝাতে চায় যে বাবা শুধু একটু বেশি রাগী। বাবার কথা মতো চললেই আর রাগ করবে না। মা বলে বাবা রা একটু রাগী-ই হয়। কিন্তু রনি তো সুদেষ আঙ্কল, ঋষি আঙ্কল দের দেখেছে। রেশম,বিট্টু দুষ্টুমি করলে তারা কত রেগে যান। বকেন। কিন্তু ও তো নিজেই দেখেছে আঙ্কল রা নিজের ছেলে-মেয়ে দের কত ভালবাসে। বাবা দের কথা বলতে গিয়ে ওর বন্ধু দের চোখে যে গর্বের ঝিলিক দেখা যায় তা তো রনি এই বয়সেই উপলব্ধি করতে পারে।
এবার একটু রনি দের পরিবারের দিকে নজর দেওয়া যাক। অরিন্দম সেন, সুজাতা সেন ও তাদের একমাত্র সন্তান, অধিরাজ সেন ওরফে আমাদের রনিকে নিয়ে এটা হতেই পারতো একটা মিষ্টি সুখি পরিবারের গল্প। হলো না শুধুমাত্র অরিন্দমের অতিরিক্ত সন্দেহবাতিকের জন্য। বিয়ের পর প্রথম দিন গুলোতে যা মনে হতো হাল্কা অধিকারবোধ, তাই যে কখন মাত্রা ছাড়া সন্দেহ হয়ে দাঁড়িয়েছে তা বোঝার আগেই সুজাতার মধ্যে রনির লক্ষণ প্রকাশ পায়। প্রথম প্রথম অরিন্দম গায়ে হাত তুললেও পরে এসে যখন ক্ষমা চাইত, সুজাতার অর্ধেক রাগ গলে যেতো। বাকি অর্ধেক অরিন্দম ঠিক আদরে, আশ্লেশে সরিয়ে দিত। কিন্তু রনির আসার খবর জানার পরেই অরিন্দম যেন সম্পূর্ণ বদলে গেলো।সুজাতা আজো স্পষ্ট মনে করতে পারে দিন টা। তিন বছরের বিবাহবার্ষিকী ছিলো ওদের। অরিন্দম এলে দুজনে মিলে বাইরে খেতে যাবে ঠিক ছিলো। সকাল 9টায় অরিন্দম অফিসে বেড়িয়ে যেতে রোজকার মতই টুকিটাকি কিছু কাজ গুছিয়ে রাখছিল সুজাতা। এমন সময় বিজিতার ফোন টা আসে
-হ্যাপি এনিভার্সারি ,দিদি
মিষ্টি হেসে সুজাতা বলে, ‘থ্যাংক ইউ রে’। দুই বোন ভেসে যায় গল্পের তোড়ে। গল্পের মাঝেই আসে ইমনের নাম। সুজাতার মনের উপর মেঘের ছায়া নেমে আসে। বিজিতা ফোন এর ওপার থেকে দিদির মনের অবস্থার কথা ঠিক ই বুঝতে পারে। তাই প্রস্তাব দেয়, ‘আজকে দেখা করবি দিদি’? সুজাতা ভয় পায়। ‘না রে বনু। তোর জামাইবাবু কে তো জানিস। কোনো ছেলের সাথে কথা বলেছি জানলেই রেগে কাঁই হয়ে যায়। যা গেছে তা গেছে। আমি আজকের দিন টা আর নষ্ট করতে চাই না রে’।
বিজিতা শেষ চেষ্টা করে, ‘ইমন দা কলকাতায় রে দিদি, আজ রাতের ফ্লাইট। জেঠু জেঠিমা মারা যাওয়ার পর ওর আর এখানে কি-ই বা আছে বল? বাড়ী বিক্রি করে চলে যাচ্ছে চিরদিনের জন্য। তুই শেষবারের মতো একবার আয় দিদি।’
সুজাতার ভিতরে কোথাও যেন ক্ষরণ শুরু হলো। আর কোনোদিন দেখা হবে না ইমনের সাথে। না, আজ ও যাবে। একবার দেখবে ওর ছোটবেলার প্রেম কে শেষবারের মতো। শুধুমাত্র বাবা মায়ের জেদে যার সাথে জীবন কাটানো টা স্বপ্নই থেকে গেলো। দুই বছরের ছোট বোন বিজিতা ছাড়া কেউ ওর স্বপ্ন বোঝেনি। কিছুটা জোর করেই বিজনেসম্যান অরিন্দম এর সাথে বিয়ে দেওয়া হয় সুজাতার। তার পর তো তিন বছর কেটেই গেলো। সুজাতা বুঝতে পারে, বিজিতা ফোনের ওপারে অপেক্ষা করছে।
-‘বেশ, আসবো আমি। কোথায় আসবো বল।’ আর আমি কিন্তু বেশিক্ষণ বাইরে থাকতে পারবো না।’
-‘না,না, তোকে বেশিক্ষণ আটকাবো না। আর তোকে বেশি দুর আসতেও হবেনা।
তোর বাড়ির কাছেই যে শপিং মল টা আছে ওখানে বিকেল 8টে নাগাদ চলে আয়।’ সুজাতা ভাবে অটো নিয়ে ঐ মল টার দুরত্ব ওর বাড়ী থেকে 30মিনিট। ও বলে দেয় যে যাবে। খুব দ্রুত তৈরি হয়ে 3.30তেই চলে যায় নির্দিষ্ট যায়গায়। ঠিক 8টে তেই বিজিতা আসে।আর ওর পাশেই লম্বা, রোগা চেহারা টা চোখে পড়ে। সুজাতার সময় থমকে যায় যেন। এগিয়ে আসে ইমন ওর টেবিলের দিকে। সুজাতা যেন বসতে বলতেও ভুলে গেছে। বিজিতা বলে, ‘তোরা কথা বল, আমি কফি নিয়ে আসছি’। বিজিতা চলে যেতেই ইমন হাত দুটো ধরে ফেলে সুজাতার।
-‘আজ রাতেই চলে যাচ্ছি রে সুজি।’ জলভরা চোখ নিয়ে ইমনের দিকে তাকায় সুজাতা। আর তখনি চোখ আটকে যায় কফি শপের দরজার দিকে।সুইং ডোর টা খুলে জ্বলন্ত চোখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অরিন্দম। ইমন এক মনে কত কিছু বলেই চলেছে। হটাত সুজাতা কে কিছু না বলতে দেখে ওর মুখের দিকে তাকিয়েই চমকে ওঠে। কোনদিকে তাকিয়ে আছে সুজি?
ওর দৃষ্টি অনুসরণ করেই ও দেখতে পায় অরিন্দম কে।গন্ডগোল টা বুঝে নিতে এক সেকেণ্ড এর ভগ্নাংশেরও কম সময় লাগে ওর। বিজিতাও ফিরে এসেছে ইতিমধ্যে। সবাই মিলে অরিন্দম কে অনেক কিছু বোঝাতে যায়। কিন্তু তার চোখ সুজাতার উপর থেকে সরেনা। অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর অরিন্দম শুধু একটাই কথা বলে, ‘চল’। সুজাতা আর দ্বিরুক্তি করেনা। চুপচাপ চলতে থাকে অরিন্দম এর পিছন পিছন। পরদিন সুজাতা আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি। আর ঐদিনই ও প্রথম অনুভব করে রনির আগমন বার্তা। সারাদিন ধরে ভাবে এবার সব ঠিক হয়ে যাবে হয়তো। নিজের সন্তান কে পেয়ে অরিন্দম নিশ্চই বদলে যাবে। রাতে ফেরে অরিন্দম। খাওয়া-দাওয়া শেষে সুজাতা ঘরে অপেক্ষা করতে থাকে অরিন্দম কে কথা টা বলার। অরিন্দম ঘরে ঢুকতেই সুজাতা বলে ওঠে, ‘বাড়ী তে কেউ আসতে চলেছে গো।’ অরিন্দম খুব অবাক হয়ে তাকায় সুজাতার দিকে। আর ওর মুখ দেখে বুঝে যায় কি বলতে চাইছে। একটা ব্যাঙ্গের হাসি খেলে যায় অরিন্দমের ঠোঁটে,
-‘কবে থেকে চলছে এসব?’
-‘মানে? কি বলতে চাইছ?’
-‘বুঝতে পারছো না? বলছি কার সাথে নষ্টামি করে এসে পাপ আমার ঘাড়ে চাপাচ্ছ?’
-‘অরিন্দম!’ চিত্কার করে ওঠে সুজাতা হিসহিসিয়ে ওঠে অরিন্দম এর গলা, ‘কাল সব ব্যবস্থা করে রাখবো। পেটের ঐ পাপ টাকে নষ্ট করে তবে আমার শান্তি।’
-‘না আ আ আ আ’। এক চড়ে শান্ত হয়ে যায় সুজাতা।
পরদিন যখন জোর করে নিজের চেনা ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যাচ্ছিল অরিন্দম, তখনি ভগবানের দূতের মতো এসে পরেন ওর মা। মাঝে মাঝে ছেলে-বৌমার কাছে আসতেন তিনি।আর ঐদিন ঐ কান্ড দেখে তিনি বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলেন সুজাতা কে। ছেলের একটা কথা ও বিশ্বাস করেননি। ওনার তত্ত্বাবধানেই জন্ম নেয় রনি। কিন্তু তারপর আর অরিন্দম দেরি করেনি। মা কে পত্রপাঠ রেখে এসেছিল বৃদ্ধাশ্রমে। সেই দিন থেকে লড়াই টা একা সুজাতার। রনি আজ ক্লাস সেভেনে পড়ে। ভালো ছাত্র। মায়ের গর্ব। কিন্তু বাবার থেকে আড়াল করে রাখতেই হয় ওকে। বিশেষ করে যবে থেকে সুজাতা জানতে পেরেছে রনির ব্যপারে সেই বিষয়টা। আর সেই জন্যই আজ শুধু রনি নয়, সুজাতাও ভয়ে কাঁটা হয়ে আছে। কয়েকদিন ধরেই কমপ্লেক্স এর পুজোর রিহার্সাল চলছে। রনি খুব ভালো নাটক করে। প্রথমে অরিন্দমের আপত্তি ছিলো।কিন্তু ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে সুজাতা অনুমতি আদায় করে ছেড়েছে। রনি প্রমিস করেছে যে ওর নামে কোনোদিন কোনো কম্প্লেন আসবে না। সুজাতাও সে বিষয়ে নিশ্চিন্ত ছিলো।
রনি শান্ত ও ভালো ছেলে। কিন্তু আজ দুপুরের ঘটনা টা সুজাতার চোখের সামনেই ঘটেছে। সুজাতার বেডরুম এর জানলা দিয়ে রিহার্সাল হল টা পরিস্কার দেখা যায়। লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে বাচ্চা গুলো নাটকের মহড়া দিচ্ছে। সুজাতার দেখতে মজাই লাগে বেশ। দুপুরে বিশ্রামের ফাঁকে সেদিকেই চোখ রেখে বসেছিল ও। হটাত গেট কিপার পিন্টু দার মেয়ে তিতলি কে হলে ঢুকতে দেখে। একটু অবাকই হয় সুজাতা ওকে দেখে। মিসেস মুখার্জি একদম পছন্দ করেন না ওকে। সবসময় নিচু জাত, কালো এসব বলে দুচ্ছাই করেন ওদের। আজকাল দিনে কেউ এমন করতে পারে, তাও একটা বাচ্চার সাথে, দেখে আশ্চর্য হয়ে যায় সুজাতা। রনির থেকে তিতলি বেশ ছোট। সবে ক্লাস টু তে পড়ে। হাসলে এতো মিষ্টি করে গালে টোল পড়ে যে মেয়ে টাকে না ভালবেসে থাকা যায় না। যাই হোক, তিতলি কে ঢুকতে দেখেই প্রমাদ গোনে সুজাতা।আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ওর আশঙ্কা কে সত্যি করে তিতলির কান ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে হল থেকে বাইরে নিয়ে আসেন মিসেস মুখার্জি। তারস্বরে চেঁচাতে থাকেন-
‘অসভ্য,বাঁদর মেয়ে। খাবারের লোভে লোভে ঠিক চলে এসেছে। দুর হ, দুর হ এখান থেকে। আর যদি কোনোদিন কমপ্লেক্স এর ভিতরে দেখি ঠ্যাং ভেঙ্গে রেখে দেব’ তিতলি বেচারা ঘটনার অভিঘাতে চোখের জল ফেলতেও ভুলে গেছে। সুজাতার চোখ দুটো জলে ভরে যায় । এইসময় দেখে হল থেকে ছুটে বেড়িয়ে এল রনি। কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে- ‘ও কে মেরো না আন্টি। ওর কোনো দোষ নেই। আমি ওকে ডেকেছি।’ মিসেস মুখার্জি রেগে অগ্নিসর্মা হয়ে যান।
-‘তুমি কি করে এতো ইনডিসিপ্লিন হলে অধিরাজ? তুমি জানো না বাইরের লোকজনকে কমপ্লেক্স এ ঢোকানো বারণ?’
-‘তিতলি বাইরের লোক কেন হবে আন্টি? ও তো পিন্টু কাকার মেয়ে।’
-‘আবার মুখে মুখে তর্ক? ওর বাবা একটা চোর, আর মেয়েটাও তাই।’
আসলে কিছুদিন আগে, রনিদের আবাসনে বাইক, সাইকেল চুরির মতো ঘটনা ঘটতে থাকে। মিসেস মুখার্জির মতো অনেকেই বিশ্বাস করেন পিন্টু এতে জড়িত। যদিও প্রমান পাওয়া যায়নি। নিজের বুদ্ধিতে রনি বুঝতে পারে আন্টি সেই ঘটনার দিকেই ইঙ্গিত করছেন। ইতিমধ্যে, হইহল্লা শুনে পিন্টু ছুটে আসে।
-‘কি হয়েছে, মেমসাহেব?’ ত্রস্ত কণ্ঠে জিগ্গেস করে সে।
-ন্যাকা, বুঝতে পারছো না? কতবার বলেছি, তোমার মেয়েকে কমপ্লেক্স এর ভিতর পাঠাবেনা? এবার কি মেয়েকে দিয়ে মানুষের ঘটি-বাটি চুরি করাবে?
-আমি….আমি তো পিন্টু বুঝে পায় না তিতলি কেন এখানে। একটা অবাধ্য রাগ মাথা চাড়া দেয়। অপমান সইতে না পেরে হাত তুলে দেয় মেয়ের উপর। রনি ঘটনার অভিঘাতে চুপ করে গেছিল। কিন্তু তিতলি কে মার খেতে দেখে আর চুপ থাকতে পারেনি।
-‘ওকে মেরোনা কাকু। ও আসতে চায়নি। আমি জোড় করে নিয়ে এসেছিলাম’ রনির একটা কথারও উত্তর দেয়নি পিন্টু। মেয়ের হাত ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে চলে যায়। রনির মধ্যে যেন আগ্নেয়গিরির বিশ্ফরোন ঘটে। সুজাতা দুর থেকেই ওর চোখ জ্বলতে দেখে।
-‘না, কিছুতেই আর ছেলে টা কে ওখানে রাখা যাবেনা। এক্ষুণি ওকে নিয়ে আসতে হবে,’মনে মনে ভাবে সুজাতা আর কোনোরকমে ছুট লাগায় ওই দিকে। কিন্তু গন্ডগোল টা ও পৌঁছানোর আগেই হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছাতেই ও দেখতে পায় রনি তর্জনি তুলে রয়েছে মিসেস মুখার্জির দিকে। আর বলছে- ‘যেমন কষ্ট আজ তিতলির জন্য ওর বাবা পেল, তার থেকে অনেক বেশি কষ্ট তুমি পাবে বিট্টুর জন্য। যেমন ভাবে আজ পিন্টু কাকু কিচ্ছু করতে পারলো না, তুমিও পারবেনা। খুব শিগগির, খুব শিগগির।’ রনির রুদ্রমুর্তি দেখে মিসেস মুখার্জি ও কেমন থমকে যান। কেমন যেন একটা ঠান্ডা স্রোত নামে মেরুদণ্ড দিয়ে। বিট্টু তার একমাত্র সন্তান। অনেক সাধনার ফল। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজের দুর্বলতা ঝেড়ে ফেলেন তিনি। ঝাঁজিযে ওঠেন,
-‘ওহ! কোথাকার আমার দুর্বাসা মুনি এলেন রে।যত বড়ো মুখ নয় তত বড়ো কথা দেখো সুজাতা, ছেলেকে কি শিক্ষা দিয়েছ, দেখো। আজ আসুন অরিন্দম বাবু। সব বলবো আমি। তোমাদের যদি কমপ্লেক্স ছাড়া না করতে পারি তো দেখো।’ সুজাতা সব শুনেছে,সব দেখেছে। তারপর ছেলে কে নিয়ে চুপচাপ নিজের ঘরে চলে এসেছে। না, অরিন্দম এর ভয় ওর নেই। খুব বেশি হলে ও কে মেরে নিজের রাগ উপশম করবে। রনি কে কিছু করতে দেবেনা সুজাতা; বিশেষ করে আজ তো নয়ই।
সুজাতার মনে এখন একটাই ভয়। বিট্টুর কি হবে? হ্যাঁ, এইটাই তো ক্ষমতা তার 12বছরের রনির। প্রচন্ড রাগে মুখ থেকে বেরনো প্রতি টা শব্দ সত্যি হয়। আর তা হয় ভয়ানক ভাবে। রনির যখন 4বছর বয়স, তখন থেকেই এই ক্ষমতা প্রকাশ পেতে থাকে। ছোটবেলায় রনি একদম দুধ খেতে চাইত না। সুজাতা কে অনেক ভয় দেখিয়ে, সাধ্য-সাধনা করে ওকে দুধ খাওয়াতে হতো। একদিন রাগ করে বলে,’উফ্ফ, কাল থেকে বেশ কাকু টা দুধ দিতে না আসে, ভালো হয়।’ পরদিন খবর আসে দুধ দিত যে ছেলে টা তার এক্সিডেনট হয়েছে। স্পট ডেড। এটাই ছিলো ওর ক্ষমতার প্রথম প্রকাশ। সেই সময় সুজাতা কাকতালীয় ভেবে ঘটনা টি উড়িয়ে দিলেও পরের ঘটনা রীতিমত আশঙ্কাজনক।
রনি তখন পড়ে ক্লাস থ্রিতে। ওদের বাঙলা পড়াতেন অনসূয়া ম্যাম। এতো বকতেন যে বাচ্চাদের মনে ভয়ের সৃষ্টি হতো। ওনার নামে অনেকেই অনেক অভিযোগ করেছে, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। বিনা দোষে শাস্তি দেওয়া ওনার ছিলো মজ্জাগত। রনি কেও একদিন এরকমই কিছু লঘু পাপে গুরু দণ্ড দিয়ে দেন অনসূয়া ম্যাম। বাড়ী ফেরার পর সুজাতা শুনতে পায় ছেলে কাঁদতে কাঁদতে বলছে, ‘ঠাকুর, কাল থেকে যেন ম্যাম একদম না বকেন। কাউকে না।’
পরদিন থেকে অনসূয়া ম্যাম স্কুলে অনুপস্থিত। কিছুদিন পর জানা যায়, বাথরুমে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন উনি। যদিও শরীরের কোনো অংশে বিশেষ কিছু হয়নি, তবে ওনার ফেস প্যরালাইসিস হয়ে গেছে। আর কোনোদিন কথা বলতে পারবেন না।
এই ঘটনার পরেই সুজাতার মনে খটকা লাগতে শুরু করে। এ কি সাংঘাতিক ক্ষমতার অধিকারি রনি?? সত্যিই কি এটা ওর ক্ষমতা নাকি পুরোটাই কাকতালীয়? চিন্তায় চিন্তায় জেরবার হয়ে যায় সুজাতা। ও লক্ষ করে দেখেছিল, রনি এরম অনেক কথাই বলত যার ফলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। যেমন আম খেতে ভালবাসে বলে ও প্রায়ই বলে, আমাদের বাড়ির পাশে বেশ আম গাছ থাকতো, বা অঙ্ক পরীক্ষার ডেট বেশ পিছিয়ে যায়। কিন্তু এসবের ফলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। মাঝখানে সুজাতা ভুলেই যেতে বসেছিল এসব।
ও চায় রনি আর পাঁচ টা সাধারণ ছেলের মতই বড়ো হক। তাই কাউকে কখনো এই বিষয় নিয়ে একটা কথাও বলেনি। কিন্তু সেবারের সেই সাংঘাতিক ঘটনার পর থেকে সুজাতা নিশ্চিত হয়ে যায় রনি এক অদ্ভুত ক্ষমতার অধিকারি। একটা বিজনেস টুরে কয়েকদিনের জন্য বাইরে যায় অরিন্দম। সেই এক সপ্তাহ মা-ছেলের কাছে ছিলো শান্তির দিন। অন্তত সুজাতা তাই ভেবেছিল। ভেবেছিল রনি কে নিয়ে দুদিন বিজিতার কাছ থেকে ঘুরে আসবে। অরিন্দম বিজিতার সাথে যোগাযোগ রাখা একদম পছন্দ করেনা, কিন্তু ছোট বোন টাকে সুজাতা কখনই ভুলতে পারেনি।আর রনিও মাসি বলতে অজ্ঞান। বাবা কে লুকিয়ে চুরিয়ে মাসি ঠিক দেখা করে ওর সাথে।
যাই হোক, দিন টা ছিলো মঙ্গলবার। বিজিতার বাড়ী পৌঁছতেই আনন্দের বাতাস বয়ে যায় সকলের মনে। রনি তো হুটোপাটী শুরু করে দেয়। বিজিতা একাই থাকে, অফিস এর সুবিধের জন্য বাড়ী থেকে দুরে, বিয়ে করেনি। সুজাতা এতদিন বাদে বোন কে পেয়ে সব জমানো কথা উজাড় করে দেয়। সময় টা খুব তাড়াতাড়ি কেটে যায়। ফেরার সময় সিগনাল এ দাঁড়িয়ে রাস্তা পারের অপেক্ষা যখন করছে রনিরা, তখন হটাতই একটা কোলাহল কানে আসে ওদের। দেখে এক বৃদ্ধ ভিখারির ঝোলা কেড়ে নিয়ে কতগুলো বড়লোকের ছেলে মজায় মেতেছে। বৃদ্ধ যত কাকুতি-মিনতি করছে, তাদের আনন্দের পারা ততই চড়ছে।
পথ-চলতি মানুষ যার যার নিজের মতো ব্যস্ত। সুজাতা এক ঝলকেই চিনতে পারে ছেলেগুলো কে। বিজিতাই চিনিয়েছিল। এরা সব উঠতি মস্তান, তবে ঐযে ফরসা, লম্বা করে ছেলে টা একটু দুরে দাঁড়িয়ে সমস্ত ঘটনা টা দেখছে, ও এদের লিডার, ডাকসাইটে বড়লোক বাবার একমাত্র ছেলে। এরা করতে পারেনা এমন কোনো কাজ নেই, আর এদের কাজে প্রতিবাদ করার মতো কেউ নেই। চোখের জল মুছে সুজাতা পা বাড়ায়, তখনি আঁচলে টান পড়ে। ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখে, রনি। আঁচলটা মুঠো করে ধরে রেখেছে।
-‘ওরা দাদু টাকে অত কষ্ট কেন দিচ্ছে, মা?’ চোখের জল লুকিয়ে সুজাতা বলে,
-‘চল রনি, আমাদের দেরি হয়ে যাবে।’
-দাদু গরিব তাই ওরা দাদুকে কষ্ট দিচ্ছে, না মা?
-হ্যাঁ বাবা, গরিবরা কষ্ট করার কপাল নিয়েই আসে, বাবা।
-‘ঐ ছেলে গুলো খুব বড়লোক?’
-হ্যাঁ বাবা।
-কিন্তু মা, তুমি দেখো, এই ছেলে গুলো একদিন বড়লোক থাকবে না। ঐ দাদু টার থেকেও গরিব হয়ে যাবে।
চমকে তাকায় ছেলের দিকে সুজাতা। রনির দৃষ্টি কেমন ঘোলাটে, আঙুল তোলা রয়েছে ছেলেগুলোর দিকে। সুজাতা আর দাঁড়ায় না ওখানে। এরপর ছয় মাস পরের ঘটনা। রনি কে স্কুলের বাসে তুলে দিয়ে ফ্ল্যাট এ ফেরে সুজাতা। কয়েকদিন ধরে শরীর টা ভালো নেই,ঘুসঘুসে জ্বর। টিভি টা ছেড়ে এই চ্যানেল ঐ চ্যানেল করতে করতে খবরের চ্যানেলে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে, মানে পড়তে বাধ্য হয়। খবরের চ্যানেল এ তখন ব্রেকিং নিউজ যাচ্ছে, ‘ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনায় নিহত বিখ্যাত ব্যবসায়ী, তমাল দত্ত ও তার পরিবার। পরিবারের একমাত্র ছেলে অরিত্র গাড়িতে না থাকায় বেঁচে গেছে। কিন্তু এই শোকে সে বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেছে।’
খবর টা দেখতে দেখতে সুজাতার পিঠ দিয়ে কেমন ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায় ভয়ের। এই অরিত্রই তো সেই ছেলেটা যার দল কয়েক মাস আগে সেই বৃদ্ধ মানুষটিকে অত্যাচার করছিল। রনির বলা প্রত্যেক টা শব্দ মনে পড়ে যায় সুজাতার, ‘ঐ দাদু টার থেকেও গরিব হয়ে যাবে।’ হ্যাঁ, এটাই তো বলেছিল রনি। কেমন ভাবে গরিব হলো ছেলে টা? পরিবার কে হারিয়ে? নিজেকে হারিয়ে? আর এসব ভাবতে ভাবতেই সুজাতার কাছে পরিস্কার হয়ে যায় রনির ক্ষমতা। তাই আজ ছেলে টা বাবার ভয়ে কুঁকড়ে থাকলেও সুজাতার মন চলে যাচ্ছে বারবার বিট্টুর চিন্তায়। কিছু তো একটা হবে।
সন্ধ্যা হতেই রনি নিজের ঘরে ঢুকে যায়। আজ ও কিছুতেই বাবার সামনে আসতে চাইছে না। যথাসময়ে অরিন্দম ঘরে ঢোকে,এবং ঘরে এসেই ওর নিত্যদিনের অভিযোগ, চেঁচামেচি শুরু হয়ে যায়। আজ আবার কয়েক পেগ গিলে এসেছে, কাজেই মেজাজ সপ্তমে। কিন্তু সেসব ছাপিয়ে সুজাতার কানে একটা অন্য কোলাহল ভেসে আসে। মহিলা কণ্ঠের কান্না-মেশানো আওয়াজ আর তার সাথে আরো অনেকের হুড়োহুড়ি, চিত্কার। দরজা খুলে বেরোয় অরিন্দম, পিছনে সুজাতাও। দরজা খুলতেই মিসেস মুখার্জি ঝাঁপিয়ে পরেন অরিন্দমের উপর। হাঁউ মাঁউ করে কান্না মেশানো গলায় চিত্কার করতে থাকেন,’কোথায়, কোথায় আপনার ছেলে। ডাকুন, ডাকুন তাকে। ও নিশ্চয় জানে কোথায় বিট্টু।’ প্রাথমিক হতভম্বের ভাব কাটিয়ে জিজ্ঞেস করে অরিন্দম, ‘আপনি কি বলছেন, মিসেস মুখার্জি আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।’ রনি ততক্ষণে গুটিগুটি পায়ে মায়ের পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে।
মিসেস মুখার্জি তারস্বরে চেঁচাতে থাকেন, ‘ঐ, ঐ তো আপনার ছেলে। ওকে জিগ্গেস করুন কোথায় বিট্টু। ঐ বলেছিল বিট্টুর জন্য আমাকে কষ্ট পেতে হবে। তার মানে ও নিশ্চই জানে কোথায় আছে আমার ছেলে।’ এবার মিস্টার মুখার্জি পুরো ব্যাপার টা খুলে বলেন। বিট্টুর 5টার মধ্যে স্কুল থেকে ফিরে আসার কথা। আজ সেই সময়ে ও ফেরেনি। ওর মা ভেবেছিল হয়তো স্কুল বাস দেরি করছে কোনো কারনে। কিন্তু, 5.30টায় ওদের বাস বাকি বাচ্চাদের নামিয়ে দিয়ে যায়, কিন্তু বিট্টু সেখানে ছিলোনা। এরপর মিসেস মুখার্জি ওর স্কুলে ফোন করেন আর জানতে পারেন যে বিট্টু সঠিক সময়েই স্কুল থেকে বেরিয়েছে। বাসের লোকজনদের সাথে যোগযোগ করা হলে তারা বলে বিট্টু নাকি আজ বাসে ফেরেনি। ও নাকি বলেছিল ওকে ওর চেনা আঙ্কল নিতে এসেছে, তার সাথেই বেড়িয়ে যায় ও। এক বাসে যায় এমন বাচ্চারা এই কমপ্লেক্স এ থাকে। তারাও একই কথা বলে।
কিন্তু এই ব্যাখ্যা তেও অরিন্দমের অবাক ভাব কাটে না। সে বলে, ‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা, মিস্টার মুখার্জি। কিন্তু এর মধ্যে রনি আসছে কিভাবে সেটাই তো আমি বুঝতে পারছিনা’। মিস্টার মুখার্জি বলেন,’সেটা আমার কাছেও যে খুব পরিস্কার তা নয়, মিস্টার সেন। তবে ওর মা বলছে রনি কিছু একটা বলেছিল যাতে মনে হয় ও হয়তো কিছু জানে।’ দরজার বাইরে কথা গুলো শুনতে শুনতে সুজাতার মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় হয়। একি ঘটল বাচ্চা ছেলেটার সাথে! কিন্তু তার ছেলেটা তো এসব কিছুই বোঝেনা। ও তো জানেনা ওর মধ্যে একি সাংঘাতিক ক্ষমতা দিয়ে পাঠিয়েছেন ঈশ্বর! কিভাবে বাঁচাবে রনিকে ও এখন?
এসব ভাবতে ভাবতেই সুজাতার খেয়াল হয় অরিন্দম ঢুকছে ঘরে। চোখ-মুখ রাগে লাল। ঢুকেই ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল ছেলেটার গালে। কোমর থেকে বেল্ট টা খুলে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে রনিকে। সুজাতা আর দেখতে পারে না। ছুটে এসে ছেলের উপর আড়াল তৈরি করে। কাতর স্বরে বলতে থাকে, ‘ওকে মেরোনা, ওকে মেরোনা। ও কিছু করেনি। আমার কথাটা একবার শোনো।’ অরিন্দম কোনো কথা শোনেনা। দাঁতে দাঁত পিসে বলতে থাকে, ‘আমি বলেছিলাম যেন এই শয়তানের বাচ্চার জন্য আমায় অপমানিত না হতে হয়। বলেছিলাম আমি।’ সুজাতা আবার ককিয়ে ওঠে, ‘একবার আমার পুরো কথা টা শোনো।’
-তুই আবার কি বলবি! তোর পাপেরই তো ফল ও। তখনি বলেছিলাম আপদ বিদায় কর। শুনলি না। আজ আমি ওকে বিদায় করবো।’
অরিন্দমের গালিগালাজ আর বেল্টের আঘাত সহ্য করতে করতেই সুজাতা বুঝতে পারে ওর শরীরের আড়ালে থাকা রনির শরীর শক্ত হয়ে উঠছে। ছেলের দিকে চোখ পড়তেই চমকে ওঠে সুজাতা। ছেলের চোখ ধারণ করেছে লাল বর্ণ আর হাতের মুঠি বারবার খোলা-বন্ধ করছে। এর মধ্যেই অরিন্দম চুলের মুঠি ধরে সুজাতা কে সরিয়ে দেয়। রনিকে মারতে মারতে বলতে থাকে, ‘আজ আমি আপদ বিদায় করেই ছাড়ব। চল ছাদে।’ সুজাতা চিত্কার করে ওঠে,’রনি, বাবা তুই নিজের ঘরে যা। এক্ষুনি। দরজা বন্ধ করে দে ভিতর থেকে।’ রনি তাও গোঁয়াড়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে দেখে সুজাতা আবার চেঁচিয়ে ওঠে, ‘ঘরে যা বাবা। আমি না ডাকা অব্দি বেরোবি না। শান্ত হ তুই।’ তাতেও রনি কথা না শোনায় ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে ঘরে ঢুকিয়ে দরজায় ঢাল হয়ে দাঁড়ায় সুজাতা, ‘আমায় না মেরে আমার ছেলের দিকে এক পা ও এগোতে পারবেনা তুমি’।
-ওহ, এতো তেজ। সবার সব তেজ ভাঙবো আমি আজকে। নোংরা মেয়েছেলে কোথাকার! আমার তোকেই আগে শেষ করা উচিত ছিলো।’ সুজাতা কে প্রচন্ড জোরে ধাক্কা মারে অরিন্দম। সেন্টার টেবিলের কোনাটা মাথায় লেগে রক্তপাত শুরু হয়। রনির ঘরের দিকে এগোতে থাকে এরপর। সুজাতা কোনোরকমে বলতে পারে, ‘দরজা টা বন্ধ করে দে বাবা, তোকে আমার দিব্যি।’
তারপর অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আগে রনির ঘরের দরজা বন্ধ হওয়ার আওয়াজ পায়। অরিন্দম নিস্ফল আক্রোশে দরজার উপর লাথি-ঘুসি মেরেই চলে। পুরো উন্মাদের মতো দেখাচ্ছে ওকে। ওদিকে ঘরের ভিতরে রনি চুপ করে বসে থাকে বিছানার উপর। ওর চোখ রক্তাভ ঘোলাটে। সারা ঘরে চারদিকে রনির ছোটবেলার সফ্টটয়েজ গুলো সাজানো। ওগুলোর দিকে চোখ পড়ে যায় ওর। আঙুল তুলে বলে ওঠে, ‘বাবা বেশ এই পুতুল গুলোর মতো হয়ে যেত ভালো হতো। নষ্ট হয়ে গেলেই ফেলে দেওয়া যেতো।’
পরদিন সেন দের হুলুস্থুল পড়ে যায়। অরিন্দম সেনের একটা সিভিয়ার ষ্ট্রোক হয়ে গেছে। ওনার স্ত্রী সকাল বেলা ওনাকে অজ্ঞান অবস্থায় পেয়েছেন। রাতে চেঁচামেচির আওয়াজ অনেকেই পেয়েছে, কিন্তু এসব ওনাদের বাড়ির প্রতিদিনের ব্যপার বলে কেউ মাথা ঘামায়নি। এই ঘটনার পর অরিন্দম সেন বেঁচেছিলেন আর মাত্র দুইমাস। সবাই জানে মস্তিস্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ তার মৃত্যুর কারন। একমাত্র সুজাতা জানে আসল কারন কি।