এবারের পাত্র পক্ষ আমাকে দেখতে এসে মাত্র এক লক্ষ টাকা যৌতুক চেয়েছে। আগের দুইবারের তুলনায় এবারের টাকার পরিমাণ কম হবার পিছনে একটি কারণ অবশ্য আছে। পাত্রের বয়স চল্লিশের কাছাকাছি। টাক মাথায় চুল বিশ পঁচিশটা হতে পারে। তবুও এক লক্ষ টাকা দাবি করার কারণ, আমি দেখতে কালো। ঘটক চাচা নাকি পাত্র পক্ষকে বলেছে আমি দেখতে উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ। ঘটক চাচার নাম আকবর মুন্সি। তিনি আমাদের এলাকায় থাকেন আমার জন্মের আগে থেকে। এই গ্রামের আরো বহু মেয়ের বিয়ে হয়েছে আকবর চাচার মাধ্যমে। তেমনি অনেক ছেলেকেও বিয়ে করিয়েছেন। আমার ভাই কিন্তু চাচাকে কখনো বলেনি আমার জন্য পাত্র দেখার জন্য। একদিন তিনি নিজেই বললেন, “এই গ্রামের এত ছেলে মেয়ের বিয়ে দিলাম। আর শেফালির বয়স হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বিয়ে হচ্ছে না। আমি এই গ্রামের ঘটক হয়ে যদি শেফালির বিয়ে দিতে না পারি তাহলে আমার মান থাকে না। যে করেই হোক, আমি শেফালিকে বিয়ে দেবই।”
সেই থেকে আকবর চাচা এই নিয়ে তিনটি প্রস্তাব এনেছেন। আগের দুই পক্ষের একজন চেয়েছিল তিন লাখ টাকা যৌতুক আর দ্বিতীয় পক্ষ চেয়েছিল একটি মোটর সাইকেল। আমার ভাই এক টাকাও যৌতুক দিতে রাজী নন। বাবা মা যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে অবশ্যই যৌতুক দিয়ে হলেও আমাকে বিয়ে দিতেন। আজ আমার মনে হচ্ছে, আমার আর বিয়ে হবে না। ভাবী অবশ্য প্রায়ই বলে, “শেফালি তুমি মন খারাপ করো না। আমার মনে হয় তোমার বিয়ে হবে না। না হোক, তাতে কী? তোমার ভাইয়ের সংসারে যতদিন আছো তোমার কোনো চিন্তা করার কারণ নেই।”
ভাবীর কথায় মিষ্টতা ছিল নাকি তিক্ততা তা বুঝতে পারি না। তবে আমার বিয়ে না হলে যে ভাবী খুব আরাম আয়েশে দিন কাটাতে পারছেন সেটা কিন্তু মিথ্যে নয়। পূর্ব পাড়ার শাওন ভাই দুই বছর আগে আমাকে ভালোবাসার কথা জানিয়েছিল। নদী থেকে কলসি কাঁখে পানি আনার সময় শাওন ভাই পথ আগলে দাঁড়ালেন। ডানে বামে তাকিয়ে দেখছেন কেউ আছে নাকি। মধ্য দুপুরে কেউ থাকার কথাও না। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললেন, “শেফালি, আমি মানে শেফালি আমি তোমাকে পছন্দ করি। তুমি রাজী থাকলে আমি তোমাদের বাড়ি প্রস্তাব পাঠাব।”
আমার চোখ তখন পলক ফেলতে ভুলে গেছে। কানকে অবিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম কিছু সময়ের জন্য। শাওন ভাই আমাকে কেন ভালোবাসার কথা বলবে? প্রেম ভালোবাসার মত পবিত্র জিনিস নিয়ে কেউ ঠাট্টা করে? আমার চোখের পলক পড়ল। আমার চোখ ভিজে আসার উপক্রম। নিজেকে শক্ত রেখে বললাম, শাওন ভাই, আমি কালো বলে আপনি আমার সাথে আজ ঠাট্টা করলেন। আপনি জানেন কতটা কষ্ট পেয়েছি? শাওন ভাই আবারো ডানে বামে তাকিয়ে বললেন, শেফালি বিশ্বাস করো, আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি ঠাট্টা করছি না।
