গাছের আড়ালে দাড়িয়ে আছি।।চারিদিকে প্রচুর পরিমান গার্ড পাহারা দিচ্ছে।।। খুব সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে বাড়িটাকে।।আর সাজাবেই না কেনো একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা।।প্রত্যেক বাবার ই তো স্বপ্ন থাকে তার মেয়ের বিয়ে ধুমধাম করে দেওয়ার।। উনিও দিচ্ছেন মেয়ের বিয়ে ধুমধাম করে ।।।কিন্তু ওনার এই ধুমধাম করে বিয়ে দেওয়াটা আমার রিদয়টাকে যেনো ক্ষত বিক্ষত করে দিচ্ছে প্রতিটা সেকেন্ডে।।কি দোষ ছিলো আমার,,,আমি বেকার এটাই আমার দোষ।।। তাই উনি নিশির বিয়ে আজ অন্যকারোর সাথে দিচ্ছেন।।
কতবার হাতজোড় করেছি ওনার কাছে,,, কিছুদিন সময় ও চেয়েছি চাকরির জন্য,,,কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি।।।শেষ পর্যন্ত ঠিক ই আমার আর নিশির সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছেন উনি।।।গতকাল রাত্রে ফোন করেছিলো নিশি।।। খুব কান্নাকাটি করছিলো ও।।কিছুই বলতে পারিনি আমি,,,শুধু শুনে গেছি ওর কথা।।।ওই মুহুর্তে কিই বা বলার ছিলো আমার,,কি বা বলতে পারতাম আমি।।।আমি যে পুরো অসহায়,,,দারিদ্রের ভিড়ে ভালোবাসাকে ত্যাগ করা ছাড়া,,, আমার হাতে আর কোনো উপায় ছিলোনা।।চুপচাপ মেনে নিতে হয়েছে আমাকে আমার ভাগ্য।।। প্রথমে ভেবেছিলাম আসবোনা এখানে।।।কিন্তু শেষবারের মতো নিশিকে দেখতে পাওয়ার সুযোগটা ছাড়তে পারলাম না।।।না জানি আর কোনোদিন দেখা হবে কিনা ওর সাথে।।।
অনেকক্ষন ধরে দাড়িয়ে আছি এতোক্ষনে হয়তো বিয়ের সমস্ত কাজ সম্পুর্ন ও হয়ে গেছে।।কিছুক্ষন পর বের হবে হয়তো।।।গার্ডগুলোও ঘুরাফিরা করছে এখনো।।। একটু পর সবাইকে একসাথে বের হতে দেখলাম।।।নিশি আর ওর হাসবেন্ড সবার সামনে ছিলো।।।বিয়ের সাঝে নিশিকে আজ খুব সুন্দর লাগছিলো।।একদম লাল পরির মতো।।কিন্তু আফসোস এই পরিটাকে আমি আগলে রাখতে পারলাম না।।।ওকে দেখে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না বারবার মনে হচ্ছিলো ছুটে যায় ওর কাছে কিন্তু ভেতর থেকে সেই সাহসটুকু পাচ্ছিলাম না।।
ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম হঠাৎ ওর চোখ আমার দিকে পড়লো।।।আমায় দেখে ও নিশ্চুপ হয়ে গেলো এবং এক দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে রইলো।।ওর চাহনি দেখে আমি একদম পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম ভেতর থেকে ক্ষোভ সৃস্টি হচ্ছিলো।।কি করে ওকে আমি অন্যকারো হতে দিতে পারি।।।নিজেকে কন্ট্রোল করা কস্টকর হয়ে পড়ছিলো আমার কাছে।।।শেষ পর্যন্ত না পেরে দিলাম দৌড় নিশের দিকে।।ঠিক সেই সময় কিছু গার্ড এসে আমাকে সেই লেভেলের প্যাদানি দিতে শুরু করলো আর আমি মাটিতে ঠাস করে পড়ে গেলাম।।।নিশি আমার এই অবস্থা দেখে খুব কান্না করছিলো।।।এসব না দেখতে পেরে ও তাড়াতাড়ি গাড়ির ভেতর উঠে পড়লো এবং কিছুক্ষনের মধ্যে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ওরা চলে জেতে লাগলো।।আমি ওদের চলে যাওয়া দেখে জোরে চিৎকার করতে শুরু করলাম,,,
-যেওনা নিশি,,,প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা,, আমি তোমায় ছাড়া বাচবোনা৷।।।
ঠিক এমন সময় পিছন থেকে কেউ আমার গায়ে পানি ঢেলে দিলো আর আমি তিড়িং করে লাফিয়ে উঠলাম।।।কিছুক্ষন পর আমি নিজেকে বিছানার ওপর আবিস্কার করলাম।।আমার আর বুঝতে দেরি হলোনা এতক্ষন আমার সাথে যা যা ঘটছিলো সবটায় আমার স্বপ্ন ছিলো।। একটু হাফ ছেড়ে বাচলাম।।।কিন্তু এই সাত সকালে আমার গায়ে পানিটা ঢাললো কে।।রুমের চারিদিকে একবার ভালো করে দেখতে শুরু করলাম।।।যেই দরজার দিকে তাকিয়েছি দেখি আয়শা চুপিচুপি রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।।বুঝতেই পারলাম ওর কাজ।।।
-ওই দাড়া,,,পালাচ্ছিস কোথায়।।আমার গায়ে পানি দেওয়া তোর আজ খবর আছে,,,দাড়া তুই।।ও দরজা খুলে,,,দিলো দৌড় আর আমিও ওর পিছু করতে লাগলাম।।
-তোদের কি কোনো কাজ নেই বলতো আমায়।।আর সকাল সকাল কি লাগিয়েছিস দুজনে।।।তোদের এই প্রতিদিনকার ঝগড়া আমি আর সহ্য করতে পারছিনা একদম।।।(মা)
-আমি কি করলাম তোমার মেয়েরি তো সব দোষ।।। আমি তো ঘুমিয়েই ছিলাম আর ঘুমিয়ে কি সুন্দর স্বপ্ন দেখছিলাম দিলোতো সব মাটি করে।।।(আমি)
-তা তো বটেই সুন্দর স্বপ্নই তো দেখছিলি।।বলবো মাকে তুই ঘুমের মাঝে কি বলছিলিস।।।(আয়শা) আমি এবার চুপ হয়ে গেলাম।।।আমি স্বপ্নে যা বলছিলাম ওইটা কি বাস্তবেও বলে ফেলেছি নাকি।।ওহহহ শিট মা জানতে পারলে তো আমার খবর হয়ে যাবে।।।আমি ভিতু স্বরে আবার ওকে বললাম।।
-কি বলছিলাম আমি হুম,,,কিছুই তো বলিনি।।।
-হুম কিছুই বলিসতো নি তুই,,শুধু বারবার নিশি নিশি করে যাচ্ছিলি।।। এবার আমি পুরোই চুপ হয়ে গেলাম।।মেয়েটা মনে হয় আজ আমার জানাযা বার করার চিন্তায় আছে।।।চুপ কর আমার বোন।।।
-নিশি নিশি করছিলো মানে,,ওই এই নিশিটা আবার কে।।।(মা)
-কেউ না মা ও মনে হয় ভুল শুনেছে আমি অন্যকিছু বলছিলাম।।।
আমি আয়েশার দিকে ভ্রু কুচকে মিনতি করতে লাগলাম।।আর বোঝালাম মাকে কিছু না বললে আজ আমি ওকে ঘুরতে নিয়ে যাবো।।।।ওউ আমার কথায় রাজি হয়ে গেলো আর মাকে কিছু জানালো না।।মা কিছু না বলে রান্না ঘরের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো।।।
-বিকেলবেলায় রেডি থাকবে।।।আর মনে থাকে যেনো কথাটা,,নইলে,,,,(আয়শা আমার দিকে তাকিয়ে হুমকির স্বরে)
-হ্যা হ্যা মনে থাকবে।।।তোর মতো একটা বোন থাকলে শত্রুর আর দরকার পড়ে নাকি।।।(ফিসফিসিয়ে বলে উঠলাম)
-কিছু বললি?
-আরে না।।তুই আজ বড্ড বেশি শুনছিস কানে,, ঘরে যাতো।।।।
ও চলে গেলো।। যাইহোক,,কোনোভাবে ব্যাপারটাকে সামাল দিতে পেরেছি।।।আমি আর ওখানে না দাড়িয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম।।। আয়শা কে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছি।।প্রথমে মনে করেছিলাম আসবোনা কিন্তু পরক্ষনে ভাবলাম ও যে জিনিস সবটা মায়ের কানে পাচার করে দেবে তাই বাধ্য হয়ে আসাই লাগলো।।।। ঘুরছিলাম হঠাৎ পকেটে থাকা ফোনটা বেজে উঠলো।।।পকেট থেকে ফোনটা বের করতেই দেখি নিশির ফোন।।বেশি কিছু না ভেবে ফোনটা রিসিভ করলাম।।।
-হুম বলো।।।।
-কোথায় তুমি?(নিশি)
-কেনো?কোনো কাজ আছে নাকি।।।
-হুম কোথায় আছো তাই বলো?
-পার্কে আছি আয়শাকে বেড়াতে নিয়ে এসেছি।।।।
-ওহ,,,একটা কাজ করো তাড়াতাড়ি স্টার ক্যাফেতে চলে আসো।।।তোমার সাথে আমার কিছু কথা বলার আছে।।।।
-এখন কি করে যাবো,,,আর সাথে আয়েশা ও তো আছে।।।
-কোনো সমস্যা নেই।।।নিয়ে আসো ওকে।।।
-আচ্ছা আমি আসছি।।।
ফোনটা রেখে দিলাম।।কি এমন জরুরি কথা বলবে ও যে এতো তাড়াতাড়ি যেতে বলছে ।।।যাইহোক আয়শার দিকে তাকালাম দেখি ও আমার দিকে সন্দেহের দৃস্টিতে তাকিয়ে আছে।।।
-কে ফোন করেছিলো হুম।।(আয়শা)
-তোর ভাবি,,,দেখবি চল।।।
ও মাথা নাড়িতে সম্মতি জানালো।।আমিও আর দেরি না করে একটা গাড়ি ভাড়া করে যাত্রা শুরু করে দিলাম স্টার ক্যাফের দিকে।।। দশ মিনিট পর ক্যাফেতে পৌছে গেলাম।।।নিশি সামনের চেয়ারেই বসে ছিলো।।।ভেতরে ঢোকার আগে আমি আয়েশা কে ভেতরে গিয়ে বেশি কথা বলতে মানা করে দিলাম।।ওউ হুম বলে সম্মতি জানালো।।আমরা ভেতরে প্রবেশ করলাম।।।ততক্ষনে নিশি আমাদের দেখতে পেয়েছে।।ও চেয়ার থেকে উঠে এসে প্রথমে আয়শাকে আদর করতে লাগলো।।।
-এরকম আদর আমাকেউ তো করা যায়।।।(আমি ফিসফিসিয়ে বলে উঠলাম)
-কি (আমার দিকে তাকিয়ে) কিছু বললে তুমি।।।(নিশি)
-কই কিছু না তো,,,তুমিও মনে হয় ওর মতো কানে বেশি শুনছো আজ।।যাইহোক আমি আইসক্রিম নিয়ে আসছি তোমরা বসো।।। আইসক্রিম আনতে চলে গেলাম।।।এবং কিছুক্ষনের মধ্যে চলেও আসলাম।।।
-হুম এইবার বলো কি বলতে চাচ্ছিলে।।।(আমি)
-বাবা তোমার সাথে দেখা করতে চায়।।। কাল অফিসে দেখা করতে বলেছে।।।
কথাটি শুনে আমার ভেতরের বিড়ালটা যেনো বেরিয়ে আসলো।।।কি কয় মেয়েটা গতবারের কথা কি ও ভুলে গেছে।।। গতবার যখন দেখা করতে গিয়েছিলাম তখন গুলিটা হাল্কার জন্য আমার কানের পাশ দিয়ে বেরিয়েছিলো।।কোনোমতে পালিয়ে বেচেছি।।।সেই বাঘের মুখে আবার,,,,না না বাবা আমার দারা হবেনা।।।
-কি বলো তুমি।।মনে নেই গতবার কি হয়েছিলো আমার সাথে।।তারপর ও তুমি আমাকে ওই হিংস্র বাঘটার মুখে ফেলতে চাচ্ছো।।।আমি যাবোনা।।।।(আমি)
-কিচ্ছু হবেনা।।আমি বাবার সাথে সমস্ত কথা বলে রেখেছি উনি শান্তিপুর্ন ভাবে তোমার সাথে কথা বলবেন।।।
-তোমার মুখে এই শান্তির কথা শুনে আমার মনে যে অশান্তির ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সেটা কি বুঝছোনা তুমি।।
-আমি বলছিনা কিচ্ছু হবেনা।।এই শেষবারের মতো।।।
-সত্যিই শেষবারের মতো।।কারন এরপর আর যাওয়ার জন্য আমি বাচবোনা।।।।
-এতো পাকামো করছো কেনো তুমি।।যাবে কি যাবেনা।।।ফাইনাল ডিসিশন।।(একটু রাগের স্বরে)
-আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাবো।।।।
-আমি জানতাম তুমি আমার কথা ফেলবেনা।।।
-বাঘের কাছে মাংশ পাহারা করতে দিয়ে আবার পাম দিচ্ছে।।।কি ভাগ্য আমার।।।(ফিসফিসিয়ে)
-কিছু বললে।।।
-কই না তো।।তুমি সত্যিই মনে হয় কানে আজ বেশি শুনছো।।।
ও ভ্রু কুচকে আমায় একটু রাগ দেখালো।।আমিও আর কোনো কথা বললাম না।।।মনের ভেতর যতরকমের ভয় ছিলো সব একসাথে দরজায় কড়া নাড়ছিলো।।আজ আমার সাথে কি যে হতে চলেছে সেটা আল্লাহ জানে।। এইমাত্র বাসায় ফিরলাম।।মেজাজটা অন্য লেভেলের হয়ে আছে।।।গিয়েছিলাম নিশির বাবার সাথে কথা বলতে।।।মনে করেছিলাম উনি হয়তো সবকিছু মেনে নিবেন।।।কিন্তু তার পরিবর্তে উনি কিনা আমার ভালোবাসাকে সেকেন্ডের পর সেকেন্ড অপমান করে যাচ্ছিলেন।।।শেষ পর্যন্ত আমিও সহ্য করতে না পেরে চার কথা শুনিয়ে দিয়েছি।।।
কিছু ভালো লাগছেনা।।বিছানায় শুয়ে পড়লাম।।নিশির বাবার বলা কথাগুলো বারবার কানে ভাসছিলো আমার।।।আর মেজাজ আরো গরম হয়ে যাচ্ছিলো।।।কিছুক্ষন শুয়ে থাকার পর টেবিলের ওপর থাকা ফোনটা হঠাৎ বেজে উঠলো।।আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই দেখি নিশির ফোন।।।ফোনটা রিসিভ না করে,,তার পরিবর্তে সাইলেন্ট করে দুরে ফেলে রাখলাম।।।বালিশের ওপর মাথা রাখতেই আমায় ঘুমে চেপে বসলো আর আমি কিছুক্ষনের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লাম।।।
