প্রতিশোধ

প্রতিশোধ

হৃদয় বাড়ি ফিরছে অফিস থেকে সন্ধ্যা প্রায় ৭: টা হবে ! রাস্তাটা অনেকটা জঙ্গলের মতো রাস্তার দুপাশে ঘন, গাছপালা ! লোকজন তেমন একটা পাওয়া যায়না এই রাস্তায় ! সে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলো নিলয়ের কথা ! নিলয় হলো হৃদয়ের ছোটবেলার বন্ধু ওরা দুজন একসাথে বড়ো হয়েছে একি অফিসে চাকরি করতো প্রায় মাসখানেক হয়ে গেলো ওর কোনো খুঁজ খবর নেই ! হৃদয় বাসার কাছাকাছি আসার পর, দেখতে পায় সামনে একজন মানুষ দাড়িয়ে আছেন হৃদয় আরো কিছুটা এগিয়ে যেতেই ওর মনে হয় সে লোকটাকে চিনে ! কাছে যেয়ে ভালো করে থাকাতেই সে চিনতে পারে লোকটাকে আরে এটা তো নিলয় !

নিলয়ঃ কেমন আছিস হৃদয় ?

হৃদয়ঃ ভালোই তুই কেমন আছিস ?

নিলয়ঃ আছি একরকম..

হৃদয়ঃ কি একরকম? আর তর, এই কি অবস্থা এতো স্মার্ট ছেলে ছিলি তুই আর এখন এই পাগলের বেশে ! এই একমাসইবা কোথায় ছিলে কিছু না বলেই একেবারে হাওয়া হয়ে গেলে !

নিলয়ঃ সেটা অনেক লম্বা কাহিনী !

হৃদয়ঃ চল, বাসায় যেয়ে শুনবো !

ওরা দুজন বাসায় চলে আসে হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে হৃদয় দুই কাপ চা বানিয়ে নিয়ে আসলো বারান্দায় যেখানে বসে আছে নিলয় !

হৃদয়ঃ নে ধর চা খা !

নিলয়ঃ না চা খাবো না তুই খা !

হৃদয়ঃ কি বলিস খাবিনা তর তো আমার হাতের চা অনেক ভালো লাগে !

নিলয়ঃ এখন খেতে ইচ্ছে করছে না তুই খা আমি পরে খাবো !

হৃদয় খানিকটা অবাক হলো যে নিলয় ওর হাতের বানানো চা খাবার জন্য সারাক্ষণ ওকে চা চা বলে মাথা নষ্ট করে দিতো সেই নিলয় কিনা এখন এটা বলছে !

হৃদয়ঃ আচ্ছা ঠিক আছে বলতো তর, কি হয়েছে কোথায় ছিলি এতদিন ! নিলয় একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে হৃদয় বললো ! কি রে আকাশের দিকে তাকিয়ে কি দেখছিস কবি হবার ইচ্ছা আছে নাকি !

নিলয়ঃ ইচ্ছা থাকলেও এখন আর কোনো উপায় নেই !

হৃদয়ঃ কি সব উল্টা-পাল্টা বলছিস সেই তখন থেকে আসল কথাটা কি বলবি তো !

নিলয়ঃ বলবো বলার জন্যই তর কাছে এসেছি !

হৃদয়ঃ বল, কি হয়েছে !

নিলয়ঃ একমাস আগে যখন আমি অফিস শেষে বাসায় ফিরছিলাম সেদিন তুই সাথে ছিলিনা !

বসের সাথে কি যেনো একটা মিটিং ছিলো তর, ! আমি একা একা হাঁটছিলাম রাস্তা দিয়ে হঠাৎ শুনতে পাই একটা মেয়ের চিৎকার ! মেয়েটি চিৎকার করে সাহায্য চাচ্ছে আমি সেই চিৎকারটি অনুসরণ করে ওইযে জঙ্গলটি দেখতে পাচ্ছিস ওদিকে গিয়েছিলাম ! আকাশে চাঁদের উজ্জ্বল আলো ছিলো হ্যাঁ সেদিন পূর্ণিমা ছিলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো সবকিছু ! এই জঙ্গলের ভিতরে একটি ভাঙ্গা পুরনো মন্দির আছে ! আমি ওটার কাছে গেলাম মন্দিরটির পিছনে দেখতে পেলাম !দুজন লোক একটি মেয়েকে জোর করে ধরে নিয়ে যাচ্ছে জঙ্গলের আরো ভিতরে !

আমি তখন চুপিসারে ওদের পিছনে যেয়ে একটা গাছের ডাল নিয়ে ডানপাশের লোকটার মাথায় আঘাত করি !
লোকটি পরে যায় খানিকটা সামনে বামপাশের জন আমার দিকে ফিরে থাকায় ! তখনি আমার মাথার পিছনে কেউ যেনো প্রচন্ড জোরে আঘাত করে ! আমি ছিটকে সামনে যেয়ে পড়ি জ্ঞান হারানোর আগে শুনতে পাই সেই লোকটি বলছে বলেছিলাম না সতর্ক থাকতে ! যখন আমার জ্ঞান ফিরে তখন আমি একটা অন্ধকার জায়গায় ছিলাম বুঝতে পারছিলাম না কোথায় আছি ! আমার হাত-পা বাধা রয়েছে মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা করছিলো আমি চিৎকার করতে যেয়ে বুঝতে পারলাম মুখটাও বাধা রয়েছে ! ভাগ্য ভালো ছিলো একটু জোর করতেই হাতের বাধনটি খুলে যায় ! তারপর পায়ের বাধন খুলে আমি উঠে দাড়াই চারিদিকে অন্ধকার কিছুই দেখা যায়না !

আমি পকেটে হাত দিলাম মোবাইলটা নেই সাবধানে পা ফেলে সামনে এগিয়ে গেলাম ! কিছুটা দূরে আসার পর, একটি ছোট ছিদ্র দেখতে পেলাম যেখান দিয়ে আলো আসছিলো ! আমি সেই ছিদ্রে চোখ লাগিয়ে বাহিরে দেখার চেষ্টা করলাম কিন্তু ছিদ্রটি এতি ক্ষুদ্র হওয়ায় কিছুই দেখতে পেলামনা ! আমি হাত দিয়ে আস্তে করে টোকা দিলাম দেয়ালে টং করে উঠলো বুঝতে পারলাম এটা লোহার ! দেয়ালের পাশ দিয়ে হেঁটে চললাম বামদিকে দেয়াল ধরেই এগিয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ হাতে লাগলো বোর্ডের মতো কিছু একটা ! হাতরিয়ে বুঝতে পারলাম এটা কারেন্টএর বোর্ড একটি সুইচ পেয়ে গেলাম ! ওটা নীচের দিকে চাপ দিতেই চারিদিকে আলো জ্বলে উঠলো ! চারিদিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম এটা একটা অনেক বড়ো ঘরের মতো !

এককোনে চোখ যেতেই চমকে উঠলাম দেখলাম পাঁচটি মেয়ে বসে আছে মাটিতে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে ! আমি ধীরে ধীরে ওদের পাশে যেয়ে জিজ্ঞেস করলাম ওরা এখানে কি করে আসলো ! একজন বললো আমাদের এখানে ধরে নিয়ে এসেছে ওই লোকগুলো পাচার করার জন্য কিছুক্ষন আগে দুজনকে নিয়ে গেছে আর আপনাকে এখানে ফেলে গেছে ! প্লিজ ভাইয়া আমাদের এখান থেকে বের করুন এই বলেই মেয়েটি কেঁদে ফেললো ! আমি তখন কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না বললাম দাড়াও দেখি কি করতে পারি ! একদিকে তাকিয়ে দেখলাম একটি দরজা দেখা যাচ্ছে আমি সেই দরজার কাছে ছুটে গেলাম কিন্তু সেটা বাহির থেকে লাগানো ছিলো !

লোহার দরজা ভাঙ্গাও যাবেনা তখন দেখতে পেলাম দরজাটার পাশে একটি ছিদ্র দেখা যাচ্ছে ! আমি সেটা দিয়ে তাকালাম বাহিরে দেখতে পেলাম দুজন লোক দাড়িয়ে আছে বাহিরে ! আমার মাথায় তখন একটা বুদ্ধি আসলো পাশে থেকে একটা লোহার রড তুলে নিয়ে ! দরজায় টোকা দিলাম ছিদ্র দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম একজন আসছে এদিকে ! লোকটি দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই রডটা দিয়ে লোকটার মাথায় আঘাত করলাম লোকটি চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো ! অন্যজন ছুটে আসতে দেখে আমি হাতে থাকা রডটা ছুঁড়ে মারি ! লোকটার কিছুই হয়নি আমার কাছে এসে পড়ে আমি সাথে সাথে দরজাটা বন্ধ করে দেই ! লোকটি দরজাটার সাথে ধাক্কা খেয়ে নীচে পড়ে যায় প্রচন্ড জোরে লোহার দরজায় ধাক্কা লাগাতে নাক ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে !

আমি দরজাটা খুলে লোকটার উপরে বসে গলা চেপে ধরি কিছুক্ষন পর, মারা যায় ! আমি মেয়ে গুলোকে ডেকে বলি তাড়াতাড়ি চলে আসার জন্য ! ওদের নিয়ে বাহিরে বেরিয়ে আসি খুব সাবধানে সামনে এগিয়ে যাই ! বাহিরে এসে বুঝতে পারি এটা কোন জায়গা জায়গাটা আমার চেনা কিছুটা দূরে একটা গাড়ি দেখতে পাই ! ওদের জিজ্ঞেস করি কেউ গাড়ি চালাতে পারে কিনা তাদের মধ্যে একজন বলে যে সে পারে চালাতে ! আমি বললাম ঠিক আছে সবাই ওই গাড়ি নিয়ে এখান থেকে চলে যাও তাড়াতাড়ি ! তখন একজন বলে ভাইয়া আপনি যাবেননা ওরা তো আপনাকে মেরে ফেলবে ! আমি বললাম আমি ওদের শাস্তি না দিয়ে এখান থেকে যাচ্ছিনা তোমরা চলে যাও ! ওদের বিদায় দিয়ে ঘুরে হাঁটা দিলাম অন্যদিকে এই কাজগুলো যে করাচ্ছে তাকে খুঁজতে ! কিছুদূর যাবার পরেই আচমকা একটা গুলির শব্দ শুনতে পেলাম !

তাকিয়ে দেখলাম আমার বুকের বামপাশে একটি ছোট, ছিদ্র হয়ে আছে আর সেখান থেকে রক্ত গড়িয়ে পরছে ! আমার চোখ আস্তে আস্তে অন্ধকার হয়ে আসছিলো পড়ে যাই নীচে মাটিতে ! তখনি দেখতে পাই একটি মোটা লোককে মোবাইলে কথা বলছে ! হাতে একটা ছয় রাউন্ডের পিস্তল মোবাইলটা লাউড স্পিকারে দিয়ে কথা বলছিলো লোকটি জ্বি বস মেরে ফেলেছি ওটাকে ! যার সাথে কথা বলছিলো তার কন্ঠটা আমার চিরচেনা ! কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি মারা যাই আমার নিথর দেহটি টেনে নিয়ে নদীতে ফেলে দেওয়া হয় ! হৃদয় বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে নিলয়ের দিকে মুখে কিছুই বলতে পারছে না !

নিলয়ঃ আমি সবাইকে মেরে ফেলেছি এক এক করে যারা আমাকে মেরেছে এখন শুধু একজনই বেঁচে আছে আর সেটা হলো তুই !

হৃদয়ঃ নিলয় প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে আমি জানিনা ওই ছেলেটা তুই ছিলি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে !

নিলয়ঃ তর মতো পাপী বেঁচে থেকে কোনো লাভ নেই !

পরমূহুর্তে বেসে আসে হৃদয়ের ভয়ানক চিৎকার !! প্রতিবেশীরা হৃদয়ের চিৎকার শুনে ছুটে আসেন সবাই ! ঘরের দরজা ভেঙ্গে সবাই ভিতরে এসে দেখতে পান বারান্দায় চেয়ারে পড়ে আছে হৃদয়ের মাথা বিহীন দেহটি নীচে মেঝেতে পড়ে রয়েছে ওর মাথা ! দেখলেই বুঝা যায় মাথাটা কেউ টেনে দেহ, থেকে আলাদা করেছে !

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত