মা ঘরের কাজ করছিলেন,আমি তার পায়ে সালাম করে বললাম, মা, আমার লেখা কবিতা ম্যাগাজিনে ছাপা হয়েছে। মা কিছুক্ষণ আমার মুখের তাকিয়ে থেকে বললেন, সত্যি? আমি একটা ম্যাগাজিন বের করে মায়ের হাতে দিলাম।
মা আমাকে কিছুক্ষণ বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রাখলেন, তারপর খুশি হয়ে ফ্রিজ খুলে বড় একটা রসগোল্লা আমার মুখে, আরেকটা আমার ছোট বোন লাবনীর মুখে গুঁজে দিয়ে বললেন, আইজ রিয়ার মারে দেখামু কত ধানে কত চাল!কই রে লাবনী,আমার নতুন শাড়ি আর নতুন জুতা গুলো বাইর কর তো দেখি, তোর হাত ঘড়িটা দে। হু আমাকে অপমান! লাবনী বললো, মা কই যাবা?
রিয়ার মায়ের থোতা মুখটা ভোতা করে দিয়া আসি।রিয়া রে আমার পোলার জন্য বিয়ার প্রস্তাব দিছিলাম,রিয়ার মা আমার মুখের উপর কয়,আপনার পোলা তো বাদাইম্যা,অপদার্থের ঢেঁকি। আপনার পোলা রে মাইয়া দিব কে? কত বড় অপমান! আজ দেখাইয়া আসি,আমার পোলার বই বের হইছে। আমার পোলা এখন সেলিব্রিটি! আর,শোন একটা বাক্স করে কিছু মিষ্টি দে,রিয়ার মায়েরে মিষ্টিমুখ করিয়ে আসি!
ফেসবুকে একটা প্রকাশনী থেকে গল্প কবিতা আহবান করা হয়েছে। সেরা গল্প কবিতা দিয়ে একটা বই বের করা হবে। আমি একটা কবিতা পাঠিয়ে দিলাম। দুই সপ্তাহ পর একটা মেসেজ এলো, আপনার কবিতা সিলেক্ট হয়েছে।আগামী মাসে আমরা একটা বই বের করবো, আপনি এক হাজার টাকা বিকাশ করে পাঠিয়ে দিন। আমি বললাম, ভাই আপনারা যে বই প্রকাশ করবেন তার গ্যারান্টি কী?
তারা বললো,বাংলাদেশের বড় বড় কবি সাহিত্যিকরা আমাদের সাথে যুক্ত আছেন। যেমন- আনিসুল হক,আল মনসুর,নির্মলেন্দু গুন,মহাদেব সাহা,শওকত ওসমান,শামসুর রহমান।এরা সব গল্প কবিতা বাছাই করেছেন। তারাই সেরা লেখক খুঁজে বের করেন।
আমি বললাম,ভাই , এই দলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে রাখেন নাই কেন? উনি থাকলে ভালো হতো। উনাকে প্রধান বিচারক রাখা উচিত ছিল! তারা লিখলো,দেখি সামনের বছর চিন্তাভাবনা আছে। আমি আবার মেসেজ দিলাম, ভাই,কেমনে কি? শওকত ওসমান, শামসুর রহমান তো অনেক আগেই মরে ভূত হয়ে গেছেন,তারা এই সব লেখা বাছাই করলেন কীভাবে?
তারা বললো,বিশ্বাস হলে টাকা দেন,বিশ্বাস না হলে নাই। টাকা দিলে বই বের করে দেব।এতো কথার দরকার কী? আপনার কবিতা বের হওয়া নিয়ে কথা! যা লিখছেন,পাগল ছাগল ছাড়া তো এই লেখা কেউ পড়বে না,টাকা দিবেন, বই ছেপে দেব,ব্যস!বই বের হলে সৌজন্য কপি পেয়ে যাবেন। আমার কবিতা নির্বাচিত হয়েছে শুনে, আগডুম বাগডুম হয়ে বিকাশে এক হাজার টাকা পাঠিয়ে দিলাম।বই বের হওয়া নিয়ে কথা! বই বের হলে আমার জানপাখি রিয়ার কাছে মুখ দেখাতে পারবো। ওর কাছে আমার প্রেস্টিজ হাই হবে।তখন ওর মা না করতে পারবে না।
এক সপ্তাহ পর বললো, আরও পাঁচশ টাকা পাঠিয়ে দিতে। দিলাম। দুই সপ্তাহ পর, তারা আমার কাছে নিউজ প্রিন্টে ছাপানো ছোট তিন পিস ম্যাগাজিন সৌজন্য কপি হিসেবে পাঠিয়ে দিল।কয়েকটা কবিতার পাশাপাশি আমার কবিতা ও আছে! মা নতুন শাড়ি পরে,নতুন জুতা পায়ে দিয়ে ছোট বোন লাবনীর হাত ঘড়ি হাতে লাগিয়ে ছুটলেন পোলার অপমানের প্রতিশোধ নিতে!
আমি মায়ের পিছু পিছু দৌড়াতে শুরু করলাম। রাস্তায় এক আন্টির সাথে দেখা। মা মিষ্টির প্যাকেট খুলে দুইটা মিষ্টি আন্টির হাতে দিয়ে বললেন, দোয়া করবেন ভাবি, আমার পোলার বই বের হইছে। এখন দেখবেন প্রতি মাসে ফটাফট বই বের হবে!
মা আমাদের গ্রামের স্কুলে ঢুকে সেই ম্যাগাজিন থেকে আমার কবিতার পৃষ্ঠা ছিড়ে নোটিশ বোর্ডে ঝুলিয়ে দিলেন। হেড মাষ্টারকে ডেকে বললেন, দোয়া করবেন স্যার।আমার পোলা বড় লেখক হয়ে গেছে, এখন থেকে প্রতিমাসে বই বের হবে। আপনার সন্ধানে যদি ভালো খান্দানী বংশের কোন সুন্দরী মেয়ে থাকে, আওয়াজ দিয়েন!যার তার লগে তো আর পোলার বিয়া দেওয়া যাবে না।
আমি বললাম, মা,চল এবার বাসায় যাওয়া যাক।বলিস কী রে! প্রতিশোধ নিতে হবে না! আমার পোলারে অপমান! তুই যে এতো বড় সেলিব্রিটি হইলি,ওদের জানাতে হবে না! মা আগে আগে দৌড়ায়,আমি পিছু পিছু। রিয়াদের বাসায় ঢুকেই তার মাকে সামনে পেয়ে মিষ্টির বাক্স খুলে টুক করে একটা মিষ্টি মহিলার মুখে ঢুকিয়ে দিলেন।মহিলা কিছু না বুঝে মিষ্টি মুখে নিয়ে হা করে দাঁড়িয়ে রইলো।
মা বললেন, আমার পোলার বই বের হইছে। পোলা এখন বিরাট সেলিব্রিটি। মিষ্টির প্যাকেট রেখে গেলাম,ফ্রিজে রেখে দিও।আর শোন,তোমার তো ডায়াবেটিস, মিষ্টি খেয়ে মারা গেলে আমারে আবার দায়ী কইরো না! চল রে হানিফ, আরও কত বাড়ি যেতে হবে। শোন,রিয়ার মা,যদি আমার পোলার সাথে তোমার মেয়েরে নিয়া ভেবে থাক,তাহলে ভুল করবা,সেলিব্রিটি পোলারে তো আর যারতার মেয়ে ফট করে এনে দিলে হবে না। ভেবেচিন্তে বিয়ে করাতে হবে।
মহিলা কিছু না বুঝে হা করে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। রিয়াকে সামনে পেয়ে বললেন, এই খবরদার! আমার পোলার ত্রিসীমানায় আসবা না,ফোনটোন দিবানা।যদি শুনি আমার পোলার দিকে নজর দিছো,তাইলে ডাইরেক্ট বটি নিয়ে আসবো। ফিরে আসার সময় যার সাথেই দেখা হচ্ছে, মা আগ বাড়িয়ে সবাই কে বলে যাচ্ছেন তার ছেলে কতবড় সেলিব্রিটি! খুশি তার মুখ থেকে উপচে উপচে পড়ছে। আমি মনে মনে বললাম,হায়! একেই বলে মা!সন্তানের একটু সাফল্যে তারা কত খুশি!