সকাল সকালে আব্বা আমারে ডাক দিয়া কইলো “নিরইব্বা উঠ উঠ, মাঠে যাইতে হবে। ধান গুলা সব পেকে পেকে ঝড়ে যাচ্ছে। চল ধানগুলা কেটে নিয়ে আসি” আমি তখন গভীর ঘুমে মগ্ন। সাথে আবার একটা রোমান্টিক স্বপ্নও দেখছি। এই সময় বাপের ডাকে ঘুমটা ভাঙলোনা, তবে রোমান্টিক স্বপ্নটা হারিয়ে গেলো। আমি আব্বাকে কইলাম “বাজান তোমার নিরইব্বা এখন ৩ঘুমাচ্ছে, সে পরে যাবে। তুমি চলে যাও।” আব্বা যাওয়ার সময় কইয়া গেলো “খাটের নিচে নতুন কাস্তে আছে, আসার সময় ঐডা নিয়ে আসিস।” আমি ‘হুম’ বলে আবার ঘুম দিলাম। আর আরেকটা রোম্যান্টিক স্বপ্নের খোঁজ করতে লাগলাম।
“আব্বা একা একা ধান কাটছে আর কপালের ঘামটা বারবার হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছছে” রোমান্টিক স্বপ্নের বদলে আমি এই স্বপ্নটা দেখে তড়িঘড়ি করে ঘুম থেকে উঠে মাকে বললাম “মা আব্বা নাকি কোথায় কাস্তে রেখেছে! দাওতো।” মা আমার হাতে কাস্তে ধরিয়ে দিয়ে কইলো, যা তাড়াতাড়ি যা। তোর বাপ একা একা অতগুলা ধান কাটতে পারবেনা। যা তাড়াতাড়ি যা। আমি কাস্তে হাতে নিয়ে ভাবতেছি, একে তো পাড়ার মেয়েরা আমাকে ডিস্ট্রার্ব করে। তার উপর যদি আবার একা মাঠে যেতে থাকি। তাহলে পথে খারাপ কিছু ঘটতে পারে। তাই আমি মাকে কইলাম “মা ও মা, বিজয় কই? ওকে আমার সাথে পাঠিয়ে দাও।” মা বিজয়কে কোথথেকে যেন ধরে এনে বললো “যাওয়ার সময় দেখিস তোর ভাইকে যেন কেউ ইভটিজিং না করে।”
বাড়ি থেকে বের হয়ে একটু সামনে এগিয়েছি মাত্র। কোথথেকে সুরভী এসে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে বললো “কি গো আমার পরানের পরান, আইজ বুঝি আমার শশুরে তোমারে খাটতে কইছে। যাও সোনা যাও, দেখে শুনে যেও। রাস্তার কোন মেয়ের সাথে কথা কইবানা কিন্তু? যদি কেউ জোর করেও কথা কইতে চায়, তাহলে তুমি আমার কথা কইবে। ঠিক আছে? আর যদি তা না পারো তবে চলো আমিও তোমার সাথে যামু।” কি সাংঘাতিক মেয়েরে বাবা! রাস্তাঘাটে কেউ এভাবে কথা বলে? সুরভীর এমন কথা শুনে আমার দুষ্টু ভাইটা হঠাৎ বলে উঠলো “তুমি এই কথাডা কইতে পারলা জানু? সেদিন না তোমার লগে আমি ডেটিং করে আইলাম। একটা ফুচকা ভাগাভাগি করে খাইলাম। একসাথে পায়ে পা মিলিয়ে হাটলাম। আরো কত কি করলাম। সব তুমি ভুইলা গেলা?” বিজয়ের কথা শুনে সুরভী তো রেগে মেগে আগুন।
– ঐ ছোকরা কি আবোল তাবোল বকিস। তোর সাথে কবে ঘুরতে গেলাম? তুই এতটুকুন একটে পিচ্চি পোলা।
সুরভী বিজয়কে বেশ কথা শুনাচ্ছে, বিজয় দমবার পাত্র নয়। সেও খুব করে সুরভীকে পচাচ্ছে। এবার আমি সুরভীর উদ্দেশ্যে বললাম “ছিঃ ছিঃ, তুমি আমারে ভালোবাইসা আমার এই ফিডার খাওয়া ছোট ভাইটার লগে ডেটিং করো! ছিঃ ছিঃ, এটা আমি রাত জেগেও ভাবিনি কখনো।” আমার কথায় সুরভী রাগে ফুসতে ফুসতে বাড়ির মধ্যে চলে গেলো। সে চলে যেতেই বিজয় আমারে বললো “কেমন দিলাম ভাইয়া?” আমি বললাম, পুরা ফাটিয়ে দিয়েছিস। যেতে যেতে আরো কয়েকটা মেয়ে আমারে জানু, মনু, বাবুই, চড়ুই, নানান কথা বলে ইভটিজিং করছিলো। ভাগ্যেস সাথে আমার পিচ্চি ভাইটা ছিলো। তা না হলে যে আজ কি হয়ে যেতো সেটা আমি নিজেও জানিনা।
মাঠ প্রায় পাওয়া পাওয়া ভাব। এই আর দশ মিনিট হাটলেই মাঠে পৌছে যাবো। ঠিক সে সময় আমার চাপ এসে গেলো। আমি বিজয়রে কইলাম “ভাই চাপ আসছে, আমি এখন কি করবো?” সে একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো “ত্যাগেই প্রকৃত সুখ। আর সেই ত্যাগটা যদি কলা বাগানের ঝোপেঝাড়ে হয়, তাহলে তো কোন কথায় নেই।” আমিও একটু ভেবে দেখলাম, ঠিকই তো! মাঠে বসে ঝোপেঝাড়ে ত্যাগ করার মজাই আলাদা। কতদিন প্রাণ খুলে মাঠে বসিনা। আজকে সময় এসেছে। কিছুদুর এগোতই চাপটা নাড়া দিয়ে উঠলো। আর হাটতেই পারছিনা। তবুও কোনমতে একটু কষ্ট করে ধানের মাঠে পৌছালাম।
কি আজব মাইরি! মাঠেও পৌছালাম, চাপটাও কমে গেলো। ভাবলাম, এখন যেহেতু চাপ নেই সেহেতু ধান কাটতে থাকি। চাপ এলে পরে দেখা যাবে। আব্বার সাথে ধান কাটছি বেশ আনন্দে। পাশের ক্ষেতের মতলব মিয়া গান গাইছে “ও গো জরিনার মা তুমি কেনো আইলানা? কথা দিয়ে কেনো তুমি কথা রাখলানা?” আমি একটু ভাবার চেষ্টা করলাম, মতলব জরিনার মাকে কোথায় আসার কথা বলেছিলো! কিছু সময় যেতে না যেতেই আমার সেই চাপটা আবার মাথা নাড়া দিয়ে উঠলো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি কলা বাগানগুলোও তেমন নেই। উপায়ান্তর না দেখে আব্বাকে কইলাম
– বাজান আমার চাপ আসছে, অবস্থা খুবই দুঃখজনক।
– সকালে ঘুম থেইকা উইঠা কি করছোস হারামি? এখন মাঠে এসে তোর হাগু পাইছে।
– কি করবো কও বাজান! স্বপ্নে দেখলাম তুমি ধান কাটছো আর হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছছো। তাই তড়িঘড়ি করে উঠে চলে আসলাম। এজন্য বাড়িতে কামটা সারার সময় পাইনি।
– ভালো করছোস। যা ঐ কলাবাগানের মধ্যে ঢুকে হাগু করে আয়।
– ছিঃ বাজান, তুমি খালি হাগু হাগু করো ক্যা? চাপ কইতে পারোনা?
– আমি হাগুরে চাপ কইতে যাবো ক্যা?
– বাজান তুমি বুঝোনা ক্যা ঐ মতলব মিয়া যদি বুঝতে পারে আমার চাপ আইছে,
তাহলে নির্ঘাত আমারে নিয়া গান গাইতে শুরু করবে। কইতে না কইতেই পাশের ক্ষেত থেইকা মতলব মিয়া বলে উঠলো “কি গো, কি হয়েছে তোমার ছেলের?” আমি কথাটা চাপা দেওয়ার জন্য বললাম “কিছুনা চাচা”। বাপে এবার আমারে কইলো
– যা হারামি, দ্রুত হাগু করে অায়।
– বাজান যদি কেউ দেখে ফেলে তখন কি করবো? আব্বা এবার বিজয়কে বললো “ঐ বিজয়, তুই তোর ভাইয়ের সাথে যা।”
– চলো ভাইয়া।
– হ চল। একেবারে বেরিয়ে গেলো। তাড়াতাড়ি চল। কিছুদুর যেতেই দুষ্টু ভাইটা আমারে ব্লাকমেইল করতে লাগলো।
– ভাইয়া শোন।
– ক, কি কবি তাড়াতাড়ি ক।
– তুমি যেই মাইয়াটার লগে রাতদিন ফোনে কথা কও। সেই মাইয়ার লগে আমারে পিরিত করায়ে দিবা। তার কথা শুনে আমি রেগে গিয়ে বললাম
– কি কইলি তুই? আবার ক!
– ভাই তোমার কি কান টান নষ্ট হয়ে গেছে নাকি। যেটা বলি সেটা শুনতে পাওনা!
– তুই কি বললি, সেটা তুই জানিস? ঐ মেয়েটা তোর ভাবি লাগে।
– ভাবি হইছে তো কি হইছে।
– ঐ তুই চুপ কর, আগে আমার সাথে চল।
– আমারে ঐ মেয়ের লগে পিরিত করায়ে না দিলে আমি যাবোনা তোমার সাথে। হারামি ভাইটার কথা শুনে আমার নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে। হ্লা বজ্জাতের হাড্ডি একটা। কোন উপায়ান্তর না দেখে বললাম
– আচ্ছা করায়ে দিবো, আগে চল আমার সাথে। ভাইটা আমার একটা বিজয়ের হাসি দিয়ে আমার সাথে কলাবাগানের ভিতরে যেতে লাগলো।
– ভাইয়া তুমি ঐ ঝোপের পিছনে গিয়ে বসে পড়ো।
– কেউ দেখবেনা তো?
– আরে তাহলে আমি কি করতে আইছি এখানে?
– ওকে আমার লক্ষি ভাই। তুই এখানে পাহারা দে, আমি কামটা সেরে আসি।
– হ যাও। কেবলই আমি বসেছি মাত্র। কোথথেকে যেন শালার কলাগাছ ওয়ালা এসে হাজির।
– ওখানে কে রে?
আমি লোকটার এমন কথা শুনে তাড়াতাড়ি প্যান্ট পড়তে গিয়ে একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেললাম। মনে মনে বিজয়কে অনেকগুলো গালি দিলাম। হারামিটা আমাকে বলবেনা যে, লোক আসছে এদিকে। আমি চেঁচিয়ে বলে উঠলাম
– ওরে বিজয়রে, গেলোরে গেলো আমার সব গেলো। আমার চেঁচানো দেখে বিজয় বললো
– কি হয়েছে ভাইয়া?
– ওরে আমার বাবুটা ঘরে ঢুকতে পারছেনা। দরজায় আটকে গেছে।
– কি??
– হ হ, তুই বাবুকে ঘরে ঢোকানোর একটা ব্যবস্থা কর।
– খাড়াও, তুমি চোখ বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে দাড়িয়ে থাকো। আমি দেখছি বিষয়টা।
অনেক্ষণ পর অনেক কষ্ট করে আমার বাবুটাকে ঘরে ঢোকানের পর আমি বিজয়কে দিলাম একটা লাথি।
– হ্লা লুচ্চা, তোরে কইলাম তুই পাহারা দে। আর তুই কিনা?
– ক্যা ভাই আমি আবার কি করলাম?
– ঐযে একটা লোক বলে উঠলো “ওখানে কে রে?” তখন তুই কোথায় ছিলি? আমাকে বলতে পারলিনা যে, লোক আইতাছে!
– হাহাহা, হোহোহো, হেহেহে।
– ওরকম দাঁত বের করে হাসিস ক্যা? রাগ উঠতাছে কিন্তু!
– আরে ভাইয়া, ঐটা হলো ছলিম পাগলা। ও কলাবাগানে ঢুকলেই ঐরকম করে ডাক ছাড়ে।
এবার আমি পুরাই বোকা সেজে গেলাম। মনে মনে ঐ ছলিমের চৌদ্দগুষ্টির যষ্টি পূজা করলাম। পরে আবার প্রাণ খুলে মনের সুখে ঝোপের পিছনে বসে পড়লাম চাপ কমাইতে। আহা, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ।