আজকে কী জাল নিয়ে যাবা?
– উপরোক্ত কথাটা আমার বউ মারিয়ার। ওহ হ্যা! আগে পরিচয়টা দিয়ে নেয়। আমি শিশির! নদীর তীরে বাড়ি থাকায় মাছ ধরার পেশাটাই আমাকে বেছে নিতে হয়েছে। আমার বাবা ও ছিলো একি পেশায়। একদিন, এক তীব্র ঝড়ে আমার বাবা, মা কে নিয়ে যাও আমার থেকে অনেক দূরে। তারপর, আমি একা হয়ে যাওয়ায়! পাশের গ্রামের মামুন মাঝির মেয়ে মারিয়া কে বিয়ে করি। তারপর, থেকে যৈতুক এর টাকায় একটা জাল কিনে কোনভাবে সব মিলিয়ে কোন ভাবে চলে যাচ্ছে। আমাদের একটা মেয়েও আছে, নাম সাবিহা আহমেদ। কিছুদিন আগে মেয়েকে , পাশের গ্রামের নটোবর মন্ডলের প্রাইমারিতে ভর্তি করিয়ে দিয়ে আসছি যার জন্য এখন প্রতিদিন মাছ ধরতে যেতে হয় মেয়ের পড়ালেখার খরচ যোগাতে। আজকে দিনের আবহাওয়াটা ভালো না থাকাই উপরোক্ত কথাটা বলে, আমার চোঁখের দিকে প্রশ্ন নিয়ে তাঁকিয়ে আছে মারিয়া। উওরে আমি…
-আমি : হ্যা বউ! তা যেতে হবে। কিছুদিন পর মেয়েটার পরীক্ষা। তার পরীক্ষার ফিসের টাকার যোগার করতে হলেও যেতে হবে। তো ঘরে কি কিছু আছে! খুব ক্ষুধা লাগছে।
-আমার, প্রশ্ন শুনে বউ নিশ্চুপ মুখে নিচের দিকে তাঁকিয়ে আছে। কোন কথা নেই।
-আমার বুঝতে বাঁকি রইলো না। তারপর , বউকে বললাম! চিন্তা করোনা আজকে জাল নিয়ে বের হয়ে অনেকক্ষণ জাল দিয়ে মাছ ধরে তখনি ফিরবো। আর সকালবেলা, সেটা বিক্রি করে সব হবে।
-আমার কথা শুনে বউয়ের মুখটাতে হাঁসি ফুটে উঠলো। তারপর, আচ্ছা যেও! কিন্তু আজকে না কালকে। আজকে দেখছো না বৃষ্টি আর মেঘে আকাশটা কে কেমন অন্ধকারে ঢেঁকে রেখেছে।
-আমি : না বউ! আজকেই যাবো। তুমি যাও জালটা ঠিক করে দাও। আমি বাজার থেকে আসি।
-বউ : আচ্ছা আচ্ছা! যাও।
– তারপর বাজারের উদ্দেশ্যে বের হলাম।
পকেট থেকে পাঁচ টাকা বের করে একটা মেচ আর দুইটা বিড়ি কিনলাম। অবশ্য বিড়ি আমি খাইনা। রাত বিরাতে, এখানে সেখানে থাকাতে সাথে রাখতে হয়। বলা তো যায়না কখন কি হয়। এইতো সেইদিন, নদীর ধাঁরে গোসল করতে গিয়ে দেখি একটা লাঁশের পাশে দাড়িয়ে আছে অনেকেই। জিজ্ঞেস করলে, কেউ কিছু বলতে পারলো না। লাঁশটা কে দেখে আমারো পরিচিত মনে হলোনা। লাঁশটার অবস্থা এরকম : চোঁখটা অনেকটা উপরে উঠে গেছে। পেঁট টা অনেক বড় হয়ে আছে ফোলে হয়তো পানির জন্য। আর সারা গেয়ে কিসের যেনো খোঁচানোর দাঁগ। যেটা আমাকে, অনেকটা ভয় পাইয়ে দিয়ে ছিলো। তাঁরপর থেকে, মাছ ধরতে বেশি একটা যায়না আর গেলেও নদীর কাছাকাছি থাকি।
– আস্তে আস্তে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসাতে বাড়িতে ফিরলাম। তারপর ,বউয়ের থেকে জালটা নিয়ে বের হয়ে গেলাম। আকাশটা তখন নিরব। বৃষ্টি বন্ধ, চাঁদ ও একটু একটু আলো ছড়াতে শুরু করেছে। আমিও ধীর গতিতে হেঁটে হেঁটে একসময় পৌঁছে গেলাম গন্তব্যস্থলে। বৃষ্টি না থাকলেও বাতাসটা একটু বেশিই। হঠাৎ হঠাৎ ঢেঁউ এসে আমাকে নাড়িয়ে যাচ্ছে। দেরি না করে জাল ফেললাম। তারপর, আস্তে আস্তে টেনে উপড়ে উঠাতেই মুখে হাঁসি ফুটে উঠলো দেখে। অন্য দিনের থেকে আজকে একটু বেশিই মাছ ধরা পরেছে। হয়তো বৃষ্টি নামায় সব মাছ পাড়ে এসে বাসা বেধেঁছে। তারপর, একে একে মাছ ধরতে ধরতে মাছের নেশায় এতটাই পাগল হয়ে গেছি যে জায়গা বা কোথায় যাচ্ছি তার কোন খেয়াল ই নেই। এভাবে, যেতে যেতে যখন ফিরবো ভেঁবে তাকালাম চারপাশটায় দেখে অবাক হয়ে গেলাম।
এ কোথায় আসছি আমি। এটা তো সেই জায়গা যেখানে আমি সেই মৃত লোঁকটির লাঁশ দেখতে পেয়েছিলাম। হঠাৎ করেই শরীরটা “ঝিমঝিম ” করতে শুরু করলো। মুহুর্তে শরীরটাও ঠান্ডা হয়ে গেছে। এদিকে, ধরা পড়া মাছগুলোও হঠাৎ লাফালাফি শুরু করেছে। হঠাৎ, চোঁখ গেলো নদীতে তাঁকিয়েই অবাক। পানিগুলো এতো বড় ঢেউ দিচ্ছিলো যেনো আমাকে নিয়ে যাবে। সেটা দেখে আমিও কেমন শক্তিহীন হয়ে ভাবছিলাম! এগুলো কি হচ্ছে আমার সাথে। আমার মনে সন্দেহ জাগলো! আজকে এতো বেশি মাছ পাওয়া তারপর এভাবে এতোদূরে তবুও যেখানে সেই মৃত লাঁশটা যেখানে পাওয়া যায় সেখানে আর অদ্ভুত সব ঘটনা নিশ্চয়ই খারাপ কিছু ইঙ্গিত করছে।
তাই আমি ঠিক করলাম! দৌড় দিবো আর তখনি ঘটে যায় আরো ভয়ঙ্কর একটা ঘটনা পানির দিঁকে তাঁকিয়ে দেখি যতদূর পযর্ন্ত দেখা যাচ্ছে ততদূর পযর্ন্ত পুরো জায়গায় অনেকগুলো মৃত দেহ ভেসে আছে আর সেই দেহের উপর বসে অদ্ভুত একটা অবয়ব তাঁর শরীরের মাংস ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছে। আমি দেখে ঠিক থাকতে পারলাম না। শরীরের সব শক্তি দিয়ে একটা চিৎকার দিয়ে দৌড়াতে লাগলাম। দৌড়াতে দৌড়াতে এক সময় পিছনে থাকা মাছ ঝাঁকি খেয়ে পরে যায়। তাই সেটা উঠাতে গিয়ে দেখি অদ্ভুত রকমের একটা মাছ পড়ে আছে। ঐরকম অবস্থায় এতো কিছু দেখার সময় নেই ভেবে সেটাও তুলে রেখে দিয়েছি। যখন বাড়ির কাছাকাছি আসছি তখনি কমড়ে খুব যন্ত্রনা হতে লাগলো আর সেটা এতোটাই যে সাথে সাথে জ্ঞান হারালাম।
যখন জ্ঞান ফিরলো চেঁয়ে দেখি আমি শুয়ে আছি আমাদের ঘরে মারিয়া বসে আছে আমার পাশে। তারপর, কিছু বলার আগেই জানতে পারলাম সেইদিন বউ আমি বাড়ি ফিরিনি দেখে খোঁজতে গিয়ে জ্ঞান হারানো অবস্থায় পাই। আর দেখে আমার কোমড়ের দিকে অনেকটা মাংস খাওয়া অবস্থায়। আমি জিজ্ঞেস করলাম এটা কীভাবে হলো। তারপর বউ বললো, আমার মাছ রাখার জিনিসটা নাকি অনেক বড় টুকরো ছিলো যেটা কোমড়ের সোজাসোজি। আমি শুনেই বুঝতে পারলাম এটা সেই রাক্ষুসে মাছটার জন্য। আরেকটু পরে মারিয়া গেলে হয়তো আমাকে মৃত অবস্থায় পেতো। তারপর, আল্লাহর এরকম দয়ার জন্য সেইদিনের পর থেকে প্রতিদিন নামাজ পড়তে শুরু করলাম।
সমাপ্ত