বিছানার ওপর বসে আছি।।।এইমাত্র ঘুম থেকে উঠলাম।।আবার আগের দিনকার সেই স্বপ্নটা দেখেছি।।।একই ঘটনা বারবার আমার স্বপ্নে ঘটে চলেছে।।ব্যাপারটা আমার কাছে কেমন যেনো রহস্যর মতো লাগছে।।।।টেবিলে থাকা ফোনটা হাতে নিলাম।।।পঞ্চাশটার ওপর মিসড কল।।।এতোবার মিসড কল দেওয়ার কারনটা কি।।আমি কল ব্যাক করলাম দুই তিনবার বেজে কেটে গেলো।।।নিশিকি ফোনের কাছে নেই।।নাকি অভিমান করে তুলছে না।।।আমি আরাফাতের কাছে ফোন দিলাম।।আরাফাত হচ্ছে নিশির চাচাতো ভাই আর আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।।।কিছুক্ষন ফোন বাজার পর ফোনটা রিসিভ করলো।।।
-ওই আরাফাত নিশির কি হয়েছে বলতো,,ফোন ধরছেনা কেনো?
-তুই কি কিছু জানিস না।।আজ দুপুরে ওকে পাত্র পক্ষ দেখতে এসেছিলো।।আর পছন্দ ও করেছে।।।সামনে শুক্রবারে বিয়ে।।
-কি বলছিস এসব।।।এটা কি করে হতে পারে আজ দুপুরেই তো ওর আব্বুর সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম।।
-হুম ওখান থেকে ফিরেই আঙ্কেল এইসব ঘটিয়েছে।।।নিশি অনেকবার মানা করেছিলো কোনো কথায় শুনেন নি উনি।।।ফোনটাও কেড়ে নিয়েছে।।
-আমি নিশির সাথে কথা বলতে চায়।।।ব্যাবস্থা করে দিতে পারবি।।।
-একটু মুসকিল হবে তবে ম্যানেজ করতে পারি কি দেখি।।।।
-ওকে থ্যাংকস।।।
ফোনটা রেখে দিলাম।।।কথাগুলো শুনে মাথায় একটু ও কাজ করছেনা।।।বারবার ওই স্বপ্নের কথা মনে পড়ছে।।।তাহলে কি আমার স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে।।কিছু বুঝতে পারছিনা কি করা যায়।।। শাড়ির দোকানে বসে আছি।।।আরাফাত ফোন করেছিলো।।।আজ ওরা বিয়ের শাড়ি কিনতে আসবে এখানে।।সেই ফাকে নিশির সাথে কথা বলে নেবো আমি।।।কিছুক্ষন বসে থাকার পর ওদের সবাইকে আসতে দেখলাম।।আরাফাত আমাকে ঈসারায় লুকিয়ে থাকতে বললো।।সময়মতো ও ই নিশিকে আমার কাছে নিয়ে আনবে।।।তাই আমি ও ওর কথা মতো এক কোনে লুকিয়ে রইলাম।।। নিশি আমার সামনে দাড়িয়ে আছে।।বুঝতে পারছিনা কি বলবো ওকে।।।ও কোনো কথা না বলে সোজা আমাকে এসে জড়িয়ে ধরলো।।।
-আমি তোমাকে ছাড়া বাচবোনা।।।আমি এই বিয়ে করতে চায়না।।প্লিজ আমাকে নিয়ে পালিয়ে যাও।।আমি শুধু তোমাকে চায়।।।প্লিজ পালিয়ে যাও।।।
আমি ওকে শান্তনা দিলাম।।।আর প্রতিশ্রুতি দিলাম এই বিয়ে আমি হতে দেবনা।।দরকার পড়লে পালিয়ে যাবো দুজনে তাও এই বিয়ে হতে দেবনা।।।কিছুক্ষন কথা বলার পর আরাফাত নিশিকে ডাক দিলো আর নিশি ও চলে গেলো।।।যাওয়ার সময় বারবার তাকাচ্ছিলো আমার দিকে।।।ওই সময় ওর দুই চোখে আমি শুধু ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছিলাম।।। এইমাত্র বাসায় ফিরলাম।।খুব ধকল গিয়েছে সারাদিন।। দরজাটা খুলতেই যা দেখলাম তা দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।।।নিশির বাবা আমার বাসায় কিন্তু কি কারনে।।।কোনো প্রশ্ন না করে আমি ভেতরে প্রবেশ করলাম।।।মা আয়েশা কাউকেই দেখতে পেলাম না।।।ব্যাপারটা আমার কাছে মোটেউ ঠিক লাগলোনা।।।
-এসো নবাব পুত্র এসো।।।
-আপনি আমার বাসায়,,,কি কারনে?(সন্দেহের ভাষায়)
-হুম আমি তোমার বাসায়।।।ভালোই তো প্লান করেছো আমার মেয়েকে নিয়ে পালানোর।।
-কি বলছেন এসব।।আর আমার মা আর বোন কোথায়।।।
-ওরা সবাই ঠিক আছে।।রুমেই আছে।।বাইরে থেকে লক করে দিয়েছি শুধু।।কিন্তু তুমি যে প্লানিং করছো।।যদি ওটা বাস্তবায়ন করার বিন্দুমাত্র চেস্টা করো তাহলে তোমার পরিবার কে আর রুমে নয় সোজা ওপরে পাঠিয়ে দেবো।।।শুধু এতোটুকু তোমায় বলতে এসেছি।।আশা করি বুঝতে পেরেছো।।
-আপনি কিন্তু এটা একদম ঠিক করছেন না।।
-আমি কি করছি সেটা আমি খুব ভালো করে জানি।।যদি পরিবার বাচাতে চাও তবে বিয়ের দিন তোমাকে আমার বাড়ির তিন সিমানায় যেনো না দেখি।।। ওনার কথাগুলো শুনে আমি আর একটা কথা বললাম না।।।শুধু চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম।।উনি বের হয়ে চলে গেলেন।।আমিও গিয়ে রুমের দরজাটা খুলে দিলাম।।।ওই সময় মা আয়েশার চেহারা দেখে নিজেকে বড় অপরাধী মনে হচ্ছিলো আমার।।। আমি কোনো কথা না বলে নিজের রুমে এসে ভেতর থেকে দরজা লক করে দিলাম।।।
কিছুক্ষন পর নিশির বিয়ে হয়ে যাবে।।।আর আমি এখানে বারান্দায় চুপটি করে দাড়িয়ে আছি।।।কিই বা করার আছে আমার।।।আমি যদি ওকে নিয়ে পালিয়ে যায় তবে আমার পরিবারের কেউ শান্তিতে থাকতে পারবেনা।।তাই সবটা জানার পরও চুপ করে দাড়িয়ে থাকা ছাড়া আমার কাছে আর কোনো পথ নেই ।আর সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে এইটা যে আমার স্বপ্নটাও এতো পারফেক্ট ভাবে সত্যি হয়ে যাচ্ছে ।।কি আর বলবো এটাই আমার ভাগ্য।।। দাড়িয়ে কথাগুলো ভাবছিলাম ঠিক এমন সময় রুমে থাকা ফোনটা বেজে উঠলো।।।আমি রুমে গিয়ে ফোনটা তুলতেই দেখি আরাফাতের ফোন।।।রিসিভ করলাম।।।।
-হ্যালো আশিক,,কোথায় তুই?