-সামনে থেকে সরে দাঁড়ান। আপনাকে আমার আর সহ্য হচ্ছে না। আপনাকে অনেক ভালো মনে করেছিলাম।
কথাটুকু বলে আমি বাড়ি চলে এসেছিলাম সেদিন।
সেদিন রাতে বালিশ ভিজিয়েছিলাম আমার চোখের পানিতে। আমি কালো বলেই কি সব অপমান সহ্য করতে হয়?একমাত্র মা আর বাবা আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসতেন। বাবা আমার মাথায় বিলি কেটে বলতেন, শেফালি। মা তুই কি জানিস? পরীরাও কালো হয়। আমি ঠোঁট ভেঙ্গে বাবাকে বলতাম, বাবা পরীরা সবসময় সুন্দর হয়। তুমি মিথ্যে বলছ। বাবা বলতেন, অবশ্যই পরীরা সুন্দর। কিছু পরী ফর্সা সুন্দর। কিছু পরী কালোর মাঝে সুন্দর। তুই আমাদের কালো পরী।
আমি জানতাম বাবা আমাকে খুশি করতে এসব বলতেন। একমাত্র ভাই ঝগড়া লেগে আমাকে কালি বলে ডাকতেন। আর শাওন ভাই নাকি আমাকে ভালোবাসেন। এটা ঠাট্টা নয়তো কী? তিনি শিক্ষিত ছেলে। চাকরি করছেন ইউনিয়ন অফিসে। দেখতে উঁচু লম্বা আর ফর্সা। তিনি চাইলেই অনেক সুন্দর মেয়েকে বিয়ে করতে পারেন। আর তিনি নাকি আমাকে ভালোবাসেন। এর চেয়ে বড় অপমান আর কী আছে? এতই যদি ভালোবাসত তাহলে এতদিনের ভিতর আমার ভাইয়ের কাছে কেন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসল না? কোনটা অপমান আর কোনটা ভালোবাসা সেটা বুঝার বয়স আমার হয়েছে।
ভাবী বসে টিভি দেখছেন। পাশেই নাঈম বসে ভাত খায়। মাত্র দুই বছর বয়স। এখন তাকে আদর করে মুখে তুলে খাওয়ানো উচিত। আর দুই পা ছড়িয়ে ভাত বিছানায় ছিটিয়ে নাঈম আপন মনে ভাত খেয়ে যাচ্ছে। আর ভাবী ভারতীয় সিরিয়াল দেখে কখনো মুখের ভাব কান্নার মত করছে কখনো আপন মনে হেসে যাচ্ছে। নাঈমের খাওয়া শেষ হলেই বিছানা পরিষ্কার করে ঘর গোছাতে হবে আমাকেই। ভাইয়ের সংসারে থাকি খাই ঠিকই কিন্তু বাড়ির প্রায় সব কাজ তো দিনের পর দিন আমিই করে যাচ্ছি।
বাবা নাকি আমার বিয়ের জন্য ব্যাংকে টাকা জমিয়েছিলেন। সেই টাকাও ভাই নিজের করে নিয়েছে। অথচ আমার বিয়ে দেয়ার সময় ভাই নাকি এক টাকাও দিতে পারবে না। পঁচানব্বইতে জন্ম আমার, আর কিছুদিন গেলে কেউ আর বিয়ে করতেও আসবে না। ভাবী তো বলেই, আর ক’টা দিন গেলে বিয়ে নিয়ে আর ভাবতেই হবে না। এখন তো বিয়ের জন্য পাত্র পক্ষ দেখতে আসলে শুধু শুধু টাকা নষ্ট। শুনেছি কালো মেয়েরা নাকি গল্প উপন্যাসেই শোভা পায়। বাস্তবে কেউ কালো মেয়েকে পছন্দ করে না। আমি কি ইচ্ছে করে কালো হয়ে জন্ম নিয়েছি? তবে একটা জিনিস ভালো লাগে, বাড়ির কাজ কর্ম সব ঠিক ঠাক করে দিতে পারলে ভাবী আমার সাথে ভালো ব্যবহার করে। অন্তত মুখটাকে বাংলা পাঁচের মত করে রাখে না।
