-ইদানীং সময়গুলো অনেক খারাপ কাটছে শিশিরের। কোন কাজে মন বসেনা কেনো সেটাও বুঝতে পারেনা তবে হয়তোবা কোন খারাপ কারনে অথবা খারাপ কাজের ভীতর জড়িয়ে যাচ্ছে সেইজন্য ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা। আগের মতো নামাজ ও পড়া হয়না ঠিকমতো। আস্তে আস্তে সব কিছুর ভীতরে অনীহা চলে আসছে। কিন্তু এভাবে চললে তো হবেনা! একদিন তো মরতে হবে তাহলে এভাবে চললে মনে মনে ভাবতে লাগলো এখন থেকে নামাজটা ঠিক মতো পড়তে হবে।
তারপর, থেকে নামাজ পড়া ধরলো শিশির। নামাজ পড়ে মনটাও ফ্রেস থাকে। একদিন, নামাজ পড়ে বসে আছে! পরে আম্মু রুমে প্রবেশ করে বলে গেলো শিশির যেনো তার নানুর বাড়িতে যায়। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস আনার জন্যই যেতে বললো। শিশির প্রথমে রাজী না হলেও পরবর্তীতে তার আব্বু বলার পর আর না করতে পারলো না। কিন্তু মনটা ঠিকই খারাপ হতে বিলম্ব করলো না। কেননা, শিশিরের নানু বাড়ি ছিলো গ্রামে আর সেটা শহর থেকে অনেক দূরে সেইজন্যই মূলত টেনশনটা বেড়ে গেলো শিশিরের। তবুও না যেয়ে উপায় নেই! তাই যথা সময়ে কলেজ থেকে কিছুদিনের ছুটি নিয়ে নানুর বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্য রওনা হলো। আম্মু
-আব্বু ও এগিয়ে দিয়ে আসলো গাড়ি পযর্ন্ত। তার কিছুক্ষণ পর গাড়ি ছেড়ে দিলো। যেতে যেতে, কর্মব্যাস্ত শহরটা দেখতে দেখতে তার গন্তব্যের দিকে যাচ্ছিলো।
সাথে গরম আর জ্যামকেও পরখ করতে হলো। সারাদিন “খটখট ” শব্দ শুনতে শুনতে প্রায় সন্ধ্যার সময় নিজস্ব গন্তব্যের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়াতে গাড়ি থেকে নামে শিশির। নেমে একটা দোকানের সামনে দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো রিকশার। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়াতে রিকশা ছাড়া যেতে চাইলো না। কেননা, সামনের রাস্তা জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরও যখন রিকশা পেলোনা তখন ঠিক করলো -যায় হোক একাই যাবে। তখন রাত নেমে চারদিকে হালকা অন্ধকারে ছেয়ে গেছে আকাশ। ধীরগতিতে, বুকে সাহস নিয়ে পা চালালো শিশির। আশপাশের, একটা গাড়ি ও নেই। কোন লোঁকজন নেই। নেই কোনো কোঁলাহল। ”ঝিঁ ঝিঁ শব্দে ভেঁসে আসছে পোঁকাদের আনন্দ উল্লাসের। তার মাঝে হঠাৎ হঠাৎ, শিয়ালের “গেউ গেউ ” আওয়াজ কানকে যেমন বিকোশিত করে তেমনি বুঁকে ভয়ের প্রবল ছাপ একে দিয়ে যায়। নির্জন পরিবেশটা যেমন ,সুন্দর হয় তেমন ভয়ানক।
“ক্রিং ক্রিং ” শব্দে ফোনটা বেজে উঠলো হঠাৎ ই। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে মারিয়া( জি এফ) কল দিছে। ফোন দেখেই খুশি হয়ে উঠলো, অন্তত এখন একাকীত্বটা দূর হবে প্লাস ভয়টাও। ফোন রিসিভ করে কথা বলতে বলতে যেতে লাগলো। একটু কথা বলার পরই মারিয়া বললো, সা নাকি অদ্ভুত একটা কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে। শিশির অবাক, বললো এটা কীভাবে সম্ভব আমি শুনতে পারছি না অথচ তুমি। মারিয়া একদম শিউর হয়ে বললো, হ্যা আমি শব্দ শুনতে পাচ্ছি তো। কোন মেয়ের কান্নার আওয়াজ। শিশির একটু তর্ক করে ফোন রেখে দিলো। এমনিতেই ভয়ে শেষ তারমধ্যে আবারো এইসব আজগুবি কথা। ফোন রেখে হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছিলো সামনের দিকে। হঠাৎ, জঙ্গলের ভীতর দিয়ে দেখে একটা রাস্তা। আর সেখান দিয়ে অদ্ভূত লম্বা কিছু মানুষ মাথায় টুপি দিয়ে নামাজ পড়তে যাচ্ছে।
শিশির ভাবলো যেহেতু নামাজটা পড়া হয়নি সুতরাং এখানে পড়াই ভালো হবে ভেবে। ঐ রাস্তা দিয়ে এগোতে এগোতে একটু সামনেই অনেক বড় একটা মসজিদ দেখতে পেলো। সে অবাক হলো জঙ্গলের ভীতরে এতো বড় মসজিদ। সেইদিকে বেশি খেয়াল না করে পাশে থাকা একটা টিউবওয়েল থেকে অজু করে মসজিদে প্রবেশ করতেই মসজিদটা কেমন নড়ে উঠলো। আর একটা জিনিস গভীরভাবে লক্ষ্য করলো, মসজিদের ফ্লোরটা এতই ঠান্ডা যে পা রাখা যায়না। তবুও কষ্ট করে গিয়ে নামাজ পড়তে বসলো। ভীতরে গিয়ে আরো অবাক এতো বড় মসজিদে একজন মাএ নামাজ পড়ে। অথচ আসার সময় কত মানুষকে আসতে দেখলো। যে বসে আছে তার বডি শেইপটা এরকম ১০ ফুটের বেশি লম্বা হবে। অনেক মোটা। আর মুখে দাড়ি ভর্তি। হঠাৎ সেই লোঁকটি পিছনে শিশিরের দিকে তাকিয়ে বললো, দাড়াতে তারপর শিশির দাড়াতেই সেই লোঁকটি দাড়িয়ে নামাজ পড়া শুরু করলো।
সিজদা দেওয়ার সময় একটা জিনিস খেয়াল করলো আর সেটা হলো সিজদা দেওয়ার সময় মাথা ফ্লোরে ঘষা খেয়ে এতো আওয়াজ হয় যে মনে হয় তারা দুইজন না আরো অনেকেই নামাজ পরছে তাদের সাথে। আচমকা, চোঁখ গেলো সামনে থাকা লোঁকটার পায়ে দেখে চোঁখ কপালে উঠে গেলো শিশিরের। পায়ের পাতা পিছন দিকে আর ফ্লোর থেকে একটু উপড়ে শূন্যে দাড়িয়ে নামাজ পরছে সামনের লোঁকটা। তখনি শিশিরের মনে সন্দেহ জাগলো এটা কি মানুষ মানুষ এরকম হতে পারে? “ভাবতে ভাবতে ঠিক করলো কোনভাবে মসজিদ থেকে বেরোতে যখনি পিছন দিক চলে আসতে যাবে তখনি কারো মাথার সাথে ধাক্কা খেলো আর সাথে সাথেই মসজিদের ভীতরে শোরগোল শুরু হয়ে গেলো। এমন মনে হলো সেখানে যেনো হাজারো মানুষ আসছে।
শিশির বুঝতে পারলো সে কোন ভূল জায়গায় চলে আসছে। তারপর যখনি দৌড় দিবে তখনি সামনে থাকা সেই হুজুরটি নামাজ শেষ করে ভয়ঙ্কর রুপ নিয়ে সামনে দাড়ালো তারপর, যখনি হা করে বড় বড় দাঁতওয়ালা মুখটা শিশিরের গায়ে লাগালো তখনি জ্ঞান হারালো সে।
-পরদিন, বিকালে জ্ঞান আসলে দেখে সে বিছানায় আর পাশে নানু বাড়ির সবাই। তারপর যখনি কথা বলতে যাবে, তখন অনেক চেষ্টা করার পরও কোন কথাই বেরোলো না। হাতের দিকে তাঁকিয়ে দেখলো সাঁদা কাপড় মুড়ানো। সবাই বললো, শিশিরের নাঁকি গায়েবী মসজিদের ফাঁদে পড়ে এরকম হয়ছে।