-বাসায় আছি।।কেনো কি হয়েছে।।
-নিশি গলায় ফাস দিয়েছে,,,,
কথাটি শোনা মাত্রয় আমার হাতে থেকে মোবাইলটা পড়ে গেলো।।।পায়ের নিচ থেকে যেনো মাটি সরে গেলো আমার।।।কি শুনলাম এটা আমি।।।কিছু না ভেবে গাড়ি বের করে দিলাম টান নিশির বাসার উদ্দেশ্য ।। কিছুক্ষন পর পৌছে গেলাম।।।ঠিক একইরকম করে সাজানো হয়েছে বাড়িটাকে যেমনটা আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম।।বাড়ি ভর্তি প্রচুর মানুষ।।। চারিদিকে কান্নার শোর পড়ে গেছে।।।ওদের কান্নার আওয়াজ আমার ভেতরটাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিটা মুহুর্তে।।।
আমি বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলাম।।।গার্ড গুলো ঢুকতে দিতে চায়ছিলো না কিন্তু জোর করেই ঢুকে পড়েছি।।।ভেতরে প্রবেশ করতেই প্রথমে চোখ পড়লো খাটের ওপর শুয়ে থাকা নিশির দেহটার ওপর।।।।ওকে দেখে আমার ওর সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত মনে পড়তে শুরু করলো।।ওর বলা প্রতিটা কথা আমার কানে বাজতে শুরু করলো।।।আমি যেনো কুল হারা হয়ে পড়ছিলাম ধিরে ধিরে।।।।।নিঃস্ব একাকী অনুভব করছিলাম নিজেকে।।।বেচে থাকার যে ইচ্ছাটা ছিলো ধিরে ধিরে সেটাও যেনো শেষ হতে শুরু করেছিলো।।।কি করবো বুঝতে পারছিলাম না আমি।।।
ঠিক এমন সময় আমার চোখ পড়লো নিশির বাবার ওপর।।।উনাকে দেখে আমার মনের সকল ক্ষোভ যেনো বাইরে চলে এলো।।।আমি দৌড়ে গিয়ে ওনার জামার কলার ধরে মুখের ওপর ঘুষির ওপর ঘুষি মারতে শুরু করলাম।।আমার এমন কার্যকলাপ দেখে কিছু গার্ড এসে আমাকে ধরে বাড়ির বাইরে নিয়ে আসলো এবং সেই লেভেলের প্যাদানি দিতে শুরু করলো।।
মার খাওয়ার সময় নিশির চেহারা বারবার আমার সামনে ভাসছিলো।।।কান্না করতে ইচ্ছা করছিলো আমার।।কিন্তু চোখ দিয়ে পানি বের হতে চাচ্ছিলো না।।।এক সময় গার্ডগুলো হাপিয়ে গিয়ে আমায় মারা৷ বন্ধ করে দিলো।।।তারপর আমায় দুরে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে বাসার দিকে চলে যেতে শুরু করলো ।।আমি উঠে আবার নিশির বাসার দিকে যাওয়ার জন্য যেই পা ফেলেছি ঠিক সেই সময় একটা গাড়ি এসে আমায় ধাক্কা মেরে দিলো আর আমি ধিরে ধিরে মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম।।
ওই মুহুর্তে আমার শুধু মনে হচ্ছিলো আমি যেনো নিশির কাছে যাচ্ছি।।।আমার নিশির কাছে,, যেখানে কেউ আমাদের এক হওয়া থেকে আলাদা করতে পারবেনা।।পরক্ষনে আবার মনে হতে লাগলো গল্পটা যদি এমনভাবে শেষ না হতো যদি আমার সেই স্বপ্নটাই সত্যি হতো।।তাহলে আমার কাছে না হোক অন্যকারোর কাছেতো নিশি থাকতো,,, বেচে থাকতো।।।কিন্তু আফসোস তার কোনোটাই হলোনা।।।না হলো আমাদের ভালোবাসা সার্থকতা আর না হলো আমার স্বপ্নটার সত্যি।।।।শুধু নিঃস্ব হয়ে গেলো দুটি নিস্পাপ জিবন।।।