নদীর পাড়ে একটি আম গাছ। মাত্র মুকুল আসতে শুরু করেছে। শাওন ভাই সাইকেল দাঁড় করিয়ে গাছে হেলান দিয়ে আছে। আমি বিছার ভয়ে কখনো এই আম গাছে হেলান দেয়ার সাহস পাই না। আমি কলসিতে পানি নিয়ে ফিরছি। আড়চোখে তাকিয়ে দেখি শাওন ভাইয়ের দৃষ্টি এখনো আমার দিকে। প্রায়ই এই সময়ে শাওন ভাইয়ের দেখা মিলে এই গাছটির নিচে। তবে দুই বছর আগে আমার সে কথাগুলোর পর থেকে আর কোনো কথা বলেনি শাওন ভাই। শুধু তাকিয়েই থাকে।
-শেফালি একটু এদিকে আসো, কথা আছে। ডানে বামে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই। কেন ডাকছে আমাকে? আজও অপমান করার শখ জেগেছে? আমি বললাম, ওদিকে যেতে পারব না। যা বলার ওখান থেকেই বলুন। শাওন ভাই এগিয়ে এলেন। আমার দৃষ্টি নিচের দিকে হলেও খুব করে বুঝতে পারছি তিনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। পুরুষ মানুষের তাকিয়ে থাকারও অনেক কারণ থাকে। কিছু কারণ ভালো কিছু কারণ মন্দ। শাওন ভাইয়ের তাকানোর ভাষা আমি বুঝতে পারছি না।
-শেফালি, বাড়ি থেকে আমাকে বিয়ের জন্য বলছে। কিন্তু আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি।
এবারের কথায় অপমান মনে হয়নি। মনে হচ্ছে সত্যিই শাওন ভাই আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু এমন সুদর্শন মানুষটি আমার মত কালো মেয়েকে কেন ভালোবাসতে যাবে? আমি বললাম, আমি জানি না আপনি আমাকে সত্যিই ভালোবাসেন নাকি উপহাস করছেন। যদি সত্যিই ভালোবাসেন আমার ভাইয়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যান। এভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বললে মানুষ খারাপ ভাববে।
-শেফালি আমি তোমার ভাইয়ের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলাম মামাকে দিয়ে। তোমার ভাই অনেক আগেই আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। আর কেন ফিরিয়ে দিয়েছে, সেটা তুমি ভালো করেই জানো। তাই তো তোমার সাথে কথা বলার জন্য এসেছি। তুমি যদি রাজী থাকো আমরা কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করব।
-আমার ভাইয়ের অমতে আমি বিয়ে করব আপনি ভাবলেন কিভাবে? ভাইয়ের সংসারে এতদিন ধরে আছি আর আজ আপনার কথায় বাড়িতে না জানিয়ে কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করব? আমি পারব না, পথ ছাড়েন শাওন ভাই।
আমি বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। শাওন ভাই পেছন থেকে বলছে, “শেফালি আমার কী দোষ? আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার ভাই কোনোদিন আমাকে মানবে না। তাই তো বলেছি কাজী অফিসে বিয়ে করতে। তুমি তো জানো তোমার ভাই যে কেন মেনে নিবে না।” আমি তবুও পেছন ফিরে না তাকিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। শাওন ভাইয়ের জায়গায় অন্য কেউ হলে আমার ভাই ঠিকই মেনে নিত। কিন্তু শাওন ভাইয়ের সাথে আমার ভাইয়ের এক জনমের শত্রুতা।
শাওন আর শাহীন ভাই দুইজন ছোটবেলার বন্ধু। আমি তখন অনেক ছোট, তেমন কিছুই বুঝি না। বাবা মায়ের কাছে শুনেছি শাওন ভাই আমার ভাইকে ছাড়া একদিনও চলতে পারত না। কারো সাথে ঝগড়া হলেও দুই বন্ধু একসাথে মারত, মার খেত। কিন্তু অষ্টম শ্রেণীর পরীক্ষার পর দুই বন্ধুর বন্ধুত্ব আর থাকল না। পরীক্ষার দু’দিন আগেও আমার ভাইয়ের সাথে শাওন ভাইয়ের কথা কাটাকাটি হয়েছে। আমার ভাই মারবেল খেলা খুব পছন্দ করত। শাওন ভাই এসে বলল, তুই যে মারবেল খেলছিস পরীক্ষায় তো গোল্লা পাবি। আমি কিন্তু এবার একটুও দেখাব না তোকে।
শাহীন ভাই রেগে গিয়ে বললেন, তুই না দেখালে মনে হয় পাশ করব না আমি? দেখব না তোর কাছ থেকে। তোর সাথে বসে পরীক্ষাই দেব না। অন্য কোথাও বসব। শাহীন ভাই তবুও মারবেল খেলা ছেড়ে উঠে আসেনি।
পরীক্ষার দিন শাহীন ভাই দেড় ঘন্টা পরই খাতা জমা দিয়ে বের হয়ে গেলেন। আসলে প্রশ্নের কোনো উত্তরই শাহীন ভাইয়ের জানা নেই। সেবারের পরীক্ষায় শাহীন ভাই দুই বিষয়ে ফেল করল। ফেল করেছে নিজের দোষে, কিন্তু সেই থেকে ছোট্ট এই কারণে শাওন ভাইয়ের সাথে চলা ছেড়ে দিল। শাওন ভাই আমাদের বাড়ি এলে শাহীন ভাই বাড়ির বাইরে চলে যেত, কথা বলত না। একসময় শাওন ভাইও আর এগিয়ে আসেনি। দু’জনের মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি হল। এই দূরত্বকেই তারা শত্রুতার চোখে দেখে। কিন্তু তাদের মনে কোনো শত্রুতা নেই। অভিমান, জিদ আর একরোখা টাইপের দু’জনই। তাই তাদের মধ্যে আর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেনি। সেজন্যই ভাই হয়তো শাওন ভাইয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। তিনি হেরে যেতে চান না।
পানি নিয়ে বাড়ি ফিরে শুনি ভাই আর ভাবী পাশের ঘরে ঝগড়া করছে। আমি যে বাড়ি এসেছি তারা সেটা দেখেনি। অবাক হলাম যখন শুনি ভাই আর ভাবী আমাকে নিয়েই ঝগড়া করছে। ভাবী বলছে, “আমি সংসারের এত কাজ কর্ম করতে পারব না। আগে একজন কাজের মেয়ে ঠিক করো, তারপর বোনের বিয়ের কথা চিন্তা করো। আর বোনের বিয়ে দিতে টাকা পাবে কোথায়?” ভাইয়াও রেগে বলছে, “তোর এত চিন্তা কিসের? তোর বাপের বাড়ি থেকে তো টাকা এনে বোনের বিয়ে দেব না। বাবা মারা যাবার আগে টাকা রেখে গেছেন।”
-তোমার ভবিষ্যত নেই? তোমার ছেলে যে বড় হচ্ছে সে খেয়াল আছে? এই বাড়িটা ছাড়া তোমার জন্য তোমার বাবা আর কী রেখে গেছেন?
-তাই বলে কি বোনের বিয়ে দিতে হবে না?
-এই কালো মেয়েকে কে বিয়ে করবে? দেখো না একেকজন কত টাকা যৌতুক চায়?
আমি বাড়ির বাইরে বের হয়ে গেছি। এসব কথা আর শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে না। নদীর পাড়ে গিয়ে বসে থাকব। যদি একটু কাঁদতে পারতাম তাহলে মনে হয় ভিতরের চাপা কষ্ট কিছুটা বের করতে পারতাম। আমগাছের নিচে শাওন ভাই এখনো আছে। এক হাত গাছে ঠেকিয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। আরেক হাতে আধ খাওয়া জ্বলন্ত সিগারেট। সিগারেটের গন্ধ আমি একদম সহ্য করতে পারি না। সিগারেট যার হাতে জ্বলছে, তাকে কি সহ্য করতে পারব? ভাইয়ের সংসারের চেয়ে ভালো নয় কি আমার একটা সংসার হোক? আমারও আপন একটা মানুষ হোক? আমাকে দেখে শাওন ভাই সিগারেট ফেলে দিলেন। আমি আসব এটা তিনি ভাবেননি। তার চোখে জিজ্ঞাসা। উত্তর আমার জানা আছে। আমি বললাম,
-আমি তো দেখতে অনেক কালো। আপনি চাইলেই সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করতে পারেন। আপনি আমাকে ভালোবাসেন কেন? শাওন ভাইয়ের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসির রেখা। বললেন, শেফালি। ভালোবাসতে না পারার পেছনে অনেক কারণ থাকে। কিন্তু ভালোবাসতে কোনো কারণ লাগে না।
-তবুও আমার জানতে হবে।
-তোমাকে কেন ভালোবাসি জানি না। তবে ছোট থেকেই তোমাকে আমার পছন্দ। প্রথম ভালো লাগা। ছোটবেলা যখন তোমাদের বাড়ি যেতাম, তুমি ছোট ছোট মাটির পাতিলে গাছের লতাপাতা রান্না করার খেলা খেলতে। তখন ভাবতাম, ইশ। আমি যদি শেফালিকে বাজার করে দিতে পারতাম। শেফালি রান্না করত, আমি গোসল করতে যেতাম। তারপর দু’জনে একসাথে খেতে বসতাম।
-হইছে, বুঝলাম। তো আপনার বাড়িতে আমাকে মেনে নিবে?
-আমার যে বাবা নেই তুমি সেটা জানো। তোমাকে যে আমার পছন্দ মা সেটা জানে। আর জানে বলেই মামাকে দিয়ে তোমার ভাইয়ের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। যখন তোমার ভাই ফিরিয়ে দিলেন। তখন মা বলল, শাহীনের বোনকে যদি তোর কাছে বিয়ে না দেয় তাহলে তো জোরের কিছু নেই। তুই অন্য কোথাও বিয়ে কর। কিন্তু আমি করিনি, তোমার অপেক্ষাতেই এই নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। এই আমগাছটা সাক্ষি।
-আমগাছ আমার পছন্দ না, বিছা থাকে। আপনি যদি সত্যিই আমাকে ভালোবাসেন তাহলে আমাকে নিয়ে চলেন। আমি আর ভাই ভাবীর সংসারে ফিরে যেতে চাই না। শাওন ভাই আমার হাত ধরলেন। হাতটি খুব বিশ্বাসের মনে হচ্ছে। সাতমাস পর ভাই আমাকে সব ভুলে আনতে গেলেন। শাওনের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললেন, তোর জন্য আমি দুই বিষয়ে ফেল করেছিলাম, আমি কিন্তু ভুলিনি। শাওন বলল, আজ যে তুই আমাদের মেনে নিয়েছিস। এর পরও কি তোর মনে হয় তুই ফেল? আমার তো মনে হয় তুই পাশ করেছিস। শাহীন ভাই শাওনকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। ভাইয়ের চোখ ছলছল করছে।
ভাই আমাদের নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। আকবর চাচা বগলে ছাতা নিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোরা নিজেরাই সবকিছু করে ফেললি। এবার একটা অনুষ্ঠান তো করবি নাকি? বিয়ে দিতে না পারি বিয়ের দাওয়াতটাও আমি পাওনা না?সবাই হেসে উঠলাম। বাড়ি এসে দেখি, ভাবী পাতিল মাজে। আমাকে দেখে খুশি হয়ে দাঁড়িয়ে ভাইকে বলল, ভালো করেছো শেফালিকে নিয়ে এসেছো। তারা আমাদের এখানেই সারাজীবন থাকুক। ভাই মুখে ভেংচি কেটে বললেন, সারাজীবন তারা থাকবে না। যদি থাকে তাহলে আমিও তোমাকে নিয়ে সারাজীবনের জন্য তোমার বাপের বাড়ি চলে যাব। ভাবীর হাসি বিলীন হল। পাতিল মাজায় মন দিলেন। আমি ঘরে গিয়ে ভাইয়ের ছেলে নাঈমকে কোলে নিলাম। মনে মনে ভাবছি, সব মেয়েদেরই একটা শ্বশুর বাড়ি চাই, একটা আপন মানুষ চাই।
সমাপ্ত