দয়া করে কেউ ঠেলাঠেলি করবেন না, তবারকের ব্যবস্থা আছে।” ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ তবারকের কথা শুনে ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠলাম। বিছানার উপর চুপটি মেরে বসে আছি। তবারকের কথা শোনার চেষ্টা করছি, যে কথাটা কি সত্যিই নাকি আমার ধান্দা। কিছুক্ষণ পর আবার শুনতে পেলাম “দয়া করে আপনারা সবাই শান্ত হন, তবারক সবাই পাবেন। কেউ হই হুল্লুড় করবেন না।”।
দূর থেকে মাইকের শব্দ কানে ভেসে আসছে। পাশের গ্রামে ওয়াজ মাহফিল হচ্ছে আর সেখানেই তবারক দেওয়া হচ্ছে। নাহহহ! তবারক মিস করা যাবেনা। যেভাবেই হোক খিচুড়ির পেকেট আমাকে নিতেই হবে। ঘুমের চৌদ্দ গোষ্ঠী বিসর্জন দিয়ে বিছানায় থেকে নামলাম। শার্ট একটা গায়ে দিয়ে সাইকেল নিলাম। কারণ পাশের গ্রামে হেঁটে যেতে ১৫ মিনিট লাগে ততক্ষণে তবারক দেওয়া শেষ হবে। তাই সাইকেলই নিলাম।আমার আবার টর্চ লাইট নাই। অন্ধকারে কেমনে যামু চিন্তায় আছি। লাইটের জন্য আম্মাকে ডাক দিলাম….
–আম্মা..?
-(কোন সারা নাই)
–ও আম্মাআআ?
-উমমমম, কি হইছে এত রাইতে ডাকোস ক্যান?
–তোমার লাইটটা একটু দাও।
-ক্যা?
–তবারকের জন্য যামু।
-মানে?
–আরে পাশের গ্রামের মাহফিলে তবারক দিতেছে।
-হারামি এত রাইতে তবারকের জন্য যাবি? যা ঘুমা।
–তাড়াতাড়ি দেও, খিচুড়ি শেষ হইলো।
-পারুমনা।
–আইচ্ছা লাগবেনা, আমি গেলাম।
-যা মর…
কেমন মা! নিজের ছেলেকে মরার কথা বলে। কি আর করারর! লাইট ছাড়াই কোনরকম যাচ্ছি। মাঝপথে হঠাৎ একটা গাছের সাথে বারি খেয়ে হামাগুড়ি দিয়ে উপুত হয়ে পরলাম। তাড়াতাড়ি উঠে আবার সাইকেলে উঠলাম। এবার সরাসরি ওয়াজ মাহফিলে চলে আসলাম। সাইকেলটা একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে রেখে মাহফিলের মাঝে চলে গেলাম। তবারক দেওয়া এখনও শেষ হয়নি। আমি গেলাম তবারকের জন্য। একটা লাইন বাকি আছে তবারক দেওয়ার। আম শেষ লাইনে বসলাম। তবারক দিচ্ছে, আর মাত্র কয়েকজন তাই আমিও তবারক পাবো। খুশিতে পাঙ্কু ড্যান্স দিতে ইচ্ছে। আমার হাতে তবারক দিবে ঠিক তখনই তবারক দেওয়া লোকটা আমার মুখের দিকে তাকালো। বলল….
–তোর বাড়ি পাশের গ্রামে না?
-জি চাচা।
–তোর বাবার নাম অমুক না?
-হ্যা চাচা। এহন তবারক দেন।
–হারামি পুত তরে তবারক দিমুনা।
-ক্যারে চাচা? মুই কিতা করলাম?
–বাইনচ** তুই গতবছর ৫ প্যাকেট তবারক নিয়া দৌড় দিছিলি মনে নাই?
-না মানে চাচা…
–তরে তবারক দিমুনা। যা ভাগ, তর জন্য আমরা তবারক পাই নাই।
-চাচা আমার ভুল হয়ে গেছে। আর ঐরকম করমু না। প্লিজ তবারক দেন।
–বাইনচ** কইলামতো দিমুনা।
অবশেষে চাচা আমাকে তবারক দিলোই না। বুঝলাম চাচার মাথায় গন্ডগল আছে। নইলে ছেলের বয়সের কাউকে কেউ বাইনচ* বলে। আফছোচে ঠ্যালায় আমার প্যান্ট খুলে ফেলে দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু ইজ্জতের তোর তো একটা ব্যাপার আছে। শালার এত্ত কষ্ট করে সাইকেল চালিয়ে গাছের বারি খেয়ে আসলাম মাগার তবারক পাইলাম না। এটাতো মানা যায়না। তাই ভাবছি কেমনে তবারক নেওয়া যায়।
সবাই তবারক নিয়ে বাসায় যাচ্ছে। আমার হাত খালি। মনডায় চায়তেছে চাচারে গিয়ে ল্যাংটা করে গাছের ছাল দিয়ে পিডাই। হালার পুতের জন্য তবারক পাইলামনা। একটা বুড়ো দাদুকে দেখলাম দুই প্যাকেট তবারক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। উরিশশশালা আমি এক প্যাকেটই পাইলামনা আর হেতি দুই প্যাকেট নিছে। আমি আস্তে করে দাদুর কাছে গেলাম। বললাম….
-দাদু কেমন আছো?
–ভালো, তোমাকেতো চিনলাম না।
-আরে আমি পাশের এলাকায়ই থাকি।
–ও আচ্ছা।
-আচ্ছা দাদু আপনার হাতে তবারক দুই প্যাকেট ক্যান?
–একটা আমার নাতীর, ও একটু প্রসাব করতে গেছে।
-ও আচ্ছা। দেখি দেনতো একটা তবারকের প্যাকেট, দেখি কয়টা মাংস আছে।
–ক্যান তোমারটায় দেখো।
-আমারটাতো দেখছিই তাই আপনারটা দেখতাম।
তারপর দাদু তার নাতীরর তবারকের প্যাকেটটাই আমার হাতে দিলো। তবারক হাতে পেয়ে মনডা খুশি হয়ে গেলো। পরক্ষণেই আবার খারাপ হয়ে গেলো এই ভেবে যে মাইনষের তবারকের প্যাকেট এটা। কিন্তু নাহহ তবারক আমি খামুই খামু। দাদুর দিকে তাকিয়ে মদন মার্কা হাসি দিয়ে বললাম….
-হেই দাদু, এহন মুই উয়িথ আপনার নাতীরর তবারক নিয়া গোয়িং দ্যা দৌড়ানি দিমু। পারলে ঠেকান।
–মানে..?
ঘাউউউউ বলে সেখান থেকে তবারক নিয়ে এক ভোঁ দৌড়। আমাকে আর পায় কে। সাইকেলের কথা মনে নেই। তাই সাইকেল রেখেই দৌড়। দৌড়াতে দৌড়াতে অনেকদূর চলে আসলাম। অনেক্ষণ হাঁপিয়ে তবারকের প্যাকেটেরর দিকে নজর দিলাম। আহা পাইলাম, অবশেষে মুই তবারক পাইলাম। তবারক খাওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। তাই যেই না প্যাকেট খুলবো তখনই ঘেউঘেউ। তাকিয়ে দেখি একটা কুকুর। খাইছেরে এত্ত রাইতে কুকুর। আমি এমনিতেই কুকুট খুব ভয় পাই। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম….
–কুকুর ভাইয়া কি চাও?
-ঘেউঘেউ।
–তবারক খাইবা ব্রো?
-ঘেউ…ঘেউ….
–মাংস খাইবা?
-ঘেউঘেউ.. ঘাউউউউউউউউ…
–হালার বাচ্চা ঘাউঘাউ মারাও ক্যান। লাত্তি দিয়া পা**র ফুটো বন্ধ কইরা দিমু।
অমনি কুকুর আমার দিকে এগিয়ে আসা শুরু করলো। আমিও আইয়াম্মাআআআআআ বলে ঘুরান্টি দৌড়। আমি দৌড়াচ্ছি আমার পিছনে কুকুরও দৌড়াচ্ছে। আল্লাগো তুমি মোরে বাঁচাও।
–ভাই আর দৌড়াইস না, আমি শেষ।
-ঘেউঘেউ।
–আল্লার দোহাই লাগে…
-ঘাউউউ…কুউউকুউউ
–খালু কইছিরে ভাই তাও আহিসস না।
হঠাৎ আচমকা পকাৎ করে গিয়ে ধপাসসস করে পরে গেলাম। আম্মাআআআরেগোওও! পুরো শরীর কাঁদায় মেখে গেছে। ইয়াককক থুউউ..গন্ধ। কুকুরও নাই, চলে গেছে। বাবারে কি ব্যথা। উফফফ! কাঁদায় অনেক্ষণ তবারক খুজলাম পাইলামনা। তারপর রাস্তায় অনেক্ষণ হাতিয়ে খুজলাম তবুও পেলাম। রাগে চুল ছিড়ডে ইচ্ছে করছে। হায়রে কপাল! এত্ত কষ্ট করে তবারক আনলাম তাও হারাইয়া গেলো। মাঝখান থেকে সাইকেলটাও গেলো। আমও নাই ছালাও নাই। জীবনটাই তামাতামা হয়ে গেলো। কাঁদা মাখা শরীর নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। আম্মা আজকে জীবিত রাখবো না মৃত রাখবো কে জানে। আল্লাহ তুমি তোমার এই অসহায় বান্দার প্রতি সহায় হও। মুই মেলা বালা পুলা।