একশ

একশ

তোমাকে আমি খুন করব? নিলয়ের মুখে কথাটা শুনে পরির মুখের হাসি ভাব টা কোথায় যেন উড়ে গেল।নিলয় পরি কে মাঝে মাঝেই কথাটা বলে।এর আগেও পরি কয়েকবার এই কথা টা শুনে হেসেই উড়িয়ে দিয়েছে।কিন্তু আজ কেন জানি উড়িয়ে দিতে পারছে না।পরির সব থেকে ছোট বেলার বন্ধু রেহান পরি কে বলেছে নিলয় ছেলেটা ভাল না।এর আগেও নাকি নিলয়ের অনেক মেয়ের সাথে প্রেম ছিল কিন্তু সেই সব মেয়ে দের কোথায় খুজে পাওয়া যায় নি।রেহান পরি কে ভালবাসে বলেই এত সব তথ্য উদ্ধার করেছে।কিন্তু পরি এর কিছুই বিশ্বাস করে নি।পরি রেহান কে বলেছে,দেখ রেহান তুই আমাকে ভালবাসিস সেটা আগে জানাতে পারতি।এখন আমি নিলয় কে ভালবাসি বলে তুই নিলয়ের নামে যা তা বলতে পারিস না।

রেহান আর কিছু বলে নি।শুধু অপলকে তাকিয়ে ছিল পরির দিকে।যেই মেয়েটা রেহান কে এত বিশ্বাস করত সে আজ রেহান কে এই সব বলছে। পরির উদাস ভাব দেখে নিলয় বলল,কি গো সাহিত্য কর্ম শুরু করেছ নাকি? নিলয়ের কথায় চমকে উঠে পরি বলল,আচ্ছা তুমি আমাকে প্রায়ই খুন করার কথা বল কেন? নিলয় কথাটা শুনে হাসি তে ফেটে পড়ল মনে হচ্ছে যেন এমন হাসির কথা পৃথিবিতে আর দ্বীতিয় টি নেই। পরি আবার বলল,প্লিজ বল না? নিলয় হাসতে হাসতে বলল,ওয়েট কর হাসি টা থামিয়ে নেই।

নিলয়ের কথায় খুব মন খারাপ হল পরির।আজ নিলয়ের প্রতিটা কথায় পরির কাছে কেমন জানি লাগছে।অকারনেই পরির কন খারাপ হচ্ছে। পরির মুখ গোমড়া করা দেখে নিলয় পরির হাতের আঙ্গুলের ভেতর আঙ্গুল দিয়ে হাত টা শক্ত করে ধরে বলল,তোমার জন্য যে আমি প্রতি সেকেন্ড মরি সেটা কি তুমি বোঝো? বিশ্বাস কর বিধাতার কাছে আমার আর চাওয়ার কিছুই নেই।একটা অসম্ভব সুন্দরি মেয়ে আমাকে অসম্ভব ভালবাসে। এর থেকে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে। পরির চোখ গলে গরম অশ্রু গড়িয়ে পরে নিলয়ের হাতে নিলয় হাত দিয়ে পরির চোখ মুছে দেয় আর বলে,আরেহ পাগলি একটা!

পরি নিলয়ের বুকে মুখ লুকিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলে,তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না তো।তোমার মত করে আমাকে কেউ এত ভালবাসা দেয় নি। নিলয় পরির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, আরে পাগলি ছেড়ে যাব কেন? দেখবা তুমিই আমাকে ছেড়ে চলে গেছ।খবরে হেড লাইন আসবে,প্রেমিকার কারনে প্রেমিকের মৃত্যু। পরি অভিমানের সুরে বলে ,ধুর! ফালতু কথা বল না তো! নিলয়ের বুকে মাথা রেখে পরি ভাবে ছেলেটা ওকে এত ভালবাসে আর রেহান নিজের ভালবাসা হাসিল করার জন্য এত বড় মিথ্যা বলতে পারল।

ওদের এত দিনের বন্ধুত্তের কথা পর্যন্ত ভাবল না।পরি মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় রেহানের সাথে আর কথা বলবে না। বেল্কুনিতে দারিয়ে আছে পরি। একটু আগে নিলয়ের সাথে ফোনে কথা বলা শেষ করেছে।নিলয়ের সাথে কথা বলার সময় রেহান অনেক বার কল করেছে।নিলয়ের সাথে কথা বলা শেষ করে পরি রেহানের নাম্বার টা ব্ল্যাক লিস্ট করে দিয়েছে। নিলয়ের এত ভালবাসা পেয়ে পরি অনেক খুশি কিন্তু বন্ধুত্ত হারানোর একটা দুক্ষ অনুভব করছে।সেই দুক্ষ ভালবাসার কাছে কিছুই নয়।

আকাশে একটা সুন্দর চাদঁ উঠেছে। নিলয়ের কাধেঁ মাথা রেখে হাটছে পরি।দুই জন চাদঁ দেখতে দেখতে হাটছে আর গল্প করছে।হঠাৎ চাদেঁর দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে যায় পরি চাদঁকে আজ কি অসম্ভব সুন্দর লাগছে।পরি জানেনা আজ কৃষ্ণ পক্ষ,শুল্কপক্ষ নাকি পূর্নিমা। চাদেঁর কোন হিসাব পরি কোন দিন রাখে নি। হাটতে হাটতে নিলয় আর পরি একটা নির্জন যায়গায় চলে এসেছে।সামনে একটা পুরোন বাড়ি দেখা যাচ্ছে।জায়গা টা কেমন যেন ছমছমে।পরি নিলয় কে বলল,নিলয় আমার কেমন জানি ভয় ভয় লাগছে।

নিলয় একটা হাসি দিল।নিলয়ের এই ধরনের হাসি পরির খুব পছন্দ। নিলয়ের হাসিতে পরির সব ভয় দুর হয়ে গেল।নিলয় আর পরি বাড়িটির ছাদে উঠল। ছাদে উঠে পরি লক্ষ করল ছাদে একটা বেঞ্চ পাতা আছে।আর এত পুরোন বাড়ির ছাদটাও পরিষ্কার।পরি বলল,তুমি কি আগেও এসেছ এখানে? নিলয় পরি কে নিয়ে বেঞ্চে বসতে বসতে বলল,এইটা আমাদের পুরোন বাড়ি।আমরা বন্ধু রা মাঝে মাঝে পিকনিক করতে আসি এখানে। আর আজ পুর্নিমায় তোমাকে নিয়ে চাদঁ দেখব বলে এসেছি। পরি হেসে বলল,এত ঘটা করে চাদঁ দেখার কি আছে? নিলয় মৃদু একটা হাসি দিয়ে বলল,পৃথিবিতে দুই টা জিনিস আছে যা ভালবাসা আর বেদনা দুই টার ই সাক্ষি। পরি হেসে বলল,তাই নাকি তা কি সেই দুইটা মাষ্টার মসাই?

– একটা হল চাদঁ আর একটা হল বৃষ্টি।মানুষ যখন নিলয়ের কথা শেষ করার আগেই পরি বলল,থাক থাক আপনাকে আর মাষ্টার দের মত লেকচার দিতে হবে না। তাই বলে হাসতে লাগল পরি। নিলয়ে চাদেঁর আলোয় অপলক তাকিয়ে থাকল এই অসম্ভব সুন্দর মেয়েটির দিকে। কিছুক্ষন পরে একটা এলার্ম বাঝল। পরি বুঝতে পারল এটা নিলয়ের মোবাইল এ বাঝছে।এলার্ম বন্ধ হয়ার পরে নিলয়ে তার কাধঁ থেকে পরি মাথা টা সরিয়ে উঠে দাড়াল।পরির থেকে দুই তিন পা সামনে গিয়ে দাড়াল পরি বসে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। নিলয় বলল,পরি! এলার্ম এ কয় টা শব্দ হয়েছে তুমি গুনেছ?

পরি বলল,কি আজব!এলার্ম এর শব্দ গুনব কেন? নিলয় মৃদু হেসে বলল,একশ বার শব্দ হয়েছে।তোমাকে প্রপোজ করার সময় কয় টা গোলাপ দিয়েছিলাম মনে আছে? পরি বলল,একশ টা! নিলয় বলল,তোমাকে কবে প্রপোজ করেছিলাম মনে আছে? পরি বলল,১০ এ এপ্রিল! নিলয় বলল,গুনে দেখ! ১০ এ এপ্রিল বছরের একশতম দিন।আমাদের রিলেশন আজ কত দিন জান? পরির এটা জানা ছিল না তবুও পরি আইডিয়া করে বলল,১০০ দিন। নিলয় একটা হাসি দিল।কিন্তু এই ধরনের হাসি নিলয় আজ ও দেয় নি।হাসি টা অনেক বিদঘুটে।পরি অনেক ভয় পেল।

নিলয় হাসি থামিয়ে বলল,তোমার অনেক বুদ্ধি।আর তুমি অসম্ভব সুন্দরি।রুপ আর গুন, মেয়েদের সব থেকে বড় ভুল।সরি ছন্দ টা মিলল না।আচ্ছা তোমার মনে প্রশ্ন জাগে না।সব কিছু একশ কেন? পরি নিচু স্বরে বলল,এত দিন জাগে নি এখন জাগছে। নিলয় আবার সেই বিসঘুটে হাসি দিয়ে বলল,তুমি আমার ১০০ তম প্রেমিকা। এই কথাটা শুনে পরির মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরল।পরি নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছে না।ভাবছে এ হয় তো স্বপ্ন। নিলয় বলল,পরি এটা বাস্তব। তুমি হয় তো ভাবছ এইটা স্বপ্ন।আসলে আমি তোমাকে এখানে খুন করতে নিয়ে এসেছি। পরি অনেক ভয় পেল।ভয়ে পরির গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।পরি ভয়ে ভয়ে বলল,নিলয় কি বলছ এইগুলো,তুমি ফাজলামি করছ না।

নিলয় আবার সেই ভয়ানক হাসি দিয়ে বলল,সব সত্য! ১০০% সত্য। আমি এক টা সাইকো রোগি। আমার আগের ৯৯ টা প্রেমিকাকে আমি এখানে হত্যা করেছি।তোমাকেও করব।আমার সব কিছুতে একশ। আমার সব কিছু একশ হওয়া চাই।আমার প্রথম প্রেমিকাকে আমি হত্যা করতে চাই নি।এক বৃষ্টির রাতে আমরা এখানে এসেছিলাম।হাঠাৎ ওর পা পিছলে ও নিচে পরে মারা যায়।ওর মৃত্যুর জন্য আমি নিজেকে দায়ী মনে করি।তাই খুন ও ১০০ পুর্ন করতে চাই।ডাক্তার বলেছে আমি যে কোন কাজ একশ পুর্ন করলে আমি ভাল হয়ে যাব।যখন এই কথাটা বলে তখন আমি ৯৫ জন কে খুন করেছি।তাই এই কাজটাই সহজ মনে হল।তুমি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও।

পরি নিজেকে এখন বিশ্বাস করতে পারছে না। নিলয় কি বলছে এগুল।পরি ভাবছে এগুল স্বপ্ন।ঘুম ভাঙ্গলে সব ঠিক হয়ে যাবে। পরি বলল,নিলয় আমি তোমাকে ভালবাসি। নিলয় আমার সেই বিদঘুটে হাসি দিয়ে একটা ধারালো ছুরি বের করে পরি র দিকে এগিয়ে আসতে থাকল।পরি ভয়ে পিছাতে থাকল।পিছাতে পিছাতে পরি ছাদের কিনারায় পৌছে গেল।এখন আর যাওয়ার কোন জায়গা নেই।নামার সিড়িও নিলয়ের পিছনে।পরি মুর্তির মত দাড়িয়ে আছে। পরি শেষ বারে মত চাদেঁর দিকে তাকিয়ে ভাবল,আসলেই চাদঁ ভালবাসা বেদনা দুই টার ই সাক্ষি।

পরি চোখ বন্ধ করল। নিলয় ছুরি হাতে এগিয়ে আসছে পরির দিকে।হঠাৎ পরি সিঁড়ি বেয়ে কারর উঠার শব্দ পেল।পরি আরও শুনতে পেল কেউ যেন বলছে,আমি আসছি পরি তোর ভয় নেই। পরির মনে হল,এই টা রেহান আসছে না ত ।আমাকে ফলো করে ও এখানে আমাকে বাচাঁতে আসে নি তো। নাকি মৃত্যুর সামনে দাড়িয়ে আমি ভুল শুনছি।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত