ফ্রী বডি ডায়াগ্রাম

ফ্রী বডি ডায়াগ্রাম

নিজেকে বেশ ফ্রী বডি ডায়াগ্রামের মত লাগছে মহুয়ার, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রথম সেমিস্টারেই শব্দটির সঙ্গে আলাপ হয় ওর। আজ নিজেকে যা ঝাড়া হাত পা লাগছে তাতে ওই ফ্রী বডি ডায়াগ্রামের সঙ্গে তুলনা করা যায়। তবে কলেজের মেকানিক্সের প্রফেসর ডি ডি যদি জানতো মরার পর মহুয়া ওর ক্লাসের কথা ভাবছে বা নিউটনের অতি জটিল থিওরির ওপর দাঁড়ানো মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ভিতের সঙ্গে নিজের সুক্ষ দেহের তুলনা করছে, তবে হয়তো ওখানেই হেঁচকি তুলতে তুলতে অক্কা পেত। মহুয়ার হাসি পেয়ে গেল ডি ডি স্যারের বিশাল বপু আত্মাটা ওরই পাশে ভাসতে গিয়ে মাধ্যাকর্ষণ এর ঠ্যালায় নীচে নেমে যাচ্ছে ভেবে ভেবে। আচ্ছা আত্মার ওপর তো আবার মাধ্যাকর্ষণ কাজ ও করে না, তাই জন্য না মহুয়া এখন ভাসছে নিজের ঘরে।

বাবা যদি জানতে পারতো মেয়ে মরে ও কল্পনার জগতে ভেসে আছে তাহলে হয়তো এখনো তুলকালাম করত।কিন্ত মহুয়ারই বা কি দোষ বলুন তো, সে তো ছোটো থেকেই সাহিত্যকে ভালো বেসেছে। পড়ার বইয়ের ভেতর লুকিয়ে গল্পের বই পড়েছে, সেটা নিয়ে ধরা পড়ে কত কিল চড় ও যে খেয়েছে মায়ের হাতে তার হিসাব নেই।উচ্চ মাধ্যমিকের পর ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়তে চেয়েছিল, স্নাতকের বিষয় হিসেবে বাংলাকে যে চরম বাস্তববাদী উকিল বাবা মেনে নেবেনা সে ধারণাটুকু তার ছিল। নইলে মাধ্যমিকের পর অঙ্ক পরীক্ষার পর যে মেয়ে নাচা নাচি শুরু করেছিল যে আর অঙ্ক করতে হবে না, তাকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি কখনোই হতে হত না। সেখানে ও জোর খাটলো কই আর, সেই জয়েন্টে ও বসতে হল। একটা আপোষ বাবা অবশ্য মেনে নিয়েছিলেন, মেয়ে নিজের হাত কেটে গেলে রক্ত দেখে ভিরমি খায় দেখে ১১ ক্লাসে বায়োলজিটা নিতে বাধ্য করেননি। ফলে উইলিয়াম ব্লেক আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছেড়ে C আর জাভার নিরস ভাষা আয়ত্ত করতে হয়েছে ২ বছর ধরে।

তাতে ও শেষ রক্ষা হল কই,কলকাতার একটা মোটামুটি ভালো নামী কলেজে পড়ার সুযোগ হল, কিন্ত কম্পিউটার না, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছিল মহুয়া, কিন্ত বাবা ও কে ইঞ্জিনিয়ার বানিয়েই ছাড়বে। এবার পরীক্ষায় বসে যদি ফ্রি বডি ডায়াগ্রামের ওপর অঙ্ক করতে গিয়ে ওর মাথায় খালি 3 ইডিয়টের ‘ মুরগি না জানে আন্ডে কা ক্যা হোগা’ ভাসতে থাকে তাহলে ও কে খুব বেশি দোষ দেওয়া উচিত কি|

পরীক্ষার নম্বর ও সেরকম আন্ডার মতই এল , এই রেজাল্ট নিয়ে বাবার সামনে দাঁড়ানোর থেকে মায়ের স্লিপিং পিলস চুরি করাটা অনেক সহজ মনে হয়েছিল মহুয়ার। তারপর আর কি রাতে শোয়ার আগে সবকটা ওষুধ একসঙ্গে নিয়ে…. খুব একটা কষ্ট ও হয়নি। চোখ খোলার পর ভেবেছিল হয়তো কাজ হয়নি ঠিকমতো, কিন্ত যখন সিলিংয়ের সাথে একদম চোখাচুখি হয়ে নীচে তাকিয়ে নিজের শরীরটা পড়ে থাকতে দেখল তখন বুঝল কাজ ঠিকঠাকই হয়েছে। যত নষ্টের গোড়া ওই নিউটনের ওপর একটু রাগ ও হল, ব্যাটা আর বসার জায়গা পায়নি, পড়ল যখন ওর মাথায় পাখির ইয়ে ও তো পড়তে পারত।

এরই মধ্যে সকাল থেকে ডেকে ডেকে সাড়া না পেয়ে বাড়ির লোক দরজা ভাঙার ব্যবস্থা করে ফেলেছে। বাবা ঘরে ঢুকেই ধপ করে মাটিতে বসে পড়ল, মা পাগলের মতো কেঁদে চলেছে। এবার মহুয়ার একটু খারাপ লাগা শুরু হয়েছে। ভুল করে ফেলল কি তাড়াতাড়ি তে।সুইসাইড নোটের সাথে ওর রেজাল্টের কপিটা ওর কবিতার ডায়রি দিয়ে চাপা দিয়ে রেখেছিল। বাবা তো সব ছেড়ে ওর ডায়রিটাই আঁকড়ে ধরেছেন, একটা কথাই বলে চলেছেন যে ভুল হয়ে গেছে ওনার,আর বাধা দেবেন না ওকে, একটা সুযোগ চাই মহুয়ার থেকে।

আর ভালো লাগছে না এখানে থাকতে, ভেবেছিল মা বাবাকে এভাবে দেখলে ওর ভেতরটা খানিকটা শান্তি পাবে, জোর করে ইঁদুর দৌড়ে ওকে সামিল করানোর শাস্তি দিতে চেয়েছিল ওদের। কিন্ত এখন নিজের সিদ্ধান্তের ওপর বড় আফশোষ হচ্ছে যে।

জানলা দিয়ে বেড়িয়ে যাবে এরই মধ্যে খাটের পাশে রাখা মোবাইলটার ওপর নজর গেল ওর। কয়েক দিন ধরে ফেসবুকের ‘ভূতান্বেষী’ নামে একটা গ্রূপে সামান্য লেখালেখি শুরু করেছিল ও। বেশ কয়েকটা ভূতের গল্প লিখে জমা ও দিয়েছিল। এখন এই ফ্রি বডি অবস্থায় শেষ গল্পটা লিখে জমা দিলে কেমন হয় বলুন তো। এডমিন নিশ্চই এপ্রুভ করে দেবেন। হাজার হোক ভূত যদি শুধু নিজের মনের কথাটাও লেখে, সেটা ও তো ভৌতিক অভিজ্ঞতাই হয় না কি।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত