বাসর রাতের মৃত্যু রহস্য

বাসর রাতের মৃত্যু রহস্য

বাসর রাতেই মেয়েটির স্বামীরা মারা যায় । এই পর্যন্ত তিনবার মেয়েটির বিয়ে হয়েছে প্রতিবারই বেচারা স্বামীরা আর ফিরে আসতে পারেনা । এর অন্তর্নিহিত কারণ মেডিকেল সাইন্স কিংবা পুলিশ কেউ উদ্ঘাটন করতে পারেনি । মেয়েটি বড় লোক বাবার একমাত্র সন্তান । হয়তো লোভে পরে ঘটনা জানা সত্বেও বিয়ে করে কিন্তু লাশ হয়ে ফিরে আসে ।  এইবার যে ছেলেটি মেয়েটিকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে তা অবশ্য মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে । ছেলেটির মায়ের হার্টের বাই পাস সার্জারির জন্য প্রয়োজন অনেক টাকা আর এই বিয়েই সেই টাকার যোগান দিয়েছে।

অনেকটা মৃত্যু নিশ্চিত জেনেই আরজু নামের ছেলেটি বিয়েতে রাজি হয়েছে । আরজু বিয়ের আগে মেয়েটার সাথে একবার কথা বলতে চাইল। . আরজু মেয়েটার বাসায় গিয়ে মেয়ের সাথে সরাসরি কথা বলছিল।আরজু বলল -জানেন!আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটা হচ্ছেন আমার মা।জীবনে না আসা মানুষটাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল।কিন্তু মায়ের জন্য আজ সব স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হচ্ছে।যা হোক তার জন্য আফসোস নেই।কিন্তু আমার জীবনের সবচেয়ে সিক্রেট আর ভয়ংকর একটা ঘটনা, যা কোনদিন কারো কাছে বলতে পারিনি।

আসলে কথাটা বলার মত নয়।ভেবেছিলাম আমার ওয়াইফের কাছে দীর্ঘদিন মনে জমে থাকা কথাটা শেয়ার করব।কিন্তু বলাতো যায়না যদি আমিও আপনার অন্য তিন স্বামীর মত তাই বাসর রাত আসার আগেই আমি আপনাকে আমার বৌ ভেবে আমার জীবনের সেই লোমহর্ষক ঘটনাটা বলতে চাই। মেয়েটা বলল -ওদের হায়াৎ ছিল না।তাই হয়তো মারা গেছে।তার মানেতো এইনা যে আপনিও মারা যাবেন।কথাটা জমিয়ে রাখুন বাসর ঘরের জন্যই।আপনার ইচ্ছে পূরন হবে। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আপনার কিচ্ছু হবেনা।আপনিতো ভাল ছেলে।মায়ের জন্য নিজের জীবন বিপদের দিকে ঠেলে দিতেও পিছপা হচ্ছেন না।

-সব সন্তানই তার মাকে ভালবাসে।তুমি যাদের খুন করেছ তারাও নিশ্চয়ই এর ব্যাতিক্রম ছিলনা। -হোয়াট!আমি খুন করেছি মানে?কি?বলতে চান কি আপনি? এবার আরজু অট্রহাসিতে ভেঙে পড়ল বলল -ডোন্ট মাইন্ড ফান করলাম।আমি তাহলে উঠি এখন। তুমি যখন ভরসা দিচ্ছ তথন বাসর রাতেই বলি। কথাটা বলেই আরজু একটা মুচকি হাসি দিয়ে বেড়িয়ে গেল।মেয়েটাও উত্তরে একটা রহস্যভরা হাসি দিল। . বাসর ঘরে দুজনেই বসে আছে।আরজু বলল -তোমার নামটাইতো জানা হলনা -নূরি -আপনি না কি ঘটনা বলতে চাচ্ছিলেন – হুম।বলছি বছর পাঁচেক আগে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ককক্সবাজার গিয়েছিলাম।সেখান থেকে ফেরার পথে নেশায় বুদ হয়ে আমরা বাসে একটা মেয়েকে শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করি।মেয়েটার ভাই ও ভগ্নিপতি বাঁধা দেওয়ায় আমরা তাদের ছুড়িকাঘাত করি।

আর তাতে তারা মাড়া যায়।পরে অবশ্য চিৎকার চেঁচামেচিতে আশপাশের লোকজন চলে আসায় আমরা মেয়েটির সম্ভ্রম হরনে সক্ষম হইনি।এই অপরাধবোধটা আমাকে আজও কুড়ে কুড়ে খায়।কখনো কারো সাথে শেয়ার করিনি।আজ তোমাকে বললাম।আজ আর শাস্তির ভয় নেই।কারন এমনিতেওতো আজ রাতে আমি মারা যাব। নূরি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বাহিরে বের হয়ে গেল।কিছুক্ষন পর একটা গন্ধরাজ ফুল নিয়ে এসে আরজুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল -এটা তোমার জন্য।আমার তরফ থেকে প্রথম উপহার।শুঁকে দেখ,কি সুন্দর ঘ্রান।তুমি আমাদের বাড়িতে বাসর করছ বলেই ফুলটা তোমাকে দিতে পারলাম। -তো ফুলটা আগে থেকে তোলে রাখলেনা কেন?নাকি আগে দেয়ার ইচ্ছা ছিলনা?এই গল্পটা শুনার পর পুরস্কৃত করতে ইচ্ছা করল আমাকে? -না।ঠিক তা নয়।আসলে খেয়াল ছিলনা।

আরজু ফুল হাতে না নিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে কাকে যেন ফোন দিল।তারপর কয়েকজন পুলিশসহ দুজন লেডিস কনষ্টেবল এসে নূরিকে এরেষ্ট করে নিয়ে গেল। . একটা অন্ধকার কক্ষে হাত বেঁধে চেয়ারে বসিয়ে রেখেছে নূরিকে।আরজু এসে ওর সামনের চেয়ারটাতে বসল।ওদের মাথার উপর একটা লাইট জ্বলছে।আরজু বলল -তোমার ভাই আর দুলাভাইয়ের মৃত্যুর জন্য আমি দুঃখিত।কিন্তু তুমি আইন হাতে তুলে নিয়ে ঠিক করনি।সেদিন পাবলিকের ধাওয়া খেয়ে ঐ ছেলেগুলো যখন পালিয়ে গিয়েছিল, তখন তুমি তাদের ব্যাগ লুকিয়ে ফেল।আর ব্যাগে থাকা তাদের ভার্সিটির আইডি কার্ড দেখে তাদের খোঁজে বের করে বিয়ে করে বাসর রাতেই তাদের হত্যা করেছ।তুমি প্রমানগুলো পুলিশের হাতে দিতে পারতে।আইন তাদের বিচার করত।চুরাই ক্যামেরায় তোমার বিষ মেশানোর দৃশ্য স্পষ্ট ধরা পড়েছে।

স্টপ।কুত্তা সেদিন যদি তোর অাইডি কার্ডটা পেতাম তাহলে অামার ফুলে ওনাইজিন মেশানোর দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করার আগেই তোকে খালাস করে দিতাম। -তুমি ভুল ভাবছ।আমি ঐ ছেলেদের দলে ছিলামনা।যখন তুমার তিনজন স্বামীই মারা গেল,তখন আমাদের টিম অনেক তদন্ত করে এটা জানতে পারে যে তুমিই সেই মেয়ে যার ভাই আর দোলাভাইকে পাঁচবছর আগে হত্যা করা হয়েছিল।আর তিনজনের পরিবার থেকেই জানা যায় যে তারা বছর পাঁচেক আগে কক্সবাজার থেকে ফেরার পথে তাদের ব্যাগ হারায় যার মধ্যে তাদের আইডি কার্ড ছিল।তখনই সন্দেহ হয়েছিল আমার যে, ওদের মৃত্যুটা আর যাই হোক,কাকতালীয় নয়।বিষয়টাকে ক্লিয়ার করতে একজন অসুস্থ মহিলাকে আমার মা বানিয়ে দারিদ্র্যতার নাটক করে তোমাকে বিয়ে করতে চাই।প্রথম যেদিন তোমাদের বাসায় গিয়েছিলাম।যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল মূলত তদন্ত।সেদিন আমি সোফাতে বসে থাকাকালীন একটা রিসিট এসে আমার সামনে উড়ে পড়ে। কিছু জিনিস কিনার পর বিক্রেতা যে রিসিট দেয় ওটা।

ওগুলো ছিল ক্যাষ্টর,রাইজিনসহ আরও কিছু আনকমন জিনিস ক্রয়ের রিসিট।যেখানে ক্রেতার নামের জায়গায় তোমার সাইন ছিল।আমি ব্যাপারটা নিয়ে ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করে ও পরে একজন ফরেনসিক এক্সপার্টের সাথে কথা বলে জানলাম যে এগুলো হচ্ছে ওনাইজিন(onaizin)বিষ তৈরীর উপাদান।এর এক মিলিগ্রাম বিষের ঘ্রান যে কোন ব্যাক্তিকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে।আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে যে চব্বিশ ঘন্টা পরে এই বিষের কোন অস্তিত্ব মানবদেহে পাওয়া যায়না।খুব জানার ইচ্ছে ছিল যে তুমি এই বিষটা কিসের মাধ্যমে ঐ তিনজনের ওপর প্রয়োগ করেছ।তাই বানিয়ে ঐ গল্পটা বলতে হল।

আমি জানি,আমাকে মারার ইচ্ছা তোমার ছিলনা ।অামাকে নিয়ে তুমি সত্যিকারের ঘর করতে চেয়েছিলে।কিন্তু যখন জানলে যে আমিও ঐ ছেলেদের সাথে ছিলাম,তখনি আমাকে মারতে চাইলে।আর আমিও এটা চাইছিলাম যে,তুমি তোমাদের বাড়িতে আমার উপস্থিতি থাকা অবস্থায় ষড়যন্ত্রটা কর যাতে চোরাই ক্যামেরাতে ধরা পরা ছাড়াও আমার সামনে তোমার মটিভ অফ মার্ডারটা ধরা পড়ে। . নূরি রহস্যভরা চোখ নিয়ে আরজুর দিকে তাকায়। . আরজু মাথাটা একটু নীচু করে বলে -আ’ম সো সরি।একজন সি আই ডি অফিসার হয়ে এমন একটা মিথ্যা নাটক সাজাতে হল।আসলে প্রয়োজনের তাগিদে,রহস্য উদঘাটন করতে আমাদের অনেক কিছুই করতে হয়। কথাগুলো বলে আরজু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেরিয়ে যায় অন্ধকার কক্ষটা থেকে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত