কাব্য কবিতার গল্প

কাব্য কবিতার গল্প

আজ আমার আর শ্রাবণীর ব্রেক-আপের ৪১ দিন চলছে। এতদিনের মধ্যে অবশ্য শ্রাবণীর সাথে আমার কয়েকবার দেখা হয়েছে কিন্তু দেখা হওয়ার সাথে সাথেই দুইজন দুইদিকে মুখ ফিরিয়ে চলে গিয়েছি আজ সকালে বাসা থেকে যখন বের হবো তখন বাবা আমায় ডেকে বললো,

— তুই কি নিজেকে গরীবের কবির সিং মনে করিস না কি?  আমি আবাক হয়ে বাবাকে বললাম,
– মানে? বাবা তখন বললো,

– তোর রুমে যাওয়া যায় না সিগারেটের গন্ধে। দাড়ি চুল লম্বা হয়েছে কাটার কোন নাম নাই। সারাদিন অন্ধকার রুমে বসে থাকিস। তোর সমস্যাটা কি? আমি বাবার পাশে বসে বললাম,

— শ্রাবণীর সাথে আমার ব্রেক-আপ হয়ে গেছে বাবা। আসলে আমরা এই সম্পর্কে কেউ সুখী ছিলাম না। সব সময় শুধু আমাদের ঝগড়া অভিযোগ লেগেই থাকতো। তাই আমিই নিজ থেকে ব্রেক-আপ করে ফেলেছিলাম। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি শ্রাবণীকে আমি প্রচন্ড ভালোবাসি। আমার কথা শুনে বাবা বললো,

– যখন বুঝতে পেরেছিস ওকে প্রচন্ড ভালোবাসিস তাহলে সেটা শ্রাবণীকে বলছিস না কেন? আমি তখন বাবাকে বললাম,

— আমি কেন আগে বলতে যাবো? ও যদি আমায় সত্যিকারে ভালোবাসতো আর আমার মত কষ্ট পেতো তাহলে ঠিকিই আমায় একবার ফোন দিতো আমার কথা শুনে বাবা মুচকি হেসে বললো,

– তকে একটা গল্প শুনাই। গল্পটা মন দিয়ে শুন। ছেলেটার নাম ছিলো কাব্য আর মেয়েটা নাম ছিলো কবিতা। কাব্য আর কবিতা দুইজনে একই সাথে একই কলেজে পড়তো। কাব্য কবিতার প্রেমে পড়েছিলো কবিতার ঝালমুড়ি খাওয়া দেখে। আমি অবাক হয়ে বাবাকে বললাম,

— ঝালমুড়ি খাওয়া দেখে মানুষ আবার কিভাবে প্রেমে পড়ে? বাবা হাসতে হাসতে বললো,

-কবিতা যখন ঝালমুড়ি খাচ্ছিলো তখন ঝালে কবিতার সারামুখ লাল হয়ে গিয়েছিলো আর চোখ দিয়ে সমানে পানি পরছিলো।তখন খুব অদ্ভুত রকম সুন্দর লাগছিলো কবিতাকে। আর এটা দেখেই কাব্য কবিতার প্রেমে পড়ে। সেদিনের পর থেকেই কাব্য সারাক্ষণ কবিতার পিছনে লেগে থাকতো। কাব্য প্রতিদিন কবিতাকে প্রেমের প্রস্তাব দিতো আর প্রতিদিনেই কবিতার হাতে একটা করে থাপ্পড় খেতো। একদিন কবিতা অসহ্য হয়ে কাব্যকে বলে,

~ তোমায় যে আমি প্রতিদিন থাপ্পড় দেই। তোমার কি একটুও লজ্জা লাগে না। কাব্য তখন হাসতে হাসতে বললো,

– তুমি যখন আমায় থাপ্পড় দাও তখন তোমার আঙুল আমার গাল স্পর্শ করে আর আমি এতেই অনেক শান্তি পাই…

কবিতার জন্মদিনে কাব্য চেয়েছিলো সবার আগে কবিতাকে শুভেচ্ছা জানাতে। রাত ১১ঃ৫৫ মিনিটে কাব্য যখন কবিতাদের বাসার দেয়াল টপকে ভিতরে ঢুকে তখনি বেচারা কাব্যের ১২টা বেজে যায়। বাসার ভিতর কুকুর ছিলো আর কুকুর কাব্যকে কামড়ে দেয় আর যার ফলে ৩দিন কাব্যকে হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়। ৩ দিন পর যখন কাব্য কলেজে এসে কবিতাকে আবার প্রপোজ করে। তখন কবিতা রাগে বললো,

~ আমার বাসার কুকুরের কামড় খেয়েও তোমার শিক্ষা হয় নি? কাব্য তখন হাসতে হাসতে উত্তর দিলো,

-লোক মুখে শুনেছি ভালোবাসার মানুষের বাড়ির কুকুরকেও না কি ভালো লাগে। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তোমাকে ভালোবাসতে গিয়ে তোমার বাড়ির কুকুরটাকেও ভালোবেসে ফেলেছি…

দিন যত যায় কাব্যের পাগলামি আরো ততো বেড়ে যায়। কবিতা হাজার অপমান করলেও কাব্য হাসি মুখে সব মেনে নিতো। কবিতা যদি ঝালমুড়ি খেয়ে সেই কাগজটা কোথাও ফেলতো কাব্য সেটা কুড়িয়ে নিয়ে এসে যত্ন করে রেখে দিতো। শুধু তাই না একবার রান্না করতে গিয়ে কবিতা হাত পুড়িয়ে ফেলেছিলো। কাব্য কবিতার কষ্টটা উপলব্ধি করার জন্য ইচ্ছে করে মোমবাতির আগুন দিয়ে নিজের হাত পুড়িয়ে ফেলেছিলো বাবার কথা শুনে আমি বাবাকে প্রশ্ন করলাম,

— আচ্ছা বাবা, কবিতা কি শেষ পর্যন্ত কাব্যকে ভালোবেসে ছিলো? বাবা আবারও আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
– ভালোবেসে ছিলো বলেই তো তুই দুনিয়ায় আসতে পেরেছিস? আমি অবাক হয়ে বাবাকে বললাম

— মানে! বাবা ঝাপসা হয়ে যাওয়া চশমার গ্লাসটা পরিষ্কার করতে করতে বললো,

– সেই কাব্য নামের ছেলেটি হলাম আমি আর কবিতা নামের মেয়েটি হলো তোর মা আমি এতটাই অবাক হয়েছিলাম যে বাবাকে কিছু বলতে পারছিলাম না। বাবা তখন আমার কাঁধে হাত রেখে বললো,

– ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেতে হলে মাঝে মাঝে একটু নির্লজ্জ বেহায়া হতে হয়। অনেকদিন একটা সম্পর্ক চলতে থাকলে সেই সম্পর্কে একটু বিরক্তি আসবে এটাই স্বাভাবিক। তখন কিন্তু ভালোবাসার ধরণ পাল্টাতে হয় ভালোবাসার মানুষকে নয়। সব সময় রেস্টুরেন্টে বসে প্রেম না করে কোন একদিন কুয়াশা ঢাকা ভোরে শ্রাবণীকে নিয়ে শিশির ভেজা সবুজ ঘাসের উপর খালি পায়ে হাটতে বের হবি। কিংবা মাঝে মাঝে মাঝ রাতে হুট করে শ্রাবণীকে বলবি, একটু বেলকনিতে আসবে তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছে করছে৷ সব সময় দামী কিছু গিফট না করে মাঝে মধ্যে ফুটপাত থেকে ১পাতা টিপ আর ১ ডজন কাচের চুড়ি কিনে শ্রাবণীর হাতে দিবি। এতে কিন্তু ভালোবাসা কমবে না বরং ভালোবাসা নতুন করে পূর্ণতা পাবে একটা কথা মনে রাখিস, কাউকে নিঃস্বার্থভাবে ভাবে ভালোবেসে একদম নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার মাঝে একধরনের তৃপ্তি আছে। বাবার কথা শুনে চোখের কোণে জমে থাকা জলটা মুছে বাবাকে বললাম,

— বাবা আমি শ্রাবণীর কাছে যাচ্ছি। বাবা হেসে বললো,

– যা, তবে শ্রাবণীর কাছে যাওয়ার আগে একটু নাপিতের সাথে দেখা করে যাস কারণ আমি মানুষ জন্ম দিয়েছি কোন হুনুমান না শ্রাবণীকে সরি বলতেই শ্রাবণী আমার বাম গালে সজোরে থাপ্পড় মেরে বললো,

– এতদিন পর এসেছিস সরি বলতে? সামনে থেকে যা বলছি। আমি গালে হাত দিয়ে মুখটা গোমড়া করে ভাবতে লাগলাম, আমায় এতগুলো মানুষের সামনে থাপ্পড় মারলো। তারপর একটু পরেই গোমড়া মুখে হাসি ফুটিয়ে ভাবতে লাগলাম, সমস্যা নেই ভালোবাসলে একটু বেহায়া হতেই হয়…

এই মুহুর্তে নিজেকে কাব্য মনে হচ্ছে আর শ্রাবণীকে মনে হচ্ছে কবিতা। শ্রাবণী রেগেমেগে সামনে দিয়ে হেটে যাচ্ছে আর আমি ওর পিছন পিছন হেটে গান গাইছি, চুমকি চলেছে একা পথে সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে রাগ করে না সুন্দরী গো রাগলে তোমায় লাগে আরো ভালো…

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত