সেই লোকটা

সেই লোকটা

মিলা আর আতিক দুই ভাই বোন। বাবা মা বাসায় নেই। একসাথে দুই ভাই বোন বসে গল্প করছিলো এমন সময় এক লোক আসলো। সে আতিক কে বলল বাবা কিছু খেতে দাও। লোকটার বয়স বেশি বুঝাই যাচ্ছে। বয়সের ভারে পিঠ কুজো হয়ে গেছে। বুড়ো ঠিক মতো দাড়াতেও পারছে না। আতিকের খুব মায়া হল দেখে। সে তাকে ভেতরে নিয়ে বসালো। মিলা কে বলল তাকে ভাত দিতে। মিলা ভাতে তরকারি বেরে দিতে গেলেই লোকটি বলল মা – খালি ভাত দাও। মিলা তাকে খালি ভাতের প্লেট এগিয়ে দিলো। লোকটি খালি ভাত গিলতে লাগলো। আতিক লোকটির দিকে তাকিয়ে আছে। মাগরীব এর আজান এর শব্দ ভেসে আসলো। আজানের শব্দ শুনেই লোকটি খাওয়া রেখে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। আতিক পেছন থেকে ডাক দিলো আরে চাচা পানি তো খেয়ে যান। কিন্তু লোকটি এক দ্রুত বেরিয়ে গেল। আতিকের মনে সন্দেহ হলো।

সেও লোকটির পিছু নিল। লোকটি তাদের এলাকার এক কবরস্থানের পাশে গিয়ে থামলো। চারপাশে লোকজন কেও নেই। অন্ধকার নেমে আসছে। গাছে বসা কাক গুলো অসাভাবিক ভাবে ডাকাডাকি করছে। আতিক লহ্ম্য করলো তার শরীর ভার হয়ে আসছে। সে ভয় পেল কিছুটা। সামনে তাকিয়ে দেখল সেই বুড়ো লোকটা কবরস্থানের দেয়াল ভেদ করে ভেতরে চলে গেল। আতিক ভয়ে দ্রুত হাটা শুরু করল। হঠাৎ তার সামনে তিন টা কালো কুকুর এসে তার পথে দাঁড়ালো। এগুলা সাধারণ কুকুরের মত না। এদের শরীর অনেক বড়। দাঁত গুলো গলা পযন্ত লম্বা। মুখ দিয়ে গো গো শব্দ করছে। চোখগুলো রক্তের মত লাল। আতিক দৌড়ানো শুরু করলো। সেই জন্তু গুলাও তার পিছে দৌড়াতে লাগলো।

আতিক কোনোমতে দৌড় দিয়ে তার বাসায় গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। দরজার ফাক দিয়ে সে দেখল জন্তু গুলো দরজার বাইরে দাড়িয়ে আছে। আতিক ঘড়িতে দেখল এশার আজানের সময় হয়ে গেছে। আজান দিতেই জন্তু গুলা হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। আতিক তার বোন কে কিছুই বলে না। সে ভয় পাবে তাই। তার আববু আম্মু কে ফোনে সব খুলে বলে। তারা বাড়িতে এসে লোকজন নিয়ে সেই কবরস্থান যায় সেই লোক আর জন্তু গুলোকে খুজতে কিন্ত তারা কিছুই খুজে পায় না। রাত দুইটার দিকে আতিকের ঘুম ভেঙে যায়। সে ওই কুকুরের মত জিনিস গুলার গো গো শব্দ তার রুমে শুনতে পায়। হঠাৎ সে অনুভব করলো একটা কুকুর তার বুকের ওপর চাপ দিয়ে দাড়িয়ে আছে Aisha Fateha

সে ভয়ে চিতকার দিলো। সবাই এসে রুমের ভেতর দেখল সে অচেতন হয়ে পড়ে আছে। এরপর শুরু হল সমস্যা। আতিক সেই লোকটাকে দেখতো। প্রতি রাতে দেখত সেই লোক তার রুমে বসে আছে। ছাদে বারান্দায় সব জায়গায় সে তাকে দেখত,,, লোকটি তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। এমনকি তার কলেজ এর মাঝেও তাকে দেখতো। আতিক আস্তে আস্তে পাগলের মত আচরণ শুরু করে।

কারো সাথে কথা বলে না। পড়ালেখা ও বন্ধ হয়ে যায় তার। তার বাবা অনেক ডাক্তার দেখান কিন্তু কোনো রোগ ধরা পড়ে না। আতিক তার শরীরে ব্যাথা অনুভব করে। এতো ব্যাথা যা সে সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার করার চেষ্টা করে কিন্ত ভাগ্যবশত বেঁচে যায়। এক সময় তার বাবা তাকে একজন কবিরাজ এর কাছে নিয়ে যান। শুরু থেকে সব ঘটনা কবিরাজ কে বলার পর তিনি বলেন – সেই লোকটা কোনো মানুষ নয়। সেটা একটা বদ জিন যার সত্যতা আপনার ছেলে সেদিন দেখে ফেলেছিল।এখন সে আপনার ছেলেকে তার সাথে নিয়ে যাবে।

আপনার ছেলের মৃত্যুর মাধ্যমেই এই ঘটনার শেষ হবে। তার বাবা কবিরাজের কাছে বলল আমার ছেলেকে বাচানোর কি কোনো উপায় নেই? কবিরাজ বললেন- আপনার ছেলে যদি ঐই কবরস্থানে রাত ১২ টায় গিয়ে নিজের হাত কেটে রক্ত সেখানে ফেলে হ্মমা চায় সেই জিন এর কাছে আর যদি সে তাকে হ্মমা করে দেই তাহলে আপনারা ছেলে বেচে যাবে।কিন্তু এই কাজ এত সহজ না। আপনার ছেলে যদি সেখানে ভয় পেয়ে বেরিয়ে যায় ৩ ঘন্টার আগে তাহলে আর কিছুই করার থাকবে না। তাকে তিন ঘন্টা ঐই এক জায়গায় থাকতেই হবে। তার বাবা তাকে অনেক বুঝিয়ে সেখানে পাঠালো। তার বাবা ও তার দুই চাচা কবরস্থানের বাইরেই দাড়িয়ে তাকে পাহারা দিচ্ছে। আতিক কবরস্থানের মাঝ বরাবর গেল। কবিরাজের কথা মত সে নিজের হাত ছুরি দিয়ে কেটে মেঝেতে রক্ত ফেললো। এরপর সে মেঝেতে বসে রইলো।

সে দেখলো তার সমনের গাছে অনেক গুলো কাটা মাথা ঝুলছে। মাথা গুলা জীবন্ত। কাটা মাথা গুলো ভয়ানক শব্দে বলল- যদি মুক্তি চাস তাহলে যা এখান থেকে, যা এখান থেকে , চলে যা। সে আর সহ্য করতে পারলো না। এক দৌড়ে সে বাইরে এসে লুটিয়ে পড়ল। হাসপাতালে দুইদিন অচেতন থাকার পর সে উঠে। সে সবাই কে ঐইরাতে কি হয়েছিল সব খুলে বলে। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় তিন দিনের দিন রাতেই সে মারা যায়। সে মারা যাওয়ার পর তার বোন মিলা সেই লোকটা কে দেখা শুরু করে। ঠিক সেভাবে যেভাবে তার মৃত ভাই সেই লোকটাকে দেখতো সব সময়।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত