একজন সিনড্রেলার গল্প

একজন সিনড্রেলার গল্প

খুব দ্রুত হাতের কাজ গুলো শেষ করছে হিয়া। কাজ শেষ করে ক্লাসে যেতে হবে।রান্নার কাজ আগেই হয়ে গেছে এখন শুধু রান্না ঘরটা পরিষ্কার করলেই হলো।আজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা ক্লাস আছে যা কোন ভাবেই মিস করা যাবেনা।

কাজ শেষ করেই হিয়া ইউনিভার্সিটি দিকে ছুটলো।লিফটাকেও আজ নষ্ট হতে হলো, ওদের বাসা চার তলায়।সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় কার সাথে যেন ধাক্কা লাগলো।কিন্তু সময়ের অভাবে না দাড়িয়ে শুধু দুঃখিত বলে চলে গেল। ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরে শুনে নিচ তলার কে যেন এসে কমপ্লেইন করে গেছে ওর ব্যাপারে।হয়তো ধাক্কা লেগে ছিলো সকালে তাই কমপ্লেইন করেছে।মা অনেক বকা দিল বললো সব গুলো কাজ শেষ করে শুয়ে পর রাতে খেতে হবেনা।মার কথা শুনে হিয়ার চোখে পানি চলে আসে,তাও কিছু বলেনা ও।

আর বলবেই বা কারে, কে আছে ওর।হিয়ার বয়স যখন সাত বছর তখন ওর মা মারা যায়।দাদু জোর করে তার বড়লোক বন্ধুর ডির্ভোসি আধুনিক মেয়ের সাথে ওর বাবা আবার বিয়ে করায়। কিন্তু বিয়ের পর ওদের বাবা মেয়ে দুজনের জীবনই পালটে যায়।হিয়ার বাবা মন থেকে কখনো তার নুতুন স্ত্রী কে মেনে নেইনি। বিয়ের পরে জীবনের বেশি ভাগ সময় সে ব্যবসার কাজে বাইরে বাইরে কাটিয়ছে।এমনই এক ব্যবসার কাজে বাইরে গিয়ে আর ফিরে আসেনি।হার্ট অ্যাটাক করে কোন এক হোটেলের রুমে মরে ছিলো।এতে ওর সৎ মা এর কিছু আসে যায়নি উনি ব্যস্ত ছিলেন তার বন্ধু বান্ধব আর পার্টি নিয়ে। হিয়ার মা ওকে আদর করে কেন জানি সিনড্রেলা ডাকতো,হয়তো বুঝতে পেরেছিল যে হিয়ার জীবনটাও সিনড্রেলার মত সৎ মায়ের ইশারাতে চলবে।কিন্তু সিনড্রেলার মত রাজপুত্র হিয়া কোথায় পাবে,কে ওকে রক্ষা করবে এই অবস্থা থেকে।

রাতে ঘুমাতে গিয়ে হিয়া দেখে ওর পায়ের একটা পায়েল নেই।ও অস্থির হয়ে যায়,ঐ পায়েল জোড়া যে ওর মায়ের স্মৃতি যা সব সময় ওর সাথে থাকে।কিভাবে হারিয়ে গেল,কোথায় পড়লো কিছুই মনে আসছে না।মনে একরাস কষ্ট আর চোখ ভরা পানি নিয়ে ও ঘুমিয়ে পড়লো।সকালে তো আবার সেই দোর ঝাপ শুরু হবে।ওর বাবা এত টাকা রেখে গেলেও হিয়ার সেই টিউশনি করে আর নিজের বাসায় কাজ করে চলতে হয়।যদিও বাসায় এক বুড়ি মহিলা আছে যাকে ও নিনা বলে ডাকে।ওর ছোটবেলা থেকেই উনি ওকে দেখাশোনা করতো,কিন্তু বয়সের কারণে এখন আর তেমন কাজ করতে পারেনা।এই পৃথিবীতে উনি ছাড়া হিয়াকে আর কেউ হয়তো ভালবাসে না,আর এই নিনার কষ্ট কমানোর জন্য বাসার সব কাজ নিজ হাতে করে।তাই একটা পায়েল হারানোর কষ্ট করাটাও ওর জন্য বিলাসিতা ছাড়া আর কিছু না।

পরদিন আবার ও কে যেন হিয়ার জন্য বাসায় কমপ্লেইন করে গেছে।কিন্তু হিয়া তো আজ কিছু করেনি আজ কেন করছে।এমন অনেক দিন থেকেই কে বা কারা যেন বারবার ওদের বাসায় এসে কিছু না কিছু বলে যাচ্ছে।হিয়ার দিন গুলো আরো বেশি দুর্বিসহ করে দিচ্ছে। একদিন হিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে বাসায় না ফিরে সরাসরি নিচ তলার ঐ বাসায় গিয়ে বেল দেয়।একজন পঞ্চাশ মত বছরের মহিলা এসে দরজা খুলে।ওকে দেখে হেসে বলে– “তুমি হিয়া না!”হিয়াকে জড়িয়ে ধরে ভিতরে নিয়ে আসে।অনেক আদর করে ওনার পাশে বসায়। বহুদিন হিয়াকে কেউ এভাবে আদর করেনি। হিয়ার ওর মার কথা মনে পড়ে।কথায় জানতে পারে উনি হিয়ার মার অনেক ভাল বন্ধু ছিল যখন ওর মা বেঁচে ছিল।এরপর তারা ফ্ল্যাট টি ভাড়া দিয়ে বিদেশে চলে যায়,দু মাস হলো ওনারা ফিরে এসেছে।

এই আন্টিই নাকি বারবার গিয়ে হিয়া নামে অভিযোগ করে এসেছে।আসলে আন্টি ফিরে এসে বারবার ওর সাথে দেখা করার চেষ্টা করে কিন্তু হিয়ার সৎ মা কোন ভাবে দেখা করতে দিচ্ছিল না।তাই কমপ্লেইনের অজুহাতে বারবার ওদের বাসায় গিয়েছে। আন্টি অনেক আদর যত্ন করে ওকে খায়িয়ে তারপর ছাড়ল। এরপর থেকে হিয়া প্রায় চুপি চুপি নিচ তলার আন্টির সাথে দেখা করে সময় কাটিয়ে আসত। একদিন হিয়ার বাসায় এসে দেখে আন্টি আর ওর সৎ মা অনেক গল্প আর হাসাহাসি করছে। আন্টি হিয়াকে দেখে এমন ভাব করল যে চেনেই না।

ও চুপচাপ রুমে চলে গেল।রাতে এসে ওর সৎ মা খুশি খুশি গলায় বলে যে উনি হিয়ার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে,পাত্র ঢাকার বাইরে থাকে,ওখানে কাজ করে।বিয়ের পরপরই হিয়াকে সাথে নিয়ে যাবে।এর বেশি কিছু হিয়ার জানার দরকার নেই। নির্দিষ্ট দিনে হিয়ার বিয়ে হয়ে যায়।ও এখন পর্যন্ত ওর শশুর বাড়ির সম্পর্কে কিছুই জানে না।কাজি অফিস থেকে হিয়ার সৎ মা ওকে চির বিদায় দিয়ে চলে যায়।দুইজন মহিলা হিয়াকে একটা ট্যাক্সি ভারা করে রহনা দেয়। গাড়িটি একটা সুন্দর বাড়ির সামনে গিয়ে থামে।ও দেখে বাড়ির ভিতর থেকে নিচ তলার আন্টি বের হয়ে আসে।উনি হাসি মুখে হিয়াকে ভিতরে নিয়ে যায়।

ও কিছুই বুঝতে পারছিলা দেখে আন্টি হেসে ওকে বলে আজ থেকে ওনাকে মা ডাকতে কারন ওনার ছেলের সাথে হিয়ার বিয়ে হয়েছে।যে কিনা আমেরিকার একটা কম্পানিতে কাজ করে।এমন সময় নিনা হিয়ার সামনে আসে।ও বুঝতে পারে নিনা আর আন্টি পরিকল্পনা করে ওর সৎ মাকে ভুল বুঝিয়ে এই বিয়ে দেয়ায়।আন্টি অনেক আগ থেকেই নিনার কাজ থেকে হিয়া আর সৎ মায়ের ব্যাপারে সব যানে।বারবার ওর ব্যাপারে কমপ্লেইন দিয়ে ওর সৎ মার সাথে ভাল সম্পর্ক করে আর হিয়া বোঝা তার মাথা থেকে কমানোর জন্য দুরে কাজ করা লোকের সাথে বিয়ের ঠিক করে।ওর সৎ মা ভুলেও টের পায়নি হিয়ার সত্যি কারের শাশুড়ি আর ছেলে কে।এত কিছু শুনে হিয়া কান্নায় ভেঙে পড়ে।

রাতে যখন ওর বর যখন সামনে আসে তখন হিয়া সাথে সাথে চিনে ফেলে এই সেই লোক যার সাথে ও সেদিন সিঁড়িতে ধাক্কা খেয়েছিলো।লোকটা ওর সামনে এসে ওর হাতটা ধরে,ওর হাতে একটা পায়েল দিয়ে হেসে বলে– “হাই আমি রায়ান।এটা নিশ্চয়ই এই সিনড্রেলার হারিয়ে যাওয়া পায়েল!” হিয়া কিছুই বলে না।ওর সামনের বসে থাকত মানুষটার দিকে তাকিয়ে থাকে আর ভাবে সিনড্রেলাকে উদ্ধার করতে মাঝে মাঝে রাজপুত্রের মাও আসে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত