ইরা বলছে সে আর আমার মাকে সহ্য করতে পারছে না। বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিতে! কথাটা বেশ কিছুদিন ধরেই বলছে। এই ব্যাপারে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। হ্যাঁ আমি আমার মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিবো। তার আগে একটি শর্ত আছে। এক মাস রাতের খাবারটা মাকে নিয়ে বাহিরে কোথাও খেতে হবে। সে কোনোমতেই এটা পারবে না। এরকম একটা মহিলার সাথে সে কোনোভাবেই বাহিরে বের হতে পারবে না৷ একসাথে কোথাও বসে খাওয়া তো দূরের কথা!
ভালোভাবে বুঝিয়ে বললাম। একমাস কোনরকমে কাজটা করতে পারলে সে আজীবন শান্তিতে থাকবে। আর না করলে এভাবেই থাকতে হবে। বুদ্ধিমতীর মতো রাজি হলো সে। সে সারাজীবন শান্তিতেই থাকতে চায়। যাকে আপনি দু’চোখে দেখতে পারেন না। আবার সেও আপনাকে সহ্য করতে পারে না৷ তাঁকে নিয়ে বাহিরে যেতে আপনি কীভাবে বলবেন? রাগী মুখে বললে কেউই রাজি হবে না। প্রথম দিন সে বললো, আমি পারছি না। লজ্জা করে। উত্তর দিলাম, তাহলে আর কী? এভাবেই সহ্য করে যাও।
সে তা কোনোভাবেই করতে পারবে না। আমি আমার সিদ্ধান্তে অটুট। তবে সে যদি কাজটা করতে পারে আমিও মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে পারবো। তারপর কয়েকদিন গেলো ইরা চুপচাপ। বেশি কথা বলছে না। মায়ের সাথে মেশার চেষ্টা করছে। আস্তে আস্তে সে একদিন রাজি করিয়েই ফেললো বাহিরে গিয়ে রাতের খাবারটা কোনো রেস্টুরেন্টে খাবে! এভাবে প্রায় পনেরো দিন চলে গেলো৷ তাঁরা রোজ সন্ধায় বের হয়৷ রাত আটটার দিকে ফিরে আসে। বাহিরে নিয়ে যেতে হয় এজন্য সম্পর্কটা সুন্দর রাখছে ইরা মায়ের সাথে৷
ভালোভাবে কথা বলা৷ দুজনে একসাথে রান্না করা ইত্যাদি। যখন এভাবে বিশ দিন চলে গেলো। আমি ইরাকে বললাম। মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি৷ তুমি শুধু এভাবে আর দশটা দিন মাকে নিয়ে বের হও। এভাবে আরো কয়েকটা দিন গেলো। শেষের দিন। মানে যেদিন ত্রিশ দিন পূর্ণ হবে। সেদিন সব ধরণের গোশত আনলাম। ভোরে বাজারে গিয়েছিলাম। ইরা তখন ঘুমাচ্ছিলো৷ উঠার পরে বললাম, “ আজকেই তো মায়ের বাড়িতে শেষ দিন। ভালো করে রান্না করো। ” ইরা যেন চমকে গেলো।
“ শেষ দিন মানে? ”
“ মানে আজ তোমার ত্রিশ দিন পূর্ণ হয়ে যাবে। কালকে মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিবো। তুমি তোমার কাজটা করেছো। আমিও আমার কথা রাখবো। ” ইরা স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলো। তারপর মায়ের রুমে গেলাম। মাকে বললাম, “ কালকেই ইরাকে তালাক দিয়ে দিবো। তাঁর মতো নোংরা মনের মেয়ের কোনো জায়গা নেই এই বাড়িতে। ”
“ নাউজুবিল্লাহ্! ইরা নোংরা তোকে কে বলেছে? ”
“ যাহোক, বাজার করে এনেছি। শেষবারের মতো রান্না করো। কালকেই তাঁর বিদায়! ”
মা আর কিছু না বলে বাজারগুলোর কাছে গেলো। কিন্তু টেবিলের উপরে সেগুলো পেলো না! ইরা সেখানে কান্না করছে দাঁড়িয়ে। মা মাথায় হাত দিয়ে বললো, “ কাঁদছিস কেনো? ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এরকম মাঝেমধ্যে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে হয়। ওকে আমি চিনি। তোকে ছাড়া থাকতে পারবে না। আমিও না! ” মায়ের কথা ইরা মনে হয় শুনেইনি! উল্টো বললো, “ আমাকে ক্ষমা করে দেন না৷ নিজের মেয়ে হলে কী ক্ষমা করতেন না? ” আমি মাঝখান দিয়ে বললাম, “ ইরা, তুমি অনেক অভিনয় জানো। এ বাড়ি অভিনয়ের জায়গা না! ”
“ এই তুই চুপ করবি? অনেকক্ষণ ধরে তুই উল্টাপাল্টা বকছিস! ” মা বললো!
ইরা মাঝখানে আবার বললো, “ হ্যাঁ প্রথমে অভিনয় করেছি। এখন করতে পারি না। ভালো ব্যবহারের বিপরীতে কেউ এতো ভালোবাসতে পারে তা কোনোদিনও বুঝিনি! ” মা আবার মাথায় হাত দিয়ে বললো, “ তোদের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছি না আমি। ইরা থাম, আগে বল বাজার আনলো যে মাত্র সেগুলো কোথায়? ”
“ ফেলে দিয়েছি! ”
“ আমিও তাই করতে এসেছিলাম। তুই কোনো চিন্তা করিস না। তোকে আমি কোথাও যেতে দিবো না। ও একটা পাগল। পাগলের কথায় কান দিতে নেই! ” বলে ইরাকে রুমে টেনে নিয়ে গেলো। মা তাঁকে ভিবিন্নভাবে বুঝানোর চেষ্টা করছে। আমি তাঁকে তালাক দিবো না। দিতে পারি না। আর ইরা কৈ মাছের মতো জিম ধরে বসে আছে! ভাবছে হয়তো, কে কাকে শান্তনা দেয়ার কথা আর কে দিচ্ছে!
কী হওয়ার কথা আর কী হচ্ছে! আমাকে তখনই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো মা। যখন ফিরলাম। মা আর ইরা দুজনেই খুব ক্ষেপে আছে আমার উপর! অথচ আমি ধন্যবাদ পাওয়ার মতো কাজ করেছি! কথাগুলো ২০০৭ এর। অনেক বছর হয়ে গেছে। তাঁদের যে আর ঝগড়া হয়নি এমন না। মা মেয়ের যেমন হয়। দুনিয়াটাই এমন। কেউ ভালোবাসতে ভালোবাসতে অভিনয় করে ফেলে। কেউ অভিনয় করতে করতে ভালোবেসে ফেলে!