আমি পাঁড় মাতাল। রাতদিন আমি মদ খাই। এত মদ খাই যে গঙ্গায় ডুব দিয়ে সারাদিন বসে থাকলেও গা দিয়ে মদের গন্ধ যাবেনা। সকালে উঠে আগের রাতের এঁটো গ্লাসের রাম দিয়ে কুলকুচি করি, তারপর আগের রাতের শুকিয়ে যাওয়া একস্ট্রা মুর্গীর ঠ্যাংটা কচকচ করে খাই। খেয়েদেয়ে গায়ে ডিও মেরে বাসি ময়লা জামাটা পরে বেরিয়ে পড়ি। আমার শিল্প করতে। আমি শিল্পী মানুষ। শিল্প করে দুপুর বেলায় রাস্তার ধারের সস্তা হোটেলে ২০ টাকার চিকেন বিরিয়ানি খাই, লুকিয়ে ঝোলা থেকে ভদকা মেশানো জলের বোতলটা থেকে ঢকঢক করে কয়েক ঢোক গলায় ঢালি। তারপর সোজা চলে যাই গঙ্গার ধারে। চিৎপটাং হয়ে শুয়ে থাকি ঘাটের ধারে বটগাছের ছায়ায়, শুয়ে ঘুম দিই সাঁটিয়ে। তারপর সন্ধ্যে হলে আর একটু শিল্প করতে উঠি। শিল্প করে ফেরার পথে মদনার রোলের দোকান থেকে রাইস চিলি চিকেন আরো যা যা ইচ্ছা কিনি, আর কিনি মদ। হুইস্কি, ভদকা, রাম সব কিনে আনি। বাড়ি এসে একটু গায়ে টায়ে জল দিয়ে শান্তিতে মদ খেতে বসি।
ইয়ার দোস্ত কেউ নেই আমার, রাখতেও চাই না, আমার শিল্পে একাই ঠিক আছি। গলা অবধি মদ গিলে ঘরে একটু নাচানাচি করি। ঘর বলতে সস্তা পাঁচতলা ফ্ল্যাট একটা, ভাগাড়ের পাশের জমিতে। সস্তায় পেয়েছি, পাঁচতলার ছোট একটা ঘরে মাসে দুহাজার টাকা ভাড়া নিয়ে থাকি, প্রতি মাসের এক তারিখে মালিকের হাতে ক্যাশ গুঁজে দিই। মালিক খুশ, আমিও খুশ। পয়সাকড়ি আমার শিল্পের দয়ায় মোটামুটি ভালোই হয় তবে ভুলেও এক পয়সাও জমাই না আমি। সব টাকা ওই মদের পেছনেই ঢালি। মদ খাই, কাজ করি, ঘুমাই, নাচি…ব্যাস! নাচানাচির দুমদাম আওয়াজে মাঝেমাঝে পাশের ঘর, নীচের ঘর থেকে গালাগালির আওয়াজ ভেসে আসে। আমি তার থেকেও উঁচু লেভেলের গালাগাল দিয়ে দ্বিগুন জোরে নাচতে থাকি আর মদ খেতে থাকি। তারপর কখন যেন ঘুমিয়ে যাই, টের পাই না। সুখের জীবন।
সেদিনও আমার শিল্পকর্ম করে ২০ টাকার বিরিয়ানি আর ভদকা গিলে ক্লান্ত হয়ে গঙ্গার ধারে জামা খুলে শুয়ে ঘুমাচ্ছি, এমন সময় ঠন্ ঠন্ করে কেমন একটা আওয়াজ এসে ঢুকলো কানে। কই এদিকটায় তো পুরনো কার্তিকের মূর্তি রাখা ছাড়া আর কোনো কাজে কেউ আসেনা, কে রে ভাই! বিরক্তি নিয়ে পাশ ফিরে শুলাম, চোখে একটু ঘুম আসবে আসবে করছে এমন সময় আবার সেই আওয়াজ- ঠন্ ঠন্ ..।
মটকা গরম হয়ে গেল। আমার শিল্পের খাতিরে মটকা ঠান্ডা রাখতে হয় আমায়, নইলে আমার হেব্বি রাগ! আগে তো যাকে পেতাম তাকেই মেরে আটা বানাতাম! রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কেউ যদি হঠাৎ মুখের সামনে এসে আটকে যেত তাহলে ধরে দু চার ঘা দিয়ে দিতাম। নিজেও হেব্বি মার খেয়েছি সেসময়। খেতাম ও দিতাম ও। তবে আজকাল আমায় ভদ্র হয়ে থাকতে হয়। আমার শিল্পের খাতিরে। শিল্পী মানুষ তো আমি, তাই।
চোখটা মেলে টেরিয়ে তাকালাম একটু, ফাঁকা গঙ্গার ঘাট। প্লাসটিকের বোতল মদের বোতল চিপসের প্যাকেট সব এসে জমা হয়ে রয়েছে, একদম স্বাভাবিক। মানুষও নেই, কুত্তাও নেই। কিসের আওয়াজ রে ভাই! হঠাৎ চোখ চলে গেল ঘাটের ধারের দিকে। ওপাশে একটা সিঁড়ির ধাপ আছে বটে, তবে ভেঙে গেছে। কেউ আসেনা এই ঘাটে। সেখানে কি যেন একটা এসে গুঁতো খাচ্ছে সিঁড়িতে। তাতেই এই আওয়াজ!
ঠন্ ঠন্ আওয়াজ আমার মটকা গরম হয়ে উঠলো! উঠে হম্বি তম্বি করে গেলাম। দেখি একটা লম্বা মোটা কাঁচের বোতল। ছিপি আঁটা। ওটাই ভেসে এসে গুঁতো খাচ্ছে আর ঠন্ ঠন্ করে আওয়াজ হচ্ছে।
বোতলটা তুলে নিয়েই ছুঁড়ে ফেললাম মাঝগঙ্গায়। ফেলে দিয়ে এসে শুয়ে রইলাম। ঘুমটা চটকে গেছে। ঝোলা খুঁজে ভদকার বোতলটা বের করতে গেলাম, দেখি শেষ হয়ে গেছে দুপুরেই। দূর!
ঠিক এই সময় আবার ঠন্ ঠন্ করে আওয়াজ এলো সিঁড়ির থেকে। লাফ দিয়ে সিঁড়ির সামনে গিয়ে চমকে গেলাম, এ তো সেই বোতলটাই। এত তাড়াতাড়ি কি করে ফিরে এলো! এ তো আর পুরীর সমুদ্রের ঢেউ না! জোয়ারও তো আসেনি! এ কি রে ভাই!
বোতলটা ভালো করে এবার দেখলাম। মোটা কাঁচের বোতল, ছিপি আঁটা শক্ত করে, মদের বোতলের মতই, তবে বেশ রাজকীয় দেখতে, ভেতরের দিকে তাকাতেই আমি লাফিয়ে উঠলাম। একটা ঘন ধোঁয়ার মত ভেতরে, ধোয়াটা লাল নীল রঙ হচ্ছে মাঝে মাঝে, ঘুরে ঘুরে বেরাচ্ছে ভেতরে!
এ কিরে ভাই! এ তো আলিফ লায়লা! সেই যে সেই টিভিতে হতো, দেখেছিলাম! এরকমই বোতলের ভেতরে ভূত না জিন না কি ঘোড়ার ডিম থাকে, ছিপি খুললে বর দেয়! উরি সাবাস! আমি তো মালামাল হয়ে যাবো রে ভাই! সারাজীবনের জন্য ফ্রী বিলিতি মদের বর চাইবো, একটা রাজপ্রাসাদ… না ওটা থাকগে আমার ফ্ল্যাটটা তো ভালোই আছে। বরং ভরপেট চিকেন মাটন রাইস পোলাও সব চাইবো। আর তিন নম্বর.. কিন্তু এ যদি তিনটে বর না দেয়? যদি একটাই দেয়?
এদিক ওদিক তাকালাম, কেউ নেই। তবু বোতলটা খুলতে ভয় লাগল, যদি বর না দিয়ে উড়ে পালায়? আজ আর বিকেলবেলার শিল্পকর্ম করতে গেলামনা। বোতলটা ঝোলায় পুরে মদ মাংস সব কিনে সন্ধ্যেবেলাতেই ঘরে গিয়ে ঢুকলাম। গিয়ে বোতলটাকে বিছানার ওপর রাখলাম সোজা করে। নিজে মেঝেয় বসলাম। বসে মদ খেতে লাগলাম আর বোতলটা দেখতে লাগলাম। এক ঢোক মদ খাই, আর তাকিয়ে দেখি। খাই আর দেখি।
আস্তে আস্তে বোতলের ভেতরে কেমন একটা আলো ভরে উঠল, উত্তেজনায় আমি মুরগী মাটন সব গপগপ করে খেতে লাগলাম আর তাকিয়ে দেখতে লাগলাম! আলোটা লাল নীল হয়ে খেলা করছে ভেতরে। আমি রাতে এমনিতেও আলো টালো জ্বালাই না। অন্ধকার ঘরটা কেমন যেন আজব আলোয় ভরে গেল। আমি প্রচুর মদ গিলে ফেলেছি ততক্ষণে, টলতে টলতে উঠে গিয়ে বোতলটা হাতে নিলাম। ভয়ে ভয়ে ছিপিটা টান দিলাম। খুব শক্তভাবে আটকানো। দাঁত দিয়ে টেনে খুলতেই ফট্ করে একটা আওয়াজ হলো! বোতলটা বিছানার ওপর পড়ল। আমি ভয়ে পিছিয়ে এলাম! আলোভরা মেঘের মত জিনিসটায় সারাঘর ভরে গেল যেন! আমি তার মাঝেও ঢকঢক করে গ্লাসে যেটুকু মদ বাকি আছে গিলে নিচ্ছি। মদ কোনোদিন নষ্ট করতে নেই! এমন সময় ধোঁয়ার মধ্যে থেকে গম্ভীর গলায় কে যেন আওয়াজ দিল, “কে রে তুই! আমার সামনে মদ খাচ্ছিস!”
তাকিয়ে দেখি ধোঁয়ার মধ্যে সারা গা আলো করে এক মুশকো চেহারার মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। মানুষ না ভূত কে জানে! গায়ে রাজকীয় বেশ, মাথায় মুকুট। রাজা গজা নাকি! কিন্তু বোতল থেকে বেরিয়েছে মানে ভূতই হবে। আমি হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম। বললাম, “কে আপনি?”
মুশকো চেহারাটা গর্জে উঠলো, “আমি মদের দেবতা অ্যালকোলিয়াস! জিউসের কাকার শ্বশুরের নাতি, ক্লিওপ্যাট্রার মামাদাদু! আমার নিজের ভাই টব্যাকিয়াস আমাকে এক ডাকিনীর অভিশাপের সাহায্য নিয়ে এই বোতলে আটকে রেখেছিল। আমি দেবতা তাই অমর। এতযুগ এতকাল ধরে এত সমুদ্র এত নদী ঘুরে আমি অবশেষে গ্যাঞ্জেস নদীর তীরে এসে কোনো মানুষের হাতে পড়েছি। সেই জন্যই তুই ছুঁড়ে ফেলে দিলেও আমি ভেতর থেকে ঠেলে ঠেলে আবার আমার বোতলটাকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলাম! তোর হাতেই আমার মুক্তি হয়েছে! কে তুই!”
আমার গ্লাসের মদ শেষ। আজ দোকান থেকে জালি হুইস্কি দিয়েছে মনে হয়, মাথাটা কেমন ভোঁ ভোঁ করছে! চেঁচিয়ে বললাম, “গ্যাঞ্জেস নে ঠ্যালা আর নামটা কি বললে..? দেবতার নাম হয় কার্তিক.. গণেশ.. তা নয় কিসব আলু পটল নাম! অতসব জানিনা! তোমার রেট কত? ঝেড়ে কাশো!” মদের দেবতা কেমন স্তম্ভিত হয়ে গেল বোধহয় এক সেকেন্ডের জন্য। তারপর চরম আক্রোশে গর্জে উঠল, “আমার রেট জিজ্ঞেস করিস! দেবতাকে রেট জিজ্ঞেস করিস! পাষন্ড! বর্বর! এথেনার মরা বেড়ালের দিব্যি, দিব্যি প্যান্ডোরার বাক্সের, এরকম কথা আর বললে তোকে শেষ করে দেব আমি! দেবতার সামনে বেয়াদপি!”
আমি মুরগীর একটা হাড় চুষতে চুষতে বললাম, “দেখো বাপু, মানে দেবতা বাপু, অতশত জানিনা। তোমায় মুক্তি দিয়েছি মানে বর দিতে হবে। এবারে কটা দেবে বলো। এমনিতে তিন চারটে তো দেয় শুনে এসেছি। তুমি এত বড় দেবতা, এত বড় গুষ্টি তোমার.. পাঁচ- ছটা তো দিতে পারো! নাকি?”
রেগে দাঁত কিড়মিড় করতে লাগলো সেই দেবতা। বাইরে বোধহয় শোঁ-শোঁ করে ঝড় উঠলো.. আমি রামের বোতলটা খুলছি আর আড়চোখে দেবতাকে দেখছি। বোতলটা থেকে গবগব করে মদটা ঢালছি গেলাসে এমনসময় দেবতা হুঙ্কার দিল, “চাইলে তোকে এখানেই শেষ করে দিতে পারতাম কিন্তু তুই আমাকে বোতল থেকে বের করেছিস তাই একটা বর দিতে পারি! বল কি চাস! কিন্তু তারপরে আমি চলে যাবো এখান থেকে! টব্যাকিয়াসের সাথে পুরনো বোঝাপড়া মেটাতে! ব্যাটা নাকি সবার কাছে আমার থেকে বেশী প্রিয়! নে বল কি চাস! তাড়াতাড়ি বল আমার মাথা খাস না আর!” আমি ময়লা দাঁতের পাটি বের করে বললাম, “আমায় এমন বর দাও যেন আকন্ঠ মদ সারাজীবন গিলতে পারি। কোনোদিনও যেন মদের অভাব না হয় জীবনে, যেন রাতদিন মদই খাই খেয়ে উলটে পড়ে থাকি।”
দেবতা ঘৃণাভরে বলল, “ছি: ছি: কি অবস্থা তোর! আমি মদের দেবতা কিন্তু তোর মত পাঁড় মাতাল আমি জীবনে দেখিনি! সারাজীবনের জন্য মদ আমি দেবো না, বড়জোর আজ সারারাত খাওয়ার মত মদ দিতে পারি! দেখ নিলে বল নইলে আমার হাতে অত টাইম নেই আর ইচ্ছেও নেই তোর উল্টোপাল্টা বর মেটাবার! বল, চলবে?” আমি চোখ কুঁচকে হেসে বললাম, “হ্যাঁ তাও খারাপ না, সারাজীবনের জন্য হলে অবশ্য ব্যাপারই আলাদা হতো, ঠিক আছে তাই দাও..।”
দেবতা আমার বিছানার দিকে এগিয়ে বললেন, “এটা আমারই বোতল। সাত সাগরের পারে, অ্যান্ড্রোমেডা গ্যালাক্সীর দক্ষিণ প্রান্তে স্বর্গের চোরা পুকুর আছে। সেখানে জলের জায়গায় বয়ে যায় মদ। সেই মদের কোনো শেষ নেই। আমার এই বোতল ওই পুকুরের সাথে যুক্ত। এর থেকে দেব তোকে আজ দেবতার মদ! যা খেয়ে স্বর্গে ডিমোস গড়াগড়ি খায়, যার নেশাতে হাজার হাজার অপ্সরা রা মর্ত্যে নেমে দ্রগর দের সাথে বরফের পাহাড়ে নৃত্য করে! সেই পরম সুধা, সেই পরম মদ আজ তোকে দেব! তোর পরম সৌভাগ্য, মাতাল কোথাকার! এই নে!”
আমি চুপ করে শুনলাম, গ্লাস, ফাঁকা হুইস্কির বোতল, জড়ো করে রাখা পুরনো মদের বোতল সব ভর্তি করে সেই মদ নিলাম। তারপর দেবতা সেই বোতল কোমরে বেঁধে বলল, “খুশী তো তুই? আমায় মুক্তি দিলি তাই এটুকু দিলাম, নইলে এখনই বজ্রবিদ্যুৎ আর বন্যায় তোকে ডুবিয়ে মারতাম! অনেক শক্তি আমার!..”
আমি হঠাৎ মাঝপথে দেবতার ভাষণ থামিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে ওনার গায়ের ওপর গিয়ে পড়লাম! চমকে উঠে দেবতা গর্জে উঠল, “হতভাগা করিস কি! করিস কি!” যতই দেবতা আমায় ছাড়াতে চেষ্টা করে, আমি আরো জড়িয়ে ধরি! সাথে হাইমাউ মরাকান্না! ডুকরে কেঁদে বললাম, “প্রভু আমার ভুল হয়ে গেছে! প্রভু গো! ও প্রভু! আমায় ক্ষমা করো গো! তোমার এত শক্তি আমায় তুমি নিশ্চিত মেরে ফেলবে! আমি জানি গো! ওরে বাবা রে! আমায় মেরে ফেলবে না তো! দিব্যি দাও!”
আমি জড়াজড়ি করার পরে মাটিতে উবুড় হয়ে লুটিয়ে দেবতার পা ধরে কাঁদছিলাম। দেবতা বলল, “আরে না রে বাবা না ! মারবো না! ওহ! এ তো একদম বেহেডেড মাতাল দেখছি! কি জ্বালা! পা ছাড় এবার!” আমি পা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম, “না আগে কথা দাও, আমায় মারবে না তুমি, সামনে আসবে না তুমি আর কোনোদিনও! তবে আমার ভয় কমবে! কথা দাও নইলে এই পায়ের ওপরেই বমি করবো!”
দেবতা শিউরে উঠে বললেন, “আমি ইলিয়াড ওডিসি ও মহাজগতের ওপারের ধর্মগ্রন্থসমূহের দিব্যি, সেন্টরের দাড়ির দিব্যি, এরিসের কোমরবন্ধনীর দিব্যি, স্বর্গের সবথেকে সুন্দরী অপ্সরীদের দিব্যি দিয়ে বলছি, কোনোদিন কোনোযুগেও তোর মতো পাঁড় মাতালের সামনে আসবো না! স্বর্গ মর্ত্য আর স্বর্গীয় মদ সাক্ষী রইল! দেবতার দিব্যি কোনোদিনও ভাঙে না! নে ছাড় আমার পা, ছাড়!”
আমি গলা দিয়ে বমি করার মত আওয়াজ করতেই রুদ্ধশ্বাসে সেই দেবতা দৌড় দিল, বন্ধ দরজা ফুঁড়ে কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেল! উঠে দরজাটা খুলে একবার দেখলাম, সত্যিই পালিয়েছে! চারপাশে দেবতার দেওয়া উপহারের মদ। আর আমার পায়ের কাছ থেকে হাসিমুখে তুলে নিলাম আরও একটি মদের বোতল। কোনো সামান্য বোতল না, সেই স্বর্গের মদের পুকুরের বোতল! মদের দেবতার বোতল!
আমার শিল্প নিয়ে আগে থেকেই গর্ব ছিল বুকে। সেয়ানা মারকুটে কলকাতার বাঙালীদের পকেট মেরে খাই আমি রোজ, আর ও তো এমনি দেবতা! আজ নিজের পকেটমারি বিদ্যার এরকম সফলতায় চিৎকার করে নাচতে শুরু করলাম! নীচের ঘর থেকে গালাগালি কানে এলো। আমি দ্বিগুন উৎসাহে গালি দিয়ে বোতলটা জড়িয়ে ধরে নাচতে লাগলাম। তারপর সোজা চলে গেলাম ছাদে। গিয়ে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে খ্যাঁক খ্যাঁক করে হেসে উঠলাম! সারারাত মদ খেয়ে ছাদে সেদিন খুব নাচলাম!
আজকাল আমায় মদ কিনতে হয় না। দেবতার সেই বোতল উল্টো করে ধরলেই মদ গড়িয়ে আসে! আহা কি মধুর সে স্বাদ! হুইস্কি টুইস্কি সব ফেল! রাতদিন মদ খাই, ভাগাড়ের পাশে মদনার দোকানের ২০ টাকার বিরিয়ানি খাই, আরামে আছি। ভাবছি মদ খাওয়ার সাথে সাথে মদের দোকান দেবো নাকি! আমার জীবনের ভালোবাসা মদ নিয়ে কাটবে এবার আমার সারাটা জীবন! আর এর সব কৃতিত্ব, আমার শিল্পকলার!
তবে মদের সারাজীবনের সাপ্লাই পেলেও হাতের কাজ ছাড়িনি। কথায় আছে, চর্চা রাখতে হয়। তাই আজও পকেট মারি, বটতলায় গিয়ে শুই। জানি দেবতা আর দেখা দেবে না, নিজের দিব্যিতে নিজেই আটকে গেছে! বোতলটা অবশ্য কাছছাড়া করিনা। আমার হাতের কাজের পরম পুরস্কার, আমার মদের ফোয়ারা, দেবতার সেই বোতল!
(সমাপ্ত)